প্রসঙ্গঃ কার্ল মার্কস

প্রসঙ্গঃ কার্ল মার্কস…

১. এখন এই পরিবর্তিত পরিস্থিতে মার্কস কত টুকু প্রাসংগীক ?

সত্যিকার অর্থে কার্ল মার্কস সর্বকালের জন্যি একজন মহান চিন্তাবিদ। তিনি ছিলেন অধুনিক কালের বিপ্লবী বিজ্ঞান চিন্তার এক মহান নায়ক। মার্কসই প্রথম চিন্তার জগতে বিপ্লবী বিজ্ঞানের প্রয়োগ করেন, তার চিন্তা ছিলো অধিকতর শক্তিশালী, বিপ্লব সাধনে ও মানুষের উপর থেকে সকল প্রকার নিপিড়ন দূরী করনে এবং সাম্যবাদে উপনিত হতে সহায়ক শক্তি।

তবে মার্কসই প্রথম ব্যাক্তি নন যিনি সামাজিক পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। এরিস্টেটল ও এর আগে সরকারের পরিবর্তন সাধনের নানা পথ পন্থার কথা বলে গেছেন। এছাড়া ও – কান্ট, রুসো, এমন কি হেগেল ও এই বিষয়ে আমাদেরকে আনেক কিছু দিশা দিয়ে গেছেন। তবে এটা সত্যি যে মার্কসের আগে কেহই এই ভাবে গভীরতার সাথে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারে নাই। আমরা ইতি মধ্যে চিন্তাবিদের সাথে পরিচিত হয়েছি এর মধ্যে মার্কসের চিন্তা ধারাই গুনগত ভাবে আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়েছে। মার্কস দেখিয়ে গেছেন সমাজকে কিভাবে উতপাদন শক্তির উপর ভিত্তি করে ও সামাজিক সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করতে হয়। সামাজিক দ্বন্দ্ব কিভাবে সামাজিক পরিবর্তন, বিপ্লব সাধন, ও অস্থিরতার জন্ম দেয়। মাওবাদিগন এই পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করেছে এই ভাবে, “ বিপ্লব সাধিত হয় গাড়ীর দুইটি চাকার উপর ভিত্তি করেঃ উৎপাদন শক্তি এবং শ্রেনী সংগ্রাম”। মার্কস গানিতিক সূত্র ব্যবহার করেছেন তার বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য, পুজিবাদি পদ্বতি ব্যবহার বা তা কেবল পুজিবাদি অর্থনীতিবিদদের মত ও নয়। তিনি এর সাথে ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ও মিশ্রন ঘটিয়েছেন। যা আমাদের সামনে জীবন জগতের একটি চিত্র ও তোলে ধরে। মার্কস এও দেখিয়েছেন আমরা আমাদেরকে কিভাবে অনুধাবন করি, একে অন্যকে এমন করে দেখি, রাজীনিতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে শ্রেনী সংগ্রাম কেমন করে কাজ করে এবং সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন সাধন করে এবং সামাজিক কাঠামোই আমাদেরকে এই বিশ্ব জগত সম্পর্কে দৃষ্টি ভঙ্গী দান করে। উদাহরন হিসাবে উল্লেখ করতে হয় যে তিনি ই লিখেছিলেন যে, দুনিয়ার পবিত্র পরিবার আসলে পবিত্র কিছু নয় বরং তাই হলো সাধারন পরিবার। ইশ্বরকে বুঝার জন্য তিনি বলেছেন ইহা আমাদের পিতা কেন্দ্রিক পরিবারের ই প্রতিচ্ছবি। আমরাই আমাদের পরিবারের ধরন অনুসারে সমাজ, দেশ ও বিশ্বকে গড়ে তুলতে চেয়েছি। আমরাই ইশ্বর সৃস্টি করেছি। তার নিকট থেকেই জীবন এসেছে তাও ভেবে নিয়েছি। মানুষ ভূলে গেল যে ওরাই আসল কর্তৃপক্ষ। মানুষই মানুষকে সাহায্য করতে পারেন। এই সকল ধারনার উৎপত্তি হয়েছে পিতৃতান্ত্রিক প্রতিস্টান থেকে । তবে, সব চেয়ে বড় অবদান হলো যে, চিন্তাধারায় বিপ্লবী বিজ্ঞানের বিকাশ। যদি ও মার্কসের বেশ কিছু ভবিষ্যৎবানী সত্য প্রমানিত হয়নি, কিন্তু এর পর ও এটা সত্য যে মার্কসবাদ একটি বিজ্ঞান। তাই এখন কার বিপ্লবী বিজ্ঞান হলো আ্লোকিত সাম্যবাদ। যার লক্ষ্য হলো সকল প্রকার নিপিড়নের অবসান করা, সামগ্রীক স্বাধীনতা প্রদান করা এবং সত্যিকার সাম্যবাদে উপনিত হওয়া।

২. কিছু লোক এখন বলছেন বিপ্লব সাধনের জন্য মার্ক্সবাদে ফিরে যাওয়া উচিৎ। তারা বলছেন লেনিন, মাও, ও অন্যান্যদেরকে ভূলে যাও … এই প্রসংগে আপনার মতামত কি ?

এমন কিছু লোক আছেন যারা মার্কসের লিখা এমন ভাবে পড়ছেন, যেভাবে মুসলিম শিশুরা তাদের কোরান মুখস্থ করেন।তারা মনে করেন মার্কসের রচনা সমগ্রের ভেতর বোধহয় বিপ্লব লুকিয়ে আছে। তারা ভাবছেন আজ বিপ্লব করতে যে সকল সমস্যা রয়েছে তার সমাধান বুঝি ১৮০০ শতকের পুস্তাকাদিতে বিদ্যমান আছে। তারা মার্কসের সময় থেকে অধ্যাবদি যে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা আছে তা অনুধাবন করতে চান না । তারা এটা ও মানতে চাইছেন না যে ১৮৪৮ সালে ইংলেন্ড আর আজকের ইংলেন্ড এক জিনিস নয় । তারা বুঝতেই চান না যে সাম্রাজ্যবাদ কেমন করে দুনিয়ার চাহেরা পালটে দিয়েছে । তাদের মতে, ধর্মের মতই মার্ক্সের নিকট সকল প্রশ্নের জবাব নিহিত আছে। তাদের নিকট মার্ক্সবাদ একটি ধর্ম ছাড়া আর কিছুই নয়, তাদের কাছে মার্ক্সবাদ বিজ্ঞান হিসাবে বিরাজমান নয়। তারা কতিপয় মার্ক্সীয় সূত্র কেবল মূখস্থ করে চলেছেন।তারা আসলে আদতএ মার্ক্সবাদি নন। তারা আসলে অধিবিদ্যার অনুসারী। তারা বিপ্লবী শক্তি ও নয়। অধিবিদ্যার অনুসারীরা ক্ষমতায় যেতে পারবে না কোন দিন । মাও এই ধরনের বই কেন্দ্রীক মানসিকতাকে “পুস্তক পূজা হিসাবে অভিহীত করেছেন”। সত্যিকার মার্ক্সবাদি হলে আলোকিত সাম্যবাদিগন। তারা সকল প্রকার বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন, বিপ্লবী বিজ্ঞান ও পাঠ করেন মনোযোগ দিয়ে । সত্যিকার বিজ্ঞানীর জন্য মার্ক্স হলেন একজন সূচনা মাত্র । কিন্তু যদি কেবল মার্ক্সেই সিমাবদ্ব হয়ে পড়েন তবে চরম ভূলে নিমজ্জিত হবেন। মার্ক্স হলেন সূচনা এর পর লেনিন তার পর মাওসেতুং সর্বশেষ স্থর হলো আলোকিত সাম্যবাদ ।

আমরা কি কেবল নিউটনের সূত্র পাঠককে সত্যিকারের বিজ্ঞানী বলতে পারি ? অবশ্যই নয়। নিউটনের পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রকে আইনস্টাইনের কোনান্টাম সূত্র অনেকাংশেই পালটে দিয়েছে । কেহ যদি কেবল নিঊতোনের সূত্র নিয়েই সর্বদা মত্ত থাকেন বা নিজেকে উচ্চতর বিজ্ঞানের সাধক বলে দাবী করেন তবে বলতেই হবে লোকটি পাগল বা মাথা নস্ট। আর এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে বিজ্ঞানের জগতে নিউটনের গুরুত্ব কম। অবশ্যই পদার্থ বিজ্ঞানের সমস্যা সমূহকে সমাধান করতে হলে সামগ্রীক সূত্র গুলোকেই ব্যবহার করতে হবে । এই ক্ষেত্রে প্রাগ্রসর চিন্তাকেই গুরুত্ব দিতে হবে । এর মানে এই দাড়ায়না যে আমরা নিউটনকে ফেলে দিয়েছি। কিন্তু আমরা আবার তাকে ক্ষেত্র বিশেষে অতিক্রম ও করে গিয়েছি। এই কথা কিন্তু মার্কসের ব্যাপারে ও প্রযোজ্য হয়। আমরা যেহেতু পদার্থ বিজ্ঞানের সমস্যার সমাধান করতে চাইছি তাই আমাদেরকে অবশ্যই আইনস্টাইনের মত করে ভাবতে হবে। আর সেই ভাবনারি নামান্তর হলো আলোকিত সাম্যবাদ। আমরা বিপ্লবের জন্য মার্ক্স, লেনিন, ও মাওকে অবশ্যই ব্যবহার করব। সত্যিকার বিজ্ঞান সকল সময়ই এগিয়ে চলে, ইহা কোন সময়ই সময়ে গন্ডিতে আটকা পড়ে না । যদি চলমান দনিয়ার সকল কিছুকেই মার্ক্সীয় দৃস্টিতে দেখা হয় তবে তা হবে অধিবিদ্যার বা ধর্মের নামান্তর। আমরা অবশ্যই সামনের পানে এগিয়ে যাব। ডগমাকে পেছনে ফেলে মার্ক্সবাদের আসল বিজ্ঞান ভিত্তিক চেতনাকে ধারন করব। আমাদের এগিয়ে চলার পথ হবে আলোকিত সাম্যবাদের পথ।

৩. কতিপয় লোক বলেন দুনিয়ায় কখনও মার্ক্সীয় সমাজ কায়েম হয়নি। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি ?

একটি পুরতন কৌতুক চালু আছে যে এক ব্যাক্তি সকল জায়গায়ই সমাজতন্ত্র দেখতে পান, কেবল যেখানে সমাজতন্ত্র আছে সেখানেই তা তিনি দেখেন না । লোকেরা তাদের মনে যা চায় তাই বয়ান করতে পারেন। মাওবাদিরা সর্বদা একটি কথা বলেন যে, লালা পতাকা দিয়েই লাল পতাকার বিনাশ করা হয়। দুনিয়ায় বহু মানুশ আছেন যারা নিজেদেরকে মার্ক্সবাদি বলে দাবী করেন, তারাই আবার মার্ক্সবাদের বিপ্লবী ইতিহাসকে অস্বীকার করে থাকেন। তারা সকল জায়গায় মার্ক্সবাদ অবিস্কার করেন, কেবল যেখানে তা আছে তা স্বীকার করতে চান না । লেনিন যে বিপ্লব সাধন করেছিলেন তা আস্ত দুনিয়ার প্রায় ছয়ভাগের এক ভাগ দখল করেছিল। তার বিপ্লবের আওতায় ডজন খানেক জাতি ও ভাষার মানুষ অন্তরভূক্ত ছিলো। ভলশেভিক বিপ্লব দুনিয়ার মানুষের দৃষ্টি কেড়ে ছিলো।দুনিয়ার মানুষ সোভিয়েতের দিকে থাকিয়ে ভরসায় বুক বেঁধেছিলেন। আর সেটাই ছিল দুনিয়ার সামনে প্রথম উদাহরন যেখানে সাধারন মানুষ রাজনৈতিক ক্ষমতা ও কৃতৃত্ব গ্রহন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে সেটা ছিলো দুনিয়ার সব চেয়ে বড় সামাজিক পরীক্ষা নিরীক্ষার স্থান ফলে কিছু ভূল হয়ে গিয়েছিলো। ইহা আবার অনেক বিজয় ও এনে দিয়ছিলো। কতিপয় কল্পনা বিলাশী মানুষ বলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে ভূল ছিলো। আমরা ও বলছি হ্যা সেখানে কিছু ভূল হয়ে গিয়েছিলো। মনে রাখতে হবে এটাই ছিলো সাধারন মানুষের ক্ষমতায় অসীন হবার প্রথম পরীক্ষা । সেটাই ছিলো ইতিহাসে দরিদ্র মানুষের রাস্ট্র পরিচালনার প্রথম অভিজ্ঞতা। এদের হাতে কোন রোডম্যাপ বা কোন মডেল ও ছিলোনা । তার পর ও তারা মাত্র কয়েক দশকে ইউরূপের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া একটি অঞ্চলকে অধুনিক এবং বিশ্বের সুপার পাওয়ারে উন্নিত করে দেয়। তারাই প্রথম একটি বিশাল দেশের জন্য পরিকল্পিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রনয়ন করে দেয়। তারা শ্রমিকদেরকে ক্ষমতায়ন করে, দরিদ্রকে, নারীকে ও নিপিরীত জাতি সমূহকে ক্ষমতায়ন করে দেয়। তারাই একটি সার্বহারার সংস্কৃতি তৈরী করে। তারাই হিটলারের ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করে দেয়। তবে সেখানে সমাজতন্ত্র স্থায়ীত্ব লাভ করতে পারেনি।

মাওসেতুং যে বিপ্লব সাধন করেছিলেন তা ও দুনিয়াকে প্রচন্ড ভাবে দুনিয়াকে নাড়া দেয়। সেই বিপ্লবের আওতায় কেবল চীনেই পৃথিবীর চার ভাগের একভাগ বসবাস করছিলেন। সেই বিপ্লব চিণের জনগনের পিঠের উপর চেপে থাকে দুইটি পাহাড়কে সরিয়ে দেয়ঃ যার একটি ছিলো সামন্তবাদ আর অন্যটি ছিলো সাম্রাজ্যবাদ। সেই চীনে মাওসেতুং তার দেশের জনগনকে সমাজতন্ত্রের উচ্চ শিকরে উন্নিত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই বিপ্লব পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ নারীর জিবনকে ও চুয়ে যায়। নারীরা সামন্তবাদের নিগর থেকে বেড়িয়ে এসে মুক্ত জীবনের স্বাদ পায়। সামন্তবাদ চীনের মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে দেয়। কর্মস্থান ও গ্রামীন জীবনের তৃন মূলে গনতান্ত্রিক আবহ সৃজন করে। চীন সামন্ততান্ত্রিক ছায়া থেকে বেড়িয়ে আসে। ইহা একটি পরমানু শক্তির দেশ ও বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ হিসাবে আভির্ভূত হয়। অনেকটা সোভিয়েত ইউনিয়নের মতই গড়ে উঠে এবং একেই রকমের ভূল করতে থাকে । কিন্তু জনগন ঠিকই এগিয়ে যায়, উন্নত জীবন যাপন করতে থাকে । শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সচেতনতা বৃদ্বির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে । চীন ও সোভিয়েত জনগনের আয়ুষ্কাল দ্বিগুন হয়ে যায়। সাধারন মানুষ প্রথম বারের মত সত্যিকার ক্ষমতার স্বাদ পায়। তারা তাদের শিশুদের জন্য উন্নত জীবনের ব্যবস্থা করে ফেলে। তা দেখে দুনিয়ার সকল মানুষ অনুপ্রানিত হয়। দেশে দেশে সেই রকম বিপ্লব সাধনের জন্য মানুষ এগিয়ে আসে । মানুষ অবাক হয়ে ভবে এই রকমের বিপ্লব তো আগে কখনো ঘটে নাই । তা আমরা কেমন করে স্ব স্ব দেশে সম্পাদন করতে পারি ?

যারা বিপ্লবের এই ধারাবাহিকতাকে অস্বীকার করে তাদের কিন্তু প্রকার সফলতা নেই। যারা লেনিন ও বিপ্লবকে অস্বীকার করেন তারা আসলে কোথাও কিছুই করতে পারেন নাই। ভেবে দেখুন, তারা দুনিয়ার কোথাও একটি দেশে ও বিপ্লব সাধন করতে পারেন নাই । এমন কি তারা বিপ্লবের কিনারাতে ও যেতে পারেন নাই। ওরা নিজেদেরকে বিপ্লবী বলেন অথচ কোথাও একটি বিপ্লব ও করতে পারল না । তারা নিজেদেরকে বিপ্লবের বিজ্ঞানী বলে দাবী করেন অথচ বিপ্লবের পোড়ো ইতিহাসটাকেই অস্বীকার করে । তারা আসলে মানুষকে শেখায় কি করে হারতে হয় বিজয়ী হতে শেখায় না ।

ওরা জনগনের শক্তিকে ধ্বংস করে দিতে চায়। মানুষকে অসুস্থ্য ধারায় টেনে নিয়ে বিফল করে দিতে চায়। আলোকিত সাম্যবাদ মানুষকে বিফল হতে দিতে চায় না । আমরা মানুষ বিজয়ী হতে বলি। আমাদের আগে যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের নিকট থেকে শিক্ষা নিতে চাই। বিপ্লবী বিজ্ঞান মানেই হল সফলার শিক্ষা, বিফলতার কথা বলে না । আলোকিত সাম্যবাদ এখন বিজয়ের অতি সন্নিকটে।

৪. কেহ কেহ বলেন যে কেবল মাত্র শ্রমিক শ্রেনীই সাম্যবাদি বিপ্লব সাধন করতে পারে- অন্য কেহ নয়। এটা কি সত্যি ?

অবশ্যই নয়। এই ধরনে কথাবার্তা আসলেই হাস্যকর। মার্ক্স নিজও কোন শিল্প শ্রমিক ছিলেন না । সত্যিকার অর্থে এঙ্গেলস ছিলেন একজন বুর্জোয়া শ্রেনীর মানুষ। লেনিন, মাও এবং লিন পিয়াং এদের কেহই শ্রমিক শ্রেনীর লোক ছিলেন না । চে গুয়েভারা ও নহেন। আসল কথা হলো, মহান বিপ্লবীদের কেহই শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ ছিলেন না । স্ট্যালিন অনেকটা কাছা কাছি থাকলেও তিনি নিজে শ্রমজীবী ব্যাক্তি নন। তবে তিনি শ্রমজীবী মানুষের সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বলশেভিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। বিপ্লবের ইতিহাসে দেখা যায়, সমাজের উচ্চ শ্রেনীর বা মধ্যবিত্ত বা মিশ্র শ্রেনীর লোকেরাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দান করেছেন। এর পিছনে যে সকল কারন দেখা গেছে তা হলো আলোকিত সাম্যবাদিদের পক্ষেই বিপ্লবী বিজ্ঞানকে সাকলের নিকট উপস্থাপন করা সম্ভব। এটা করতে গিয়ে তাদের কিছু সুযোগ সুবিধা থাকতে হয়। যেমন তারা তাদের এক পা বিপ্লবী কর্মের পাশা পাশি বিজ্ঞান সাধনার জগতে ও আর এক পা বুদ্বি বৃত্তিক চর্চায় রাখতে হয়। এই কাজ করার জন্য তাদের কিছু অবসর সময়ে দরকার হয়। কিছু অধ্যয়ন করতে হয় চিন্তা ভাবনা করতে হয়। এই অবসর সময় কিন্তু গরীব শ্রমিকদের জন্য সম্ভব হয় না । গরীব মানুষকে সর্বদাই পেটের দায়ে কর্ম ব্যস্ত থাকতে হয়। তাদের পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। অধিকন্ত একজন মহান নেতাকে সর্বদা কাজ করতে হয় মানুষের মাঝে থেকে, আবার বুদ্বি বৃত্তিক চর্চা ও করতে হয় সত্যিকার ভাবে জনগনের মুক্তির পথ নির্দেশনার জন্য ।

কোন কোন সাম্যবাদি নেতা যেমন হতে পারেন এক জন সত্যিকারের বিপ্লবী । আবার শ্রমিক শ্রেনীর নেতৃত্ব ও হতে পারেন চরম প্রতিক্রিয়াশীল। উদাহর হিসাবে আমরা হিটলারের কথা বলতে পারি । তার সমর্থক নেতা কর্মীদের মধ্যে বেশীর ভাগ মানুষ ছিলেন শিল্প শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ। তারা অন্যান্য শ্রেনীর মানুষের মতই খুনি, ধর্ষন কারী ও প্রতিক্রিয়াশীল হিসাবে ভূমিকা রাখেন। শ্রেনী সংগ্রামের জন্য দরকার হলো গভীর ভাবে সুচিন্তিত বিপ্লবী কর্ম পরিকল্পনা । বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে শ্রমিক শ্রেনীর মানুষেরা তাৎক্ষণিক প্রাপ্তির উপর নির্ভর করে । অথচ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হলো এক্তী দির্ঘ মেয়াদি ও পরিকল্পিত বিপ্লবী কাজ।

বিজ্ঞান হলো সেই জ্ঞান যা শ্রমিক শ্রেনীর চোখ খোলে দেয়। সেই বিজ্ঞান আসে কর্মজীবী আন্দোলনের বাহির থেকে। আলোকিত মানুষেরা কর্মজীবী মানুষের আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করিয়ে দেয়, আর সেই কর্মটি সম্পাদিত হয় বিপ্লবী সংগঠনের মাধ্যমে। কর্মজিবী মানুষেরা বিপ্লবী নেতাদের কাছ থেকে বুঝে নেন। তাই বিপ্লবী সংগঠন ও বিপ্লবী নেতৃত্ব গড়ে তুলা দরকার । কর্মজীবী মানুষেরা ঠিকই আন্দোলনের সীমাবদ্বতা ও দুর্বলতা বুঝতে পারেন।

প্রকৃত সাম্যবাদিরা বুঝতে পারেন যে রাজনীতি কোন সখের বিষয় নয়, ইহা একটি কমান্ড। প্রকৃত সত্য হলো, সাম্যবাদ আন্দোলন সংগ্রামে কোন দূর্বলতা থাকলে তা কে গতিশীল করতে উৎসাহিত করে। দৃঢ় নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে ।

যেকোন মানুষ যে কোন শ্রেনী থেকেই সাম্যবাদি হতে পারেন, যদি তিনি সত্যিকার বিপ্লবী বিজ্ঞানের চেতনা ধারন করেন। আলোকিত সাম্যবাদিরা ইতিমধ্যেই তা তাদের চর্চার ভেতর দিয়ে প্রমান করেছেন।

৫. মার্ক্স তার লিখনিতে পন্যের “ফেটিস চরিত্র” বলতে কি বুঝিয়েছেন?

পন্যের ফেটিস চরিত্র বলতে বুঝানো হয় যে পন্যটিকে মানুষ কি মূল্যদেয়, ইহা মানুষের সৃজন করার জন্য কি পরিমান শ্রম দিয়েছে। ইহা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ভাবে কতটুকু মূল্য ধারন করে। অর্থাৎ মানুষ একে কিভাবে মূল্যান করে। অনেকটা ইশ্বরের মত বিষয়। মানুষ ইশ্বরের ধারনার উদ্ভাবক। মার্ক্স যখন বললেন যে পবিত্র পরিবারের ধারনাটা আসলেই অর্থহীন সবই পার্থিব বিষয়। ইশ্বরের ধারনাটি আসলে এসেছে পরিবারে পিতার ধারনা থেকে । বিশ্ব জগতের একজন নিয়ন্ত্রা হিসাবে। পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ও সমাজ কাঠামোকে ইশ্বরের ধারনার সাথে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে। যা এখন আমাদের সমাজে একটি বাস্তবতা হিসাবে বিরাজমান। একেই ভাবে, পন্যের ও একটি মূল্য দাঁড়িয়ে গেছে, যা মানুষই সৃজন করে প্ররতিস্টিত করে ফেলেছে। মানুষ যেমন ইশ্বরের নিকট থেকে ক্ষমতা প্রাপ্ত হন তেমনি পন্য থেকেও মানুষ নিজের ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। পন্য ও ঈশ্বর উভয়ই সামাজিক পরিস্থিতির ও মানব কর্মের ফল।

একটি বিষয় সত্যি যে পন্য থেকে কর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, উৎপাদন থেকে মজুর রা বিচ্ছিন হয়ে যান। কর্মীরা দেখতে পান যে পন্যটি তাদের নিকট থেকে বিচ্ছিন হয়ে স্বাধীন ভাবে বিচরন করছে। পন্য কর্মীর কথা ভূলে যান। যে ভাবে এজন দাসকে ভুলে যেতে হয় তার সৃজিত পন্যকে। সাধরন অর্থনীতি বিধি মোতাবেক লোকেরা দেখতে পায় যে, পন্য থেকে একজন কর্মী বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এটাই স্বার্বজনীন বিষয়। ইহা অপরিবর্তনীয় হিসাবেই চলে আসছে। একেই ভাবে তারা দেখেন যে পুঁজিবাদ এক্টী অপরীবর্তনীয় বিষয় হিসাবেই সমাজে ঠিকে আছে।

বিপ্লবের ভ্যানগার্ড হিসাবে আলোকিত সাম্যবাদিরা সচেতন ভাবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রয়জনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন। তারা সমাজকে নতুন ভাবে গড়ে তুলবেন। বিপ্লবী বিজ্ঞানের অনুসারী আলোকিত সাম্যবাদিরা সকল প্রকার প্রহেলিকার অবসান ঘটিয়ে সত্যকে প্রতিস্টিত করবেন। ইহা বলবে “ আপনিই হলে সকল পন্যের স্রষ্টা, আপনিই আপনার গন্তব্যে যেতে পারেন। সত্যিকার ক্ষমতা আপনারই হাতে। ভবিষ্যৎ আপনারই হাতে।

৬. মার্ক্স কেন বললেন যে, “আমি মার্ক্সবাদি নই” ?

এই বিষয়টি এঙ্গেলসের লিখনীতে উল্লেখিত আছে যে, এই কথা বলেছিলেন। তার উদ্বৃতিতে, মার্ক্স কিন্তু তার কাজকে অস্বিকৃতি দেন নাই। বরং মার্ক্স ফ্রান্সের তথাকতিত “মার্ক্সবাদিদের” দাবীদারদেরকে সমালোচনা করতে গিয়ে এই কথা বলেছিলেন। এঙ্গেলস তাদেরকে তথাকতিত “মার্ক্সবাদি” বলেছেন। সেই বক্তব্য সংষোধনবাদের বিরুদ্বে ছিলো। মার্ক্সের কথা ছিলো তারা ঐ শোধনবাদিরা যদি হয় মার্ক্সবাদি তবে আমি আর মার্ক্সবাদি নই, আমি সংশোধনবাদি নই, আমি প্রতিবিপ্লবী নই। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কালে চীনে কমিউনিস্টগন বলতেন যে, “ যারা লাল পতাকা উড়ায় তারা ই লাল পতাকার বিরুধীতা করেন”। যারা লাল পতাকা উত্তোলন করেন, তারা নিজেদেরকে যা খুশি দাবী করতে পারেন। “সাম্যবাদি”, “সমাজবাদি”, “মার্ক্সবাদি,” “মাওবাদি”, “বিপ্লবী” ইত্যাদি। বিপ্লবী সূর তোলে যা খুশি করা যায়। বিপ্লবের শ্ত্রুরা বহু অপকর্ম করেছে। আমরা সেই জন্য বলি কেবল মূখ দেখে কাঊকে মূল্যায়ন করা যাবেনা । যারা সত্যিকার বিপ্লবী নন তারা প্রায়সই নানা অতি উৎসাহ দেখায়। নানা প্রকার বিপ্লবী সূর গুল করে থাকেন। আসল কথা হল কেবল ছবিটী ই সব কিছু নয়। দেখতে হবে সত্যিকার বিষয়টি কি হচ্ছে। বিপ্লবী বিজ্ঞানের চর্চার দিকটি দেখতে হবে প্রথমেই। রাজনীতি মানেই হলো একটি কম্যান্ড। এবং তার সাথে দেখতে হবে তাদের ব্যক্তিগত জীবনাচার। ত্যাগ, অনুগত্য, শৃংখলা ইত্যাদি। তারাই আলোকিত সাম্যবাদি যারা কেবল কাজ করেন বিপ্লবের জন্য সুন্দর আগামী গড়ে তুলার জন্য।

আমরা এখন নানা দিক থেকে আক্রান্ত হচ্ছি । রাস্ট্রীয় দালাল, এমনকি মার্ক্স, লেনিন ও মাওবাদের মুখুষ পড়ে আছে এমন লোকেরা ও আমাদের ক্ষতি করছে। জনগনের আন্দোলন সংগ্রামকে বাধাগ্রস্থ করছেন। বোকামী করছেন, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লাল পতাকা উড়িয়ে বসে আছেন। নিজেদেরকে সাম্যবাদি বিপ্লবী হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন। আমাদের এখন মনে রাখতে হবে যে চীনের বিপ্লবীরা কি বলে সতর্ক করেছিলেনঃ “ পুন; পুন উদ্দৃতি ওয়ালাদের থেকে দূরে থাকুন”। বহু বেজাল পথ ও পন্থার উদ্ভব হয়েছে, কিন্তু সত্যের পথ একটিই। যারা সত্যিকার অর্থেই চায় যে আমাদের এই প্রিয় পৃথীবীটি স্বাধীন ভাবে চলুক। মানুষ নিপিড়ন মুক্ত হোক। তারা আমাদের সাথে আসতে পারেন। আমরা ই জনগণের শক্তির উপর ভরসা রাখি।


Share Tweet Send
0 Comments
Loading...
You've successfully subscribed to Bangladesh ASF
Great! Next, complete checkout for full access to Bangladesh ASF
Welcome back! You've successfully signed in
Success! Your account is fully activated, you now have access to all content.