ম্যাক্স স্টার্নার প্রনিত ‘ইগো এন্ড ইটস ওন’ পুস্তকের অনূদিত ধারাবাহিক-১

ম্যাক্স স্টার্নার প্রনিত  ‘ইগো এন্ড ইটস ওন’ পুস্তকের  অনূদিত  ধারাবাহিক-১

অনুবাদঃ এ কে এম শিহাব

একটি মানব জীবন

আগমনের সাথে সাথে মানুষ যখন দুনিয়ার আলো দেখতে পায় তখন সে তার সকল দ্বিধা দ্বন্দ্বের অবসান করে নিজেকে আবিস্কারের চেস্টা করে। নিজেকে সকল ভ্রান্তি থেকে দূরে রাখতে প্রয়াস পায়। সে চেস্টা করে অহরাত্রি দিন পারিপার্শিক সকল কিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখতে ও প্রকাশ করতে ।

কিন্তু শিশুর জীবনে সকল কিছুই সামনে আসে, তখন সে নিজেকে রক্ষা করার জন্য চেস্টা করে আর নিজের অস্থিত্ব সকলকে জানান দেয়।

তদুপরি, প্রতিটি বস্তুই তাকে নানা দিক থেকে সতর্ক ও সজাগ করে এবং একেই ভাবে প্রতিটি জিনিষ ক্রমাগত ভাবে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তাই নিজের অস্থিত্ব ঠিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে নিজেকে প্রত্যাহার করার কোন সুযোগ নেই।
বিজয়ী হও বা পরাজয় বরন কর- জীবন সংগ্রামে এই দুইটি বিকল্পের মধ্যে ভিন্ন কোন পথ খোলা নেই। বিজয়ী ব্যাক্তি হয় প্রভূ বা রাজা, এবং পরাজিত ব্যাক্তি হয় প্রজাঃ প্রথম দিকে বিচিত্র রকমের চর্চার ভেতর দিয়ে কায়েম করে তারা “ প্রভূত্বের অধিকার”  অর্জন করে ক্ষমতা, পরে তারাই আবার নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য “দায়িত্ব পালনের অধিকার” নিয়ে সমাজের উপর ঝেকে বসেন। নিজের পরিচয় দেয় খেদমতগার হিসাবে।

তবে উভয়ই শত্রু হিসাবে থেকে যায়, এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকে; তৈরী হয় বিপদের আশঙ্কা- তারা একে অন্যের দূর্বলতা খোজেন-শিশুরা তাদের পিতা মাতার জন্য এবং পিতা মাতা তাদের সন্তানের জন্য ভয়ে থাকে; ‘হয় ভয়কে জয় কর, নইলে ভয় তোমাকে জয় করে নিবে’।

শৈশব কালের স্বাধীন চেতনা আমাদেরকে অনেক কিছুর গভীরে পৌছে দিতে সাহায্য করে, কিছু “পেছনের” জিনিষ সামনে এগিয়ে যেতে সহায়ক হয়; আমাদের বৈশিস্ট্য হলো একে অন্যের দূর্বলতা খোজে দেখার জন্য গোয়েন্দা গিরি করা, আমরা আবার সকলেই এটা জানি, শিশুদের মাঝে ও এই প্রবনতা থাকে; লুকানো জিনিষের প্রতি আগ্রহ, নতুন কিছু অনুসন্দ্বান করার ব্যাপারে আমরা অধিক আগ্রহী, এমন কি কিছু জিনিষ ধবংস করতে বা বাধা প্রদানের জন্য মানুষ যা খুশি তাই করতে পারে। আমরা যখন বুঝি কিছু করলে পাছে আমাদের জন্য বিপদ নেই বা আমরা নিরাপদ থাকব - তখনো যে কোন কাজ করতে কুন্ঠিত হই না; আমরা যদি বুঝতে পারি আমাদের উপর যে নিপিড়ক শাসন দন্ডটি চলছে তা অতি দূর্বল, তবে কিন্তু তার বিরুদ্বে কথা বলতে ভয় পাবনা, এই প্রবনতা টি “ক্রমাগত ভাবে বাড়ছে”।

আমাদের পেছনে রয়েছে প্রশাসন বা রাজ দন্ড, তবে এর চেয়ে ও আমাদের শক্তি ভিত দূর্বল নয়- আমাদের বিদ্রোহ, বিদ্রোহ করার সাহস আছে। পরিস্থিতিগত মাত্রা অনুসারে এগিয়ে যাই বা পিছনে ফিরে যাই, সেই ক্ষেত্রে রহস্যময়তা, ভয়ংকরতা, রাজ দন্ডের হুমকি ও পিতার রক্ত চক্ষু ইত্যাদি বিবেচ্য হয়। ফলে আমরা নিজেরা শান্ত হয়ে পড়ি, পিছিয়ে যাই। যদি আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয় তখন পেছানো ছাড়া কোন উপায় থাকে না। নইলে তার জন্য খেশারত গুনতে হয়। পিছিয়ে পড়ার আগে আমাদেরকে ভাবতে হয় আমরা যাদের জন্য বা যে কারনে সাহসী হয়েছিলাম তার উপর আমরা কতটুকু নির্ভর করতে পারি, তাই যদি তার ভিত্তি হয় দূর্বল তবে আমাদেকে সাহসী হতে হবে, এবং নিজেদের নিজস্বতাকে আরো উর্ধে তোলে ধরতে হবে। সামগ্রীক ভাবে পিতা মাতার নির্দেশ, কর্তৃপক্ষের আদেশ অনেক সময়েই আমাদের ইচ্ছাকে সংকুচিত করে দেয়। আমাদের ভাবনা চিন্তার পরিধি বিস্তৃত হলে ও অনেক ক্ষেত্রে সংকুচিত অবয়বে তা প্রকাশ পায়। আবার তা বিপরীত ধারায় প্রকাশ হতে পারে। তা হলে আমাদের চাতুর্য্য, কূটনীতি, সাহস ও অবাধ্যতা কি ? আর মন বলতে আমরা আদতে কি বুঝি ?
একটি নির্ধারিত সময়ের পর আমরা প্রায়স ক্লান্তিকর বিবেচনা করে লড়াইয়ের পথ ছেড়ে দেই- যে লড়াই ছিলো যুক্তির জন্য। আমরা আমাদের অভাব অভিযোগহীন সুন্দর শৈশব অতিক্রম করি যুক্তির পথে- তখনো অভাবের আঘাত আমাদেরকে পারাস্ত করে নাই । সেই সময়ে আমরা কিছুরই পরোয়া করিনা, কোন কিছু নিয়েই তেমন মাথা ঘামাই না, তেমন কিছু মানতে ও চাই না। আমাদের নিকট কেউ তেমন কিছু চায় না বা না পাওয়ার জন্য অভিযুক্ত ও করে না, আমারা অনেক ক্ষেত্রেই কোন নীতিকথা নীতিমালা শুনতে আগ্রহী হই না; তাই অন্যদিকে আমাদের জন্য সমালোচনা, শাস্তি প্রতিরোধ করা সহজ হয় না ।

পরবর্তীতে আমাদের জীবন প্রবাহে যুক্তি অনিবার্য হয়ে উঠে, শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়; শৈশবে আমরা লাফালফি করার সুযোগ পাই এই জন্য যে তখন তেমন কোন কস্ট দায়ক বিষয় আমাদের মাথায় থাকে না ।

মন হল মানুষের প্রথম স্ব-আবিস্কারের নাম, প্রথম স্বর্গ ও দেবত্বকে অস্বীকার করা; এটা একটি অদ্ভুত, অধরা, এবং “উপরের ক্ষমতা” হিসাবে পরিগনিত হয়। সৃজন হয় আমাদের তারুন্যের নয়া অনুভূতি, স্বকীয়তা, এখন কিছুই উপেক্ষা করেনা- নিজেকে সব কিছুর সাথে একাত্ম মনে হয় ; সে তখন বিশ্বকে অস্বীকার করে, কেননা আমরা যে সকল কিছুরই উপরে, আমরাই হলাম মন। এটা আমাদের জন্য প্রথম অনুভূতি যে আমরা যে দুনিয়াকে দেখছি তা একেবারেই বুদ্বিমান নয়, তবে এটা হলো সূচনা মাত্র।

আমরা আমাদের অনুশীলন শুরু করি প্রাকৃতিক শক্তির উপর ভর করে। আমরা আমাদের মা বাবার সাথে দ্বিমত করি একটি প্রাকৃতিক শক্তি হিসাবে; পরে আমরা বলিঃ পিতা মাতাকে আমরা ছাড়িয়ে যাব, প্রতিটি প্রাকৃতিক শক্তি ও বস্তুকে গুনে দেখা সম্ভব হবে। তাদেরকে ব্যবহার করা যাবে। যৌক্তিকতার দৃস্টিতে কোন “বুদ্বিমান মানুষ” বা পরিবার প্রাকৃতিক শক্তির কারনে গড়ে উঠেনি; পিতা-মাতা বা ভাই-বোন ইত্যাদির স্থান নেই। চেহেরায় মিল থাকলেও। যদি এরা আবার বুদ্বিমান ও যৌক্তিক শক্তি হিসাবে “জন্ম গ্রহন” করেন তবে তারা আর আগের মত থাকবেন না ।


এক জন তরুন কেবল তার পিতা-মাতাকে নয় সধারন সকলকেই সে অতিক্রম করে যায়; কেহই তাকে আটকে রাখতে পারেন না, সে আর সম্মানিত হতে চায় না; তাই এখন সে বলেঃ প্রত্যেকের উচিত আল্লাহকে মান্য করা কোন মানুষকে নয়।

“পার্থিব” জগতের সকল কিছুর উচু স্থান থেকে – অতিনিচু স্থানের কোন কিছুই তাকে অবমাননা করে না; আর সেই অবস্থানটি হলো- একটি স্বর্গীয় অবস্থান।

তরুনের মনোভংগী এখন পরিবর্তিত হয়ে গেছে; তরুন এখন একটি বুদ্বিজীবীর অবস্থান নিয়েছেন, যখন সে ছিল একটি বালক মাত্র, তখন তার মধ্যে কোন প্রকার মনোভংগী ছিলো না, সে তখন প্রানহীন হিসাবে শিক্ষা গ্রহন করেছে। প্রচীন লোকেরা কোন কিছু ধরে রাখারে তেমন চেস্টা ও করে না (উদাহরন হিসাবে বলা যায় ইতিহাসে তথ্য উপাত্ত), অথচ যে সকল বিষয় চিন্তার জগতে চাপা পড়ে থাকে – তাই হলো ইতিহাসের প্রান। অন্যদিকে, তরুনটি যা শিখেছে তা কেবল ধারনা নয় বরং তা হল প্রান বা আত্মা। তাই সে তার শেখার সূত্র গুলো সংযুক্ত করতে শিখেছে। তবে সেই ধারনা গুলোর পূর্বাপর অবস্থা বা নতুন চিন্তার সূত্র নিয়ে ভাবেনি।
শৈশবের মতই সে তার চার পাশের প্রাকৃতিক বিধানাবলীর প্রতিরোধ অতিক্রম করেছে। তাই সে এখন সকল কিছুই মনের বিরুদ্বে হলেও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। যুক্তির ভিত্তিতে, ও সচেতন ভাবে। নিজের মত করেই ভাববে “ তা হতে পারে আপাত অযৌক্তিক, অধার্মিক এবং অদেশপ্রেমিক সূলভ”- ইত্যাদি। নানা কারনে বাস্তবতার প্রয়োজনে অনেক কিছু ই আমাদের নিকট থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারে। ইউম্যান্ডিজের শক্তির ভয়ে নয় বা পসাইডুনের শাস্তির জন্য নয়, ইশ্বরের ভয়ে নয় বা পিতার শাস্তির দন্ডের ভয়ে নয়, আমরা সকলে যে ভয় পাই তা হল- বিবেকের ভয়!

আমরা আমাদের চিন্তার পিছন পিছন ঘুরছি, আমরা সেই ভাবেই কাজ করছি যা আগে অভিভাবকদের আদেশে করতাম । আমাদের কার্যক্রম আমাদের চিন্তাধারার আলোকেই পরিচালিত হয়ে থাকে। এই অভ্যাস আমদের হয়েছে  সেই শৈশব থেকে যা আমাদের মা বাবা আমাদের শিখিয়েছেন।

সেই জন্যই আমরা সেই শিশু কাল থেকে চিন্তা করে এসেছি। সেই চিন্তা ভাবনা ছিলো দেহহীন, বিমূর্ত, নিখুত, আর সেই গুলোকে বলা যায়- আসলে ‘ কিছুই নয় কেবলই চিন্তা”। এর মধ্যে ছিলো স্বর্গ ও নরক ! একটি খাটি চিন্তার বিশ্ব ! মনে হত নিরেট যৌক্তিক !!

পক্ষান্তরে, তাদের মৌলিক ভাবনা চিন্তা ছিলো অনেকটা এই রূপ; আমরা ভাবতাম, “ আমরা যে বিশ্ব ভ্রমান্ড দেখছি তা সৃজন করেন মহান প্রভূ”, কিন্তু আমরা ভাবি নাই খোঁজে দেখা দরকার আসলে –এর অস্থিত্ব এলো কেমন করে? “ আমরা আরো গভীরে গিয়ে দেবদেবীর পরিচয় তালাশ করি না”; আমরা ভেবেই বসে আছি, “ এই গুলি সত্য বিষয় খোজার দরকার কি?”  আমরা সিদ্বান্ত নিয়ে বসে আছি, “ ইশ্বর ই সত্য”। “আরো গভীরে যা আছে ইশ্বর ও ইশ্বরী সকলেই সত্য”। ধর্মতাত্ত্বিক ভাবে যে সকল বিষয় প্রচলিত আছে তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না । ভাবিনা আসলে “সত্য কি জিনিষ?” পিলাত থামেন না, যদিও তিনি একটি পৃথক ক্ষেত্রে "সত্যের মধ্যে কি সত্য আছে" তা নিশ্চিত করতে দ্বিধা করেন না, যদিও বিষয়টি সত্য।

কোন চিন্তাধারা যখন অচলায়তনে আটকে যায় তখন এটা তার শক্তি হারায়, কেবল নিরেট চিন্তা হিসাবেই ঠিকে থাকে। বিশুদ্ব চিন্তায় আলো ফেলতে, বা তার দল ভুক্ত হতে, তারুন্য আনন্দিত হয়; এবং চিন্তা রাজ্যে যত রকমের আলো আছে, যেমন- সত্য, স্বাধীনতা, মানবিকতা, মানবতাবাদ, আলোকিত করনে ও উৎসাহিত হয় তরুন হ্রদয়।

কিন্তু, যখন মানবের নিকট আত্মা অপরিহার্য জিনিস হিসাবে স্বীকৃত হয়, তখনও আত্মা দরিদ্র বা ধনী কিনা তার একটি পার্থক্য সৃষ্টি করে এবং তাই কেহ যখন তার আত্মার সমৃদ্ধ করতে চায়; এবং আত্মা যাতে তার নিজ সাম্রাজ্য খুঁজে পেতে পারে তাই তা ছড়িয়ে দিতে চান - এই সাম্রাজ্যটি যা এই জগতের নয়, আত্মা পৃথিবী জয় করেছে। সুতরাং এটা সকল কিছুকেই নিজের মধ্যে ধারন করতে চায়; নিজের আত্মার অধিকারী হওয়া সত্বে ও নিজেকে নিখুত দাবী করা যায় না, অবশ্যই আত্মার পূর্নতা আনয়ন করতে প্রচেস্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কেহ যখন নিজের আত্মার সাক্ষাৎ পায়, তখন সে নিজেই অভিভূত হয়ে পড়ে, নিজেই নত শিরে কুর্নিশ করে নিজের আত্মাকেই, যাকে আমরা বলি প্রসান্ত আত্মা। তখন সকল অনুভূতি চলে যায় শূন্যের কোঁটায়।

আত্মা হলো সকল কিছুর কেন্দ্র বিন্দু, আর এটাই হলো নিশ্চিত বিষয়; তবে সকল আত্মাই কি প্রকৃত পক্ষে “সঠিক” আত্মা ? সঠিক এবং সিত্য আত্মাই হলো আদর্শ আত্মা, “পবিত্র আত্মা” । এটা আমার ও নাই তোমার ও নাই এটা হলো একটি আদর্শ মাত্র। পরম সত্ত্বা, এটা হলো “ঈশ্বর” “ঈশ্বর হলো আত্মা” এবং এটা হোল পরম;   “ স্বর্গীয় পিতার নিকট যিনি প্রার্থনা করেন তিনি তাকে তা দান করেন”।

মানুষ নিজেকে তরুন অবস্থা থেকে ক্রমে নিজেকে আলাদা করে থাকে, সে তখন দুনিয়াকে তার মত করেই দেখতে শুরু করে। নিজেই সর্ব শক্তিমানের বলে পরিবর্তনের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। সে প্রায়স একটি মডেল অনুসরন করে থাকে; দুনিয়ায় হরেক রকমের মডেল তার সামনে থাকলে ও তার নিজের পছন্দের মডেলই তার জন্য অনুসরনীয় হয়ে উঠে।

যতদিন কেউ নিজেরা আত্মা হিসাবে নিজেকে জানে এবং তার অনুভব করে যে তার অস্তিত্বের সমস্ত মূল্য আত্মা বলে বিবেচিত হয় (যুবকের পক্ষে তার জীবন, "শারীরিক জীবন" সম্মান), দীর্ঘদিন ধরেই কেবল চিন্তাভাবনা রয়েছে, এমন ধারনা যা তিনি কিছু দিনের মধ্যেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। যখন তাকে কর্মক্ষেত্রের গোলকে খুঁজে পাওয়া যায়; এভাবে একজনের মধ্যে কেবলমাত্র আদর্শগুলি, অযাচিত ধারণা বা চিন্তাভাবনা বিদ্যমান রয়েছে।

যতক্ষণ না কেহ তার প্রেমিকের ভালবাসায় পড়ে এবং নিজের মধ্যে জীবন্ত মাংস এবং রক্তের মানুষ হিসাবে আনন্দিত হয় - কিন্তু এটি তখন একটি পরিপক্ক বয়সে পরিণত হয়, মানুষের মধ্যে, আমরা এটি খুঁজে পাই - যতক্ষণ পর্যন্ত না এটিতে একটি ব্যক্তিগত বা অহংগত আগ্রহ থাকে, কেবল আমাদের আত্মা নয়, বরং সামগ্রীক সন্তুষ্টি চাই, সস্তা সন্তুষ্টি, বা স্বার্থপরতার আগ্রহ নয়। এখন শুধু একজন যুবকের সাথে একজন ব্যক্তির তুলনা করুন, এবং দেখুন সে আপনাকে কঠিন, কম উদার,  এবং স্বার্থপর হিসাবে দেখবে না। তাই সে কি খারাপ? না, আপনি বলছেন; তিনি কেবল আরো বাস্তব বাদি  হয়ে উঠেছেন, অথবা, আপনি এটিকে আরও বেশি "ব্যবহারিক" হিসাবে উল্লেখ করতে পারেন। কিন্তু মূল বিষয়টি হল, তিনি নিজেকে যুবকের চেয়ে আরও বেশি বাস্তব সম্মত করে তোলে্ন, যিনি অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর, পিতৃভূমি, ইত্যাদি।

অতএব, মানুষ নিজেকে দ্বিতীয়বার আবিস্কার করে দেখায়। তরুন নিজেকে আত্মা হিসাবে এবং নিজেকে আবার সাধারন মানুষের মাঝে হারিয়ে ফেলে। সংক্ষিপ্ত ভাবে বললে দাঁড়ায়- পবিত্র আত্মা, মানুষ, মানবতা, ইত্যাদিতে সে বিলিন হয়ে যায় ।

সাধারণ বালকদের মধ্যে অবুদ্বিবৃত্তিক আগ্রহ ছিলো ( এর মধ্যে চিন্তা ও ধারনার অস্থিত্ব থাকে নাই), তরুনগনই কেবল বুদ্বিজীবী ছিলো; মানুষ শারিরীক ভাবে, ব্যাক্তিগত ভাবে, অহং ভিত্তিক আগ্রহ ছিলো।  যদি কোন শিশুর জীবনে লক্ষ্য না থাকে তবে তাদের জীবনকে অবসাদ গ্রাস করে নিতে পারে; সে তখনো জানে না কেমন করে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। একজন তরুন খুব সহজেই বুঝে যায় কেমন করে সেই রকমের অবসাদ গ্রস্থতা অতিক্রম করতে হয়; সে নিজেকে চিন্তায় বিভুর রাখতে পারে, তার স্বপ্ন ও চিন্তার জগত বুদ্বি বৃত্তিক ভাবনায় থাকে আচ্ছন্ন। “ তার চিন্তা রাজ্য শূন্য থাকেনা”।

একজন তরুন তার বুদ্বিমত্তার জগতে সকল কিছুকেই সম্পৃক্ত করে নিতে পারে, এমন কি বহিরাগতদের দূর্নাম সত্বেও সে নিবৃত হয় না । সে ক্ষুদ্র কোন বিষয় হলে ও তা উপেক্ষা করেনা যেমন – ছাত্রদের ক্লাব, মজুরদের ইউনিয়ন ইত্যাদি। কারন যখন সে নিজেকে নতুন ভাবে দেখে, তখন নিজেই একটি প্রতিক হিসাবে সকলের সামনে হাজির হবার ইচ্ছা পোষন করে।

আমি যখনই নিজকে কোন কিছুর পেছনে আবিস্কার করি, তখনই মনে হয় আমি একটি চিন্তার ও পিছু নিয়েছি, এমনকি সেই চিন্তার স্রষ্টা বা মালিক আমার অনুসরনীয় হয়ে উঠেছেন। সেই সময়ে আমি চিন্তার রাজ্যে এক প্রকার আলোরন অনুভব করি; তখনই সেই চিন্তাধারার উৎস ও ঢাল পালার শিকর সন্দ্বানে লিপ্ত হই। চিন্তার শ্রুত ধারা আমাদের প্রকম্পিত করে- স্বাপ্নিক জগতের দিকে চালিত করে-তখন আমাদের মন ও মননে এক প্রকার শক্তি এসে ভর করে। চিন্তা ভবনা সমূহ একটি বস্তুময় অবয়ব ধারন করে, তা অনেক সময় ভুত, ঈশ্বর , রাজা বাদশা, পোপ বা পিতৃভূমি হিসাবে আমাদের নিকট হাজির হয়। যদি আমি সেই সকল জিনিষ অস্বীকার করি তবে তা আবার আমার নিকটই বিমূর্ত হয়ে উঠবে। তখন আমি বলবঃ “ আমি দেহদারি একা মানুষ নই”। এবং আমি দুনিয়াকে আমার সম্পত্তি হিসাবে বিবেচনায় নিতে পারি; সকল কিছুতেই আমি আমার অধিকার ঘোষণা করতে পারি।

আমি একটি আত্মা হিসাবে দুনিয়াকে সকল প্রকার ঘৃনা থেকে দূরে রাখতে ভূমিকা পালন করতে পারি, কেননা আমি একটি আত্মা হিসাবে “গর্বের ধারনায়” সিক্ত হয়ে আছি। আমার উপর অন্যের কোণ প্রভাব চলতে আমি বাঁধা দিতে পারি, অন্যের মুখাপেক্ষি না হয়ে ও বেচে থাকা যায় ।  এমন কি অন্য কারো সাহায্যের ও দরকার নেই। “পার্থিব শক্তি” কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

শিশুরা বাস্তববাদি, এরা দুনিয়ায় তাদের চার পার্শে যা পায় তা থেকে শিক্ষা নিতে আগ্রহী হয়ে উঠে। তাঁরা প্রতিটি জিনিষের পেছনে লাগে আর জানতে চায় দ্বিধাহীন ভাবে। তরুন সমাজ হলো আদর্শের অনুসারী; তাঁরা চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত ও অনুপ্রানিত হয়, সে একজন পরিপূর্ন মানুষের পরিনত হবার আগ পর্যন্ত বিরতিহীন কাজ করে চলে। একজন অহং বাদি লোক নিজের মনে যা সায় দেয় সেই ভাবে  কাজ করেন, নিজের ব্যাক্তিগত স্বার্থানুসারে তার কর্ম পরিকল্পনা সাজায়। সর্বশেষে একজন প্রবীন কি করেন ? সামনে যখনই সময় পাব তখনই এই বিষয়ে কথা বলব।


Share Tweet Send
0 Comments
Loading...
You've successfully subscribed to Bangladesh ASF
Great! Next, complete checkout for full access to Bangladesh ASF
Welcome back! You've successfully signed in
Success! Your account is fully activated, you now have access to all content.