বাংলাদেশ আজো শৃংখল মুক্ত নয় !

বাংলাদেশ আজো শৃংখল মুক্ত নয় !

২০১২ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছিলো যে, ৩৩০,০০০ থেকে ৩৬০,০০০ জন লোক কোন না কোন ভাবে বাংলাদেশে দাসত্বের শৃংখলে আটকে আছেন। দুনিয়ায় যে শীর্ষ দশটি দেশ আছে যেখানে দাসত্ব চলছে – বাংলাদেশ এদের মধ্যে একটি।

পল্লীর যে সকল এলাকায় এখনো সামন্ততান্ত্রিক প্রথা শক্তিশালী সেই সকল অঞ্চলে মানুষের উপর ঐতিহাসিক ভাবে দাস প্রথার প্রভাব ব্যাপক। গ্রামীন এলাকায় যারা বেশী জমিজমার মালিক তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা ও বেশী।

আমরা এতই দরিদ্র যে আমরা বিপদজনক খাঁদের কিনারায় দাড়িয়ে আছি। আমাদের পরিবার গুলো বহু কিছু হারাচ্ছে প্রতিদিন, আমরা প্রায় সকলেই বাঁচার জন্য শ্রমদেই বিপদাপন্ন পরিবেশে জীবনের হুমকির মধ্যে থেকে।  আমরা আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছি। আমরা ঠিক মত খাবার পাইনা। আমাদের মাঝে অসুখ বিসুখ নিত্যসঙ্গী।  আমরা প্রতিনিয়ত ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছি যা থেকে বেড়িয়ে আসার কোন উপায় নেই।

প্রচলিত ব্যবস্থায় শোষণের নির্মম যাঁতাকল থেকে শিশুরা ও মুক্ত নয়। আমরা শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছি  ভূমি মালিক, পুঁজিপতি, এবং অপরাধ মূলক দল ও সংগঠন সমূহের হাতে।

অনেকেই হতাশা থেকে রেহাই পেতে শহরে পাড়ি জমায় একটি সুন্দর জীবনের জন্য। সেখানে সামন্তবাদি ও উদারতাবাদি পুঁজিবাদী ধারার মিশ্রনে এক নির্মম বর্বরতা বিরাজমান।  শহুরে ধনিক শ্রেনীর মানুষেরা ও আলোকিত নন। তারা ও প্রায়স সেই গ্রাম্য সামন্ত প্রভূদের মতই আচরন করেন । তাদের সুখ শান্তির জন্য আমাদের সন্তানদেরকে পশুর মত ব্যবহার করে। সমাজের নির্দোষ মানুষেরা সবচেয়ে বেশী কষ্ট পায়। যৌন নির্যাতনকারীরা নারীদের এবং শিশুদের দাসত্বের জন্য জোর জবরদস্তি করে এবং বিশ্ব বাজারে তাদের ব্যবহার করার জন্য রপ্তানি করে। আমাদের জনগণের দেহ ও সাম্রাজ্যেবাদের আরেকটি পণ্য হিসাবে পরিগনিত হয়ে আছে।

প্রথম বিশ্ব আমাদের লোকদের দাসত্ব পেয়ে মহা আনন্দেই আছে। তারা আমাদের দুঃখ কষ্ট ও যন্ত্রনাকে খুব তোড়াই কেয়ার করে। তারা সস্তায় মালামাল পেয়ে আনন্দিত, স্বল্প খরচে প্রচুর পণ্য দিয়ে ঘর ভড়ে নিতে পারছে।

আন্তর্জাতিক বানিজ্য সংস্থা গুলো উপদেশ দেয় জনগণ নিয়ন্ত্রনে থাকলে বানিজ্য ভালো হয়। সাম্রাজ্যবাদের উন্নতি হয়-আমাদের ঘাম, রক্ত আর চোখের জলে। দুর্ভৃত্ত রাজনৈতিকগন আমাদের কষ্ট দেখেনা । তারা আমাদের কান্না শোনেন না, তারা কেবল তাদের সাম্রাজ্যবাদি প্রভূদের বয়ান শোনেন – তাদের কাজই হলো আমাদেরকে নানা বাহানায় শৃঙ্খলিত করে রাখা । ধার্মিকগন গরিবদের নিয়ে মাথা ঘামায় না। তারা প্রকারান্তরে দাসত্বকে অনুমোদনই করেন- খলিফাদের আমলে তাই হয়েছে। সামন্তপ্রভূ চক্র ও স্থানীয় পুজিপতিগন মানুষের দুঃখ দুর্দশার মাঝে ও সাম্রাজ্যবাদের লেজুর ধরে থাকে এবং  মুনাফা অর্জনে পিছিয়ে থাকেন না । উদারপন্থী এন জি ও গুলো আমাদের দুঃখ যন্ত্রনাকে ব্যবহার করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয় এবং আমাদের জীবনের উপর পুঁজিবাদী নিয়ন্ত্রন কায়েমে অনুগত সেবকের কাজ করে যাচ্ছে ।

আমরা দাসত্ব, দারিদ্রতা, অনাহার, সন্ত্রাস, রোগবালাই, অজ্ঞতা, ও নির্মমতাকে তিব্র চিৎকারে ‘না’ বলছি ! আমরা সেই জনগণ যারা সম্পদ পয়দাকরি, কাজ করি এবং খাদ্য ফলাই আর কাপড় বুনি। আমরাই দেশের সংখ্যা গরিস্ট। আমাদেরকে ছাড়া তাঁরা চলতে পারবে না। কিন্ত আমরা তাদের ছাড়াই চলতে পারব। আমাদের শক্তি আছে, যদি আমরা সাহসী হয়ে জেগে উঠি।

আমরা স্বাধীনতা, জমি ও গৃহ, প্রগতি, স্বাস্থ্য, কাজ, শিক্ষা ও মর্যাদাকে উঁচু কন্ঠে ‘হ্যাঁ’ বলছি ! আজ আমরা আগামী দিনের জন্য বিপ্লবের বীজ বুনছি। তা আমাদের নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ও সমাজের জন্য।  আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য, এবং তাদের সন্তানদের জন্য পরিপূর্ন স্বাধীনতা ও সামগ্রীক বিপ্লবের জন্য কাজ করছি। আমরা একটি সুন্দর দুনিয়া গড়ার জন্য বিপ্লব চাই। ভবিষ্যৎ আমাদেরই হাতে।  আমাদের লড়াই এক, ভূমি এক, মানুষ এক, সংগঠন/ফেডারেশন মাত্র একটি।

একজন এনার্কিস্ট হিসাবে আমাদের সার্বক্ষনিক চেস্টা ও সাধনা হলো দুনিয়াময় একটি নতুন সমাজ গড়ে তোলা।  যে সমাজে সকলেই স্বেচ্ছাকৃত ভাবে তাদের সামর্থমত কাজ করবেন, এবং তাদের প্রয়োজন মত সব কিছু পাবেন, সেখানে থাকবে না কোন রাস্ট্র, থাকবেনা কোন প্রভূ বা দাসের অস্থিত্ব।

আসুন সকলে মিলে এক সাথে লড়াই করি  সামাজিক বিপ্লবের লক্ষ্যে !

বি এ এস এফ- বাংলাদেশ এনার্কো-সিন্ডিক্যালিস্ট ফেডারেশন ।


Share Tweet Send
0 Comments
Loading...
You've successfully subscribed to Bangladesh ASF
Great! Next, complete checkout for full access to Bangladesh ASF
Welcome back! You've successfully signed in
Success! Your account is fully activated, you now have access to all content.