কোভিড-১৯ বিশ্বে কি প্রভাব ফেলবে ?
এ কে এম শিহাব
আগামী ছয় মাস, এক বছর, দশ বছর পর কি হবে আমাদের ? এই প্রশ্ন এখন আমার, আপনার ও সকলের। যাদের চাকুরী ছিলো, ব্যবসা ছিলো, যারা দিন মজুর ছিলেন তাঁদের সকলের ই একেই জিজ্ঞাসা। এখন প্রায় সকলেই কর্মহীন। দেশ ব্যাপী সাধারন ছুটি চলছে। মানুষ করোরানার ভয়ে ঘরে আটকা পড়েছেন। কাজ নেই, রোজগার নেই। যারা সরকারী চাকুরী করেন তাঁদের হয়ত তেমন সমস্যা হবে না। কিন্তু বাকীদের সামনে অনিশ্চিয়তার খড়গ ঝুলছে । তাঁদের মনে প্রশ্ন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কি আমাদের চাকুরী থাকবে। আমরা কি কাজ পাব ? কল কারখানা কি আগের মত চলবে? ব্যবসা বানিজ্য কি ঠিক টাকমত করতে পারব। নাকি আমরা নতুন কোন বিশ্ব পরিস্থিতিতে প্রবেশ করব ? এমনতর অনেক প্রশ্নই এখন অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে। তাই আজকের লিখায় সেই বিষয়েই অবতারনা করা হবে।
অনেক রকমের উত্তর ও আবার আমাদের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের সরকার, সমাজ অবশ্যই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অর্থনীতি, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকে পুনঃ গড়ে তুলবেন। হয়ত অতীতের ছেয়ে সামনে আরো ভালো কিছু হবে। আমাদের কিছু ক্ষতি হলেও হয়ত আমাদের সমাজ আরো মানবিক হয়ে উঠবে।
আমার মনে হয়, আমরা আগামীতে আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশকে হয়ত আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারব- আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মানে আরো ভালো ভাবে কাজ করতে পারব- রাজনৈতিক অর্থনীতিকে আরো নতুন ভাবে সাজাতে পারব। পন্যের বিশ্ব সরবরাহ চেইন, মজুরী এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজাতে পারব। বিশ্ব উষ্ণনায়ন ও উৎপাদনের সাথে জড়িত শ্রমিক শ্রেণীর মানসিক ও শারিরীক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি অধিকতর সচেতন হতে পারব। আমি এখানে একটি ভিন্ন ধরনের অর্থনীতির কথা বলতে চাইছি। কোভিড-১৯ এর মুখোমুখি হয়ে এই বিষয়ে আরো উৎসাহিত হয়ে উঠেছি।
কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে গিয়ে আমরা আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার উপাদনের মধ্যে নিহিত দুর্বলতা গুলো স্পষ্ট হচ্ছে। সামাজিক উপাদান সমূহের মধ্যে কি কি অগ্রাধিকার পাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ব ব্যাপী কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে গিয়ে অর্থনৈতিক বিকাশের পথ ও পন্থা নিয়ে নতুন ভাবনার ও উদ্ভব হয়েছে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চারটি বিষয় ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বর্বতার উত্থান, কঠিন রাস্ট্রীয় পুঁজিবাদ, রাস্ট্রীয় সমাজবাদ এবং বৃহত্তর পরিষরে পারস্পরিক সহায়তার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠা এক নতুন সমাজ। তবে তা সকলে সমান ভাবে না ও চাইতে পারে।
খুব সাদামাটা পরিবর্তন ঘটবে নাঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ও করোনা ভাইরাসের মতই আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর সাথে সম্পৃক্ত। যদি ও দুটি সমস্যাই “পরিবেশ” বা “পাকৃতিক” কারনের সাথে জড়িত। তবে তাতেও সামাজিক মানুষের ভূমিকা রয়েছে।
হ্যাঁ, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাটি কতিপয় গ্যাস নিঃসরনের সাথে জড়িত, যা তাপকে শোষন করে। তবে অনেকেই মনে করেন তা হালকা প্রকৃতির ব্যাখ্যা। সত্যিকার অর্থে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাটি বুঝতে হলে, আমাদেরকে ভালোকরে বুঝতে হবে কি কি কারনে গ্যাস নিঃসরনের পরিমানকে দিনে দিনে বাড়িয়ে তুলছে। কোভিড-১৯ এর সমস্যাটি ও একেই সূত্রে বাঁধা। তবে, হ্যাঁ ! এই সমস্যার জন্য সরাসরি ভাইরাস জড়িত। প্রকৃত সত্য হলো, তা নিয়ন্ত্রনের জন্য মানুষের আচারনিক ও অর্থনৈতিক দিক গুলো না বুঝতে পারলে এই কঠিন সমস্যার সমাধান অসম্ভব।
কোভিড-১৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাকে সমাধান করতে চাইলে অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বাদ দিতে হবে। অপ্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে হ্রাস করতে পারলে, কম শক্তি খরচ হবে, এবং কম গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হবে। কোভিড-১৯ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এর যুক্তিটি খুবই সহজ, লোকজন একত্রিত হচ্ছেন আর রোগটি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এই ঘটনা ঘটছে পরিবারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে এবং যাত্রা পথে। এই ক্ষেত্রগুলো নিয়ন্ত্রন করতে পারলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।
মানুষে মানুষে যোগাযোগ বন্দ্ব করা এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রন মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে সাফল্য পাওয়া যেতে পারে। তবে, প্রকৃত রোগী চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন না করলে ভালো ফলাফল আশা করা যায় না। আমরা চীনের উহানে দেখেছি সম্পূর্ন জাতীয় লকডাউন করে দিয়ে, সামাজিক দূরত্ব কার্যকরী করে ভালো ফল পেয়েছে। ইউরূপের দেশ সমূহ ও আমারিকা কেন তাৎক্ষনিক ভাবে এই পদক্ষেপ নিলেন না তা বুঝতে হলে ও আমাদেরকে রাজনৈতিক অর্থনীতির দিকে নজর দিতে হবে।
একটি ভঙ্গুর অর্থনীতিঃ
লকডাউন বিশ্ব অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে। আমরা একটি গুরুতর মন্দার মুখোমুখি। এই চাপ কিছু বিশ্বনেতাদেরকে লকডাউন ব্যবস্থা সহজ করার আহ্বান জানাচ্ছে।
এমনকি যখন ১৯ টি দেশ লকডাউন অবস্থায় বসে ছিল তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি জায়ের বলসোনারো তা থেকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ট্রাম্প আমেরিকান অর্থনীতিকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন (তিনি এখন স্বীকার করেছেন যে সামাজিক দূরত্বকে আরও দীর্ঘকাল ধরে রাখতে হবে)। বলসোনারো বলেছিলেন: “আমাদের জীবন চলতে হবে। চাকরি অবশ্যই রাখতে হবে ... আমাদের অবশ্যই, হ্যাঁ, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা উচিত। "
ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে, তিন সপ্তাহের লকডাউন ডাকার চার দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কেবলমাত্র সামান্যই আশাবাদী ছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে যুক্তরাজ্য ১২ সপ্তাহের মধ্যে রোগের সম্প্রসারন বন্দ্ব করে আগের অবস্থায় সব কিছু ফিরিয়ে আনতে পারব। জনসনের বক্তব্য সঠিক হলেও এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি চলমান আছে তাতে বুঝা যায় তা আরো দির্ঘায়িত হবে। যা ইংল্যান্ডের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
বিশ্বময় অর্থনীতি যে এখন পতনের মুখে তা এখন দিবালোকের মত পরিস্কার। ব্যবসার ভিত্তিই হলো মুনাফা অর্জন করা। তাঁরা যদি উৎপাদন না করতে পারেন, তবে তা বিক্রিও করতে পারবেন না । ফলে কোন মুনাফা ও পকেটে আসবে না । যার অর্থ হলো- বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। ব্যবসায়ীগন প্রয়োজন নেই এমন লোকজন কিছুতেই ধরে রাখবেন না। যখন আবার ব্যবসার অবস্থা ভালো হবে তখন আবার লোকজনকে নিয়োগ দিবেন। তাই এখন, এটা পরিস্কার যে, চাকুরী হারানোর ভয় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে, অনেক লোক চাকুরী হারাবেন। ফলে আয় রোজগার কমে যাবে, কেনাকাটা কম হবে। সামগ্রীক ভাবে আমরা একটি অর্থনৈতিক মন্দ্বার দিকে এগোচ্ছি।
অর্থনীতিবিদ জনমেইনার্ড কেনিসের একটি ফ্রেস্ক্রিপশন আছে, তা হলো- “এই ধরনে পরিস্থিতিতে সরকার নানা কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী গ্রহন করবেন। জনগণ এতে অংশগ্রহন করবেন আর রোজগার করে চলবেন। আবার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলে সকলেই স্বাভাবিক কাজে ফিরে যাবেন”।
কিন্তু আমরা এখনই আমাদের অর্থনীতিকে পুনরুদ্বার করতে করতে পারব না। কেননা, দুনিয়াময় চলছে লকডাউন। মানুষ কাজে যেতে পারবেন না। ভয় রোগ ছড়িয়ে যাবে সব খানে। গবেষনা বলছে, করোনা থেকে বাঁচতে হলে ঘরে থাকা চাই।
অর্থনীতিবিদ মিডওয়ে বলেছেন, “ কোভিড-১৯ মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমাদের অর্থনীতি যুদ্বকালিন অর্থনীতি নয়; তাঁর চেয়েও বেশী কিছু। তাই আমাদেরকে এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে তা যেন কোন পাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, ও অন্যান্য আপদ বিপদের সময়ে রোজগারে টান না পরে – জীবন যাত্রায় অভাব না হয়”।
তাই, অর্থনীতি বিষয়ে আমাদেরকে ভিন্ন ভাবে চিন্তা করতে হবে। আমাদের চিন্তা ভাবনা জোড়ে আছে- বেচা আর কেনা, কেনা আর বেচা। কিন্তু আমরা সেই অর্থনীতির কথা বলছি না।আমরা সেই অর্থনীতির কথা বলছি, যেখানে সম্পদকে এমন ভাবে তৈরী করা হবে যা আমাদের কেবল চাহিদা মেটায় ।সেখানে ভোগবাদিতা নয় ।যতটুকু দরকার কেবল ততটুকুই উৎপাদন করা হবে। যেন আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশ ভালো থাকে।
আপনি কীভাবে সামাজিকভাবে ন্যায়সঙ্গত উপায়ে কম উত্পাদন করবেন এই প্রশ্নে আমি এবং অন্যান্য বাস্তুসংস্থানবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বিগ্ন , কারণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কম উত্পাদন করার চ্যালেঞ্জও কেন্দ্রীয়। অন্য সব সমান, আমরা যত বেশি উত্পাদন করি, তত বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করি। কাজেই লোকদের কাজে নিয়োজিত রাখার সময় আপনি কীভাবে জিনিসপত্রের পরিমাণ কমিয়ে আনবেন ? এই রকম প্রশ্ন উঠতেই পারে।
আমার প্রস্তাবগুলির মধ্যে অন্যতম হল, কার্যদিবসের দৈর্ঘ্য হ্রাস করা । লোককে আরও ধীরে ধীরে এবং কম চাপ দিয়ে কাজ করার অনুমতি দিতে হবে। এগুলির কোনওটিই সরাসরি COVID-19 এ প্রযোজ্য নয়, যেখানে লক্ষ্য হল আউটপুটের পরিবর্তে যোগাযোগ হ্রাস করছে । প্রস্তাবগুলির মূল লক্ষ্য হলো একই ভাবে বাঁচতে সক্ষম করে তুলতে আপনাকে মজুরির উপর লোকের নির্ভরতা হ্রাস করতে হবে।
অর্থনীতি কেন ?
COVID-19- এর মোকাবিলা করতে গিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আসলে অর্থনীতি কি এবং কিসের জন্য। বর্তমানে, বিশ্ব অর্থনীতির প্রাথমিক লক্ষ্য অর্থের বিনিময় সহজতর করা। এটিকেই অর্থনীতিবিদরা "বিনিময় মূল্য" বলে থাকেন।
আমরা যে বর্তমান সিস্টেমে বাস করি তার প্রভাবশালী ধারণাটি হ'ল বিনিময় মূল্য ব্যবহারের মূল্য হিসাবে একই জিনিস। মূলত, লোকেরা তাদের পছন্দসই বা প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির জন্য অর্থ ব্যয় করবে এবং অর্থ ব্যয়ের এই কাজটি তার "ব্যবহার" এর কতটা মূল্য দেয় তা সম্পর্কে আমরা কিছু বুঝতে পারি । এই কারণেই বাজারকে সমাজ পরিচালনার সর্বোত্তম উপায় হিসাবে দেখা হয়। তারা বাজারের সাথে আপনাকে মানিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয় এবং সেই ক্ষেত্রে ব্যবহারের মান সহ উত্পাদনশীল ক্ষমতা হয় যথেষ্ট নমনীয়।
কভিড -১৯ একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে এবং সকলকে যে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলেছে তা হ'ল বাজার সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস কতটা অসার ও মিথ্যা। বিশ্বজুড়ে, সরকারগুলি এখন আশঙ্কা করছে যে সমালোচনামূলক সিস্টেমগুলি ব্যাহত হবে বা অতিরিক্ত চাপে পড়বে : সরবরাহের চেইন, সামাজিক যত্ন, তবে প্রধানত স্বাস্থ্যসেবা। এটিতে অবদান রাখার অনেক কারণ রয়েছে। তবে নিচের দুটি বিষয় দেখা যাক।
প্রথমতঃ বেশিরভাগ অতি প্রয়োজনীয় সামাজিক পরিষেবা থেকে অর্থোপার্জন করা বেশ শক্ত কাজ। এটি একটি অংশ কারণ মুনাফার একটি বড় চালক শ্রম উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি: কম লোক দিয়ে আরও বেশি করে কাজ করা। অধিক লোক অনেক ব্যবসায়ের একটি বড় ব্যয়ের কারণ, বিশেষত যারা ব্যক্তিগত যত্নের উপর নির্ভর করে যেমন স্বাস্থ্যসেবা। ফলস্বরূপ, স্বাস্থ্যসেবা খাতে উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি অন্যান্য অর্থনীতির তুলনায় কম থাকে, তাই এর ব্যয়গুলি অন্যান্য খাতের গড়ের চেয়ে দ্রুত বেড়ে যায় ।
দ্বিতীয়তঃ অনেক ক্ষেত্রে এমন কিছু চাকুরী আছে যা সামাজিক ভাবে তেমন আদরনীয় নয়। প্রচলিত চাকরির অনেকগুলিই কেবল এক্সচেঞ্জের সুবিধার্থে বিদ্যমান আছে; কেবল টাকা ইনকাম করতে. তারা সমাজের কোনও বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধন করে না: এগুলিকেই নৃবিজ্ঞানী ডেভিড গ্রাবার “বুলশিট জব” বলে আখ্যায়িত করেছেন । তবুও তারা প্রচুর অর্থোপার্জন করে । কারণ আমাদের কাছে তাঁরা পরামর্শদাতা। যেমন - বিশাল বিজ্ঞাপন শিল্প এবং কিছু বিশাল আর্থিক খাত রয়েছে। এদিকে, আমাদের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক যত্নের ব্যাপক সংকট রয়েছে। তাদেরকে নানা ভাবে কাজ করতে অনেক বাধ্য করা হয়। অথচ তাঁদের জন্য যে বরাদ্ব থাকে তা উপযুক্ত জীবন যাপনের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
অপ্রয়োজনীয় বা অর্থহীন চাকুরীঃ
আমাদের সমাজে অনেক অর্থহীন চাকুরে রয়েছেন। এটা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, কোভিড- ১৯ মোকাবিলা করতে গিয়ে কাজ করার মত উপযুক্ত লোক পাওয়া যাচ্ছে না । এই মহামারীটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, জাতীয় দুর্যোগের জন্য সব সময়েই প্রস্তুতি রাখা দরকার।
মানুষ অর্থহীন চাকরি করতে বাধ্য হয় কারণ যে সমাজে বিনিময় মূল্য অর্থনীতির দিকনির্দেশক নীতি, জীবনের প্রাথমিক পণ্যগুলি মূলত বাজারের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। এর অর্থ আপনার সেগুলি কিনতে হবে এবং তাদের কিনতে আপনার একটি আয় প্রয়োজন যা একটি কাজ থেকে আসে।
এই মুদ্রার অন্য দিকটি হ'ল আমরা COVID-19 এর প্রাদুর্ভাবকে যে সর্বাধিক র্যাডিক্যাল (এবং কার্যকর) প্রতিক্রিয়া দেখছি সেগুলি বাজারের আধিপত্য এবং বিনিময় মূল্যকে চ্যালেঞ্জ করে। বিশ্বজুড়ে সরকারগুলি এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যা তিন মাস আগে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। স্পেনে, বেসরকারী হাসপাতালগুলি জাতীয়করণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে, বিভিন্ন ধরণের পরিবহণের জাতীয়করণের সম্ভাবনা খুব বাস্তব হয়ে উঠেছে। এবং ফ্রান্স বৃহত্তর ব্যবসায়িক জাতীয়করণের জন্য তত্পরতা জানিয়েছে।
তেমনি, আমরা শ্রমবাজারের ভাঙ্গন দেখছি। ডেনমার্ক এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলি লোকদের কাজ থেকে বিরত থাকতে একটি বিকল্প উপার্জন সরবরাহ বা ভাতা প্রদান করছে। এটি একটি সফল লকডাউনের প্রয়োজনীয় অংশ। এই ব্যবস্থাগুলি প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে অনেক দূরে। তা সত্ত্বেও, এটি যে নীতি থেকে তাদের আয় উপার্জনের জন্য ব্যবস্থা করছে এটা ইতিবাচক একটি দিক এবং এই ধারণাটির দ্বারা প্রমানিত হচ্ছে যে লোকেরা কাজ করতে না পারলেও বেঁচে থাকতে সক্ষম।
এটি গত ৪০ বছরের প্রভাবশালী ট্রেন্ডগুলিকে বিপরীত করে। এই সময়ের মধ্যে, বাজার এবং বিনিময় মূল্যবোধকে একটি অর্থনীতি পরিচালনার সর্বোত্তম উপায় হিসাবে দেখা হয়েছে। ফলস্বরূপ, পাবলিক সিস্টেমগুলি বাজারজাতকরণের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে পড়েছে, এটি চালানোর জন্য যেমন তারা ব্যবসায়ের যারা অর্থ উপার্জন করতে হয়। তেমনিভাবে, শ্রমিকরা আরও বেশি করে বাজারের কাছে উন্মুক্ত হয়ে উঠেছে - শূন্য-ঘন্টা চুক্তি এবং মুক্তঅর্থনীতি বাজারের ওঠানামা থেকে সুরক্ষার স্তরটি সরিয়ে নিয়েছে যা দীর্ঘমেয়াদী, স্থিতিশীল এবং কর্মসংস্থানের অফার করত।
কোভিড -১৯ এই প্রবণতাটিকে বিপরীত বলে মনে হচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রমজাত পণ্য বাজার থেকে বাইরে নিয়ে এসে রাজ্যের হাতে দিয়েছে। রাজ্যগুলি বিভিন্ন কারণে উত্পাদন করে। কিছু ভাল এবং কিছু খারাপ। তবে বাজারগুলির বিপরীতে, তাদের একা বিনিময় মূল্যের জন্য উত্পাদন করতে হবে না।
এই পরিবর্তনগুলি আমাকে আশা দেয়। তারা আমাদের অনেক জীবন বাঁচানোর সুযোগ দেয়। এমনকি তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের সম্ভাবনা সম্পর্কেও ইঙ্গিত দেয় যা আমাদের আরও সুখী করে তোলে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের সহায়তা করে। তবে কেন আমাদের এখানে আসতে এত দিন লাগল? দেশগুলো কি উত্পাদন কমিয়ে দেবার জন্য এতটা প্রস্তুত ছিল? উত্তরটি সাম্প্রতিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে রয়েছে: তাদের সঠিক "মানসিকতা" ছিল না।
আমাদের অর্থনৈতিক কল্পনাসমূহ
প্রায় চল্লিশ বছর যাবত অর্থনৈতিক একটি ঐক্যমতের জন্য চেষ্টা চলছিলো। এটি রাজনীতিবিদ এবং তাদের পরামর্শদাতাদের সিস্টেমে ফাটল সৃষ্টি করে এবং বিকল্পগুলির কল্পনা করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করেছে। এই মানসিকতা দুটি সংযুক্ত বিশ্বাস দ্বারা চালিত:
- বাজার একটি সুন্দর ও মান সম্পন্ন জীবনের নিশ্চয়তা দেয়, তাই একে সুরক্ষা দিতে হবে; এবং
- কোন সংকট সৃষ্টি হলে অল্প সময়ের মধ্যেই তা স্বাভাবিক করে ফেলে।
এই ধরনের মানসিকতা পশ্চিমা দেশসমূহে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মানসিকতা সম্পন্ন লোকদের সংখ্যা বেশী। অথচ আমরা কি দেখলাম কোভিড-১৯ মোকাবিলার ক্ষেত্রে এরাই হলো সবচেয়ে ব্যার্থ দেশ সোমূহের মধ্যে অন্যতম।
ইংল্যান্ডে, এই মহামারীর প্রথম দিকে দেশের প্রধান মন্ত্রী বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে বললেন, কয়েকজন প্রবীন লোক মারা গেছেন। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তখন ও একজন অভিজ্ঞ সিভিল সার্জেন বলেছিলেন, “মহাময়ারী প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সংগতি নেই। এটা অমানবিক । মানুষের মূল্যবান জীবন রক্ষা করার বিষয়টি সকল কিছুর উপর প্রাধান্য দেয়া উচিৎ”।
মার্কিন সমাজের অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে এমন মানসিকতা ও বিদ্যমান ছিলো যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অবসন্নতায় ডুবে না গিয়ে অনেক প্রবীণ ব্যক্তি আনন্দের সাথে মারা যাবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনেকগুলি দুর্বল লোককে বিপন্ন করে (এবং সমস্ত দুর্বল লোকেরা প্রবীণও নয়)।
COVID-19 সংকট যে কাজগুলি করতে পারে তার মধ্যে একটি হ'ল সেই অর্থনৈতিক কল্পনাশক্তি প্রসারিত করা। সরকার এবং নাগরিকদের তিন মাস আগে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল, বিশ্ব কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণাগুলি দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। আসুন আমরা দেখি যে এই নব সৃষ্ট কল্পনাটি আমাদের কোথায় নিতে যেতে পারে।
চারটি সম্ভাব্য পথ ও পন্থাঃ
ভবিষ্যতে আমাদের সহায়তা করতে, আমি ফিউচার স্টাডির ক্ষেত্র থেকে একটি কৌশল ব্যবহার করতে যাচ্ছি। ভবিষ্যত চালানোর ক্ষেত্রে আপনি যে দুটি কারণকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন আপনি তা গ্রহণ করতে পারেন এবং আপনি চিন্তা করতে পারেন সেই কারণগুলির বিভিন্ন সংমিশ্রণে কী ঘটবে।
আমি যে বিষয়গুলি নিতে চাই তা হ'ল (value) মান এবং কেন্দ্রীকরণ। মান হল সেই নীতি যা আমাদের অর্থনীতির দিক নির্দেশক । আমরা কি আমাদের সম্পদ বা সংস্থান গুলিঁকে এক্সচেঞ্জ এবং অর্থবৃদ্বির জন্য ব্যবহার করি, বা আমরা এগুলি জীবনকে সর্বোত্তম সহজ করতে ব্যবহার করি? কেন্দ্রিয়করণ বলতে বোঝায় যেভাবে ছোট ছোট ইউনিট বা একটি বড় কমান্ডিং ফোর্সের মাধ্যমে জিনিসগুলি সংগঠিত হয়। আমরা এই উপাদানগুলিকে একটি গ্রিডে সংগঠিত করতে পারি, যা পরে বাস্তব পরিস্থিতিতে পপুলেট করা যায়। সুতরাং আমরা চারটি চরম সংমিশ্রণে করোনভাইরাসকে মোকাবিলা করতে চেষ্টা করলে কী ঘটতে পারে তা আমরা ভাবতে পারি:
১) রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ: কেন্দ্রিয়ায়িত প্রতিক্রিয়া, বিনিময় মূল্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া
২) বর্বরতা: বিকেন্দ্রীভূত প্রতিক্রিয়া বিনিময় মানকে অগ্রাধিকার দেয়
৩) রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্র: কেন্দ্রিক প্রতিক্রিয়া, জীবন রক্ষাকে প্রাধান্য দেয়
৪) পারস্পরিক সহায়তা: জীবন রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে বিকেন্দ্রীভূত প্রতিক্রিয়া।
রাস্ট্রীয় পুঁজিবাদঃ
রাস্ট্রীয় পুঁজিবাদ হ'ল বিশ্বজুড়ে আমরা এখন যে প্রভাবশালী প্রতিক্রিয়া দেখছি। সাধারণ উদাহরণগুলি হ'ল যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং ডেনমার্ক।
রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদী সমাজ অর্থনীতির দিক নির্দেশক হিসাবে বিনিময় মূল্য অব্যাহত রাখে। তবে এটি স্বীকৃতি দিয়েছে যে সংকটযুক্ত বাজারগুলির জন্য রাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন। প্রদত্ত যে অনেক শ্রমিক অসুস্থ থাকার কারণে তাদের কাজ করতে পারে না এবং তাদের জীবনের জন্য ভয়, রাষ্ট্র নিজেই বর্ধিত কল্যাণের পদক্ষেপ নেয়। এটি ঋন দান কার্যক্রমকে প্রসারিত করে এবং ব্যবসাগুলিতে সরাসরি অর্থ সহসায়তা প্রদানের মাধ্যমে কেনেসিয়ান নীতি প্রয়োগ করে থাকে।
এখানে এই ধরনের কার্যক্রম একটি স্বল্প সময়ের জন্য হবে। গৃহীত পদক্ষেপগুলির প্রাথমিক কাজটি হ'ল বেশি পরিমানে ব্যবসাকে ক্রয়-বিক্রয়ের দিকে চালিত রাখা। যুক্তরাজ্যে, উদাহরণস্বরূপ, বাজারগুলি এখনও খাবার বিতরণ করে (যদিও সরকার প্রতিযোগিতার আইন শিথিল করেছে)। যেখানে শ্রমিকদের সরাসরি সমর্থন করা হয়, সেখানে এটি এমনভাবে করা হয় যা সাধারণ শ্রমবাজারের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে না। সুতরাং, উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের মতো, শ্রমিকদের দেওয়া অর্থের জন্য নিয়োগকর্তাদের জন্য আবেদন করতে হবে এবং বিতরণ করতে হবে। এবং পেমেন্টের আকারটি কোনও শ্রমিক সাধারণত তাদের কাজের উপযোগিতার চেয়ে বাজারে সাধারণত যে বিনিময় মূল্য তৈরি করে তার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।
এটি একটি সফল দৃশ্য হতে পারে? সম্ভবত, তবে কেবলমাত্র COVID-19 অল্প সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণযোগ্য প্রমাণিত হবে। বাজারের কার্যকারিতা বজায় রাখতে যেমন পুরো লকডাউন এড়ানো হয়, তাই সংক্রমণের সংক্রমণ তখনও অব্যাহত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ইউকেতে অ-অপরিহার্য নির্মাণ এখনও অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে শ্রমিকরা বিল্ডিং সাইটগুলিতে মিশ্রিত হয়। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেলে সীমিত রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ বজায় রাখা আরও শক্ত হয়ে উঠবে। ক্রমবর্ধমান অসুস্থতা এবং মৃত্যু অশান্তি এবং গভীর অর্থনৈতিক প্রভাবকে উত্সাহিত করবে, রাষ্ট্রকে বাজারের ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখার চেষ্টা করার জন্য আরও বেশি করে মৌলিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবে।
বর্বতাবাদঃ
এটা হবে আমাদের জন্য একটি কালো অধ্যায়। বর্বরতাবাদ হলো এমন এক ভবিষ্যতের নাম, যেখানে আমরা আমাদের গাইডিং নীতি হিসাবে বিনিময় মূল্যের উপর নির্ভর করব এবং এখন যারা অসুস্থতা বা বেকারত্বের কারণে বাজারের বাইরে আটকে আছেন তাদের প্রতি সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিতে অস্বীকার করব । এটি এমন একটি পরিস্থিতির কথা বলে যা আমরা এখনও দেখিনি।
ব্যবসায়ের ব্যর্থতার কারনে এবং শ্রমিকরা অনাহারে থাকায় বাজারের কঠোর বাস্তবতা থেকে তাদের রক্ষা করার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালগুলি ও অস্বাভাবিক ব্যবস্থা জন্য প্রস্তুত নয় এবং তাই তারা অভিভূত হয়ে পড়ে। মানুষ মারা যায়. বার্বারিজম চূড়ান্তভাবে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্র সৃজন করে। ধ্বংস হয়ে যায় রাজনৈতিক এবং সামাজিক বন্দ্বন।
এখন কি তা হলে সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ? এটা হতে পারে মহারীর জন্য বা মহামারী জনিত কোন বড় ভূলের কারনে। তা আবার বিষেশ মহলের দ্বারা ইচ্ছাকৃত ও হতে পারে। অথবা সরকার যদি মহামারীর সময়ে যথা যথ পদক্ষেপ গ্রহনে ব্যার্থ হয় তবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতেই পারে। তাই, আক্রান্ত লোকদের সঠিক চিকিৎসা, ঔষধ, সেবক যথা যথ ভাবে নিয়জিত করতে না পারলে চারিদিকের সব কিছুই বন্দ্ব হয়ে যেতে পারে। অসংখ্য রোগী, অগনিত মৃত্যু, বিশৃঙ্খলা ডেকে আনবে। তাই চিকিৎসকদের জন্য সুরক্ষা ও পর্যাপ্ত তহবীল বরাদ্ব দিতে হবে। নইলে মানুষ সরকার রাষ্ট্র সমাজ কিছুই আর মানবে না ।
মনে রাখতে হবে, মহামারী থেকে পুলিশ, আর্মী এমনকি মন্ত্রী আমলা কেহই রক্ষা পাবেন না । ফলে কোথাও শৃঙ্খলার চেইন ভেঙ্গে পরলে তা এক ভয়ানক পরিস্থিতির জন্ম দিবে। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়লে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিবে। আর সেই অস্থিরতা রাস্ট্রকে এক চরম ব্যার্থতার দিকে নিয়ে যাবে।
রাস্ট্রীয় সমাজতন্ত্রঃ
রাস্ট্রীয় সমাজতন্ত্র এমন একটি সমাজ ব্যবস্থার কথা বলে- যেখানে অর্থৈতিক ও সাংস্কৃতিক একটি বিরাট পরিবর্তন আনবে। আমরা ইংল্যান্ড, স্পেন এবং ডেনমার্কে ইতিমধ্যে যা কিছু কল্যান মূলক উদাহরন দেখছি তাঁর সম্প্রসারণ ঘটতে পারে।
সেই সকল দেশে হাস্পাতাল গুলো জাতীয়করন করা হয়েছে। কর্মজীবী মানুষকে সুরক্ষা দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সকল প্রতিস্টান বাজারের উপর নির্ভরশীল নয়। অর্থনৈতিক দিকে ও তাঁরা মানুষের বেঁচে থাকার উপাদান সমূহ যেমন- খাদ্য, জ্বালানী, ও গৃহের ব্যবস্থাকে বাজার নির্ভর না করে মানুষের চাহিদা পুরনের চেষ্টা করেছে। এই সকল দেশে সকল নাগরিক দের অবাধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে জাতীয় ভাবে নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পুরন করছে।
নাগরিকরা আর তাদের এবং জীবনের প্রাথমিক উপাদানগুলির মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে নিয়োগকারীদের উপর নির্ভর করে না। প্রত্যেকে সরাসরি অর্থ প্রদান করে থাকে এবং তারা যে বিনিময় মূল্য তৈরি করে তার সাথে সম্পর্কিত নয়। পরিবর্তে, অর্থ প্রদান সকলের জন্য সমান বা সেগুলি কাজের উপযোগিতার উপর ভিত্তি করে। সুপার মার্কেটের কর্মী, ডেলিভারি ড্রাইভার, গুদাম স্ট্যাকার, নার্স, শিক্ষক এবং চিকিৎসকরা নতুন সিইও যিনি ই হোন না কেন।
এটা সম্ভব যে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের চেষ্টার ফলস্বরূপ হিসাবে এবং দীর্ঘায়িত মহামারীর প্রভাব হিসাবে রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রের উত্থান ঘটে। যদি গভীর মন্দা দেখা দেয় এবং সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয় । তখন রাষ্ট্র নিজেই উৎপাদন ও বন্ঠনের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে।
এই পদ্ধতির ঝুঁকি রয়েছে - আমাদের কর্তৃত্ববাদবাদ এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকতে হবে। তবে ইতিবাচক দিক হলো - কভিড -১৯ প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে এটি আমাদের একটি আশা হতে পারে। অর্থনীতি ও সমাজের মূল কাজগুলি রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলে সম্পদ সুরক্ষা করতে সক্ষম হবে।
পারস্পরিক সাহায্যঃ (Mutual Aid)
পারস্পরিক সহায়তা ও আরো একটি সম্ভাব্য ভবিষ্যত, যেখানে আমরা জীবন রক্ষাকে আমাদের অর্থনীতির দিকনির্দেশক নীতি হিসাবে গ্রহণ করি। কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে, রাস্ট্র একটি সুনির্দিস্ট ভূমিকা গ্রহণ করে না। বরং ব্যক্তিগন এবং ্সামাজিক ছোট ছোট দলগুলি তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সমর্থন এবং যত্নের ব্যবস্থা করতে শুরু করে।
এই ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল বা গুষ্টি গুলি অতি দ্রুত সম্পদ সংগ্রহ ও সঞ্চালনের ক্ষমতা রাখে না । তবে পারস্পরিক সহযোগীরতার পদ্বতী রোগ বিস্তার রোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করতে সক্ষম। তাঁরা পারস্পরিক সাহায্যের মাধ্যমে রোগ বিস্তারের চেইন ভেঙ্গে দিতে পারে। তাঁকে ধীর ও থামিয়ে দিতে সক্ষম। জনগণ নিজেরাই নিজেদের জন্য পরিকল্পনা তৈরী করে বাস্তবায়নে হাত দিতে পারেন।
এই ধরণের পরিস্থিতি অন্য যে কোনও পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত হতে পারে। এটি বর্বরতা বা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ থেকে মুক্তির একটি সম্ভাব্য উপায় এবং তা রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রকে ও সমর্থন করতে পারে। আমরা জানি যে পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় কমিউনিটির প্রতিক্রিয়া ব্যাপক ভূমিকা রাখে। আমরা ইতিমধ্যে ভবিষ্যতের কিছু নির্দেশনা খোঁজে পেয়েছি । সামাজিক গোষ্ঠীগুলিতে পারস্পরিক পরিচর্যা প্রদানেএবং সম্প্রদায়গত সমর্থন সংগঠিত করতে দেখছি। আমরা এটিকে রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়ার ব্যর্থতা হিসাবে দেখতে পারি। অথবা আমরা এটিকে একটি উদ্বেগজনক সংকটের জন্য একটি বাস্তববাদী, মমতাময়ী সামাজিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখতে পারি।
আশা এবং ভয়ঃ
এই দর্শনগুলিরচরম অবস্থা ক্যারিকেচার এবং একে অপরের মধ্যে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। আমার ভয় হ'ল রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ থেকে বর্বরতার উৎপত্তি হয় কি না। আমার প্রত্যাশা হলো রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্র এবং পারস্পরিক সহায়তার সংমিশ্রণ: একটি শক্তিশালী, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যা একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সকলকে জড়িত করবে বাজারের ঝাঁকুনি থেকে দুর্বলদের রক্ষা করতে অগ্রাধিকার দিবে । অ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কমিয়ে আনবে।
শত ভয়ের মাঝে ও কিছু আশার আলো দেখা যাচ্ছে। COVID-19 আমাদের বিদ্যমান সিস্টেমের গুরুতর ঘাটতি সমূহ তুলে ধরেছে। এটির কার্যকরব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমূল সামাজিক পরিবর্তন প্রয়োজন। আমি যুক্তি দিয়েছি যে বাজার নির্ভর না হয়ে অর্থনীতির প্রাথমিক উপায় হিসাবে লাভের সামাজিক ব্যবহার শুরু করা। এর সাথে সাথে আমরা আরও বেশি মানবিক ব্যবস্থা তৈরি করব যা ভবিষ্যত মহামারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অন্যান্য আসন্ন সঙ্কটের মুখে আমাদের আরও দৃঢ় করে গড়ে তোলবে।
সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা নানা জায়গা থেকে আসতে পারে। আমাদের মৌলিক কাজ হলো, সামাজিক মূল্যবোধ ও সামাজিক নৈতিকতাকে সামনে রেখে মানুষের জন্য জীবনের সুরক্ষা ও গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে রাখা। আর তা ই এখন কার রাজনীতির কেন্দ্রীয় ভাবনা হওয়া উচিৎ।