নাওমি কেলিনের বই ‘ঝাঁকুনি নীতি’ - প্রসংগ কথাঃ-

ঝাঁকুনি নীতি (২০০৭) বইটি লিখেছেন নাওমি কেলিন। সেই বইটি নিউয়ার্ক টাইমসের সবচেয়ে বেশী বক্রিত বইয়ের তালিকায় এর স্থান হয়। মার্কিন মুলুকে ২০০৭ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনিক আমলে মানুষের মাঝে যে ক্ষোভ জন্মে ছিলো তা ছিলো সেই সময়ে তুঙ্গে। এটা ছিলো সেই আলোচিত অনেক গুলো বইয়ের মধ্যে একটি যখন মুক্তিকামী মানুষ তাদের লড়াই সংগ্রামকে এগিয়ে নিচ্ছিলো। নানা দিক থেকে যখন সেই বইটি অধ্যয়ন করা হচ্ছিলো তখন বাম গণতান্ত্রিক পার্টি গুলো প্রচারনায় বলতে থাকেন “জর্জ বুশের বিকল্প নেই” । সেই বইয়ের লিখক বলেন “ পুঁজিবাদের মহা দুর্যোগ” হলো পিনো চেটের মৃত্যু কুপ, সোভিয়েত ব্লকের পতন, আফ্রিকান কংগ্রেসের আপোষ কামিতা, ইরাকে গ্রীন জোন তৈরী, অর্থনৈতিক সংস্কার, এশিয়ায় সুনামী ও হারিক্যান ক্যাটরিনার আঘাত সকল কিছুই এক বিশেষ পরিস্থিতির জন্ম দেয়। যদিও এই পুস্তকটি প্রথম বিশ্ববাদি ধারার কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা আমাদেরকে নয়া উদারনীতিবাদ সম্পর্কে আমাদের ধারনাকে সমৃদ্ব করেছে। সংশোধনবাদি সোভিয়েত ব্লক ও সমাজতন্ত্রের পতন বিষয়ে ও জ্ঞানকে সম্প্রাসারিত করেছে। লিখক কেলিন এই সকল বিষয়ে বিবৃত করেছেন এই কারনে যে তিনি একজন রেডিক্যাল মানুষ, অতি উদারনীতির সমর্থক, ও সংস্কারের পক্ষপাতি। তিনি জনগনের মাঝে একটি বিরাট ঝাঁকুনি দেবার প্রায়স পেয়েছেন এই পুস্তকের মধ্যমে। তার লক্ষ্য হলো মানুষ যেন যে কোন ধরনের পরিবর্তনকে মেনে নিতি প্রস্তুত থাকেন। রেডিক্যালিজমের সাথে ভীতি ও ঝাঁকুনি স সমভাবে কাজ করে। পুঁজিবাদী সংস্কারের জন্য উদারনীতির কার্যক্রম গ্রহন ও বাস্তবায়ন একটি অতি জরুরী বিষয়। তাই কেলিনের যুক্তি হলো নিম্ন রুপ।

নয়া উদারনীতিবাদের উৎস

অস্ট্রিয়ান চিন্তাধারা ও সিকাগুর চিন্তাধারার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। ১৯৫০ সালে ফ্রেডারিক হাইক অস্ট্রিয়ান চিন্তাধারার শিক্ষক হয়েও সিকাগুর চিন্তাধারার শিক্ষা দিয়েছেন। আসল কথা হলো নয়া উদারনীতিবাদের জন্ম হয়েছে সিকাগু বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু তা সত্যিকার ভাবে অস্ট্রিয়ান চিন্তার ধারাবাহিকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে নাই। ১৯৫০ সালে সিকাগু বিশ্ববিদ্যালয়ে মিলটন ফ্রিডম্যান এবং তার ছাত্র ছাত্রীরা গন মাধ্যম ও বুদ্বি বৃত্তিক কার্যক্রম চালিয়েছেন। তাদের উদ্ভাবিত রেডিক্যাল পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বুত্তোর স্ট্যালিন ও মাওয়ের সামজাতান্ত্রিক বিজয়ের পর নতুন ধারার প্রবাহিত করেন। আর সেই সময়টা ছিলো মার্শাল প্লনের পরবর্তী সময়, যখন ইউরূপে সামাজিক গণতান্ত্রিক ধারা, সাম্রাজ্যবাদের ভদ্রচিত রূপ ধারন করে ইউরূপ, উত্তর আমেরিকা, জাপান, এবং ওসেনিয়া ইত্যাদি জায়গায় তাদের অবস্থান দৃঢ় করে। সেই সময়ে উপনিবেশবাদি ধারা, দেশ প্রমিক চেতনা ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদি ভাবধারার উন্মেশ ঘটিয়ে  সমাজ কল্যান ও জাতীয় উন্নয়নের বক্তব্য হাজির করা হয়। উক্ত পদক্ষেপ সমূহের পেছনে উদারতাবাদ, সামাজিক গনতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও কেন্সিয়ানবাদ ইত্যাদি কাজ করে । বিশ্বে স্ট্যালিনবাদ,মাওবাদ বনাম ক্যান্সিয়ান উদার অর্থনীতির মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব তখন তিব্র হয়ে উঠে। সেই সময়ে মিলটন ফ্রিডম্যানকে পুঁজিবাদের বিদ্রোহী চিন্তাবিদ হিসাবে দেখা হতে থাকে । মুলত ফ্রিডম্যান হাইকের কথাকেই পুনব্যাক্ত করে বলেন এবং মুক্তবাজার অর্থনীতিকে সমর্থন করেন। হাইক ব্যাক্তিগত ভাবে ফ্রিডম্যানের শিষ্য ছিলেন তারা বিলেন যে কোন সরকারই বাজার অর্থনীতিতে হস্থক্ষেপ করতে পারেন, “রোড টু সার্ফডম”(৬৬-৬৭ পৃস্টা) । রাষ্ট্র বাজার অর্থনীতিতে হস্থক্ষেপ করে সামন্তবাদি ধ্যানধারণার পরিচয় দেয় এবং নিজেকে এক প্রভূত্বের স্থরে নিয়ে যায়। ফ্রিডম্যানের মতে মুক্তবাজার অর্থনীতি হলো সকল সমস্যার সমাধান। বাজার স্বাধিনতার জন্ম দেয় – মুক্ত করে সব কিছু থেকে। তারা পুঁজিবাদের কুৎসিত চিত্রের ধারে কাছে ও যেতে চায় না বা ঠেকসই উন্নয়নের ধারধারেন না । উদারতাবাদের মতে যেকোন ধরনের হস্থক্ষেপ মুক্তবাজারের জন্য বাঁধা। তাই সকলের উচিৎ বাজারে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবেন নাঃ

“ ফ্রিডম্যানের স্বপ্ন হলো সামাজিক পুনবিন্যাস করা, রাষ্ট্রীয় ভাবে পুঁজিবাদকে অনুসোরন করা, কিছুতেই হস্থক্ষেপ করা হবে না – এটাই হবে রাষ্ট্রের নীতি, বানিজ্য বাঁধা থাকবে না সুদের হার নিম্ন স্তরে নিয়ে আসা হবে …ফ্রিডম্যানের বিশ্বাস হলো যখন কোন অর্থনীতি মারাত্মক ভাবে ধ্বংস হয়ে পরে, তখনই সেইখানে প্রলেতারিয়ান অর্থনীতির উত্থান হতে পারে যা অবশ্যই বিষাদময়ঃ কেবল মাত্র ‘তিক্ত ঔষধ’ সেই অবস্থা থেকে সেই পরিস্থিতির অবসান হতে পারে” (৬৬ পৃস্টা)।

এই ধরনের প্রচারনা কেবল পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আওতায় নয় বরং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভেতর ও সেই গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় থেকে চলে আসছে। ফলে নয়া উদারতাবাদিদের মাঝে একটি বুদ্বি বৃত্তিক বিপ্লবের দরকার হয়ে পড়ে; তাদের দরকার হয়ে পড়ে সাধারন মানুষের মতামত গ্রহনের । সেই ব্যবসা ভিত্তিক বিষয় আশয় সকল সময় রাজনৈতিক ও বুদ্বি বৃত্তিক ভাবে সমাজে গ্রহন যোগ্য হয় না । তাই বিকল্প হিসাবে চিন্তাবিদরা মুক্ত পুঁজিবাদ, রাস্ট্রীয় পুঁজিবাদ, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার আগের পুঁজিবাদ ও সামাজিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ও সমাজ কল্যানের বিকাশ ঘটানোর ব্যবস্থা করেন। মিল্টন ফ্রেডম্যান ও তার শিষ্যদের বক্তব্য হলোঃ

“ ব্যবসায়ীক দৃস্টিতে শিক্ষা মূলক বা প্রায় শিক্ষা মূলক, প্রতিস্টানিক কার্যক্রম শিকাগু স্কুল ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ডান পন্থার উত্থান ঘটাতে প্রতিবিপ্লব সংঘটনে বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ গ্রহন করা হয়”। (পৃস্টা-৬৮)

নতুন প্রজন্মের মাঝে রেডিক্যাল পুঁজিবাদ ও আদর্শবাদি নিতি প্রনেতাদের উন্মেশ হয়েছে। এই নতুন ধারায় রেডিক্যাল পুঁজিবাদী ও রাষ্ট্রপন্থী ভাবধারার সমর্থন কমে গেছে। সাম্যবাদ বিরুধিতা। সামাজিক গণতন্ত্রের বিরুধিতা। নয়া পন্থার লেনদেন পদ্বতী ও সকল কিছুর ব্যাক্তি পর্যায়ের বিকাশ ঘটেছে। পুঁজিবাদী দুনিয়ায় এই নতুন ধারার বিকাশ এক বিশেষ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। তারা পুঁজিবাদের সাম্রাজ্যবাদী ধারাকে ইতিবাচক ভাবে নিতে চায়নি। প্রথম বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের মুনাফা অর্জনের তারতম্য ও মারাত্মক অবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে।

দূর্যোগ থেকে সুবিধাগ্রহন

মার্ক্সবাদিরা প্রায়স সংকট কালিন সময়কে একটি সুবিধা হিসাবে নিতে চায় বা বিপ্লবের উপযোগী সময় বলে বিবেচনা করে থাকে। তবে সংকট যে কেবল বিপ্লবের পরিস্থিতি তৈরী করে থা নয় তা বরং সামাজিক পুনঃ গঠনের জন্য ও ভূমিকা গ্রহন করে থাকে। ফ্যাসিবাদিরা আর্থিক সঙ্কটকে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ হিসাবে বেঁচে নেয়। এখন যে সময়টা চলছে তা মুলত নয়া উদারতাবাদিদের জন্য বেশী উপযোগীঃ

“ কেবল সঙ্কটই – সত্যিকার ভাবে – প্রকৃত পরিস্থিতির বদল ঘটাতে পারে। যখনই সমস্যার উদ্ভব হয়, তখন সময় উপযোগী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হয়। তাই আমরা মনে করি, আমাদের মৌলিক কাজ হলোঃ চলমান অবস্থার জন্য বিকল্প  রাজনৈতিক পন্থার উদ্ভাবন করা, চলমান অবস্থাকে সক্রিয় রাখা এবং রাজনৈতিক ভাবে যা অসম্ভব যা অপ্রত্যাশিত তা ও সজিব রাখাতে হবে”। (পৃ -১৭৪)

যখন কোন সংকটের সৃষ্টি হয় তখন লোকেরা নানা বিষয়ে পরিক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে থাকে, অনেকে সেই সময়ে রেডিক্যাল সমাধানের পথ ও বেঁচে নেয়, অপ্রত্যাশিত হলে ও ডান বামের সকলেই এই কাজে অংশ নেয়। সিকাগু স্কুল অর্থনীতিবিদেরা সেই পরিস্থিতিকে “ সংকট প্রকল্প” হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। তা কেবল সিকাগু স্কুল  অর্থনীতি বিভাগ নয় বরং তারা একে রাজনৈতিক প্রকল্প হিসাবে কাজে লাগিয়ে থাকেন। এরা সেই সময়কে সেনা শক্তির ব্যবহার ও সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারের উপযুক্ত সময় হিসাবে ধরে কাজ করেন। যা এক ধরনের একনায়ক তন্ত্রের মতই কার্যকরী থাকে।  এদের সহায়ক হিসাবে আই এম এফ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরবর্তীতে “সংকট প্রকল্প” আমেরিকার সেনা শক্তির প্রকল্প হিসাবে ও গৃহিত হয়ে আসছে । এরা ১৯৯০ সালের পর থেকেই ইরাকে “ঝাঁকুনি ও ভীতি” ছড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ২০০৩  সালে তা আরো দৃশ্য মান হয়ে ঊঠে। ১৯৯৬ সালে এই বিষয়ে একটি পেপার ও তৈরী করা হয়। সেই পেপারে “ দেখানো হয়েছিলো পরিস্থিতি এমন অবস্থায় আছে যা অন্যদের পক্ষে নিয়ন্ত্রন করা বা তাদের শত্রুদের মোকাবেলা করার ক্ষমতা নেই”(পৃস্টা-১৮৪) নয়া উদারনীতিবাদিদের জন্য দূর্যোগ তা হউক প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, বা অন্য কিছু সকল কিছু কেই এরা কাজে লাগাতে বদ্বপরিকর। সংকট কালে এরা নিজেদের স্বার্থে যে কোন ধরনের যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধনে ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সময়ে বিরুধিতা কারীদের তেমন কিছু করার থাকে না ।

ইন্দোনেশিয়ায় ঝাঁকুনি, নয়াউদারতাবাদিদের প্রতিবিপ্লবের সূচনা

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের সময়, তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলো একে অন্যকে নির্মূল করতে চেয়েছে। সেই পুরাতন সাম্রাজ্যবাদী দেশ গুলো হলো ইউরূপের- ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী এবং অন্যান্য দেশ সমূহ – তারা সেই সময়ে তাদের উপনিবেশ সমূহের উপর নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে পারছিলেন না । তৃতীয় বিশ্ব থেকে ইউরূপীয় দেশ সমূহের হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছিলো। কোন কোন স্থান যেমন চীনের মত দেশ থেকে তারা বিতারিত হচ্ছিলেন । সেই সকল স্থানে কমিউনিস্ট শক্তির দাপট বাড়ছিলো। সাম্রাজ্যবাদকে শক্তি প্রয়োগ করে উচ্ছেদ করে বুর্জোয়া শক্তি ক্ষমতা দখল করছিলেন। তারা দেশ প্রেমিক হিসাবে নিজ নিজ দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা পালন করছিলেন। মাও সেই ক্ষেত্রে জাতিকে “দুই পাহাড়ের” সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের গ্রাস থেকে মুক্ত করেছিলেন। হুচিমিন ও ভিয়েত নামে একেই কাজ করেছিলেন। ইরানে মাসাদ, লিবিয়ায় গাদ্দাফী, মিশরে নাসের, গুয়াতেমালায় অর্বেঞ্জে, ইন্দোনেশিয়ায় সুকার্নো সহ সারা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের মুক্তির জন্য দায়িত্ব পালিন করেছিলেন। তাদের সংস্কার কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উন্নয়ন হয়েছিলো বেশ উচু মাত্রায়। ওয়াশিংটন আবার যুদ্বে ফিরে আসে তারা সন্ত্রাস, বোমা ফেলা, যুদ্ব লাগানোর কাজে মত্ত্বহয়ে পড়ে। ১৯৫৪ সালে সি আই এ নিয়ন্ত্রিত মুসাদ্দেগের সহায়তায় ইরানে অব্যত্থান ঘটায়। তিনি নির্দায় শাহকে উচ্ছেদ করে দেন, যদি ও শাহ পশ্চিমাদের বন্দ্বু ছিলো। ১৯৫৪ সালেই গুয়েতেমালায় মার্কিনীরা আবার তাদের বন্দ্বুদেরকে ক্ষমতায় বসায়। মার্কিনীরা অর্বেঞ্জের ভূমি সংস্কারের কাজ বন্দ্ব করে দেয়। এই ধরনের কাজ মার্কিনীরা বার বার নানায় জায়গায় করতেই থাকে। এরা ইন্দোনেশিয়াকে ও যুদ্বের ক্ষেত্র বানিয়ে নেয়।

ইন্দোনেশিয়া ছিলো এই ঝাঁকুনি থেরাপির প্রথম দেশ। যেখানে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়া হয়, যা সম্পূর্ন ভাবে নয়া উদার নৈতিক পন্থা ছিলো না । পশ্চিমা ধাঁচে ইন্দোনেশিয়াকে গড়ে তুলতে সোভিয়েত ও ইউরূপীয় সাম্রাজ্যবাদী চক্র একেই সাথে কাজ করেছে। সুকার্নোর সেই শাসন আমলে জাতীয় উন্নয়ন ও সামাজিক গণতন্ত্রের জন্য দরিদ্র মানুষ দল, মাওবাদের প্রভাবাধীন সংগঠন ইন্দোনেশিয়া কমিউনিস্ট পার্টি (পিকে আই) সহ অনেক দলকে ও সম্পৃক্ত করা হয়েছিলো। তখন সি আই এর উচু পর্যায়ের কর্মকর্তার নির্দেশনা ছিলো “ প্রেসিডেন্ট  সুযোগ পেলেই সুকার্নোকে সরিয়ে দাও”। (পৃ – ৮১) ১৯৬৫ সালে সি আই এর শয়তানী চক্রান্তে ক্যু হয়ার পর পরিস্থিতি পালটে যায় ইন্দোনেশিয়ায়। এর পর পরই সেনাপতি সুহার্থুর অভিযান শুরু হয় বাম্পন্থীদের বিরুদ্বে। এরা নেকড়ের মত গ্রামে গ্রামে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাম্যবাদের প্রতি সমর্থকদেরকে খুজে খুঁজে নির্মম নিপিড়ন ও নির্যাতন চালিয়েছে। হত্যা করে অসংখ্য কমিউনিস্টকে। শয়তান সি আইয়ের সহায়তায় শিক্ষক, ছাত্র, শ্রমিক সংগঠক, কৃষক ও মানবাধিকার কর্মীদেরকে নির্মূল করেছে। মাত্র এক মাসেই শয়তান চক্র প্রায়  পাঁচ লক্ষ মানুষকে খুন করে ফেলে । সেই সময়ে টাইম ম্যাগাজিনে বলা হয়েছিলো, “ লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে”। “ নদীর পানি মানুষের রক্ত ও লাশে ভরে উঠেছলো; নদী পথে মানুষের যাতায়াত অসম্ভব হয়ে উঠে”(পৃ-৮২) ।

ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি পশ্চিমাদের দ্বারা পুনর্গঠন করা হয়। ফোর্ড ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা সেই অর্থনৈতিক কাজে নেতৃত্ব গ্রহন করে। সুশীল সমাজ ও গন মাধ্যমে তাদেরকে তখন বলা হত “ বার্কলী মাফিয়া” । ইন্দোনেশিয়ার যে সকল ছাত্র ছাত্রী বার্কলেতে পড়া শোনা করত তাদেরকে নিয়ে সেই চক্র গঠন করা হয়েছিলো। তারা দেশে ফিরে ইন্দোনেশিয়ার বিশ্ব বিদ্যালয়ে পশ্চিমা ধাঁচে একটি অর্থনৈতিক বিভাব খোলে । জন হাওয়ার্ড সেই কার্যক্রম দেখাবাল করতেন। তিনি বলতেন, “ আমরা সেই সকল লোকদেরকে প্রশিক্ষন দিচ্ছি যারা সুকার্নোর প্রশাসনিক  প্রভাব থেকে দেশকে নতুন ধারায় নিয়ে যাবে” (পৃ-৮৩) ।

বার্কলে মাফিয়া চক্র কাজ করে চলে। তারা সেনা কর্মকর্তা ও জেনারেলদের জন্য তাদের তাদের অর্থনৈতিক আলোচনা বা লেকচার রেকর্ড করে । তারা ব্যাক্তিগত ভাবে জেনারেল সুহার্তুকে শিক্ষা দেয় তিনি নিজেই মনোযোগ দিয়ে ক্লাশ করেন এবং নোট নেন। তারা গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে ফাইল তৈরী করে দেন। তারা নতুন অর্থনৈতিক আমলায় পরিনত হয়ে উঠেন। তারা ইন্দোনেশিয়াকে বিদেশী পুঁজির উপযোগী করে তুলেন। “তারা এমন ভাবে ইন্দোনেশিয়ার আইন প্রনয়ন করে দেয় যেখানে ১০০% সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দেবার ব্যবস্থা করা হয় [ খাদ্য, তৈল, ও খনিজ সম্পদ] ‘ কর মুক্তি’র ব্যবস্থা, ফলে মাত্র দুই বছরে, ইন্দোনেশিয়ার প্রকৃতিক সম্পদ – কপার, নিকেল, কাস্ট সম্পদ ও জ্বালানী সম্পদ বিশ্বের বড় বড় কোম্পানীর হাতে চলে যায়” (পৃ-৮৩-৮৪)। বার্কলে মাফিয়া চক্রের আদর্শগত কোন ভিত্তি ছিলো না, আবার তারা রাষ্ট্র বিরুধী ও ছিলো না তবে ব্যবস্থা গত কারনে এরা “শিকাগুর ছেলেদেরম মত” কাজ করতে থাকে। যা ল্যাতিন আমেরিকায় ও নাড়া দিয়েছিলো। (পৃ-৮৪)

“ সুহার্তু… প্রাথমিক অবস্থায়ই একধরনের ইতিবাচক ইমেইজ তৈরীর প্রয়াস নেন, তিনি দেশকে এক টি ঝাঁকুনি নীতির মাধ্যমে অতীতের অবস্থা থেকে বেড় করতে চেয়ে ছিলেন। তার নির্মম সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেশে একধরনের  অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। যারা একসময়ে স্বাধীকারের  জন্য লড়াই করেছিলেন তারাই নিরবতা আলন করতে বাধ্য হন। দেশ সুহার্তু ও তার সহযোগীদের পুরা নিয়ন্ত্রন কায়েম হয়। রাফায়েল ম্যাক ঘি যিনি সি আইয়ের একজন উচু মাপের কর্ম কর্তা, তিনি বলেছিলেন ইন্দোনেশিয়া হলো ‘ক্যু অপারেশনের’ মডেল… তখন সকল কিছুই ওয়াশিংটনের নির্দেশে পরিচালিত হত। সুহার্তু ছিলো তাদের হাতের পুতুল মাত্র। তাদের সেই সফলতা নানা জায়গায় প্রয়োগ করা হয়েছে” (পৃ-৮৫)

নয়া উদারতাপন্থীদের জন্য এটা ছিলো ইন্দোনেশীয়ান অভিজ্ঞতা । জনপ্রিয়তার বিষয়টিকে কি করে সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিনত করা যায় । তার এক টা নমূনা। এরাই আবারা সুর চিৎকার করে প্রতিবিপ্লব বা দূর্যোগের বানী প্রচার করত।

প্রকৃত সূচনা হয় ল্যাতিন আমেরিকায়

ইন্দোনেশিয়া যে ধরনের কাজের ধারা ছিলো, সেই প্রকৃতির কাজ ও তারা লাতিন আমেরিকার দক্ষিনে সিকাগু স্কুলের সহাতায় করার চেষ্টা চালিয়ে ছিলো। ১৯৫৩ সালে, চিলির আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রশাসনের পরিচালকের সাথে ইউ এস আইডি ও সিকাগু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিধিরা মিঃ থিউডর ডবলিউ, সালতিজ দেখা করে সামগ্রীক পরিস্থিতি পালটে দেয়। এরা নিজেরাই সেই প্রতিস্টানের অঙ্গ সংগঠনে পরিনত হন।  মার্কিন মুলুকে ইউ এস এয়াইডি “ একটি মুলা” হিসাবে পরিগনিত হয়। তাদের বিদেশ নীতি প্রনয়নে একে “ লাটি ও মুলা”  হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মুখোসকে মানবিক করে তুলার প্রয়াস চালায়। ইহা সি আই এর সহযোগী সংস্থা। এরা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের মরন ফাঁদ তৈরীতে ভূমিকা পালন করে থাকে। নয়া উদারতাবাদিরা বুঝতে পারছিলেন যে লাতিন আমেরিকা মার্ক্সবাদ নিয়ে জীবন মরন লড়াইয়ে মত্ত্ব হয়ে আছে। তারা পরস্পরের মধ্যে যোগসাজশ করে চিলিতে সিকাগু মডেলে তাদের কায়েমী স্বার্থবাদ ধরে রাখার প্রায়স করে। একেই অবস্থা আমরা দেখতে পাই ইন্দোনেশিয়ায় বার্কলে মাফিয়াদের কর্মকান্ডে । তারা সিকাগু বিদ্যালয় এবং চিলির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগায়। (পৃস্টা-৭২-৭৪)

১৯৬৮ সালে, মার্কিনীদের বিদেশে বিনিয়োগ কেবল লাতিন আমেরিকায় দাঁড়ায় প্রায় ২০% ।  ৫,৪৩৬ প্রকারের সাবসিডারী এই সকল অঞ্চলে আমেরিকা প্রদান করেছিলো। এরা সেই সকল এলাকায় খনিজ সম্পদ আহরনের জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। চীলির লোকেরা এ থেকে খুব কম লাভই অর্জন করেছে। আমেরিকা ৭.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে চিলিতে (পৃ-৭৮) ১৯৭০ সালের সূচনায় সাল্ভাদরে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ আসে আমেরিকা থেকে। সেই সময় আলেন্দে ভীত হয়ে আঞ্চলিক জোট গঠনের উদ্যোগ গ্রহন করে। প্রাথমিক পর্যায়ে সি আই এ আলেন্দের সাথে কুলিয়ে উঠতে না পারলে ও পরে তাকে উচ্ছেদ করে মার্কিনীরা তাদের উদ্দেশ্য সফল করে। (পৃ-৭৮-৮০)

“ আরো এক টি ৯/১১” ঘটেছিলো সেপ্টেম্ভর ১১, ১৯৭৩ সালে,  জেনারেল অগাস্টো পিনোচেট এক অভূত্থান ঘটায়। আলেন্দের সমর্থক সাধারন জনগণ তাদের সাথে হাত মিলাতে রাজি ছিলোনা । পিনোচেট তার এই অভূত্থানকে “যুদ্ব” বলে ঘোষণা করে বসে। এরা আলেন্দেকে হত্যা করে। দেশের প্রেসিডেন্টের প্রাসদকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে । আলেন্দে সরকারের সকল গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিকে জেলে ভরে দেয়। মাত্র এক দিনে ১৩৫০০ মানুষকে গ্রেফতার করে জাতীয় খেলার মাঠে নিয়ে গিয়ে নির্মম নিপীড়ন চালায়। অকেকই হত্যা করে ফেলে পিনোচেট। এই ধারাবাহিকতায় প্রায় ৮০,০০০ সাধারন নাগরীককে বন্দি করা হয়। ২০০,০০০ জন মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। (পৃ- ৯৩-৯৫), মার্ক্স, ফ্রয়েড, লেনিন, মাওসেতুং এর লিখিত বই পুড়িয়ে ফেলে। চিলির সমাজে নেমে আসে এক চরম ভীতিকর অবস্থা।

শিকাগো পন্থীরা দেখলো এটাই তো উপযুক্ত সময়। এদের এনেকেই বললেন “ আমাদের কাছে এটাই বিপ্লব” । পুঁজিবাদী চিন্তকরা কাজে নেমে পড়লো। পিনুচেট অর্থনীতির কিছুই জানতেন না, সেই সুযোগে শিকাগো পন্থীরা ব্যাপক সংস্কারের পথে এগিয়ে গেল। তারা রক্তের উপর দিয়ে ব্যাক্তি মালিকানার দিকে এগোতে লাগলেন। সামাজিক সকল সহায়তা এরা বন্দ্ব করে দিলো। এরা সেনা সমর্থন আদায় করে নিলো, এক টি জনপ্রিয় পত্রিকা ও হাতে পেয়ে গেল । ১৯৭৩ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর থেকেই “দি ব্রিক” নামক পত্রিকাটি এদের পক্ষে সাফাই গাইতে লাগলো। এরা পুঁজিবাদকেই স্বধীনতার পক্ষে বয়ান করত লাগলেন। শিকাগো পন্থীরা নিজেদেরকে একনায়কের উপদেস্টা হিসাবে নিয়োগ নিয়ে সেনাদের সমর্থন নিয়ে সকল কাজ করতে লাগলেন। এরা জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার কোন প্রকার তোয়াক্ষাই করলো না। (পৃ -৯৪-৯৬)

এই অভুত্থানের মাত্র এক বছর পর, সেখানে মুদ্রা স্ফিতি দাঁড়ায় ৩৭৫% এ। এটা ছিলো দুনিয়া সকল দেশ থেকে বেশী। যা আলেন্দের সময়ের দ্বিগুন। স্থানীয় পন্যের বদলে বিদেশী পন্যে ছেয়ে গেলো স্থানীয় বাজার। বেকারত্ব বাড়তেই থাকল দ্রুত গতিতে। হাজার হাজার মানুষ চাকুরী হারাতে থাকলো প্রতিদিন। স্থনীয় কল কারখানা বন্দ্ব হতে থাকলো। স্থনীয় ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে প্রতিবাদি হতে থাকে । শিকাগো পন্থীদের সমালোচনায় এরা ও এগিয়ে আসে। সকলেই বলতে লাগলো, “ আমাদের অর্থনীতি কোন সময়ই এত ব্যার্থ ছিলো না”। (পৃ- ৯৭) প্রচার করতে লাগলো একনায়কত্ব নাকি উন্নয়নের জন্য এক ভাল সূচনা । পিনুচেটের নেতৃত্বে নাকি দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। ফ্রিডম্যান প্রচার করতে লাগলেন, “ঝাঁকুনি তত্ত্ব নাকি এক টি উত্তম বটিকা”। এটাই নাকি সকল সমস্যার সমাধান।

তাই ধীর গতির পরিবর্তে দ্রুতগতির প্রস্তাব করা হয়। র‍্যাডিকাল পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। পিনোচেট নিজে ও “ঝাঁকুনি নীতির” সমর্থক হয়ে উঠেন।  শিকাগু পন্থিদের সাথে নিয়ে তিনি উদারপন্থার পথে এগতে লাগলেন। জনকল্যানের প্রায় ২৭% বরাদ্ব কর্তন করা হয় ১৯৭৫ সালে। সকল বানিজ্যিক বাঁধা দূরীভূত করে দেন ফলে ১৭৭,০০ মানুষ চাকুরী হারিয়ে বেকারত্ব বরন করতে বাধ্য হন। কেবল খাবারের জন্যই ৭৫% আয় খরচ হয়ে যেত। শিশুরা দুধ পেতনা । শিকাগু পন্থীরা চিলিতে এক ভয়াবহ আর্থিক মন্দা ডেকে আনেন। (পৃ-৯৯-১০২)

১৯৮২ সালে আর্থিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটে । এই পরিস্থিতি পিনুচেটকে বাধ্য করে শিকাগু গ্রুপের প্রভাবকে অস্বীকার করতে । তিনি আলেন্দের পথে এগিয়ে আসেন। তিনি তার দেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় জাতীয় করনের নিতি গ্রহন করন। সেই সময় শিকাগু গ্রুপের লোকদেরকে সরকারী নানা পদ থেকে বহিস্কার করেন। তাদের অনেকই নানা প্রকারের দুর্নিতিতে লিপ্ত দেখা যায়। জাতীয় সংস্কারের পথে এগোলে ও তাদের কপার রপ্তানির কারনে জাতীয় আয় বৃদ্বি পাচ্ছিলো। (পৃ -১০৪)  সেই সময় ১৯৮৮ সালে চিলির অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়। সেই সময়ে ও নয়া উদারতাবাদি নীতির কারনে ৪৫% মানুষ দারিদ্রতার নিচেই অবস্থান করছিলো। সেই সময়ে নয়া উদার পন্থীরা নিজেদের কৃতিত্ব দাবী করে প্রচার করে এটা না কি তাদের “চিলিয়ান মিরাকল”। তাদের ভাষায় মিরাকল হলে ও সত্যিকার ভাবে সেই দেশের অর্থণিতি মারাত্মক ভাবে পিছিয়ে পড়ছিলো। চিলির অর্থব্যবস্থায় যে টুকু উন্নতি হয়েছিলো তাতে তাদের একেবারেই কোন ভূমিকা ছিলো না । ২০০৭ সালে ও চিলি ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে সামাজিক  ভাবে অসামঞ্জস্য একটি  রাষ্ট্র। জাতি সংঘের হিসাব অনুসারে সামাজিক বৈষম্যের দিক থেকে চিলির অবস্থান ছিল ১১৯ তম। (পৃ-১০৫) চিলিতে চলছিলো মারাত্মক লুন্ঠন প্রক্রিয়া । সেখানকার বুর্জোয়া ও দালাল চক্র সাম্রাজ্যবাদের সহায়তায় ব্যাপক ভাবে সম্পদের লোপাট করছিলো। সেই সময়ে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে উচু স্তরের লোকেরা জাতীয় সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছিলো।

পিনুচেটের একনাতকত্বকে কেলিন নয়া উদারনৈতিক “ঝাঁকুনি নিতি” হিসাবে দেখিয়েছেন।

“বানিজ্যবাদ বা ‘বানিজ্যিকিকরন’, সত্যিকার অর্থে মসুলিনির রাষ্ট্রীয় নীতি যা একটি দেশের তিন টি শক্তিকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে – সরকার, ব্যবসায়ী এবং শ্রমিক ইউনিয়ন – এরা এক যোগে নয়া উদারতাবাদের জন্য কাজ করে যায়। পিনুচেটের নিয়ন্ত্রনে বানিজ্যবাদের উত্থানে চিলিতে কি হয়ে ছিলোঃ উক্ত শক্তি গুলো মিলে মিশে দেশে একটি পুলিশি রাষ্ট্র তৈরী হয়েছিলো, তাদের সকলের লক্ষ্য ছিলো – শ্রমজীবী মানুষের – ও জাতীয় সম্পদকে কুক্ষিগত করার”। (পৃ- ১০৫)

কেলিনের লিখায় অনেক বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। সেই সময়ে একদিকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্বে প্রচারনা চালানো হয়েছে, অথচ রাষ্ট্র নিজেই ফ্যাসিস্ট আচরন করছিলো, শ্রমিক শ্রেনী – জার্মানীতে – সেই রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করেছে।  জার্মানীতে ফ্যাসিবাদকে শ্রেনী চেতনার বাহিরে দেখা হয়েছে,  অনেকটা লেনিনের সময়ের মতই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিলো। ফ্যাসিবাদিরা বেনিয়াদের ও ব্যাংকের উচ্চ সুদ আদায়ে সহায়তা করে থাকে, অপ্রত্যাশিত হলে ও জার্মান কর্মজীবী মানুষ সেই সময়ে দেশের বুর্জোয়া করনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। দেশের আর্থিক খাতের সংস্কারের নামে জার্মানীর জনগণকে উন্নত জীবন মানের আশাবাদ প্রদান করে। শ্রমজীবী মানুষ ও সেই প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে উপকার ভোগী হয়ে উঠেন। তবে চিলির সেই অবস্থা ছিলো না । ইহা একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসাবে, এখানে ফ্যাসিবাদের সাথে শ্রমিক শ্রেনীর দির্ঘ মেয়াদি সম্পর্ক গড়ে উঠে নাই।

ফ্যাসিবাদ কখন ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য উপকার বয়ে আনে না তাই সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দালাল চক্র সকল সময়েই তাদের রক্ত শোষণের জন্য চেষ্টা করে থাকে । পুলিশ, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী সমূহ দরিদ্র ও শ্রমজীবীদের সৃজিত সম্পদের মুল্য ধনিক শ্রেনীর নিকট পৌছে দিতে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেঃ জেনারেলগণ, পুলিশ অফিসার, ও আমলারা সাম্রাজ্যবাদ ও ধনিকদের পক্ষে কাজ করে থাকে। রাস্ট্র নিজে ও সাম্রাজ্যবাদের সহায়ক ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। পিনুচেটের শাসন আমলে ও চিলির শ্রেনী সেই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। আর এমনটাই ঘটে থাকে।

“ঝাকুনী নীতি” চিলি সহ আফ্রিকার নানা দেশে একেই রকমের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে, তবে হয়ত এর রূপ ভিন্ন ভিন্ন ছিলো। ১৯৭৩ সালে যঝন পিনুচেট চিলির খমতা দখল করেন, তখন ব্রাজিলের ক্ষমতা দখল করেন সেনা প্রধান জেকব। ব্রাজিলের সামরিক শাসন আমলে, ফ্রিডম্যানের ছাত্ররা দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ন পদে অধিস্টিত হন। সেখানে সামরিক সরকার যখন নির্মম ভাবে শাসন করছিলো, তখন ফ্রিডম্যান ব্রাজিল সফর করে সেখানে নয়া উদারতাবাদের অনুসরনের পরামর্শ দেন এবং একে একটি “ মিরাকল” পন্থা বলে অভিহিত করেন। তখন ব্রাজিলের নিজস্ব ঋনের পরিমান ৩ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ১০৩ বিলিয়নে উন্নিত হয়। ১৯৭৬ সালে আর্জেন্টিনাতে ও সামরিক সরকারের উত্থান ঘটে। সেখানে ও সিকাগুর ছেলেরা ক্ষমতার নানা পদে বসে যানঃ অর্থ সচিব, রাস্ট্রীয় ব্যাংকের পরিচালক ও অন্যান্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব তারা গ্রহন করে বসে। যদি ও সেখানে নয়া উদারতাবাদ যথাযথ ভাবে সেখানে কাজ করে নাই কিন্তু সরকারী তৈল কোম্পানী গুলো সংস্কারের নামে যা করা হয় তাতে সেই দেশের মধ্য বিত্ত শ্রেনীর লোকেরা দারিদ্রতার দিকে চলে যায়। আর্জেন্টিনার অন্য দেশ থেকে গৃহিত ঋন ৭.৯ বিলিয়ন থেকে ৪৫ বিলিয়ন চাড়িয়ে যায়। উরুগুয়েতে ও একেই রকম ভাবে সামরিক শাসন চলে আর ফলাফল ও হয় একেই রকমের। তাদের ঋনের পরিমান দ্বিগুন হয়ে যায়। সেখানে ও সিকাগুর স্নাতকরা আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ও চিলির পদ্বতি গ্রহনের জন্য পরামর্শ দেয়। তা কার্যকরী হলে ফল স্বরূপ বেকাত্ব নাটকীয় ভাবে বেড়ে যায়। স্থানীয় শ্রমিকদের দৈনিক আয় ৬০% কমে যায় দ্রুত । তাদের মাথা পিছু আয়ের পরিমান কমে ৮৪৫ ডলার থেকে নেমে ৭৮৯ ডলারে এসে দাঁড়ায়। শহরের লোকেরা ও তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে । ভলিবিয়ায় তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা ৬১% হারিয়ে ফেলে । সেখানে বেশীর ভাগ মানুষ গরীব হতে থাকে । কতিপয় মানুষ বিশাল সম্পদের মালিকানা অর্জন করে । যে এক কালে উন্নত জীবন যাপন করত সেই দেশ নয়াউদারতাবাদের পরিক্ষা নিরিক্ষার কারনে অর্থনৈতিক দূরাবস্থায় নিপতিত হয়। হেনরী কিসিঞ্জার, যিনি সেই সময়ে এক জন রাজনৈতিক খুনী চক্রের হোতা হিসাবে খ্যাত তিনি ও নয়া উদারতাবাদের ঝাকুনীতে পড়েন। ফ্র্যাডমেন ও সিকাগুর বালকেরা তখন সামগ্রীক পরিস্থিতিকে একটি আদর্শিক পোশাক পড়ানোর চেষ্টা করেন। সি আইয়ের পরিচালক, খুনি পুলিশ, সি আইয়ের সন্ত্রাসী গ্যাং জনগনের মাঝে নানা ভাবে আতঙ্ক তৈরীর প্রায়স চালায়। সেই সময়ে সামরিক জান্তারা বেছে বেছে মানুষ হত্যা করতে থাকে। এরা জান্তা বিরুধী শক্তিকে নিমূর্ল করার জন্য হায়ানার মত কাজ করতে থাকে । কেলিন তার লিখায় বলেন, “ এক ভিন্ন মাত্রায়” আজও এরা সেই কাজ অভ্যাহত রেখেছে। এরা নতুন নামে তাদের নিপিড়ন চালানোর জন্য “সন্ত্রাসের বিরুদ্বে যুদ্ব” নাম দিয়ে যা খুশি করে যাচ্ছে।(পৃ-১০৬-১১২)(পৃ-১৯৬) এখন অনেক দেশেই তাদের তৎপরতা দেখে ভয়ে ভীত হয়ে নিজেদের ইচ্ছার বিপরীতে গিয়ে ও অনেক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।

পূর্বাঞ্চল এলাকায়

সোভিয়েত পতনের পর নয়া উদারতাবাদের নামে নানা প্রকার কার্যক্রম গ্রহন করেছে সাম্রাজ্যবাদরা। যদি ও আরো অনেক আগেই সোভিয়েত মরে গিয়েছিলো এবং তা সামাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ছিলো না তবে তা পরিচালিত হলো ততাকথিত কমিউনিস্টদের নামে, রাস্ট্রের নিয়ন্ত্রন ব্যাপক হওয়ার কারনে নয়া উদারতাবাদি চক্রের পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়েছিলো। সেই সময়েই পূর্ব ইউরূপের অনেক দেশ প্রায় পতনের বেলা ভূমিতে পৌছে গিয়েছিল, তারা অপেক্ষা কৃত একটি উদারতাবাদি ব্যবস্থার জন্য প্রতিক্ষা করছিলেন। সেই অবস্থায় পোলেন্ডে সলিডারিটি ক্ষমতা দখল করে নেয়। সলিডারিটি সেই সময়ে একটি ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন হয়ে ও নয়া উদারতাবাদে নিজেদের “সমাধান” খুঁজে নিতে এগিয়ে যায়। পোল্যান্ডে যখন সলিডারিটি যখন ক্ষমতায় আরোহন করল তখন তাদের রাষ্ট্র যন্ত্রের কর্মচারী তথা পুলিশ সহ আমলাদের জন্য বেতন দিতে ঋনের জন্য আই এম এফের নিকট গেল। আমেরিকা তাদের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে বলে দিলো নয়া ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য তাদের পক্ষে কাজ করা দরকার। মার্কিনীরা তাদের জন্য স্বল্প মাত্রায় ত্রান পাঠাতে লাগল যেন পোল্যেন্ডের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠে।  ঋন গ্রহনের কারনে আর্থিক মন্দ্বা দেখা দিলে পুলিস অর্থনিতী সিকাগো অর্থ ব্যবস্থার মুখাপেক্ষী হয়। জেফরী সাচি বলেন, “এটা হলো ইন্ডিয়ানা জোন্স অর্থনীতি”, তিনি আবার বলিভিয়ান সেনা শাসনের উপদেশক ও ছিলেন। তিনি এখন সলিডারিটির উপদেশক হিসাবে ও কাজ করেন। পোল্যান্ডে এই ধরনের কার্যক্রমকে “ সাচি পরিকল্পনা” বা “ঝাঁকুনি থেরাপী” হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। এই ধরনের শর্ত পুরন করার পরই আই এম এফ তাদেরকে ঋন  দিতে আগ্রহী হয়ে উঠে। পোল্যান্ড নয়া উদারতাবাদের জন্য নিজদেরকে নিবেদিত করে দেয়। ( পৃ-২২১-২২৩) তবে তা এদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনেনি। সেখানে নেমে আসে অর্থিক মন্দ্বাভাব। তাদের দেশে প্রায় ৩০% উৎপাদন কমে আসে । বেকারত্ব বাড়েই চলে ।(পৃ-২৪১-২৪৩) পোল্যান্ডে এটাকে কালো অধ্যায় ও বলা হয়ে থাকে । নির্বাচনে সালিডারিটির পরাজয় নেমে আসে । পৃ- ২৪২-২৪৩) একেই ভাবে গর্ভাচব ও সোভিয়েত ইউনিয়নে ইউরূপীয়ান ধরনের সামাজিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে জিকির তুলেন । কিন্তু তার চেয়ে ও অধিকতর উদারতাবাদি ইলিতসিনের দ্বারা ক্ষমতা চ্যুত হন। অন্যান্য স্থানের মত, আদর্শিক ও কৌশলগত কারনে নয়া উদারতাবাদি চক্র জায়গা জায়গায় নিজেদের অবস্থা মজবুত করে নেয়ঃ

“ ইলিতসিনের জন্য আদর্শিক ও কৌশলগত সহায়তা দেবার জন্য সিকাগো বালকেরা মার্কিন সরকারের সাহায্য তহবীল থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেয় । তারা তাঁর জন্য নিউয়ার্ক- ধারনের শেয়ার বাজার চালু করে দেয়, তারাই রাশিয়ার জন্য মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থা করে। ১৯৯২ সালের পতনের পর মার্কিন সাহায্য ২.১ মিলিয়ন ডলার রাশিয়ার তরুন আইনজীবীদের জন্য বিতরনের ব্যবস্থা করে।  ১৯৯৫ সালে মে মাসে হার্ভার্ডের পরিচালক সাচি রাশিয়ার সংস্কারের জন্য সবিশেষ ভূমিকা পালন করেনঃ তিনি ইলিতসিনের জন্য বিনাপয়সায় উপদেশক হিসাবে কাজ করতে থাকেন। অবশ্য তাঁর জন্য মার্কিন সরকারের অনুদান সেই সময়ে ও চালু ছিলো”।(পৃ-২৮১)

সেই কর্ম কান্ডের ফলাফল কি দাঁড়িয়ে ছিলো তখন তা আমরা সকলেই জানি, দেশে আমলারা ও বেদেশী কোম্পানী গুলো নানা প্রকারের দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। তারা দেশের সরকারী সম্পদ নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিতে থাকে।

“ প্রায় ৪০% তৈল কোম্পানী মাত্র ৮৮ মিলিয়ন (২০০৬ সালে যার মূল্য ছিলো ১৯৩ বিলিয়ন ডলার) ডলার বিক্রি করে দেয়া হয়। নরিলসিক নিকেল, যা পৃথিবীর প্রায় পাঁচ শতাংশ নিকেল উৎপাদন করে থাকে, তা মাত্র ১৭০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করা হয় – যার বার্ষিক আয়ই হত ১.৫ বিলিয়ন ডলার। ইউসুক নামের তৈল ক্ষেত্র যা কুয়েতের চেয়ে ও বেশী তৈল উৎপাদন করত তা মাত্র ৩০৯ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেয়; যা এখন প্রতি বছর আয় করছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার”…(পৃ-২৯৩)

১৯৯১ – ১৯৯২ সালের তুলনায় সামগ্রীক ভাবে রাশিয়ার মানুষ এখন গড়ে প্রায় ৪০% কম উপভোগ করেন। তাদের জীবন মান ও আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে । (পৃ-২৮৩) তাদের সম্পদের ও ব্যাপক পাচার হয়ে গেছে । সরকারী সম্পদের একটি বিরাট অংশ লুন্ঠনের মাধ্যম্যে লাতিন আমেরিকার মতই নানা ভাবে পুজিপতিদের হাতে চলে যাচ্ছে । জনগণের সম্পদের মালিকানা চলে গেছে আমলাদের হাতে, উপদেশকদের হাতে। (পৃ-২৯১) সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সেখানে পুজিবাদিদের স্বর্গ রাজ্য কায়েম হয়েছে। তা এখন সাবেক সাম্যবাদি দেশ সমূহে নানা রূপ নিয়ে বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে ।

চীন, এখন পুঁজিবাদের দিকে ধাবমান একটি দেশের নাম

দেং জিয়াও পিং হলেন চীনে পুঁজিবাদ পুন প্রতিস্টার ও প্রতিবিপ্লবের মূলনায়ক, তিনি নয়া উদারতাবাদ ও কর্পোরেট বানিজ্য ভিত্তিক অর্থনীতির নাটের গুরু। ১৯৮০ সালের সূচনা লগ্নে চিন ফ্রিডম্যনকে প্রশিক্ষক হিসাবে আমন্ত্রন করে তাদের উচু স্তরের আমলা ও পার্টির অর্থনীতিবিদদেরকে তাঁর সামনে বসিয়ে দেয়। উদ্দেশ্যই ছিলো মুক্ত বাজার অর্থনীতি বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়। ফ্রিডম্যান বেইজিং ও সাঙ্ঘাইয়ের প্রচুর বক্তব্য রাখেন। দেং পরিকল্পনা করছিলেন চীনের বাজার  ও অর্থব্যবস্থাকে সকলের জন্য খুলে দিবেন, কিন্তু রাজনীতিতে তাঁর একনাকত্ব বাজায় রাখবেন। কেলিন এই বিষয়টিকে পিনুচেটের চিলির সাথে তুলনা করেছিলেন। ফ্রিডম্যান এই নীতিকে সমর্থন করেন, তাঁর কথা ছলো অর্থনৈতিক স্বধিনতার চেয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অধিকতর গুরুত্বপূর্ন। দেং ১৯৮৩ সালে চীনের দোয়ার খুলে দেন আর নানা দেশ থেকে পুঁজি বিনিয়োগের আহবান  জানান। তিনি শ্রমিক শ্রেনীর সুরক্ষার বিষয়ে শিতিল নীতি গ্রহন করেন। তিনি ৪০০,০০০ বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন পুলিশ নিয়োগ দেন, যাদের কাজ হলো সকল প্রকার “অর্থিক অপরাধ” দমন করা। দ্রব্য মূল্যের উঠা নামার জন্য কিছু বিধি প্রনয়ন করে দেন। চাকুরীর নিরাপত্তা উঠিয়ে নেয়া হয় । বেকারত্ব বাড়তেই থাকে। সামাজিক অসাম্য বৃদ্বি পেতে থাকে। ধনীদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে । কেলিনের মতে, চীন তার দেশে তিয়েন্মান স্কয়ারে ১৯৮৯ সালে দেখা দেয়া বিদ্রোহকে দমন করে চীনের মাটিতে সকল বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়ে দেয়। যা দেং জিয়াও পিঙ্গকে সামনে এগিয়ে যাবার পথ করে দেয়। (পৃ-২৩২-২৩৯) সেই সহিংস ঘটনার পাঁচ দিন পর দেং জিয়াও পিং তাঁর ভাষ্যে বলেনঃ

“ আশা করি এই খারাপ কাজটি আমাদেরকে খোলা – দোয়ারনীতি, ও ভালো পথে সরাসরি দ্রুত এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে…”(পৃ-২৩৮)

সেই বিক্ষোভ দমের জন্যই চীনকে নয়া উদারতাবাদি অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। কেলিন দেং এর এই দর্শনকে “ফ্রিডম্যনবাদ বলেন যেখানে স্বাধীনতা নেই”। (পৃ-২৯৩)

কেলিন নাওমি আরো বলেনঃ

“ সংস্কারের যে ঢেউ উঠলো তা চিন কে একটি তৈরী পোশাক শিল্পের দেশে পরিনত করে দিল। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে কারখানা স্থাপন করতে বিনিয়োগ কারীগন আসতে লাগলেন। সেই সময়ে চীনের মত এত উপযোগী দেশ আর একটি ও বিশ্ব ছিলো নাঃ সব চেয়ে কম কর ও রাজস্ব দিতে হত পন্য উৎপাদনের জন্য, দূর্নীতি গ্রস্থ কর্মকর্তা, অত্যন্ত কম মূল্যে মজুরীর ব্যবস্থা করা হল সেখানে, অনেক বছর ধরে নিম্ন মজুরীতে কাজ করতে লাগলো লোকেরা, কর্মজীবী মানুষের চাকুরী ও কর্ম পরিবেশ সুরক্ষিত করার কোন ব্যবস্থাই সেখানে রইলো না। কেহ কোন বিষয়ে অভিযোগ করলে ও তাতে কোন প্রকার কর্নপাত করা হত না”। (পৃ-২৩৯)

সিকাগো বিদ্যালয়ের সহায়তায় চীনের সকল অভিযান সফলতা অর্জন করে। চীন এখন প্রথম বিশ্বের একটি কাপড়ের দোকান।  এরা এখন কেবল সস্তায় প্রথম বিশ্বের মানুষের জন্য পন্য দ্রব্য তৈরীর কাজে মত্ত্ব।

সাম্রাজ্যবাদিদের সাথে চীনের পার্টির লোকেরা ও ধনপতি চক্র উপকারভোগীতে পরিনত হয়েছেনঃ

“ বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্বির জন্য পার্টি বিদেশীদের সাথে সুসম একটি চুক্তিতে উপনিত হয়েছে। ২০০৬ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৯০% বিলিয়নিয়ার হলো পার্টির নেতাদের সন্তানগণ ও আমলারা।প্রায় ২৯ হাজার পার্টি সদস্য – ব্যবসা বানিজ্যের  সিংহ ভাগ নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। যার  পরিমান দাঁড়ায় ২৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান”।(পৃ-২৪০)

এখন দিনে দিনে চীনের ব্যবসায়ী মহলে ও দুনিয়ার অন্যান্য বুর্জোয়া ও অভিজাতদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব ও সঙ্ঘাত লক্ষ্য করা যায়। বিশ্ব ব্যাপী বাজার দখল ও নিজেদের মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগীতাই আজ তাদেরকে এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে। তবে এর মানে কিন্তু এই নয় যে চীণের মানুষ বিপ্লবী হয়ে উঠছেন, বরং এরা বুর্জোয়া প্রতিযোগীতা মধ্য প্রাচ্য ও আফ্রিকার নানা দেশে নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করতে এগিয়ে যাচ্ছে । বিশ্ব বাজারে সংকট তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে এই অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে ।

মার্কিন মুলুকের নীতি নির্ধারকগন মধ্য প্রাচ্যকে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে ইরাকী নক্সা কাজে লাগাতে চান

মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামিক দুনিয়াকে সাম্রাজ্যবাদী চক্র নিজেদের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে বিশেষ ধরনের পরিকল্পনা প্রনয়ন করেছে। আমেরিকা ও ইরাকের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্বের পর, সাদ্দাম হোসেন ইরাকের ক্ষমতায় পুনঃ আসিন হন। সাদ্দামের রাষ্ট্র ব্যবস্থা চলত বাথ পার্টির আদর্শ অনুসারে, যেখানে অর্থনীতির একটি বিশাল অংশ রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। ইহার বিরাট রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন, জাতীয় করন, ও সামাজিক কল্যানের জন্য ছিলো নিবেদিত। যদি ও সেই ব্যবস্থাটি সাম্যবাদি ছিলো না, কিন্তু তা সাম্যবাদের শোরে পরিচালিত হত।  এই ব্যবস্থাটি জাতিয়তাবাদকে ও উৎসাহিত করে, তবে তা আবার সাম্রাজ্যবাদের সাথে মেলামেশা ও করতে পিছপা হয় নাই। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মত এটা ও জাতীয় বুর্জোয়াদের মতই আচরন করতে থাকে। তৃতীয় বিশ্বের জাতীয়তাবাদিরা দেশ প্রেমিক ও স্বাধীকার ও উন্নয়ন মূখী হয়ে থাকে। আবার অনেকেই সাম্রাজ্যবাদের সাথে মিলে মিশে দালাল চক্রের সাথে অপউন্নয়নে কাজ করে থাকে।

ইরাকের শাসনকাল প্রধানত দুইটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে চলত। এক দিকে ওরা সাম্রাজ্যবাদের দালালী করে পয়সা কামাত । অন্য দিকে এরা আবার মার্কিন মুলুকের বিরুধীতা করত। মার্কিনীদের বিরুধিতা করার জন্য জোর করে হলে ও দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ব রাখার চেষ্টা করেছে । স্বদেশ প্রেমের মহরা দিয়েছে।  প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্বের পর ইরাক নানা দিক থেকেই দূর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু জাতীয় অর্থনীতির উপর কড়া নিয়ন্ত্রন বজায় রেখে চলছিলো। ১৯৯১ সালে ইরাক যুদ্বের হেরে যাবার পর সাম্রাজ্যবাদ এদের উপর নানা ভাবে নিয়ন্ত্রন কায়েমের জন্য অবরোধ আরোপ করে এবং সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠন চালায়। তবে তখন ও সাদ্দাম ক্ষমতায় অধিস্টিত ছিলেন, ফলে সাম্রাজ্যবাদী চক্র সেই ইরাকে তাদের ইচ্ছেমত নয়া উদারতাবাদি সামাজিক কাঠামোর চর্চা করতে পারছিলো না। ফলে ইরাকে তাদের বিজয় সম্পূর্নতা অর্জন করতে পারেনি। তবে ১১ই সেপ্টেম্বর মার্কিনীদের জন্য এক মহা মওকা হাজির করে দেয়। তখন এরা কেবল ইরাকে তাদের কাজই শেষ করতে চায়নি বরং এরা ইরককে মধ্য প্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি উদাহরন বানানোর জন্য ইরাককে সমূলে বিনাশ করে দেয়। যেমন করেছিলো চিলিতে পিনুচেটকে নির্মূল করে সমগ্র লাতিন আমেরিকার জন্য একটি উদাহরন সৃষ্টি করে রাখে । আর সেই কর্ম করতেই এরা ২০১২ সালে দ্বিতীয় বুশ মধ্যপ্রাচ্যের দখল নিতে যুদ্বের সূচনা করে । যা এখন ও সম্পূর্ন হয়নি।

মার্কিননীতি নির্ধারকদের সাদ্দাম পরবর্তী কালে বিশাল পরিকল্পনা ছিলোঃ

“ সমগ্র আরব বিশ্বকে একেই সাথে দখল করা সমিচীন হবেনা, তাই তারা একটি মাত্র দেশকে করায়ত্ব করার এবং তাকে তাদের এজেন্ট হিসাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করে সাম্রাজ্যবাদী চক্র। মার্কিনীরা পরিকল্পনা করে সেই দেশটিকে তমাস ফ্রিডম্যানের দেখানো পথে সেই অধিকৃত দেশটিকে রূপান্তর করে ফেলার, তারা সেই দেশটিকে ‘একটি ভিন্ন মডেলে আরব-মুসলিম বিশ্বের মাঝখানে স্থাপন’ করা , যেখানে গনত্নত্র/নয়া উদারতাবাদের চর্চা হবে। মার্কিন ব্যবসায়ী জোস মুরাভিচ সেই অবস্থার কথা বলতে গিয়ে বলেন, তেহরান ও বাগদাদে এটা যেন একটি ‘ ইসলামী দুনিয়ায় একটি সুনামী’ । এই প্রক্রিয়ার পেছনে লাদেনকে বুশ প্রশাসন ব্যাপক ভাবে কাজে লাগায়। (পৃ-৪১৫)

মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় দফার যুদ্বের সময়ে মার্কিনীদের লক্ষ্য কেবল ইরাক ছিলো না, তাদের উদ্দেশ্য হলো নতুন মধ্যপ্রাচ্য নতুন এক দুনিয়া গড়ারঃ

“ মধ্যপ্রাচ্যে অভিযান কারীদের লক্ষ্য ছিলো শক্তি প্রয়োগ করে পরিস্থিতির বদল কিন্তু তারা সেখানকার অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করে দিতে চাননি। কিন্তু অবস্থা এমন হলো যে সেখানে সন্ত্রাস এক ভিন্ন মাত্রার বিপদের জন্ম দেয়”। (পৃ-৪১৪) সেই বিপদ বেশ বড় আকারেই দেখা দেয়, তা কেবল ইরাকে নয় বরং সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এমন কি তা এখন বিশ্ব সভ্যতার জন্য বিপদ ডেকে আনছে। উদারতাবাদিরা এই যুদ্বকে সভ্যতার বিরুদ্বে বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলছেন এও লড়াই হলো দুই ধরনের জীবন ব্যবস্থার লড়াই। ফ্রিডম্যান লিখেছেন, “ আমরা জাতি গঠনের জন্য লড়াই করছিনা, আমরা ইরাকে জাতি সৃজন করতে চাইছি”।(পৃ-৪১৭) মধ্যপ্রাচ্য থেকে সকল বিপ্লবী ও সন্ত্রাসীকে নিমূল করা হবে। জর্জ বুশ ইরাক যুদ্বের ঘোষনা দেবার স্বল্প সময়ের মধ্যেই বললেন যে, “তারা সেখানে মাত্র এক দশকের মধ্যে একটি মুক্ত বানিজ্যিক এলাকা গড়ে তুলবেন।,”( পৃ-৪১৬) সেখানে হবে একটি মুক্তি বাণিজ্যিক জোন । (পৃ-৪১৫) সেই ধরনের কাজকে আমেরিকা “গণতন্ত্র কায়েম” ও বানিজ্যের একটি স্বমন্বিত ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। সত্যিকার অর্থে সেই উদ্যোগটি হলো “গণতন্ত্র” এবং “ফ্রিডম্যন” এই দুইয়ের মাধ্যমে পশ্চিমা দুনিয়ার ঠিকাদারদের জন্য পথ করে দেয়া “।

উদারতাবাদি ও যুদ্ববাদিরা তাদের পরিকল্পনায় একটা সমস্যায় পড়েনঃ ইরাক কোন শূন্য মাঠ নয়। তাদের সভ্যতার ইতিহাস অনেক পুরাতন ও সমৃদ্ব। তাদের সংস্কৃতি খুবই জনপ্রিয় একটি বিষয় তারা এর জন্য গর্বিত ও বটে, সেই কারনে এরা সাম্রাজ্যবাদের চরম বিরুধী। তারা আরব জাতিয়তাবাদের প্রতি অত্যন্ত অনুরক্ত। অধিকন্তু তাদের সকল পুরুষ সামরিক প্রশিক্ষন প্রাপ্ত। (পৃ-৪১৭) তাদের সংস্কৃতিই নয়া উদারতাবাদি –পুঁজিবাদকে এই অঞ্চলে শিকর গাড়তে দিচ্ছে না । ইরাকের সংস্কৃতিকে বিনাশ করে দেবার জন্য ওরা নতুন ধরনের লড়াই শুরু করেছে। ডোনাল্ড রামস্ফিল্ড তাঁর পেন্টাগনের গবেষনা পত্রে, ঝাঁকুনি ও ভীতির বিষয়ে বিশেষ জোড় দিয়েছেনঃ দ্রুত লক্ষ্য অর্জন করা ও প্রভাব বলয় তৈরী করা একটি  প্রধান কাজ।(পৃ-৪১৬) উল্লেক্ষিত থিসিসে বলা হয়েছিলো যে, তারা কেবল সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য বস্তুতে পরিনত করবে না, বরং “সামগ্রীক ভাবে সমাজ”কে টার্গেট করবে। মানুষের মাঝে ভীতির সঞ্চার করার উপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছিলো। (পৃ-৪২০) তাঁর জন্য ঝাকুনীনীতির অনুসরন, এর লক্ষ্য হবে “ বিরুধীদেরকে সম্পূর্ন ভাবে নির্মূল করে দেয়া”।(পৃ-৪২১) তারা চাইছিলো একটি সমাজকে সম্পূর্ন ভাবে তিরুহিত করে দিয়ে আর একটি ভিন্ন রকমের সমাজ বিনির্মান করে দেয়া। যার পথ হবে “ঝাঁকুনি ও ভীতিরণিতি”। তাদের ভাষ্যঃ

“ বিষয়টি নির্মম হলে ও যত দ্রুত সম্ভব কর্তৃত্ব গ্রহন কর নিতে ও সকল কিছু আচল করে দিতে দেরী করা যাবে না বা কি আমরা করতে চাইছি তা বিরুধীদেরকে বোঝতে দেয়া যাবে না”।(পৃ-৪২১)

এবং

“ ইরাক দখলের কৌশল হিসাবে সামগ্রীক পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। যুদ্ববাজ চক্র ততকালিক সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের  অস্ত্রে সামগ্রীর একটা জরিপ করে দেখে নেয় তাদের বিরুদ্বে কি কি অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে আর কারা কারা সেই দখল দারিত্বের বিরুদ্বে এগিয়ে আসবে – বস্তুগত ও অবস্তুগত ভাবে ইরাকের পক্ষে কোন কোন শক্তি কত টুকু ভূমিকা নিতে পারে। তাই যুদ্ববাজরা তরিত পদক্ষেপ গ্রহনের প্রস্তুতী নিতে থাকে । যেন বিশ্বের যে কোন স্থানে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে দমন করা যায়”। (পৃ-৪১৯)

ইরাক ছিলো মার্কিনীদের জন্য একটি গন সন্ত্রাসের পরিক্ষা ক্ষেত্র। বাগদাদের মানুষকে এরা তাদের পরিক্ষা ক্ষেত্রের গিনিপিগ হিসাবে ব্যবহার করেঃ

“… নিয়ন্ত্রন ও নিপিড়নের সত্যিকার জায়গা… আক্ষরিক অর্থেই ‘ ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রনের ‘সুইচ’ হিসাবে গড়ে তুলতে অভি্যান চালায়। তাদের কাজ ছিলো সেখানকার সমাজ, রাজনিতি, অর্থনীতি…বা সকল প্রকার বিরুধীদেরকে সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন করে ফেলা”।(পৃ-৪২১-৪২৩)

কেবল বোমা মেরে মানুষই এরা খুন করে নাই, বরং ইরাকের সকল সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে বিনাশ করে দেয়ঃ

“ শত শত লুন্ঠন কারি প্রাচিন সিরামিকের দ্রব্য বিনাশ করে, মিউজিয়ামে প্রদর্শনীর সকল বাক্স ও রেকর্ড পত্র নষ্ট করে ফেলে। ইরাকের জাতীয় যাদু ঘরে রক্ষিত বিশ্বের প্রথম মানব সমাজের দলিল পত্র ক্ষতি গ্রস্থ করে ফেলে। লস এঞ্জেলস টাইম প্রতিবেদন করে, “ ইরাকের মিউজিয়ামের প্রায় ৮০% অমূল্য সম্পদ ১৭০,০০০ টি লুণ্ঠিত হয়ে গেছে”।( পৃ-৪২৫)

এবং

“ জাতীয় গ্রন্থাগারের, যেখানে গুরুত্বপূর্ন বইয়ের কপি ও ডক্টর হওয়ার জন্য প্রস্তুত কৃত থিসিস সংরক্ষিত থাকত তা বিনাশ করে দেয়া হয়। ধর্মীয় মন্ত্রনালয় থেকে কোরানের হাজার বছরের পুরাতন কপি পুরিয়ে ফেলা হয়। বাগদাদ হাই স্কুলের এক জন শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সকল ঐতিহ্য নষ্ট’, করে দিয়েছে মার্কিনীরা। স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের মিউজিয়ামটি ছিলো আমাদের জাতীয় আত্মা’। যদি আমাদের লুন্ঠিত সম্পদ উদ্বার করা না হয়, তবে আমি ধরেই নেব যে ওরা আমাদের আত্মার একটি অংশ চুরি করে নিয়ে গেছে”।(পৃ-৪২৫)

আর ও

“ বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্পূর্নরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়, টাইম পত্রিকা জানায়, সেখানকার সকল আসবাব পত্র ও বানিজ্যিক বিমান তখন মার্কিনীরা লুন্ঠন করে নেয়ঃ এরা আরাম দায়ক চেয়ার, বিমানের দামী ককশিট, অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্যাদি লোটে নিয়ে যায়। সেই সময়ে তারা প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের ইরাকী সম্পদ ক্ষতি করে দেয়। শুধু তাই নয় – এই বিমান বন্দরের মূল্যবান দ্রব্যাদি নিলামে বিক্রি করে বিরাট অংকের  টাকা হাতিয়ে নেয় সেনাবাহিনী”।(পৃ-৪২৬)

আমেরিকান সেনাবাহিনী বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই গন লুণ্ঠন নিয়ন্ত্রন করতে পারেনাই। কোন কোন জায়গায় তাদের নিজস্ব সেনাবাহিনী এই লুণ্ঠনে নেতৃত্ব দান করেছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্যবহার দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বকালিন নাজি বাহিনীর ব্যবহারের চেয়ে কোন ভাবেই কম ছিলো না । এরা ও গনিমতের মাল হিসাবে বিজিত স্থানের সম্পদ নিজের মনে করেছে। এরা তাদের তৈরী করা গ্রিন জোন কে সৈন্য ও কন্ট্রাক্টর চক্রের জন্য আরামদায়ক ও বিলাশ বহুল হিসাবে বিবেচনা করেছেঃ

“ বাগদাদের গ্রীন জোনটি এমন ভাবে সাজানো হয় যেখানে নিজস্ব ও সম্পূর্ন আলাদা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পানির সরবরাহ ব্যবস্থা, উন্নত হাসপাতাল, ও সকল প্রকার আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থা সহ- সকল প্রকার সুরক্ষার ব্যবস্থা। যদি রেড জোনে কেহ কোন প্রকার অস্বস্থিতে ভোগতেন তবে তাদেরকে সেখানে নিয়ে এসে নানা প্রকার ফিল্ম দেখানো ও পানীয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া হত। তবে আবার কেহ যদি সেই যুদ্ব অনিহা প্রকাশ করত তবে তাদেরকে সোজা পরকালে টিকেট ধরিয়ে দেয়া হত”।(পৃ-৫২২-৫২৩)

সকল কিছুই হয়েছে একটি পরিকল্পনার আলোকেঃ

“ আমাদের জন্য বিশ্বস করা কঠিন- যে আমেরিকা ইরাককে নিয়ে কি ধরনে খেলার পরিকল্পনা করেছিলেনঃ ঝাঁকুনি দাও আর সন্ত্রাস ছড়িয়ে ভীতি সঞ্চার কর। তাদের সকল অবকাঠামো ভেঙ্গে দাও, সকল সাংস্কৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন হয়ে গেলে ও কিছু বলনা। তাদের সকল ইতিহাস মুছে দাও উদের সকল অতীত ভুলিয়ে দাও। এই ছিল মার্কিন নীতি”।(পৃ-৪২৯)

সাম্রাজ্যবাদের পুতুল হওয়ার পর ইরাকীদের জীবন মান নাঠকীয় ভাবে নিম্নগামী হয়ে যায়। তখন বিদেশী ঠিকাদার ও বানিজ্যিক প্রতিস্টান সমূহের শোষণ বৃদ্বি হতে থাকে। রাস্তায় রাস্তায় গোন্ডাবাহিনীর প্রাধান্য বেড়ে যায়। উপজাতিয় ও ধর্মীয় চক্রের নানা গুষ্টি খুন হত্যায় মত্ত্ব হয়ে উঠে । সাদ্দাম পরবর্তী অবস্থায় ইরাক একটি দূর্নীতি পরায়ন দেশে পরিনত হয়। জাতীয় মুক্তিবাহিনী, ইসলামীক বিপ্লবী, ও নানা উপদলীয় কোন্দলের লোকেরা দেশের ক্ষমতা দখলের জন্য পরস্পরের বিরুদ্বে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। এই কলহ নানা বৈদেশিক লুঠেরাদেরকে লুন্ঠনের মওকা তৈরী করে দেয়। কেলিনের মতে, ইরাকে এই পরিস্থিতি সিকাগো বালকদের নীতি বাস্তবায়নের উপযুক্ত পরিবেশ সৃজন করে দেয়”।(পৃ-৪৪৪)

পাকৃতিক বিপর্যয়ঃ শ্রীলংকা এবং নিউ ওরল্যানস

নয়া উদারতাবাদি অর্থব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের জন্য সকল সময় ক্যু বা গোলযোগ সৃষ্টি করার দরকার হয় না । সাম্প্রতিকতম সময়ে নয়া উদারতাবাদি ব্যবস্থার জন্য সামাজিক অবক্ষয়, সামাজিক অস্থিরতা ও প্রকৃতিক দূর্যোগ সহ নানা প্রকার ঘটনাকে ও তারা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। ২০০৪ এবং ২০০৫ সাল ছিলো নয়া উদারতাবাদিদের জন্য সুসময় কিন্তু মানবতার জন্য ছিলো খুবই খারাপ সময়। এশিয়ার সুনামী ও হারিকেন ক্যাটরিনার আঘাতে পৃথিবীর দুই প্রান্তের মানুষ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২৬শে ডিসেম্বর,২০০৪ সালে শ্রীলংকায় সুনামী মারাত্মক আঘাত হানে। এতে প্রচুর মানুষ মারা যায় আর প্রায় ২.৫ মিলিয়ন মানুষ বাড়ী ঘর ছাড়া হয়। (পৃ- ৪৮৮ ) এই দূর্যোগের আগে নয়া উদারতাবাদিরা তাদের গৃহিত পরিকল্পনাকে শ্রীলংকা পুন দখল হিসাবে অবিহিত করেছিলো।

“ ঝাকুনীনীতির মত পরিকল্পনায়, শ্রীলিংকা পুন দখল [বিশ্ব ব্যাংক কতৃর্ক অনুমোদিত]  অর্থনৈতিক উন্নয়নের যাত্রা করার আগে নানা প্রকার বলিদানের দাবী করা হয়েছিলো। ওরা বহু গ্রামের মানুষকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলো পর্যটকদের জন্য মুক্ত এলাকা তৈরী করার জন্য”।(পৃ-৪৯৭)

সেই সময়ে “মূলধারার বাম” পন্থীরা ভোটে হেরে যায়, আর সেই সময়ের সুনামী তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে স্থবির করে দেয়। (পৃ-৪৯৮) সুনামী তাদের অনেক কাজই সহজ করে দেয়, যা তাদের করার পরিকল্পনা ছিলো। সুনামী সৈকতকে খালি করে দেয়; নয়া উদারতাবাদীদের সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সহায়ক হয়। লোক ও নেই, সমস্যা ও নাই।

“ সুনামী এসে, তাদের অনেক কঠিন কাজ সহজ করে দিল;  ইহা সম্পূর্ন ভাবে সমূদ্র সৈকতকে মুক্ত করে দিলো। সেখানে অবস্থিত প্রতিটি জিনিস মুছে ফেলল- নৌকা, মাছ ধরার ট্রলার, ও অন্যান্য পর্যটনের কেবিন সব কিছু শেষ করে দিলো। সেখানে বসবাস কারীর সংখ্যা ছিলো ৪০০০ জন, তাদের মধ্যে প্রায় ৩৫০ জন মারা যায়। আর বেশীর ভাগ মানুষই সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। তাদের সুদির্ঘ কালের আবাসস্থল সমূদ্র গর্ভে বিলিন হয়ে যায়।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর যখন জেলে পরিবার গুলো তাদের নিবাসে ফিরে এলো তখন পুলিশ তাদেরকে নিজের বাড়ীতে ঢোকতে দিতে নিষেধ করে। তারা বলেন সমূদ্র তীরে আর বাড়ি বানানো যাবে না । “নতুন আইন” হয়েছে  সমূদ্র থেকে ২০০ মিটার দূরে গিয়ে বাড়ি করতে হবে… সমূদ্র তীর থাকবে সম্পূর্ন উন্মোক্ত”।(পৃ-৪৯০)

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোক ও  সেনাবাহিনীর সদস্যরা সামাজিক শান্তি রক্ষার নামে কাজ করে আর অন্য দিকে সৈকতের জমি পর্যটন শিল্পের মালিকদের নিকট বিক্রি করে দেয়। (পৃ-৪৯৪) পুঁজিবাদী চক্রের সংস্কার কর্মের জন্য এটাই কিন্তু প্রথম পদক্ষেপ নয় । একেই ভাবে এরা আরো নানা জায়গায় এই ধরনের কাজ করেছে। মালদ্বীপের প্রচুর দরিদ্র মানুষকে স্থানচ্যুত  করেছে । (পৃ-৫০৪-৫০৬) ১৯৮৮ সালের সূচনা লগ্নে মধ্য আমেরিকায় ঝড় আঘাত হেনেছিলো। জলোচ্ছ্বাস ও ভূমির ধ্বস হোন্ডারস,গোয়াতামালা এবং নিকারাগুয়ায় প্রায় ৯০০০ লোক মারা যায়। কয়েকটি গ্রাম একেবারেই বিলিন হয়ে যায়। জনগণের সেই অসহায় পরিস্থিতিতে তাদের জাতিয় বিমান বন্দর, সমূদ্র বন্দর, বিদ্যুত বিভাগ, পানি ও টেলিফোন বিভাগকে ব্যাক্তি মালিকানায় বিক্রি করে দেয়। ভুমির সুরক্ষার বিষয়টি ও দুর্বল হয়ে পড়ে, বিদেশী  পুঁজি বিনিয়োগ কারীরা সহজেই ভূমি ক্রয় করে নিতে পারেন, ফলে ক্ষুদ্র কৃষকরা একেবারেই ভূমিহীনে পরিনত হয়। অনেকে নিজেদের এলাকা থেকে উচ্ছেদ হন। পরিবেশের মান ও মারাত্মক ভাবে নিম্নগামী হয়ে পড়ে। স্থানীয় মানুষেরা নিজেদের বাড়ী ঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। সেই সময়ে বিশ্ব ব্যাংক ও আই এম এফ ৪.৪ বিলিয়ন অর্থ নিকারাগুয়াকে ঋন প্রদন করে তাদের দেশে সংস্কার কার্যক্রম চালাতে এগিয়ে নেয়। “বিদেশী বিনিয়োগের জন্য একের পর এক ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়ে যায়”। গুয়েতামালার বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী আক্ষেপ করে এই কথা গুলো বলছিলেন ১৯৯৯ সালে।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য মার্কিনীদের নিরাপত্তা ও নয়া উদারতাদাদিদের জন্য ও কোন প্রতিরোধ মুলক ব্যবস্থা করা হয়নি। ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে হারিক্যান ক্যাটরিনা আঘাত হানে। ওরেলিনার কিছু অংশ বন্যায় প্লাবিত হয়। টিভিতে দেখা যায় প্রচুর পরিবার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মানুষ যখন বন্যার কারনে  ঘর ছাড়া হয়েছে তখন – সেখান কার কালো মানুষেরা সাদা “লুণ্ঠন” কারীদের কবলে পতিত হন।  প্রায় ১৮০০ মানুষ সেই সময়ে মারা যায়। প্রায় ৮১ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। প্রচুর মানুষ সেই দূর্যোগে গৃহহীনে পরিনত হয়। কমিউনিটি সেন্টার ও ফুটবল খেলার মাঠ গুলো ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের আশ্রয় স্থলে পরিনত হয়। বলা হয় আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দূর্যোগ ছিলো এই টা । সেই সময়ে হুগো সেভেস ও ফিদেল ক্যাস্ট্রো আমেরিকাকে সাহায্যের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। আমেরিকা নিজের দেশে দূর্যোগ ব্যবস্থা পনায় অদক্ষতার পরিচয় দেয়। অথচ আগে থেকেই নানা সংস্থা এই মর্মে সতর্ক করছিলো যে, আমেরিকা যেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুতী গ্রহন করে। কিন্তু তাতে তারা কোন প্রকার কর্নপাতই করেন নাই।

“ মার্কিন ভূমিতে যখন আমেরিকা আঘাত হানে তখন তাদের কর্তা মহাশয় গন ইরাক আগ্রাসনে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে নিজ দেশের মানুষের নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন নাই। সেই সময়ে নিউ ওরিলেন্সে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ খাদ্যহীন, বস্ত্রহীন ও আশ্রয়হীন ভাবে দিন কাটিয়েছে। আর নিরাপত্তার বিষয়টি ছিলো মারাত্মক ঝুঁকিতে”। (পৃ-৫১৭)

নিউ ওরলেন্সে বাগদাদের মতই ভিন্ন একটি গ্রীন যোন কায়েম করেঃ

“ ইরাকে যে সকল ঠিকাদার চক্র কাজ করছিলো তাদেরকে নিজেদের দেশে ও কাজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরা সামাদ্রিক অঞ্চলের অবকাঠামো নির্মানের জন্য ৬০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্ব পায়। এরা সেখানে চলমান গৃহ, সেতু ও কালবার্ড নির্মানে কাজ করে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেয়। নিরাপত্তার দায়িত্ব ও দেয়া হয় সেই চক্রের হাতে । ঠিকাদার চক্র মাত্র ৩.৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ করে বিল তুলে নেয় যার জন্য কোন প্রকার বিজ্ঞপ্তি ও প্রকাশিত হয় নাই”।(পৃ – ৫১৯)

সেই প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঘটনায় মার্কিন দেশের মানুষেরা ও বুঝতে পারলেন যে তাদের দেশের সরকার কত টুকু দক্ষ। তৃতীয় বিশ্বের সামনে তারা যে হম্বি তম্বি করেন তাতে প্রমানিত হয়ে যায় যে এ গুলো অসার বানী। যদি ও তারা দুনিয়ার সকলের চেয়ে বেশী সম্পদের মালিক কিন্তু দূর্যোগের সময়ে এরা কত অসহায় তা বুঝা গেল।(পৃ-৫২২) নয়া উদারতাবাদিরা যত জায়গায়ই হস্তক্ষেপ করেছে তত জায়গায়ই মানুষ নানা ভাবে বিপর্যয়ে নিপতিত হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের প্রগতীশীল লোকেরা ও মানুষকে নিরাপদ করার ক্ষেত্রে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারে নাই। তারা অনেক ক্ষেত্রেই সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।

৯১১

জর্জ বুশ প্রশাসন সকল সময়েই আমেরিকার সরকারী বিভাগ সমূহকে বেসরকারী করনের জন্য কাজ করেছেন। সরকারের সেবা দানের চেয়ে ঠিকাদারদের মাধ্যমে সেবা গ্রহনের প্রতি তাদের সকল সময়েই আগ্রহ বেশী ছিলো। এই ক্ষেত্রে  রিগান প্রশাসন ও কোন অংশে পিছিয়ে ছিলো না । ক্লিনটন প্রশাসন ও সেই পথেরই সমর্থক ছিলেন তারা ও চাইতেন সকল কিছুই বানিজ্যকিকরন করা হোক। দ্বিতীয় বুশ যখন টেক্সাসের গভর্নর ছিলেন তখন ও তাঁর নীতি ছিলো ব্যাক্তি মালিকানার বিকাশ ঘটিয়ে সরকারী বিভাগের সংকুচন নীতি গ্রহন করার। এই প্রসংগে কেলিনের মতামত হলোঃ

“ তিনি এই একটি বিষয় যেখানে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেনঃ সরকারী সেবার পরিবর্তে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সেবা দানের ক্ষেত্রে – তিনি বিশেষ করে নিরাপত্তার দিক টিকে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্বে লড়াই এই বিষয়ে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। মার্কিন সমিক্ষা অনুসারে তাঁর আমলে প্রাভেট কারাগারের সংখ্যা বৃদ্বি পেয়েছে। তিনি  টেক্সাসে থাকাকালিন সময়ে তা বেড়ে ২৬ থেকে ৪২ এ উন্নিত হয়েছে। বলা হয় তিনি কারাগারকে এক ধরনের শিল্পে রূপায়ন করেছেন”।(পৃ – ৩৭১)

জুনিয়র বুশ নয়া উদারতাবাদি চিন্তা ও কৌশলের বিকাশ ঘটানোর জন্য বেশ কয়েক জন সহযোগী নিয়োগ দান করেন। এদের মধ্যে ডোন্যাল্ড রামস্ফিল্ড অন্যতম। তাকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে নিরাপত্তা সেক্রেটারী নিয়োগ প্রদান করা হয়। যিনি বহুজাতিক কোম্পানীর কাজে কয়েক যুগ কাজ করেছেন। মিল্টন ফ্রিডম্যানের সাথে তাঁর ব্যাক্তিগত সম্পর্ক ছিলো। তিনি ফ্রিডম্যানকে তাঁর গুরু হিসাবে বিবেচনা করতেন। রামস ফেল্ড নিজেকে নয়া উদারতাবাদি অর্থনীতি ও রাষ্ট্র ঘটনের একজন কারিগর ভাবতেন। রামসফেল্ড ও নয়াউদারতাবাদিরা তাদের লিক্ষ্যে পৌছার জন্য নানা কৌশল প্রনয়ন করতে থাকেন। তারা আধুনিক যুদ্ব কৌশল ও মিশন নিয়ে কাজ করতে থাকেন। তাদের ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করে তুলে। তাদের নীতি ছিলো সেনাবাহিনী ও যুদ্বের বাজেট কোন ভাবেই কমানো যাবে না । বরং দিনে দিনে বাড়াতে হবে। সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের মাত্রা নানা দিক থেকে বৃদ্বি করতে হবে । জুনিয়র বুশ তাঁর প্রতিরক্ষা সেক্রেটারীকে বলেছিলেন, “ এমন কাজ করবে না যা সংবাদের শিরোনাম হয়- গতির সৃষ্টি করুন- এটাই ইতিহাস”।(পৃ-৩৫৮) কেলিন নয়া উদারতাবাদিদের সম্পর্কে বলেনঃ

“ ১৯৯০ সালে গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে বহু কোম্পানী নানা প্রাকারের মান সম্পন্ন পন্য তৈরী করে নেয় । এদের মধ্যে নাইক কোম্পানী অন্যতম। তারা নানা দেশ থেকে কোন প্রকারের কর্মচারীদের দায় দায়িত্ব কাধে না নিয়ে ও উন্নত মানের কাজ করিয়ে নেয়। তাদের কাজে মান স্থায়ী   কোম্পানীর চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে বেশী কম দামে ও কম মজুরীতে করিয়ে এক নতুন মডেল তৈরী করে নেয়”। (পৃ-৩৫৯)

তিনি আরো বলেনঃ

“ রামসফেল্ড দেখলেন যে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী সেনা বাহিনীর বহর বাড়িয়ে লাভ নেই। বরং তিনি বিকল্প চিন্তা করে কয়েকটি কোম্পানীকে দায়িত্ব অর্পন করেন। এর মধ্যে ব্ল্যাক ওয়াটার এবং হ্যালিবার্টন অন্যতম। তারা অনেক উন্নত মানের সেনা সেবা দেবার জন্য প্রস্তুত আছেন। তিনি তাদেরকে রিজার্ভ সেনাবাহিনী গড়ে তুলে তাদেরকে কঠিন তত্ত্বাবধায়নের আওতায় নিয়ে আসেন”। (পৃ- ৩৬০)


ডিক চেনী হ্যালিবার্টনের সাথে খুবই ঘনিস্ট সম্পর্ক রক্ষা করে আসছিলেন। তারা  পেন্টাগনের অবকাঠামো নির্মান সহ নানা প্রকার সেবার কাজে নিয়োজিত হয়।

চেইনীর পরিবার সরকারী সম্পত্তি বেসরকারী খাতে দিয়ে দেবার জন্য সকল কাজে উতসাহি ছিলেন। তাঁর স্ত্রী জেনী শেয়ার বাজার থেকে ১৯৯০ সালের মাঝে মাঝি সময়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। সরকারী সুবিধা কাজে লাগিয়ে । এমন কি সরকারী তথ্য ভান্ডার ও প্রযুক্তির সহায়তা ও তারা নিয়েছে । (পৃ-৩৬৯-৩৭০) এই সূত্র ধরেই জর্জ বুশ জনিয়র ৯/১১ এর পর বহু সরকারী সম্পত্তি হাত ছাড়া করার সুযোগ নেয়।

ক্ষমতাই আসল কথা, বুদ্বিবৃত্তিক কোন নক্সা নয়।

অস্থিরতা এবং ঝগড়া বিবাদের সৃজন করা এখন একটি লাভ জনক ব্যবসা, কয়েকটা ব্যবসা তো অবশ্যই। আর তা যদি হয় কোন পুঁজিবাদী সমাজে । যুদ্ববাজিয়ে দিয়ে মুনাফা লোটা তো প্রাচিন বর্বর সমাজের একটি লক্ষন। এই পক্রিয়ায় বহু মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হলে ও তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। বলশেভিকদের বিপ্লবের প্রতিরোধের জন্যই প্রথম বিশ্ব যুদ্ব বাধানো হয়েছিলো। আর সেইটা ছিলো প্রলেতারিয়েতের প্রথম বিপ্লব। একেই ভাবে দ্বিতিয় বিপ্লবের ঢেউ যখন চীনে তৈরী হয় তখনই দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের সূচনা করে পুঁজিবাদী চক্র। তখন থেকেই পুঁজিবাদী চক্র তাদের ক্ষমতা কাঠামোকে ঠিকিয়ে রাখার জন্য একের পর এক লড়াই লাগিয়েই যাচ্ছে। এছাড়া মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নানা ধরনের সেবা মূলক প্রতিস্টান চালু করেছে । কিন্তু তাদের মধ্যে এখনো স্থায়িত্ব বিরাজ করেনি। উদারতাবাদিরা ও স্থিতি অর্জন করতে পারেনিঃ

“ প্রচলিত এক ধরনের ধারনা আছে যে, যুদ্ব ও গোলযোগ বিশ্ব অর্থনীতির গতিশীলতায় ভূমিকা রাখে। ব্যাক্তিগত ভাবে কোন প্রকারের ঝাঁকুনি মানুষকে জাগিয়ে তুলে বা নয়া পথ ও পন্থার উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখে। তবে তা সকল সময়ে কাজ করে না । অশান্তি অর্থিক উনয়ন ও প্রবৃদ্বিকে ব্যাহত করে দেয়। এই ধরনের ভাবনা উনবিংশ শতাব্দিতে চালু থাকলে ও ঠান্ডা লড়াই সমাপ্তির পর তাঁর আর কোন প্রাসঙ্গীকতা নেই। এখন সময় হলো বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রাসের সময়”।(পৃ-৫৩৬)

তাই নাটকীয় ভাবে দূর্যোগে অধিক মুনাফা লাভের  বিষয়টি ব্যাপক ভাবে আলোচিত হচ্ছে। যা আগে এর এত গুরুত্ব ছিলো নাঃ

“ সাম্প্রতিক সময়ে দূর্যোগকে অধিক মুনাফা লাভের  মওকা হিসাবে ভাবা হচ্ছে এবং অনেকেরই ধারনা হলোঃ ধনি ও ক্ষমতাবান প্রায় সকলেই দূর্যোগে নিপতিত হন। যারা শোষন করেন আর যারা শোষিত হয় সকলেই একেই অবস্থায় এসে দাড়ায়। আমেরিকায় ২০০৬ সালের এক জরিপে দেখা গেছে যে, প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন যে ৯/১১ এর আক্রমনে সরকারের হাত ছিলো বা সরকার বিষয় টি জেনে ও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। যার পিছনে উদ্দেশ্য ছিলো মধ্য প্রাচ্যে আক্রমণ করা । একেই ধারনা পোষণ করেন উত্তর দাতারা। তারা মনে করেন যে, লুসিয়ানায় দূর্যোগের আগে এই বলে প্রচার করা হয় যে, তাদের এলাকায় থাকা নিরাপদ নয়;  কালোদের এলাকায় তা করা হলে ও কালোদের এলায় তা হয়নি। সাদাদের এলাকায় পানি ও উঠেনি। নেশন অব ইসলামের নেতা ফারাহ খান এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। শ্রীলংকায় শোনেছি, সুনামীর সময় যে সকল এলাকায় পানির উঠেছিলো সেই এলাকার পরিবর্তে আমেরিকান সৈনিকরা দক্ষিন এশিয়ার কিছু এলাকায় ত্রান কার্য করতে আসে। তাদের সেখানে ও উদ্দেশ্য ছিলো সেই অঞ্চলের অর্থনীতির উপর নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করা … ফলে আসল চিত্রটি ছিলো খুবই বেদনাদায়ক।”

আমরা যদি ইন্দোনেশিয়া ও চিলির দিকে থাকায় তবে দেখবো যে যারা ক্ষমতায় থাকেন তারাই কোন কোন সময় দূর্যোগ সৃষ্টি করে শোষণ করা রাস্তা তৈরী করে থাকেন। তবে এটা ও সত্যি যে, যখন কোন পক্ষ নিজেদের সুবিধার জন্য কোন পন্থা বিনির্মান করে তখন অপ্র পক্ষ তাঁর বিপরীত পন্থার তালাশ করেন। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনুসারে বলা হয় একটি সকল সময়ই সমান্তরাল ভাবে ক্ষমতার চর্চা হয়েথাকে। খ্রীস্টিয়ান ধর্মের বিশ্বাসী লোকেরা মনে করেন প্রকৃতিতেই ভারসাম্যের বিষয় টি বিদ্যমান ।  স্রষ্টা নিজেই সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ১৮০২ সালে, ধর্ম তাত্ত্বিক উইলিয়াম পেলে বুদ্বিবৃত্তিক নক্সার অংশ হিসাবেই পৃথিবীতে যা হবার তাই হচ্ছে। তিনি এরিস্টেটলের ধারনাকে আরো সম্প্রসারিত করে বলেন যে প্রকৃতিতে গাছ পালা ও প্রানিজগতের মধ্যে একটা ভারসাম্য সুন্দর ভাবে চলছে। সকল কিছু দেখে শোনে বিশ্বাস হয় যে এসকল কিছুর পেছনে রয়েছেন মহান এক পরিকল্পনা কারী।

সপ্তদশ শতাব্দির মধ্যভাগে ডেবিড হিউম বুদ্বিবৃত্তিক নক্সার বিরুধিতা করে লিখেছিলেন। হিউমের মতে, প্রাকৃতিক পদ্বতী হলো খুবই একটি সরল প্রক্রিয়া মাত্র। ইহাকে বরফ স্তর ও কাঁচ তৈরীর সাথে  তুলনা করা যেতে পারে। তা ১৮৫৯ সালে প্রজাতির উৎপত্তি বিষয়ে ডারউইন বই লিখে আরো পরিস্কার করেন। ডারউইন তাঁর পুস্তকে প্রজাতির উতপত্তির বিকাশ ও প্রাকৃতিক কাজের দির্ঘ এক সময়ে বিশ্লেষণ করে বুদ্বিবৃত্তিক নক্সার অসারতা তুলে ধরেন। তিনি প্রকৃতিক রাজ্যের মধ্যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের বিস্তারিত বর্ননা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন এই ধরনের একটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে লক্ষ লক্ষ বছর সময় লেগে যায়।

বিশ্বাসী খ্রীস্টান সম্প্রদায় মনে করেন, প্রকৃতিতে তারা দেখছেন সমাজেও তাই ঘটে চলেছে। তারা বলেন অদৃশ্য এক খোদা বা ইশ্বর তাঁর সৃষ্টি ও এক বৈজ্ঞানিক ধারা অনুসরন করে থাকে। বিপ্লবী বিজ্ঞানের প্রতিস্টাতা কার্ল মার্ক্স চার্লস ডারুইনের কার্যক্রমকে সমর্থন ও প্রশংসা করেছে। ডারউইন ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন প্রকৃতিক নিয়ম মেনে কেমন করে বিবর্তন ঘটে থাকে । আর মার্ক্স সামাজিক বিশ্লেষণ করে বস্তুবাদি তত্ত্ব দাড় করিয়েছেন কি ভাবে সামাজিক পরিবর্তন হয়ে থাকে । তারা কেহই প্রভূর নক্সায় বিশ্বাস না করে সামাজিক বিপ্লবের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। এটা যদি অদৃশ্য কোন কিছুর ইঙ্গিতে চলতো তবে মানুষের তৈরী ক্ষমতা কাঠামো, শ্রেনী, লিংগ, জাতি ও স্বার্থ ইত্যাদির নক্সায় সব কিছু চলত না । তারা মানুষের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বুদ্বিবৃত্তিক নক্সায় বিশাসীগন জনগণের ক্ষমতাকে বিনাশ করে দিয়ে অন্দ্ব অনুকরনের দিকে বেশী জোর দিয়েছেন। তারা তাদের এই তত্ত্বকে এক রহশ্যময়তার আড়ালে রেখে জনগণের বিপ্লবী চেতনাকে নস্যাৎ করতে চেয়েছেন। তাদের কথা হলো যারা সমাজের অস্বাভাবিকতার বিরুদ্বে কথা বলে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে বলেন। পক্ষান্তরে, বিপ্লবী বিজ্ঞানের বক্তব্য হলো, ক্ষমতা দখলের মধ্যমে নয়া সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো নির্মান করা । উৎপাদন ব্যবস্থার ও বন্ঠনের পদ্বতি পরিবর্তন করা। সমাজে আলোকিত সাম্যবাদের বিকাশ ঘটানো। সকল প্রকার নিপিড়নের অবসান করে একটি সুসম সমাজ কায়েম করা ।

প্রধান দ্বন্দ্বসমূহ

ঝাঁকুনি নীতির পুস্তকটি খুবই সূখ পাঠ্য। কেলিনের বইটি নয়া উদারতাবাদের বিবরন ও তাদের সৃষ্ট দূর্যোগের বর্ননায়  উদ্ভাসিত। তিনি ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন যে প্রচলিত পুঁজিবাদের চেয়ে নয়া উদারতাবাদ কিছু ভিন্ন প্রকৃতির । নয়া উদারতাবাদ বর্তমান তৃতীয় বিশ্ব ও প্রথম বিশ্বের সঙ্কট নিরসনে এক ভিন্ন মাত্রার পথ ও পন্থা নির্দেশ করে । কেলিন বলেন ইহা ক্যান্সিয়ান ও সুস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পন্থায় নয়া উদারতাবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তৃতীয় বিশ্ব ও দ্বিতীয় বিশ্বের মানুষ চরম পন্থার পুঁজিবাদের সৃষ্ট অর্থনীতির কারনে দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ইন্দোনেশিয়া, চিলি, পূর্ব ব্লক ও চীনের জনগণ। প্রথম বিশ্বের মানুষ ও কষ্ট করছে তাদের তৈরী সামাজিক গণতন্ত্র ও কল্যানের নামে কর্মসূচীর কারনে । কেলিনের বক্তব্য হলো প্রধান দ্বন্দ্ব হচ্ছে নয়া উদারতাবাদ ও ক্যান্সিয়ানবাদের মধ্যে, বানিজ্যিক রাষ্ট্র ও সামাজিক গণতন্ত্রী দেশের মধ্যে। কেলিন বলতে চান এখন দুনিয়ায় ১% মানুষ বাকী ১০০% মানুষকে নিয়ন্ত্রন করছেন। নয়া উদারতাবাদের নীতির কারনে ১৯৯০ সালে, আমেরিকায় মানুষের জীবন যাত্রার মান কমে গেলে তাঁর জন্য নানা ভাবে খেশারত দিতে হলো তৃতীয় বিশ্বের জনগণকে । কেলিন মনে করেন কেবল ব্যবসায়ীক কারনে তৃতীয় ও প্রথম বিশ্বের ঐক্য বজায় থাকবে না । কেননা এখন বিশ্বে রাজনৈতিক অসাম্য বিরাজমান । প্রথম বিশ্ব কোন না কোন ভাবে সাম্রাজ্যবাদের দিকে ঝুকে আছে । লিখক নিজেকে সাম্রাজ্যবাদ বিরুধী হিসাবে বিবেচনা করলে ও তিনি সামাজিক সংস্কারের পক্ষে ডেমোক্রেট পন্থার অনুসারী হিসাবে নিজে কা হাজির কারেছেন। তিনি মনে করেছেন যে প্রচলিত ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে কিছু সংস্কারে কাজ করলেই একটি ন্যায় সম্মত সমাজ গড়ে উঠবে। কিন্তু বাতবতা কিন্তু ভিন্ন। যখনই প্রশ্ন উঠবে তৃতীয় বিশ্বের লোকদের জন্য প্রথম বিশ্বের মানুষের কিছু ছাড় দিতে হবে বা তাদের চলমান বিলাশী জিবনের কিছু ভোগ বাদ দিতে হবে তখনই তারা যে কোন সংস্কারে পথ থেকে ফিরে যাবে । প্রথম বিশ্বের লোকেরা তাদের কর্তার প্রতি ভিশন ভাবে অনুগত। তারা তৃতীয় বিশ্বের শ্রমিক, কৃষক, ও মেহেনতী মানুষের প্রতি কোন প্রকার দায়  বোধ করেন না । তাই আমরা সহজেই এখন বলতে পারি এখন কার দুনিয়ার প্রধান দ্বন্দ্বই হলো প্রথম বিশ্ব  বনাম তৃতীয় বিশ্ব। এই কারনেই আমরা দেখিপ্রথম বিশ্ব যখন তৃতীয় বিশ্বের উপর নিপিড়ন চালায় তখন সেই দেশের জনগণ ও  কোন প্রকারের প্রতিবাদ করেন না । কেবল তৃতীয় বিশ্বে লিডিং লাইট কর্মীরা জন সংগ্রামের পথ বেচে নিচ্ছে। যদি ও কেলিনের বইটি নয়া উদারতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে কিন্তু সমাজ বিপ্লবের বিজ্ঞান থেকে তা অনেক দূরে অবস্থান করছে। আলোকিত সাম্যবাদের পথে গিয়ে যেতে যারা উৎসাহী তারা এই বইটি পরে দেখতে পারেন ।  

Source (তথ্য সূত্র)

Klein, Naomi, The Shock Doctrine (Picador,USA:2007)