শ্রমিক শ্রেনীর ও তাদেঁর বিপ্লবী উদ্যোগ
(বি এ এস এফ)
আজকের চলমান দুনিয়ায় অর্থনীতি, রাষ্ট্র, বুর্জোয়া রাজনীতি, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ সব কিছুই একটি বিপ্লবী পরিস্থিতিগত কারনে সামাজিক সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে। একটি সর্বাত্মক সামাজিক পরিবর্তন এখন সময়ের দাবী। কিন্তু বিপ্লবের জন্য প্রধান বাঁধা হলো, কতিপয় সর্বহারা শ্রেণীর সুবিধাবাদী চরিত্র, ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীর বড় বুর্জোয়াদের সামনে কাপুরুষচিত মানসিকতা প্রদর্শন, এমনকি পুঁজিবাদের মৃত্যু যন্ত্রনাকালে ও তাঁদের বিশ্বাস ঘাতকতা করা নিত্য নৈমিত্যিক ঘটনা হয়ে উঠেছে।
বিপ্লবী লড়াই সংগ্রামে ভাটার টান থাকলে ও - এখন সব দেশেই সর্বহারা শ্রেণী গভীর অস্থিরতায় ভুগছে। কোটি কোটি জনতা বারবার বিপ্লবের পথে এগিয়ে এসেছেন । কিন্তু প্রতিবারই তারা তাদের নিজস্ব রক্ষণশীল মানসিকতা ও আমলাতান্ত্রিক মেশিন দ্বারা অবরুদ্ধ হয়েছেন - বঞ্চিত হয়েছেন তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে।
স্প্যানিশ সর্বহারা শ্রেণী ১৯৩১ সালের এপ্রিল থেকে নিজেদের হাতে ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং সমাজের ভাগ্য নির্দেশের জন্য বীরত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলো। তবে, তাঁদের নিজস্ব দলগুলি (সোশ্যাল ডেমোক্রেট ও স্ট্যালিনিস্ট ) - তাদের নিজস্ব ধারায় বিপ্লবের বাঁধা হিসাবে কাজ করেছিল এবং ফলে, ফ্রাঙ্কোর বিজয় প্রস্তুত নিশ্চিত করে দেয় তারা। প্রান বিসর্জন দিতে হয় অগনিত লাড়াকো মানুষকে।
ফ্রান্সে, বিশেষ করে ১৯৩৬ সালের জুন মাসে "সর্বাত্মক" হরতালের বিশাল বিপ্লবী ঢেউ পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে উৎখাতের জন্য সর্বহারা শ্রেণী আন্তরিক প্রস্তুতি গ্রহন করেছিলো। তবে, পপুলার ফ্রন্টের লেবেলের অধীনে নেতৃস্থানীয় সংগঠনগুলি ( তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক ও স্ট্যালিনিস্ট) সাময়িকভাবে হলেও বিপ্লবী ধারাকে সফল হতে বাঁধা প্রদান করে।
অন্যদিকে, আমেরিকায় আশ্চয্যজনকভাবে শ্রমিক শ্রেনী এক সর্বাত্মক আন্দোলন সংগ্রামের সূচনা করে নিজেদের অধিকার আদায়ের দ্বারপ্রান্তে উপনিত হয়। তবে, সি আই এর সৃষ্ট সংগঠন গুলো তাঁদের নব ইতিহাস গড়ার সকল স্বপ্ন নস্যাৎ করে দেয়। সি আই এর সৃষ্ট রাজনৈতিক দল গুলো ও জনগণের মাঝে সৃষ্ট বিপ্লবী চেতনাকে নষ্ট করার জন্য চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি বিভ্রান্তিকর কাজে লিপ্ত হয়।
বুর্জোয়া নীতির পাশে কমিন্টার্নের সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম, বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে স্পেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য "গণতান্ত্রিক" দেশগুলিতে এর বিপরীতমুখী বিপ্লবী ভূমিকা, বিশ্ব সর্বহারার জন্য ব্যতিক্রমী পরিপূরক সমস্যা তৈরি করেছে। অক্টোবর বিপ্লবের ব্যানারে, "পিপলস ফ্রন্ট" দ্বারা সমঝোতার রাজনীতির প্রচলন করে শ্রমিক শ্রেণীকে নপুংসকতার পথে ঠেলে দিয়ে ফ্যাসিবাদের রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়।
একদিকে সাম্রাজ্যবাদ - অন্যদিকে ফ্যাসিবাদ: এগুলি সর্বহারা বিপ্লবের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সাম্রাজ্যবাদের শেষ রাজনৈতিক হাতিয়ার। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, বুঝা যায় এই দুটি হাতিয়ারই বেশ কার্যকরী। ফ্রান্সে ফ্রিজিয়ান ক্যাপের চিহ্নের অধীনে জার্মানিতে স্বস্তিকার চিহ্নের অধীনে পুঁজিবাদের ক্ষয় অব্যাহত রয়েছে। বুর্জোয়াদের উৎখাতের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। যেন এরা পালিয়ে যাবার পথ খোঁজে না পায়।
পুঁজিবাদের ক্ষয়িষ্ণু ও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থার দ্বারা জনসাধারণের এগিয়ে যাবার পথ নির্ধারিত হয়। এবং দ্বিতীয়ত, পুরনো শ্রমিক সংগঠনের বিশ্বাসঘাতক রাজনীতির দ্বারা ও তা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। এই কারণগুলির মধ্যে, প্রথমটি, অবশ্যই, একটি সিদ্ধান্তমূলক বিষয়: ইতিহাসের আইনগুলি আমলাতান্ত্রিক রীতিনীতির চেয়ে শক্তিশালী। সামাজিক বিশ্বাসঘাতকদের পদ্ধতি যতই ভিন্ন হোক না কেন-ব্লামের "সামাজিক" আইন থেকে শুরু করে স্ট্যালিনের বিচারিক কাঠামো পর্যন্ত-তারা সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লবী ইচ্ছা ভঙ্গ করতে কখনই সফল হবে না। সময়ের সাথে সাথে, ইতিহাসের চাকা আটকে রাখার তাদের মরিয়া প্রচেষ্টা জনসাধারণের কাছে আরও স্পষ্টভাবে দেখা দিবে যে সর্বহারা নেতৃত্বের সংকটই আজ মানবজাতির সংস্কৃতিতে এক মহা সংকট হয়ে উঠেছে, কেবলমাত্র সর্বপ্লাবী বিপ্লবী আন্তর্জাতিক আন্দোলন দ্বারা তা সমাধান করা যেতে পারে।