করোনা ভাইরাস জনিত কারনে চলমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংকটকালে সরকারের প্রতি  – বি এ এস এফ এর আহবান !

বি এ এস এফ  ও জোট ভুক্ত শ্রমিক সংগঠন ও  ইউনিয়নের পক্ষ থেকে  সরকারের  প্রতি আহবান জানাচ্ছে যে, বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বে করোনা ভাইরাস যেভাবে মহামারীর সৃষ্টি করেছে তা আজ মানবজাতিকে এক মহা সংকটের সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছে। সেই অবস্থায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসে গুরুত্বপূর্ন ও গঠন মূলক ভূমিকা পালন অপরিহার্য পরেছে। যাতে, দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বেষেশে সকলকে সুরক্ষা দেয়া যায়।

দেশের শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-যুব সহ সকল স্তরের জনগণ সরকার ঘোষিত পদক্ষেপ, যেমন- “সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা”- “গৃহে অবস্থান করা ”- “ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ” ইত্যাদিকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগীতা করছেন। তবে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আরো নিবিঢ় ও কার্যকরী কর্মসূচীর প্রত্যাশা করছি। বিশেষ করে – দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ যারা “দিন আনে দিন খায়”- এমন লোকদের জন্য সরকার এখনো কোন দৃশ্যমান কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করেনি।

আমরা সরকারের প্রতি ও তাঁর সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমূহের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব রোগী পরীক্ষার কার্যক্রম অধিকতর জোরদার করুন এবং প্রকৃত রোগীদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে যথোপযুক্ত কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে জনগণের প্রকৃত সুরক্ষার ব্যবস্থা করুন। আমরা বিশ্বাস করি মানুষের জীবনের চেয়ে বড় কিছু নেই। তাই, পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্ব প্রদান করে ঔষধ-পত্র ও অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকরণ সরবরাহের বিষয়টিকে সকল কিছুর উপর অগ্রাধীকার দেবার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশে এখন কেবল গার্মেন্টস সেক্টরে প্রায় ৪৫ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন যাদের বেশীর ভাগই নারী শ্রমিক। করোনা ভাইরাস আতঙ্কের কারনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে গার্মেন্টস সেক্টর মূখ তুবরে পরার উপক্রম হয়েছে। এখন এই গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ভাতার কি হবে ? সামনে আসছে পবিত্র রোজা ও ঈদ। সরকার ঘোষনা করেছে ৫০০০ কোটি  টাকা মালিকদেরকে প্রনোদনা হিসাবে দেবার জন্য । আমাদের বক্তব্য হলো মালিকদেরকে নয়;সরকারের এই অনুদান মালিক বা কোম্পানী গুলোর হাতে না দিয়ে শ্রমিকদেরকে সরাসরি ব্যাংকের ময়াধ্যমে দেয়া হোক। শ্রমিকগন তাঁদের পরিচয় পত্র দেখিয়ে টাকা উত্থোলন করবেন।

অন্যদিকে, আমাদের দেশে প্রায় ৬ কোটি নিম্নবিত্তের লোক আছেন যারা দুদিন কাজ না করলে তাঁদের খাবার জুটবে না । তাই তাঁদেকে  বিশেষ প্রকল্পের আওতায় নগদ অর্থসহ রেশনিং এর আওতায় আনা হোক।

আমরা সকলেই অবগত আছি যে, দেশের কল কারখানা, পরিবহন, চা-বাগান, হোটেল রেস্টোরেন্ট, ক্ষুদ্র শিল্প কেন্দ্র ও ব্যবসা-বানিজ্য  ইত্যাদি মানুষের কল্যানেই আপাতত বন্দ্ব রয়েছে। এমন কি গৃহকর্মীগন ও তাঁদের কাজ-কর্ম হাড়িয়ে  অনাহারে অর্ধাহারে  জীবন যাপন করছে। এই সকল খাত সহ  প্রতিষ্ঠানিক ও  অপ্রতিষ্ঠানিক খাতে যে সকল কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ আছেন তাঁদের সিংহ ভাগই তাঁদের কাজ হারিয়ে বেকারত্বে ভোগছেন। সরকারের উচিৎ হবে এই ক্রান্তিকালে কর্মহীন এই জনগৌষ্ঠির জন্য খাদ্য সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ সরবরাহ করা। তাঁদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে শক্তিশালী সুপারভিশন ও মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা । যাতে সাধারন মানুষ বেঁচে থাকার সুযোগ পায়।

আমরা বিশ্বাস করি মুক্তিযুদ্বের চেতনায় উদ্ভাসিত সরকার দেশ ও জনগণের কল্যানে দির্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি কর্মসূচী গ্রহন করে দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখবেন। তবে সমাজের ঝুকিপূর্ন মানুষের কথা যেন ভূলে না যান সেই দিকে  সরকারে সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।

তবে এখনি এবং  অনতি বিলম্বে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য সবিশেষ অনুরুধ করছিঃ-

১। অতিদ্রুত শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগণের মাঝে খাদ্যদ্রব্যসহ ও নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী  বিনামূল্যে রেশনিং চালু করুন;

২। আমাদের প্রবাসী যে সকল ভাই বোন বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন। তাঁদের অনেকেই পরিস্থিতির কারনে  শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। এরা আমাদের সম্মানিত রিমিট্যান্স যোদ্বা । আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়ত স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে যাবেন । তাই এই বিপদ কালে তাঁদের প্রতি সরকারের  হাত বাড়ানো উচিৎ। তাঁদের জন্য আপদ কালিক ভাতার ব্যবস্থা করা হোক।

৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুসারে পরীক্ষা ! পরীক্ষা ! এবং পরীক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করুন;

৪। চিহ্নিত রোগীদেরকে পাকাপাকি ভাবে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করুন। এই বিষয়ে কোন প্রকার শিতিলতা আমাদের সমগ্র জাতীর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে;

৫। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে সহায়তা জোরদার করুন। নইলে মহামারীর সাথে মহা দুর্ভিক্ষ নেমে আসবে;

৬।  অসাধু ব্যবসায়ী, মজুদদার ও দালাল শ্রেনীর লোকদেরকে শক্ত নজরদারীতে রাখুন।

৭। অত্যাবশ্যকীয় ঔষধ পত্রের সরবরাহের  লক্ষ্যে  ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানী ও ঔষধ ব্যবসায়ীরা যেন অন্যায় ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেই জন্য কড়া নজরদারী দরকার ।

৮। সরকারী বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত  ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা করা অতি আবশ্যক।

আমরা শ্রমজীবী কর্মজীবী ও পেশাজিবীসহ সকল জনগণের পক্ষে এই দাবী মেনে নিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারে প্রতি অহবান জানাচ্ছি।

আহবানে

সাধারান সম্পাদক, বি এ এস এফ ।