কাঁথা-বালিশ নিয়ে ফের অনশনে খুলনার পাটকল শ্রমিকরা
কাঁথা বালিশ নিয়ে ফের আমরণ গণঅনশনে বসেছে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। প্রথম দফা আমরণ গণঅনশনের ১৫ দিন পর গতকাল রবিবার দুপুর ২টা থেকে দলে দলে নিজ নিজ প্যান্ডেলে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। বাংলাদেশ আওয়ামী শ্রমিক ফেডারেশন ( বাংলাদেশ এনার্কো সিন্ডিকালিস্ট ফেডারেশন - বি এ এস এফ ) খুলনার শ্রমিকদের শান্তি পূর্ন ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী মেনে নেবার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছে।
গত ১০ ডিসেম্বর থেকে শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে আমরণ গণঅনশন কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন দফতরের সাথে বৈঠকে প্রতিশ্র“তির প্রেক্ষিতে তিন দফা অনশন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। ওই তিন দফায় আলোচনা সফল না হওয়ায় গত ২৬ ডিসেম্বর বৈঠক শেষে পরিষদের নেতারা দ্বিতীয় দফায় গতকাল থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয়। সেই অনুযায়ী গতকাল দুপুর ২টা থেকে কর্মসূচিতে অংশ নেয় শ্রমিকরা।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের দাবিতে খালিশপুরের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকরা অনশনে অংশ নিয়েছে। এছাড়া আটরা শিল্পাঞ্চলে ইস্টার্ণ ও আলীম জুট মিলের শ্রমিকরা অংশ নিয়েছে। আর যশোরের জে জে আই জুট মিলের ননসিবিএ নেতাদের নেতৃত্বে আংশিক শ্রমিকরা অনশনে অংশ নিয়েছে। সব মিলিয়ে খুলনাঞ্চলের ৮টি পাটকলের শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম লিটু বলেন, দুপুর থেকে অনশনে বসেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। প্রয়োজনে মৃত্যু হলেও পরওয়া নেই।
গতকাল রবিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিকরা মিলের প্রধান ফটক, কলোনীর ফটকের পাশে এবং মিলের সামনের বিআইডিসি সড়কে অনশনে অংশ নিয়েছে। পাশেই দিঘলিয়ার স্টার জুট মিলের প্যান্ডেলে ওই মিলের শ্রমিকরা অবস্থান নিয়েছে। একই প্যান্ডেলের শেষ সীমানায় দৌলতপুর জুট মিলের অদূরে অবস্থান নিয়েছে দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকরা। আর ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিকরা অবস্থান নিয়েছে মিল গেটের সামনের সড়কে। একই সড়কে নিজ মিল গেটের সামনে অবস্থান নিয়েছে খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকরা। খালিশপুরের পাঁচটি পাটকলের শ্রমিকরা গতকাল দুপুর থেকে উৎপান বন্ধ রেখে কাঁথা-বালিশ নিয়ে অবস্থান নেন অনশন স্থলে।
প্লাটিনাম জুট মিলের প্রধান ফটকের ভিতরে থাকা প্যান্ডেলে কাঁথা-বালিশ নিয়ে শুয়ে ছিলেন মিলের ব্যাচিং বিভাগের শ্রমিক মোঃ আলমগীর হোসেন। এ প্রতিবেদকের কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, দুপুর ২টার পর পর অনশনস্থলে এসেছি। আর পারছি না। হাতে টাকা পয়সা নেই। দেনায় জর্জরিত। টাকার অভাবে ছোট ছেলে রাজু’র এসএসসি পরীক্ষা দেওয়াতে পারিনি। এখন সে বেকার বসে আছে। ঘরে বয়স্ক পিতা, ২ ছেলে, আর স্ত্রীসহ মোট পাঁচ সদস্য। তাদের দৈনন্দিন খরচ মিটাতে হিমশিম খেতে হয়। গরীব ও খেটে খাওয়া শ্রমিক আমরা। আমাদের ন্যায্য দাবি মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা। এটি কোন অযৌক্তিক দাবি নয়। কিন্তু এটি মানছে না কেন ? সেই সাথে মজুরি নিয়মিত পাওয়া যায় না। বর্তমানে ৫ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে।
একই মিলের শ্রমিক মোঃ শাহজাহান ও ফরিদ মোল্লা বলেন, একটাই দাবি মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে যে মজুরি পায় তা দিয়ে সংসার পরিচালনা করা সম্ভব নয়। দাবি না মানা পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না। প্রয়োজনে মরতেও প্রস্তুত।
খালিশপুরে অনশন চলাকালে বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন মোঃ মুরাদ হোসেন, মোঃ সোহরাব হোসেন, শাহানা শারমিন, মোঃ হুমায়ুন কবির খান, আবুল কালাম জিয়া, বেল্লাল হোসেন মল্লিক, আঃ মান্নান, আক্তার হোসেন, দ্বীন মোহাম্মদ ও ইব্রাহীম প্রমুখ।
এদিকে আটরা শিল্পাঞ্চলে গতকাল দুপুর ২টায় অনশন শুরু করে আলীম ও ইস্টার্ণ জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। আলিম ও ইস্টার্ণ জুটমিল শ্রমিক কর্মচারীদের অনশন চলাকালে ইস্টান জুট মিল সিবিএ সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন আলিম সিবিএ সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম লিটু, সাধারণ সম্পাদক আঃ হামিদ সরদার, মোঃ ইউসুফ আলী, মোঃ আলম হোসেন, মোঃ আমিরুল ইসলাম, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, আঃ হক মহলদার, হাফেজ আঃ সালাম, আমিরুল ইসলাম, ইজদান আলী, মোজাম্মেল হক, হাসান শরীফ, আঃ রশিদ, আকসার আলী, আঃ মজিদ মোল্লা, শেখ জাকারিয়া, সর্দার আনোয়ার হোসেন, মেহেদী হাসান বিল্লাল, মনিরুল ইসলাম আকুঞ্জি, শেখ শামিমুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, ইদ্রিস আলী, আলতাফ হোসেন, হাফিজুর রহমান,বদর উদ্দিন বিশ্বাস ও নাজমুল হক প্রমুখ। এদিকে অনশন চলাকালে শ্রমিকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য করেন বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি পলিট ব্যুরো সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সভাপতি কামরুল হাসান।