ফিল্ম রিভিউঃ ডিস্ট্রিক্ট-৯,

ফিল্ম রিভিউঃ ডিস্ট্রিক্ট-৯,

ফিল্ম রিভিউঃ ডিস্ট্রিক্ট-৯,

slice_district_9_official_movie_poster_02

ডিস্ট্রিক্ট ৯ হলো একটি কৃত্তিম প্রামান্য চিত্র  এটা এয়লিয়েনের একটি জাহাজের আগমনকে কেন্দ্র করে নির্মিত, যা প্রায় এক দশক আগে ফিরে গেছে। ফিল্মটি শুরু হয়েছে সাউথ আফ্রিকার জোহান্সবার্গের উপর দিয়ে উড়ে আসা একটি এলিয়েন জাহাজ দিয়ে। যখন মানুষ সেই জাহাজটিতে উঠল তখন দেখতে পেল জাহাজে জীবন্ত এলিয়েনরা বিক্ষিপ্ত ভাবে পড়ে আছে, যারা জাহাজটি পরিচালনা করতে জানে না । তখন লোকেরা অনুমান করল যে হয়ত এলিয়েনদের মধ্যে যারা জাহাজ চালাতে পারতেন তারা কোন অজ্ঞাত রোগে মারা গেছে।  কেবল “সাহায্যকারী” এলিয়েনরা বেচে আছে। জোহান্সবার্গের ডিস্ট্রিক্ট ৯ এ জাহাজে পাওয়া এলিয়েনদেরকে কেবল “এলিয়েনদের জন্য” নির্মিত একটি তাবুতে স্থানান্তর করা হলো।  এই তাবুটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হলো একটি বহুজাতিক কোম্পানিকে (বকো), এই কোম্পানী প্রতিরক্ষা ও এলিয়েন বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একটি প্রতিস্টান। মানব কতৃক এলিয়েনদের সাথে বিরক্তিকর আচরন যেন না হয় সেই জন্য (বকো) তাবুটিকে নির্জন স্থানে স্থানান্তর করে ফেলে। স্থানান্তর কালিন সময়ে একজন প্রশাসক উইকুজ ভ্যান দার ম্যারু (Sharlto Copley) মানব-এলিয়েন সমন্বয়ে এক প্রকার হাইব্রিড প্রজাতির উত্পত্তি করে ফেলেন। উইকুজ এলিয়েনদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাদের নিকট থেকে ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। উইকুজ (বকো) ও নাইজেরিয়ান চক্রের হাতে শিকার হয়ে যান। কারন তাদের উদ্দেশ্য ছিলো এলিয়েনদের শক্তি কাজে লাগিয়ে বিশেষ করে মানব যে সকল অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেনা তা এলিয়েনদের মাধ্যমে ব্যবহার আয়ত্বে আনা । অর্থাৎ এলিয়েন প্রযুক্তির ব্যবহার কাজে লাগানো। উইকুজকে জোর করে মানব সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ডিস্ট্রক্ট ৯ এ নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনা ক্রমে তিনি ক্রিস্টোফারের সাথে মিলিত হন, ক্রিস্টোফার হলেন সেই বুদ্বিমান এলিয়েন যার ইঞ্জিন বিষয়ক জ্ঞান আছে যা দিয়ে তিনি তাদের জাহাজটিকে পুন নির্মান ও উড়াতে সক্ষম । ক্রিস্টোফার উইকুজ কে প্রস্তাব দিলেন যে, তাকে মানুষের সমাজে ফিরে যেতে সাহায্য করা হবে, তবে এর জন্য আরো তিন বছর সময় লাগবে, যদি উইকুজ তাদেরকে তাদের (বকো) কর্তৃক দখল কৃত প্রযুক্তি পুনরুদ্বারে সহযোগীতা করেন । কেন না ক্রিস্টোফারের দরকার হলো তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি পুনরুদ্বের করে তাদের জাহাজটিকে পুন নির্মান ও উড়িয়ে নিজ আবাস ভূমে ফিরে যাওয়া ও অন্যান্য এলিয়েনদেরকে পুনরুদ্বার করে স্ব স্ব স্থানে নিয়ে যাওয়া।

জাতীয় নিপিড়ন ও বর্নবাদ

ডিস্ট্রিক্ট ৯ হলো  বর্নবাদের সমালোচনার একটি সচেতন উদ্যোগ। এটার পটভূমিতে সাবেক দক্ষিন আফ্রিকার জোহান্সবার্গে  যে দূর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে  তা আসলে কিছু নয়। ইহার শিরোনাম “ডিস্টিক্ট ৬”, হিসাবে প্রচলিত আছে। ১৯৬৬ সালে কেবল মাত্র “সাদা বর্নের মানুষের জন্য” ক্যাপ টাউনকে তাদের আবাস স্থল হিসাবে ঘোষনা করা হয়। সেই সময় প্রায় ৬০,০০০ হাজার আফ্রিকান অধিবাসীকে সেই শহর থেকে জোর পূর্বক উচ্ছেদ করে  ২৫ কিলোমিটার দূরে ডিস্ট্রক্ট ৬ এ স্থানান্তর করা হয়। এই ফিল্ম এ মুলত দর্শকদেরকে বুঝানো হয় “কোন এলিয়েন নয়” আসলে “কেবল মানুষের” কথাই বলা হচ্ছে।

এই ফিল্ম একটি রিফিউজি ক্যাম্পের প্রদর্শন করে, যদি ও  এলিয়েনদেরকে দেখানো হয় কিন্তু আসলে এরা মানুষেরই প্রতিক, এরা আফ্রিকান বা ফিলিস্তিনের রিফিউজিদের প্রতিচ্ছি মাত্র। এই ক্যাম্প তৃতীয় বিশ্বের যে কোন ক্যাপের সাথে তুলনীয় পার্থক্য কেবল এখানে এলিয়েন দিয়ে সাজানো। এই গুলো শহর যেখানে নির্মমতা, অত্যাচার, অবিচার ও বঞ্চনা মানুষের নিত্য সংগী। যাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই। সেখানো দেখা গেছে ক্যাপের কর্তৃপক্ষ জোর করে সেনাবাহিনী ব্যবহার করে মানুষের উপর নিপীড়ন চালিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করে নিয়ে যাচ্ছে। এই সেনা বাহিনী (বকো) কর্তৃক নিয়োজিত।

এই ফিল্মে দেখানো হয়েছে সাম্রাজ্যবাদি চক্র যেমন হাস্যকর ভাবে নিজেদের অপকর্মের আইনগত বৈধতা দেয় এখানেও তাই করা হয়েছে। উত্তর আমেরিকা যে ভাবে নানা দেশ দখল করে আর একের পর এক চুক্তি সই করে দেশের পর দেশ কে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দেয় একেই ভাবে ডিস্ট্রিক্ট ৯ এ ও তাই করা হয়েছে। এখানে বকো রা এলিয়েনদেরকে উচ্ছেদের নোটিশ প্রাদান করে এবং পরে তাদেরকে উচ্ছেদের জন্য সেনাবাহিনী তলব করে। স্বাভাবিক ভাবে এই ফিল্মে ও দেখা গেল যারা সই স্বাক্ষর দিলেন তারা চুক্তি কি লিখা আছে তা পড়তে পারেন নাই, কেননা তা তো ইংলিশ ভাষাই জানে না । (বকো)রা এলিয়েনদেরকে বিড়াল খাবার খাইয়ে নেশাযুক্ত করে ফেলে যা তাদেরকে উচ্ছেদে সহায়ক হয়। সাম্রাজ্যবাদিরা সাধারনত অন্যন্য জাতির সাথে যা যা করে সেখানে ও তারা তাই করতে শুরু করেছেঃ ওরা এক সময় চীনের বিরুদ্বে অফিম,  উত্তর আমেরিকা ও ইন্দোনেশীয়ায় মদ ইত্যাদি ব্যবহার করেছে।

ফ্রন্টেজ ফেনন আলোচনা করছেন নিপিড়িত মানুষকে কিভাবে পুশুর স্তরে নামিয়ে রাখা যায়। তবে, কেবল পশু বানালেই হবে না তাদেরকে আচার আচরনে উগ্র করে দিতে হবে। তাদের এই উগ্রতা আমাদের পক্ষে জনমত তৈরী করতে সহায়ক হবে । উপনিবেশ বাদিদের মতে, উপনিবেশ গুলোকে পশুদের খামারে পরিনিত করতে হবে। তা থেকে দূর্গন্দ ছড়াবে। এই গুলো এমন হবে যা “লাতিন ক্ষুদ্র উপনিবেশিক নোংরা” বস্তির মত হবে। তা আইরিশ, আফ্রিকান ও ভারতীয় ধরনের হবে। এলিয়েনদের গা থেকে যেমন গন্দ্ব ছড়ায় তেমনি তাদেরকে ও দেখতে শুকরের খামারের মত দেখাবে। এলিয়েনরা যেমন  “মিটমিট” করে থাকায় তেমনি তাদের অবস্থা ও তেমন হবে। তাদের পশুত্ব বড় জোর যৌনতা পর্যন্ত  পৌঁছাবে। গনমাধ্যমে বড় আকারে প্রাকাশ করা হবে যে উইকিযু সকল নিয়মতান্ত্রিকতা ভূলে এলিয়েনদের সাথে   যৌন কর্মে লিপ্ত হয়েছে মানব ও এলিয়েনদের মধ্যে সমন্বয় সাধনে একটি নতুন প্রজাতি সৃজনের জন্য ।

যদি ও এই ফিল্মটির উদ্দেশ্য ছিলো বর্নবাদের সমালোচনা তুলে ধারার, কিন্তু তা আসলে নাইজেরিয়ার চলমান অবস্থাটাই তুলে ধরেছে। নাজেরিয়ার মাফিয়া চক্র নানা প্রকার অবৈধ অভিযান চালিয়েছে। কারাপ কাজ করেছে। তাদেরকে মূর্খ, কুসংস্কার, ক্ষেপাটে হিসাবে দেখানো হয়েছে। উদাহরন হিসাবে দেখা যায় যে, আফ্রিকান শেমন তার  নাইজেরিয়ান দলনেতাকে বলছেন এলিয়েনদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

শয়তানী কায়দায় বিষবাস্প ছড়ানো

উইকুজুর রূপান্তরের আগে তার উপস্থাপনাকে হান্নাহ অরেন্দিত শয়তানের বিষবাস্প বলেছেন। উইকুজু একটি সয়টার পড়ে আছে, একটি ক্লিপ বোর্ডে তার স্ত্রীকে ভালোবাসে এই কথা লিখে বহন করছে। তিনি একজন বকো সাধারন কর্মকর্তা হিসাবে তার কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি নিজেই একটি শয়তানী যন্ত্রের অংশ। তিনি একজন সাধারন সাম্রাজ্যবাদের লোক যেমন একজন “ ভালো জার্মান” বা “একজন ভালো আমেরিকান” । তিনি হিটলারের মত কোন ব্যাক্তি নন । তার এমন কোন ক্ষমতা ও নেই যে তিনি এলিয়েনদেরকে দুনিয়া থেকে মুছে ফেলার ক্ষমতা রাখেন। তিনি ভোগবাদি দুনিয়ার একজন মানুষ, চাকুরী ও করেন তাদের জন্য, তিনি নায়ক না হলে ও একজন ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।

এই ফিল্মের শেষের দিকে সকল অভিযানের একটা সমাধান দেয়া হয়েছে । কিন্তু এলিয়েনগণ তাদের সম্মিলিত অভিযানের সমাপ্তি করতে পারে নাই । প্রায় দশ হাজার রিফিউজি এলিয়েনের ভাগ্য মারাত্মক ঝুকিতে পড়ে যায়ঃ উইকুজু এবং ক্রিস্টোফার উভয়ই। এই ফিল্মটি তে ব্যাক্তিগত বীরত্ব প্রদর্শন করা হয়েছে, সম্মিলিত কোন উল্লেখ যগ্য কর্মকান্ড প্রদর্শন করা হয় নি । সাধারন জনতা কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি বরং নায়কের একক ভূমিকাই মূখ্য হিসাবে দেখানো হয়। এই অর্থে এই ফিল্মটী বুর্জোয়া মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নাই ।

নিপিড়নের প্রদর্শন

যে ধরনের নিপিড়ন ডিসট্রিক্ট ৯ এ প্রদর্শন করা হয়েছে তা কি কোণ কাজে লাগবে ? এক স্তরের কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে এবং এর জবাব ও প্রদান করা হয়েছেঃ মানুষ কি ভাবে এলিয়েন রিফিউজিদেরকে বিবেচনা করে থাকে ? ফিল্মটীতে এর জবাব প্রদান করা হয়েছেঃ তাদেরকে অত্যন্ত খারাপ ভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে , একটি বিষয় গুরুত্বের সাথে জিজ্ঞাস্য যে আমেরিকা কেন এই এলিয়েনদের প্রতি এত সহানুভূতিশীল হয়েছে। তারা কল্প বিজ্ঞানের মাধ্যমে জন মনস্তাত্বিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করতে চায়। ডিস্ট্রিক্ট ৯ এর ভেতর দিয়ে আমেরিকা দেখতে চায় যে নিপিরিত আফ্রিকান, কালো মানুষ, ফিলিস্তিন, আদিবাসী সম্প্রদায় ইত্যাদির প্রতি সাধারন মানুষ কোন মাত্রায় সহানুভূতি প্রকাশ করে।


Share Tweet Send
0 Comments
Loading...
You've successfully subscribed to Bangladesh ASF
Great! Next, complete checkout for full access to Bangladesh ASF
Welcome back! You've successfully signed in
Success! Your account is fully activated, you now have access to all content.