সূত্রপাতঃ কর্ম ক্ষেত্র সংগঠিত করন (Organising at work: introduction)

যারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে সংগঠন/ইউনিয়ন গড়ে তুলতে আগ্রহী, এখানে তাদের প্রতি কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে।

আমাদের এই সমাজে প্রায় সকলেই প্রাপ্ত বেতনের তুলনায় অতিরিক্ত কাজ করছেন অথবা বাস্তবত অনেক কম কাজ করছেন । অনেক শ্রমিক ও কর্মজীবীর সত্যিকার কোন অধিকারই স্বীকৃত নয় । অনেক শ্রমজীবি মানুষ আছেন যারা প্রায়স চাকুরী হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত থাকেন। এখানে প্রচুর শ্রমিক আছেন যারা ব্যাপক ভাবে শোষিত ও বঞ্চিত। উন্নত দনিয়ার পিতৃভূমি খোদ ব্রিটেনে প্রতি বছর প্রায় ২০,০০০ হাজার লোক মারা যায় কাজে অব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কারনে, নানা ভাবে দুর্ভোগের শিকার হন প্রায় কয়েক মিলিয়ন মানুষ। যাদের নিত্য সংগী হলো শারিরিক পংগুত্ব, মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও উদ্বেগ ইত্যাদি ।

যারা কাজে জড়িত তাদের সাথে কথা বললে সহজেই বুঝা যায় যে প্রচলিত কর্ম ব্যবস্থায় তাঁরা একেবারেই খুশি নন। যে গণতন্ত্র নিয়ে আমাদের সমজে বড়াই করা হয় সেই সমজে কর্মস্থলে গণতন্ত্রের কোন অস্থিত্বই নেই। গণতন্ত্রের বানী সেখানে নিভৃতে কাঁদে। আমরা কি উতপাদন করি, তা কত মূল্যে বিক্রি হয়, তার মুনাফার কত অংশ আমাদের নিকট ফিরে আসে বা কত অংশ মালিক ও বসগন ভোগ করেন তা কিছু আমাদেরকে বলা হয় না । আমরা কেবল কাজ করি আর অন্দ্বকারে হাতড়ে মরি।

আমরা এখন পুঁজিবাদী সমাজে কাজ করি, কাজ করতে আমরা বাধ্য। নইলে মজুরী নেই। নিয়োগ কর্তাগন আমাদেরকে ভাড়ায় নেন। আমাদেরকে অনেক কম মজুরী দেয়া হয় । আমরা যা উতপাদন করি তার চেয়ে অনেক কম পাই। অতিরিক্ত সম্পদ পুঁজিতে যুক্ত হয়। শেয়ার হোল্ডারদের মাঝে বিতরন করা হয়, বানিজ্যিক কোম্পানীর সম্প্রসারন হয়। সকল কর্মী পন্য সৃজনকারী শোষণের শিকার হচ্ছে। আমরাই আমাদের উৎপাদিত সম্পদের ভোগ করতে পারতাম, সকল মুনাফা নিজেদের মাঝে ভাগ করে নিতে পারতাম। আমাদের প্রাপ্তির পরিমান আরো অনেক বেশী হত। এই গুলো তো আমাদেরই কর্মের ফল। আমরা যদি কাজের ব্যবস্থাপনা বদল করতে পারি তবে কম সময়ে অনেক বেশী ফল আমরা পেতে পারি। এখন আমাদের কর্মের ফল অন্যরা ভোগ করে। তা আর কত কাল চলবে ?

হ্যাঁ, আমরা আমাদের কাজের ক্ষেত্র গুলো সংগঠিত করতে চাই। এই বিষয়ে অনেক কথা সামনে বলা হবে। যা আমাদের কাজের পরিবেশ বর্তমানের চেয়ে  উন্নত করবে, আমাদের অবস্থার অন্নতি হবে। আমরা বিশ্বাস করি দল বদ্ব হলে লড়তে পারব, নয়া সমাজ গড়েতে পারব, নতুন দুনিয়ার বীজ বপন করতে পারব। যেখানে পুজিবাদ থাকবেনা, শোষণ থাকবে না। প্রতিটি কর্ম ক্ষেত্র হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অংশগ্রহন মূলক । সকল সিদ্বান্ত অংশ গ্রহন মূলক বাস্তবায়ন ও হবে সেই প্রক্রিয়ায় । শ্রমিক ও ভোক্তা সকলের ই সমান অংশগ্রহন নিশ্চিত করা হবে । ক্ষতিকারক কোন প্রতিস্টান, আইন, রীতিনীতি কিছুই থাকবে না । সকলের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করবে ।

প্রকৃত চাহিদার আলোকে প্রতি সপ্তাহে নির্ধারিত কর্মসময়ে খাদ্য, বস্ত্র, গৃহ ইত্যাদি উৎপাদন করা হবে। মুনাফা ভিত্তিক কারখানা গুলোই পরিবেশকে বেশী আক্রান্ত করে থাকে। যেমন- খনিজ তৈল, গাছ পালা কর্তন, মাটি ও পানির দূষণ ইত্যাদি। তা প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উন্নত দুনিয়া গড়ে তুলার জন্য, এবং মজুরী দাসত্বের অবসান ঘটাবার জন্য আমরা কর্ম ক্ষেত্রে সরাসরি কাজের পরিবেশ গড়ে তোলতে প্রত্যয়ী। সরাসরি কাজের পরিবেশ প্রচলিত ব্যবস্থার বসদের প্রভাবকে সংকুচিত করে দিবে। তাদের অধিক মুনাফা অর্জনের সুযোগ বিলিন করে দিবে। ডাইরেক্ট একশন বা সরাসরি কাজের বিষয়ে সামনে বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে।

এখানে আলোচিত প্রতি কর্ম কৌশলের সাফল্য নির্ভর করছে কর্মজীবী মানুষের সংহতি ও তাদের সংখ্যার উপর। কেননা সকল সম্মিলিত প্রায়স ছাড়া কোন মহৎ কাজ ই সাফল্যের মুখ দেখতে পারে না । ব্যাক্তিগত কাজ যেমন সাবুটাজ ও অন্যান্য প্রতিরোধ মূলক কাজ কোন কোন সময় আপনাকে খারাপ সময়ে ঠেলে দিতে পারে। কিন্তু সম্মিলিত ডাইক্ট একশন পদ্বতী আপনার জন্য অনেক কঠিন কাজ সহজ হয়ে উঠতে পারে।