ম্যাক্স স্টার্নার প্রনিত ‘ইগো এন্ড ইটস ওন’ পুস্তকের অনূদিত ধারাবাহিক-২

কিছুতেই আমার কিছু যায় আসে না !

ভাষান্তরঃ এ কে এম শিহাব

আমি কিছুতেই উদ্বিগ্ন হইনা ! প্রথম এবং সর্ব প্রথম কারন নিয়ে ভাবনা, ভালো কিছু করা, ঈশ্বরের জন্য কিছু করা, মানুষের জন্য কাজ করা, সত্য, স্বাধীনতা, মানবিকতা, ও ন্যায় বিচার; তা ছাড়া জনগণের মঙ্গল করা, রাজনীতির মাঠে কাজ করা বা পিতৃভূমির জন্য নিজেকে নিবেদন করা; এমনকি আত্মার উন্নয়ন সহ হাজারটি কারন নিয়ে ব্যস্ত হওয়া। এদের কোন কিছুই আমাকে ভাবিত করে না। লজ্জা ! বড়ই লজ্জার বিষয় হলো অহঙ্কারবাদিদের জন্য –যারা কেবলই নিজেকে নিয়ে মহা ব্যস্ত থাকেন!

আসুন দেখি, তাঁরা কেমন করে নিজেদের উদ্বেগকে নিয়ন্ত্রন করে চলেন- তাঁরা তো হলো সেই মানুষ যাদের জন্য আমরা শ্রম দেই, নিজেদেরকে তাদের সেবায় নিবেদন করি এবং যাদের জন্য আমরা দেওয়ানা হয়ে কাজ করি।

আপনার নিকট ঈশ্বর বিষয়ক প্রচুর তথ্য রয়েছে, হাজার হাজার বছর ধরে আপনি সেই বিষয়ে গভীর থেকে গভীরতম জ্ঞান অর্জনের চেস্টা করেছেন। আপনি তার অন্তর প্রত্যক্ষ করার প্রায়স পেয়েছেন,  তার ভাষা বুঝার চেস্টা করেছেন। যাতে আপনার নিকট কোন প্রকার সন্দ্বেহ না থাকে। আমাদেরকে এবার বলুন ঈশ্বর নিজেই কেমন করে নিজের অস্থিত্ব জানান দেন। আপনার প্রতি এটা আমাদের আহবান। আর আপনি ও গোপন করতে পারেন না ঈশ্বরের কার্যক্রম। এখন বলুন সেই অস্থিত্ব বা পরম কারনটি কি ? তিনি কি সত্যি বহিরাগতদের মত  আমাদের নিকট কিছু প্রত্যাশা করেন, বা নিজের জন্য সত্য ও ভালবাসা চান ? এই বিভ্রান্তি দেখে আপনি নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন, এবং আপনি হয়ত আমাদেরকে উপদেশ দিবেন এই বলে যে, ঈশ্বর আসলে চান সত্যের প্রতি ভালবাসা। আর তা কিন্তু বহিরাগত চাহিদা নয়। আসলে ঈশ্বরই হলো সত্য ও ভালোবাসার আঁধার।  আপনি এটা ভেবে অবাক হচ্ছেন, ঈশ্বরের ও আমাদের মতই হওয়া উচিৎ তিনি ও বিদশীদের মতই চাহিদা মোতাবেক আমাদেরকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ ।   " ঈশ্বর নিজে  যদি সত্য  না হন তবে সত্যের কারণ তিনি কি করে গ্রহণ করেন?" তিনি আছেন বলেই কি তিনি নিজের অস্থিত্ব জানান দিতে চান ! তিনি তো সর্বে সর্বা, অতএব, সব কিছুই তার কারনে সৃজন হয়েছে ! কিন্তু আমরা সর্বে সর্বা নই, আমাদের অস্থিত্ব ও সামগ্রীক আবে সম্মানজনক নয়; আমরা নিচু এক জাতের সত্ত্বাঃ তাই আমরা আমাদের চেয়ে আরো এক বিশাল পরম সত্ত্বার উপাসনা করি। - এখন এটা স্পস্ট যে ঈশ্বর নিজেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, তিনি নিজের জন্য কেবল চিন্তা করেন, এবং তিনি কেবল নিজের চোখে নিজেই হাজির থাকেন; কোন কিছুই তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনা। তিনি কোন উচ্চ সত্ত্বাকে উপাসনা করেন না । তিনি নিজেকে নিজেই সন্তুষ্ট রাখেন। তার অস্থিত্ব কেবলই অহংবাদী।

মানব জাতির অস্থিত্বের কারন কি, আমরা কি নিজেরাই সেই কারন তৈরী করনে নিব? এটার পেছনে কি আর কোন কারন আছে, এবং মানব জাতির সামনে কি উচ্চতর স্তরের কোন লক্ষ্য আছে ? না, মানুষ কেবল নিজেদের জন্যই কাজ করবে, মানুষ কেবল মানুষের উন্নয়নের জন্যই কাজ করে যাবে, মানুষের কাজই হলো নিজেদের জন্য কাজ করা । সেই উন্নয়নের পথ ধরে জাতীয় ও ব্যাক্তির উন্নয়ন সাধন করা হবে, সেই পথ ধরে মানুষের যাবতীয় চাহিদা পুরনে সর্বাত্মক চেস্টা চালানো হবে। সেই প্রচেস্টার ফলে মানব জাতি ইতিহাসে কৃতজ্ঞতার সোনালী অধ্যায় রচনা করবে। এই কাজের পথটি ও কোন মানবতাবাদি পথ নয়- এটা পরিশোদ্ব ভাবে অহংকারবাদের পথ।

দুনিয়ার সকল কারনই আমাদের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করার দরকার নেই, এটা যেমন সকল ক্ষত্রে ভালো নয় আবার মন্দ্ব ও নয়। আমাদের উচিৎ আমাদের নিজেদের দিকে বেশী নজর দেয়া বা গভীর দৃষ্টি দেয়া । সত্য, স্বাধীনতা, মানবিকতা, ন্যায়পরায়নতা, আকাঙ্ক্ষা ও কাজের প্রেরণা মানুষকে কি উপকৃত করছে না ?

যখন কেহ যথার্থ সম্মান ও ইজ্জত পায় তখন তাদের জন্য সেটা হয় ভালো সময় যাপন করা। একটি জাতির দিকে লক্ষ্য করে দেখুন তাদের জন্য নিবেদিত আছে তাদের দেশ প্রেমিকগন। দেশ প্রেমিকগন প্রায়স শত্রুর বিরুদ্বে   লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন বা ক্ষুধা ও অভাবের বিরুদ্বে যুদ্ব করেন। জাতি কি তাদের দায়িত্ব নেয়? যখন তাদের লাশের সারি রাখা হয় তখন জাতির কেহ কেহ অর্পন কর “পুস্প মালা”! জাতীয় স্বার্থে যদি কেহ মারা যায় তবে – তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া হয় শোকবার্তা - জাতির পক্ষ থেকে দেয়া হয় ধন্যবাদ বার্তা- এই গুলো তাদের জন্য উপকারই হয়। আমি এই অবস্থাকে বলতে পারি অহংবাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।

দেখুন সেই রাজাকে যিনি তার জনগণকে খুব ভালোবাসেন। তিন খুব বেশী স্বার্থপর নন, তিনি তার জনগণের জন্য প্রান দিতে প্রস্তুত আছন ? হ্যাঁ, চেস্টা করে দেখতে পারেন। কিন্তু দেখবেন তিনি কোন ভাবে সেই পথে যাবেন না। কিন্তু আপনার বেলায় ? আপনার অহং ভেঙ্গে দিয়ে যায় সকল বাঁধা, ঠেলে দেয় কারাগারে। রাজা সব কিছুই বলেন অন্যর জন্য কিন্তু নিজের জন্য বলেন না । তিনি হয়ে উঠেন সর্ব সর্বা। তিনি অন্যের সমালোচনা পছন্দ করেন না। তার মন্দ্ব কথা বললে গর্দান নেন। খুন গুম করতে কুন্ঠিত হয় না ।

আপনি কি সেই উজ্জল এবং জ্বলন্ত উদাহরন জানার পর ও শিক্ষা গ্রহন করবেন না ? আমি কিন্তু সেই অবস্থা থেকে শিক্ষা নেই এবং প্রাস্তাব করি, সেই বিশাল আমিত্ববাদি বা অহংকারী লোকদেরকে সেবা না করে নিজের আমিত্বের সেবা করা ভালো।

ঈশ্বর ও মানবজাতি শুধু শুধু উদ্ভিগ্ন, আসলে এসব কিছুই নয় আদতে নিজেদের অস্থিত্বের জন্যই তাদের যত চিন্তা। দেখুন আমি ও কেবল আমার জন্যই উদ্ভিগ্ন।  আমি ঈশ্বর বা অন্য কিছুর মত নই। আমি তা হলে কে, আসলে আমি আমিই।

যদি ঈশ্বর ও মানবজাতি বিষয়ে আপনি ইতিবাচক হন, এবং মনে করেন এর পেছনে যতেস্ট পরিমাণ যুক্তি আছে তবু ও  আমি এদের মধ্যে ও বেশ কিছু শূন্যতা দেখতে পাই। আর সেই জন্য নিজেকে “নিঃস্ব” ভাবতে ও আমার আপত্তি নেই। শূন্যতার মাঝে আমারও কিছু নেই, আমি কিছু সৃজন ও করিনা, আমি কোন কিছুর স্রষ্টা নই, আমি কিছুই সৃজন করি নাই।

সকল কিছু থেকেই দূরে থাকি, প্রতিটি উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আমাকে আকৃষ্ট করলেও আমি তা থেকে দূরে থাকি । তবে আপনি যদি “ভালো কিছু” করার চেস্টা করেন তবে তা আমাকে ভাবায়। কি ভালো আর কি ই বা মন্দ্ব? কেন আমি আমাকে উদ্ভিগ্ন করব, এবং আমি ভালো নই আবার খারাপ ও নই। আমার নিকট কোন কিছুই কোন অর্থ বহন করেনা। স্বর্গ নিয়ে ঈশ্বর চিন্তিত; মানবজাতি ও মানুষ নিয়ে উদ্ভিগ্ন। আমি মানব জাতি ও স্বর্গ নিয়ে ভাবিনা। এমন কি সত্য, ভালো, ন্যায়, ও মুক্তি ইত্যাদি নিয়ে ও আমার কোন চিন্তা নেই। তবে, কেবল মাত্র আমার জন্য কি কিছু আছে? কিন্তু  কিছু সাধারন ভাবে আছে – তা  ও আবার অনন্য । যেমন – আমি নিজেই অনন্য।

আসল কথা হলো, আমার নিজের স্বার্থের বাহিরে আর কিছুই নেই!