‘ঈগো এন্ড ইটস ওন’- ম্যাক্স স্টার্নার প্রনিত পুস্তকের বাংলায় অনূদিত ধারাবাহিক- ৭

The Ego and Its Own
by Max Stirner

ভাষান্তরঃ  এ কে এম শিহাব

- দখল করা

আপনি কি কখনো আত্মা দেখেছেন ? “ না,  আমি কখনো দেখি নাই।  আমার দাদী মা হয়ত দেখেছেন”। এখন আমি তাঁর মত করেই আমরা ও আত্মা   মানি; আমি নিজে কিন্তু দেখি নাই এমন কিছু। আমাদের দাদীমা প্রচণ্ড বিশ্বাস নিয়ে এই পথে জীবন যাপন করেছেন। আত্মায় তাঁর প্রচণ্ড বিশ্বাস ছিলো । সত্যি কথা হলো, তাঁর বিশ্বাসের উপর নির্ভর করেই আমরা তা মেনে চলছি।

সেই সময়ে  আমাদের অনেকেরই দাদা ছিলেন না, দাদীমা যখন ভুত নিয়ে কাহিনী বর্ননা করতেন , তখন কি তাঁরা  তাঁদের কাঁধ ঝাঁকুনি দিয়ে কথা বলতেন ? হ্যাঁ, তাঁদের মধ্যে অনেকই অবিশ্বাসী লোক ছিলেন, তাঁরা ধর্মীয় ভাবধারার ব্যাপক ক্ষতি ও করেছেন, তাঁদেরকে যুক্তিবাদি বলে অবিহিত করা হয় ! আমরা বুঝার চেষ্টা করি,  এই উষ্ণ ভৌতিক গাল গল্পের গভীরে আর কি কি লুকিয়ে আছে, যদি এর উপর বিশ্বাস না ই থাকে তবে কেন, “আধ্যাত্মিকতার অবেশ সাধারন ভাবে বিরাজ করে”।

পূর্ববর্তীদেরকে বুঝা পরবর্তীদের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। রোমান্টিকতার বিষয়টি খুবই সচেতন একটি বিষয় হিসাবে পরিগণিত হত, তাঁর পিছনে ও ঈশ্বর এবং আত্মার প্রভাব গভীর ভাবেই মানা হয়, অনেকেই মনে করেন যে, “ কোন উচ্চতর জগতের নির্দেশে”, এই সকল বিষয় নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। গভীর বিশ্বাসী মানুষ ও চার্চের যাজকগণ ও মনে করেন না যে, ধর্মীয় বিষয়ের উপর ভুত প্রেতের  বিশ্বাসের কোন প্রভাব আছে।  কেননা এই সকল কথা বার্তা অনেকটাই হাওয়াই বিষয় হিসাবে অবিহিত হয়ে থাকে। যারা কোন প্রকার ভূত প্রেতে বিশ্বাস করেন না, বা এই ধরনের কথা বা কাহিনীর পেছনে কোন প্রকার সত্যতা আছে বলে মনে করেন না। তাঁরা এই ভৌতিক বিষয়টির কোন প্রতি শব্দ হিসাবে ও “আত্মা” কে মেনে নিতে পারেন না ।

“আত্মা বিদ্যমান!” দুনিয়ার চার দিক ভালো করে দেখুন, এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি কি কোন আত্মা দেখতে পাচ্ছেন ? সুন্দর ও চমৎকার নানা রঙের ফুল ও ফল তাঁর স্রষ্টার আত্মার সাক্ষ্য দিচ্ছে কি না, কে তাদেরকে এত সুন্দর করে সৃজন করেছেন; আকাশের তারকা পুঞ্জ কি বলছে না যে কেউ তাদেরকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন; উঁচু পাহাড়ের চুড়ায় আরোহন করে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে দখুন কত আরাম; পানির কল ধ্বনি কি কিছু সুন্দর কিছু বলে না;  এবং লক্ষ কোটি মানুষ কি জীবনের স্পন্দন নয়। পাহাড় সমূদ্র গর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে, ফুল শুকিয়ে যতে পারে, আকাশের তারকারাজি বিলিন হয়ে যেতে পারে, মানুষ মরে যায়- তখন সেই দৃশ্যমান শরীরের কি হয় ? আত্মা – সেই “অদৃশ্য আত্মা”, চিরকালের জন্য কি থেকে যায় !

হ্যাঁ, সারা দুনিয়াটাই সাক্ষ্য দেয় ! কেবলই সাক্ষ্য দেয় কি ? এটা নিজেই “চারিপার্শ্বে হাঁটাহাঁটি” শুরু করে দেয়- একটি দৃশ্যমান শরীরের আত্মা হিসাবে কথা বলতে থাকে। তাহলে একটি ভূতকে প্রকৃত আত্মার হয়ে কথা বলতে হবে? আচ্ছা, দুনিয়াকি “শূন্য” “একটি নাটক” বা খুবই চমৎকার ও মনোরম জিনিষের “সমাহার”; এটা সত্য যে আত্মা একক বা একা; ইহা হলো দৃশ্য মান শরীরের একটি আত্মা।

দূরে বা নিকটে চেয়ে দেখুন আপনি সকল জায়গায় একটি ভূতুরে অবস্থায় ঘেরাও হয়ে আছেন; আপনি সকল সময়েই একটি প্রহেলিকা ময় স্বাপ্নিক জগতে বিচরন করছেন। আপনার নিকট যা যা দৃশ্যমান তাঁর সকল কিছুতেই আত্মা বিরাজিত আছে, তা যেন একটি স্বপ্নময় অবস্থায় চলছে, তা “একটি দৃশ্যমান জগত”, এই পৃথিবীতে বিচরন করছে। “আত্মা”- আপনার চোখের সামনেই উপস্থিত।

আপনি প্রাচীনদের সাথে নিজের চিন্তা ভাবনার তোলনা করছেন, যারা নিজেরাই ঈশ্বরকে দেখেছিলেন ?  আমার  সুপ্রিয় পাঠক! আধুনিক মানুষ, আপনি আত্মা নন; দেবতা এই বিশ্বকে সমান করে দেন নাই, এমন কি আধ্যাত্মিকতায় ও পরিপূর্ন করে দেন নাই ।

তবে আপনার নিকট সমগ্র বিশ্ব আধ্যাত্মিকতাময় হয়ে গেছে, এবং গৌরবময় ভৌতিকতা ভর করেছে; তাই আপনি আপনার চারিপাশে অচিন্তনীয় আবিস্কারের খেলা দেখার পর ও অবাক হচ্ছেন না। আপনার আত্মা আপনাকে আবিষ্ট করে নাই, কেবলই সত্য, এবং বাস্তব অবস্থা অনুভূত হয়েছে ? সাবেক অবস্থা ও বর্তমান অবস্থার মধ্যে কি বিরাট পার্থক্য দৃশ্যমান নয় ? আমরা কি ভৌতিক হয়ে উঠিনি, আমাদের চারপাশ এখন কি আগের চেয়ে আরো অদ্ভূত হয়ে যায়নি ? তাকে কি আমরা আত্মা বলব ?

যখন থেকে এই দুনিয়ায় আত্মার আগমন ঘটেছে, “তখন থেকে ই দুনিয়ার বিকাশ ঘটেছে”।  আর সেই সময় থেকেই চলছে একটি ভৌতিক আধ্যাত্মিকরনের প্রক্রিয়া।

আপনার আত্মা আছে বলেই, আপনি চিন্তা করতে পারছেন। আপনার এই বিষয়ে চিন্তা ভাবনা কি ?  আপনার “আধ্যাত্মিক পরিচিতি” ও তারপর আর কি বলার থাকে ? “ না অন্য কিছু নয়! তবে সকল কিছুর মধ্যেই আধাত্মিকতার একটি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়- তা একটি ধারনায় রূপ নিয়েছে”। ফলে, সকল চিন্তা আপনার একার চিন্তা নয় কি ? “ পক্ষান্তরে, দুনিয়ায় যা সত্য হিসাবে পরিগণিত হয়, তা সকলেই  সত্য হিসাবে স্বীকার করে নেয়, এই জিনিষ গুলো এক সময় বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়।

যখন আমি নিজে একে সত্য বলে মানি, তখনই তা সত্য হয়ে উঠে। আমি নিজে যখন কোন কিছুর বিষয়ে সত্য হিসাবে নিশ্চিত হতে পারিনা, তখন তাকে চিহ্নিত করা ও আমার পক্ষে সম্ভব হয় না । “ আমরা সকলেই এক অর্থে সত্যের অনুসন্দ্বান কারী?” আমার নিকট সত্য হলো একটি পবিত্র বিষয়। আমি যখন কোন কিছু কে অর্ধ সত্য হিসাবে দেখি – তখনই তাকে একটি পুর্নাংগ সত্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চেষ্টা করি। আমি কেবলই সত্য বিশ্বাস করি, তাই, আমি সত্যই তালাশ করি, আর এটাই হলো স্থায়ী ও ঠেকসই বিষয়”।

পবিত্রতা হলো শ্বাশত সত্য; যা সত্য, তাই তো শ্বাশত । কিন্তু আপনি, নিজেকে পবিত্রতা দিয়ে পরিপূর্ন করার জন্য প্রয়াস চালাচ্ছেন, নিজেকে পবিত্র করতে চাইছেন। অথচ আপনার মন মানসিকতায় এর কোন স্থান নেই, আপনি কোন দিন ই এর কোন হদিস জানতে পারেন নাই। এটা কেবলই আপনার বিশ্বাস যা  সকল সময়ই আপনার হ্রদয়ে ক্রিয়াশীল; আপনি জানেন যে আত্মা জিনিষটি হলো একটি আধ্যাত্মিক বিষয় – আত্মা কেবলই আত্মা ।

পবিত্রতার বিষয়টি কোন ভাবে চূড়ান্ত ভাবে মিমাংশা করা যায় না, এই বিষয়ে কোন উপযোগী শব্দ ও বলা মুশকিল। এমন কি এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা ও অসম্ভব – যা কেবল আমিত্ম বা অহং দিয়ে বুঝানো যায়। সকল কিছুর উপর নিজের চিন্তা ভাবনাকে স্থান দিয়ে স্বীয় উপস্থিতির প্রমান করা যায়; সংক্ষেপে বললে, বলা যায় যে আমি আমার কল্যান কামনা করি, পবিত্র কিছু চাই, সাধারন মানুষ ও তাই প্রত্যাশা করে, এটাই মানব জীবন। মানুষ পবিত্রতা থেকে দূরে যেতে পছন্দ করে না। নিজেদেরকে অপার্থিব হিসাবে বিকশিত করতে আনন্দ পায়। স্বর্গীয় আবেসে আবিষ্ট হয়ে নিজের অস্থিত্ব জানন দিতে আপ্রাণ চেস্টায় ত্রুটি করে না।

পবিত্র বস্তু কেবল অহংকারী স্বেচ্ছাচারী লোকদের জন্যই ঠিকে আছে, যারা অন্যদের মতামতকে একেবারেই পরোয়া করেনা। যিনি নিজের ভালো ছাড়া অন্যদের নিয়ে  ভাবতেই রাজি নন, কেবল নিজেই সব কিছুর উর্ধে স্থাপন করে প্রশান্তি পান। এমন কি নিজের সকল আরাধ্য বস্তু অর্জনের জন্য সকল কিছু করতে দ্বিধা করেন না। তিনি তাঁর উর্ধে অন্য কিছুকেই পাত্তা দিতে রাজি নন। মর্ম কথা হল, একজন অহংকারী লোক নিজে অহংকারী হতে চায় না, আসলে সে নিজের আপন শক্তির অপব্যবহার করে থাকে। আর এই কর্মের লক্ষ্য থাকে নিজেকে মহিমান্বিত করে তোলা- যা তাকে অহংকারী করে দেয় । কেননা অহংকার তখন তাঁর সকল কর্মকে গ্রাস করে ফেলে। তিনি নিজেকে স্বর্গ ও মর্ত্যের চেয়ে ও নিজেকে উচুতে স্থান দেন। এমনকি সেই অবস্থান ধরে রাখতে গিয়ে প্রান পর্যন্ত বিষর্জন দিতে তৈরী হয়ে যান। তবে সেই পরিস্থিতিতে ও তিনি নিয়ম শৃংখলার একটি পরিবেশ গড়ে তোলতে চান। আর এই সকল আয়োজন করা হয় তারই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। কোন কিছুই তখন আর তাঁর অহংকারকে দমন করতে পারে না। সেই অবস্থাটাকেই আমরা বলি  অহংকারী স্বৈরাচার।

তাঁদের শ্রম সাধনা তাদেরকে নিজেদের আপনালয় থেকে দূরে সরিয়ে নেয় তবে তা আবার নিজের আকাঙ্ক্ষার বিরোধ দূরী করনে সহায়ক হয়। আপনি যদি আপনার অতীতের দিকে থাকান, তবে আপনি আজ অনেক বুঁদ বুঁদ বা কলধ্বনি শুনতে পাবেন। যদি সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করতে না পারেন তবে, নিজেই সময়ের কাছে বন্দ্বি হয়ে পড়বেন। প্রতিটি সময়ের মুহুর্ত আপনার সাথে এক প্রকার বন্দ্বন তৈরী করে, আগামীদিনের সাথে এক ধরনের সেতুবন্দ্বন নির্মান করে, আপনি নিজে নিজের সাথে এক ধরনের “দূরত্ব” সৃজন করে চলেন। তা প্রতি মুহুর্তেই ঘটে থাকে। প্রতিটি ঘটনায় আপনি আপনাকেই সৃজন করে চলেন, এই সৃজন প্রক্রিয়ায় আপনি আপনাকেই পিছনে ফেলে দিয়ে আসেন। আপনি এমন উঁচুতে উঠে যান যা আপনাকেই হার মানায়।  আপনিই আপনার চয়ে বড় হয়ে উঠেন। আসলে আপনি যা সৃজন করে চলেন তা আপনারই মনমত – তা অনেকটাই অহংকয়ারী স্বৈরাচারের প্রতিরূপ, অথচ নিজকে  নিজেই চিনতে পারেন না । আর সেই জন্যই বলি এটাই হলো মনুষের “উচ্চতর স্তর”- যাকে হয়ত বহির ক্ষমতা হিসাবে অবিহিত করা যায়। প্রতিটি উঁচু গুনাবলী ই সত্য, এবং মানবিক যা আমাদের মাঝে বিরাজমান আছে।

“পবিত্রতাই” আমাদের ভেতর বহির গুনাবলী সৃজন করে। পবিত্রতার মাঝেই  লুকিয়ে থাকে সকল প্রকার “চমক” ও উন্নত গুনাবলীর সমাহার, আমরা সধারনত যা বুঝতে পারিনা। তবে আমি নিজেই পবিত্র নই; এমন কি অন্যদেরকে ও আমি পবিত্র মনে করি না । তবে আমি এই পবিত্রতার প্রভাব নিজের মাঝে অনুভব করতে পারি। সময়ে সময়ে তা আমার নিকট মন্দ লাগে না- তা প্রার্থীত ই মনে হয়। অথবা , অন্যদিকে আমি মনে করি চিনা রাজার মুখটি ও যেন পবিত্র হয়ে আছে, কেননা এটা আমায় অবাক করে দেয়, আমি যখন অবাক হয়ে তাঁকে চোখে দেখি তখন  আর  চোখ ফেরাতে পারি না। তা আমায় বিমোহিত করে।

গানিতিক সত্যকে কোন ভাবেই উপেক্ষা করা যায় না, সাধারন বোঝ বিচারে যে সকল বিষয় মানা হয় না তা কি – পবিত্র? কেননা তা কিন্তু অবতির্ন হয় না, কোন উর্ধ  জগত থেকে  অবতির্ন হবার মত ও নয়। যদি আমরা বলি যে তথাকথিত ধর্মীয় বিষয়দি আমাদের জন্য বুঝা সহজতর তবে অনেক  ক্ষেত্রেই তা আমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারে, আমাদের জন্য উচ্চমার্গের বিষয় সমূহ চিহ্নিত করতে পারা ও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। যারা অবিশ্বাসী তাঁরা উচ্চ মার্গের  বিষয়ের কথা শোনলে হাসতে পারেন, তাঁরা কেবল সামগ্রীক বিচারে প্রমানিত জিনিসেই আস্তা রাখেন আর সম্মান করেন, তাঁরা কেবল কোন কিছুর অস্থিত্বের প্রমান সমূহ ই বিশ্বাস করে আর অন্যদের মাঝে প্রচার করেন।

তাঁরা গভীর ভাবেই বিশ্বাস করেন যে কবল উচ্চমার্গের নামে অনেক কিছু ঠিকিয়ে রাখা হয়, আসলে পুরাতনদেরকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে নতুনদের  জায়গা করে দেবার জন্য ।  “মানুষ” জাতি কোন ভাবেই একজন মানুষের চেয়ে মর্যাদায় উচ্চ স্তরের নয়, সত্য নয় এবং সঠিক ও নয় – এই ধরনের ধারনা সম্মান ও পবিত্র হিসাবে গন্য করা হয়। এটাকেই সকলে সত্য বলে প্রকাশ করে থাকে।  আমরা আমাদের সত্য অনুসন্দ্বানের দ্বারা অনেক গুলো সত্যকে প্রকাশ করতে চাই, যা আমাদের অনেক প্রচলিত ধারনাকে মিথ্যা প্রমান করে বাতিল করে দেয়।

নিঃসঙ্কোচে প্রচলিত পবিত্রতার ধারনাকে বাতিল করে দিয়ে সঠিক ধারনার বিষয়টি সকলের সামনে উন্মোচন করে দেয়া। মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাক্তি মানুষকে ছাড়িয়ে যায়, যদি ও নিজস্বতা তাঁর জন্য নিজস্বই কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বদল হয়ে যায়। তবে সাধারন ভাবে উঁচু স্তরের চিন্তা ভাবনা ধারন করে তাঁদের মতামত ব্যাক্ত করেন । তাঁরা বলেন, কোন ঐশি আজ্ঞাই ঈশ্বর কৃর্তৃক নিজ হস্তে লিখেন নাই। জ্ঞানের জগতে ও সত্যিকার ভাবে কোন জ্ঞানের বিস্তার ঘটান নাই ।  একমাত্র মানুষই নয়া অর্থে আধ্যাত্মিকতার বিকাশ ঘটিয়ে পুরাতন ঈশ্বরের ধারনাকে খন্ডন করে নতুন ভাবনা চিন্তার বিকাশ ঘটায়। কিন্তু  সেই চিন্তা ধারার বিকাশ ঘটানোর কাজটি একবারেই সহজ ছিলো না। লোকেরা মানুষ ও মানবিকতার পথ থেকে ভিন্ন জগতের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রাখতে বেশী পছন্দ করে। প্রাকৃতিক ও মানুষের শারীরীক ঘটনের রহস্য উন্মোচনের পরিবর্তে তাঁর পুজা অর্চনাকে বেশী গুরুত্ব দিতে থাকে। রহস্যের প্রতারনাই মানুষকে বেশী আকৃষ্ট করে ।

পবিত্রতা হলো সকল কিছুর সর্বোচ্চ স্তর যা উর্ধ জগত থেকে অবতির্ন হয় বা নিজেই নিজে থেকে সৃজন হয়ে থাকে;  কিন্তু তা পবিত্র হিসাবে চিহ্নিত হবার পর নিজেই নিজের স্বীকৃতি দেয় এবং নানা ভাবে নিজের প্রকাশ ঘটায়। পবিত্রতা  নিজের প্রতি সম্মান ভক্তি আকর্ষন করে, যারা যত বেশী করে পবিত্রতার দোহাই দিয়ে পুজা অর্চনা করে তাঁরা তত বশী বড় যাজক হিসাবে স্বীকৃতি পান। তাঁরা নিজেদেরকে আবার যাজক হিসাবে পরিচিত করতে যাজক তান্ত্রিক কথাবার্তা, আচার আচরন করতে শুরু করে দেন, তাঁদের চিন্তা চেতনায় যাজক তন্ত্রের প্রতিফলন দেখা যায়।

এটা সহজেই বুঝা যায় যে, উচ্চতর পবিত্রতার সাথে শ্রদ্বা ভালবাসার ক্ষেত্রে নিম্ন স্তরের একটি দ্বন্দ্ব পরি লক্ষিত হয়, তা অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের মাঝে তিক্ততার ও সৃষ্টি হয়- নানা স্তরে নানা ভাবে পুজা অর্চনার প্রচলন করা হয়। কেহ হয়ত হঠাত শুনলে অবাক হবেন এই ভেবে যে – তাকি সত্যি ? জবাব হলো- পবিত্র আত্মাদের মাঝে যে দ্বন্দ্ব ও রেষারেষির ইতিহাস তা মানব জাতির মধ্যে যুদ্ব বা লড়াইয়ের ইতিহাসের চেয়ে কোন ভাবেই কম নয়। অনেক ক্ষেত্রে তা আরো অনেক বেশী ভয়াবহ। অন্য দিকে শিয়া সুন্নি, ব্রাহ্মণ বৌদ্বিস্টদের মাঝে যে সংঘাত ও হানাহানি তা সভ্য মানুষের নিকট লজ্জাজনক।

তাঁর পর ও অনুমান আর ধারনার উপর ভিত্তি করে উচ্চ মার্গীয় ভিত্তিহীন কথা বলে মানুষকে প্রহেলিকার দিকে টানা চলছেই। কোথা ও এক ঈশ্বর আবার কোথাও তিন, তিনের ভেতরই এক, লুথারিয়ান ঈশ্বর, বিশ্ব চেতনা, আবার মানুষের মাঝেই – ঈশ্বর এমন হাজারো বয়ান চলছেই চলছে। আবার কেহ কেহ ভিন্ন ভাবে সেই উচ্চু জগতে প্রাধান্য বজায় রাখতে – সকল কিছুর মূলে নাকি তিনিই বিরাজমান বলে প্রাচার করছেন। আজকের দুনিয়ায় বিশ্বাসী লোক যেমন আছে অন্য দিকে বিজ্ঞান মনস্ক অবিশ্বাসী ও কিন্তু কম নয়।

পবিত্রতার নামে যত স্থান গড়ে উঠেছে অন্য দিকে পার্থিব প্রতিস্টান ও কিন্তু দিনে দিনে বাড়ছে- যেখানে অপার্থিব বিশ্বাসের জায়গায় পার্থিব বিশ্বাসের ব্যাপক প্রসার হচ্ছে।

ভূত

আমরা এক ভূতুরে রাজের পথ ধরে সত্তার জগতে প্রবেশ করেছি।

এই ভূতুরে রাজত্ব সামগ্রীক ভাবে আমাদের সমগ্র সত্ত্বাকে গ্রাস করে আছে, গোপন সত্তার নামে, অজ্ঞতায় ভর করে এবং রহস্যময়তায় ঘিরে এক উচ্চ মার্গীয় সত্তার জন্ম দিয়েছে। যাকে বলা হয় সর্ব শক্তিমান। যদি আমরা ভূতুরে অবস্থার গোড়ায় যাই, এবং তাঁকে নিবিঢ় ভাবে বুঝার চেষ্টা করি, বা তাঁকে  উন্মোচিত করি ( এটা প্রমান করতে চায়- খোদার অস্থিত্ব) – তবে দেখ মানুষ হাজার হাজার বছর আগে থেকেই এই সকল  বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে আছে। তবে পাশা পাশি আবার ভূতকে অভূতে রূপান্তর করার চেষ্টা ও কম করে নাই। অবাস্তবকে বাস্তবে, দেহহীনকে দেহ দান করে – মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্ব জগতের পিছনে যে সত্তার ধারনা বিদ্যমান; তা ও যে অবস্তু নয় বরং বস্তুই বিদ্যমান তা প্রমান করার চেষ্টা করেছে মানুষ।

কেহ যখন কোন কিছুর গভীরতাটা দেখতে চায়, তাঁর আসল রূপটা চিনতে চায়, সাধারন সে সেই জিনিষটি ই দেখতে পায় যা সে দেখতে চায়। এর ব্যাতিক্রম খুবই কম; হ্রদয়ে যা আছে এবং মুখে যে সকল কথা বলেন, সাধারন আলোচনায় যে সকল যুক্তি দেয় বা সচরাচর যা যা ভাবেন তারই প্রতিফল সে সর্বত্র দেখতে চায়।  কোন কিছুর সত্যিকার রূপটি যখনই বুঝতে পারার জন্য প্রয়াস চালানো হয়েছে তখন ও  তাঁর ভূল চিত্র দৃষ্টিভঙ্গির কারনে ভিন্ন ভাবে হাজির হয়েছে। অনেক কিছুই রস্যময়তা ও প্রহেলিকার পর্দা পেড়িয়ে প্রকাশিত হতে পারে নাই।

সত্যি  বলতে কি এই বিশ্বের সামগ্রীক সত্ত্বা খুবই আকর্ষনীয় ও চমৎকার জিনিষ। যদি এই জগতের গভীরে দৃষ্টি দেয়া যায় তবে প্রথমেই ধরা দেয় এক বিশাল  শূন্যতা; আসল বিষয় হলো শূন্যতাই হলো মহা বিশ্বের প্রকৃত সত্ত্বা। এখনও যারা ধার্মিক যাদের মনে সংশয়বাদের চোঁয়া লাগেনি তাঁরা ই বিশাল শূন্যতার মাঝে ও এক মহান সত্ত্বা দেখতে পায়- যা সত্য এবং শ্বাশত বলে মানেন।

সত্ত্বা সম্পর্কে যারা অনুমান করেন তাঁরা বিশাল শূন্যতার ভেতর ও কিছু ভালো মন্দ জিনিষ দেখতে পান। মানুষের মাঝে যে সকল চেতনা বিদ্যমান আছে, যেমন- ভালবাসা ইত্যাদি হলো ভালো গুনাবলী; আরো আছে মানুষের চিন্তা শক্তি  ও বাদ প্রতিবাদের ক্ষমতা।

জগতের স্বীয় অস্থিত্ব প্রমানের মত সত্ত্বা ও নিজের অস্থিত্ব দাবী করে এসেছে, ঈশ্বর, আত্মা, শয়তান, ভালো ও মন্দ্ব সত্ত্বার বানী ছড়ানো হয়েছে নানা যুগে নানা সমাজে।  কেবল এই পৃথিবীর উল্টো দিকে, বিশ্বের মূল সত্ত্বা হিসাবে এখনো ঠিকে আছে। মানুষের হ্রদয় আসলে প্রেমহীন, তবে তাঁর মাঝে বিরাজিত আছে খোদার সত্তা, “ যিনি প্রেমের আঁধার”;  মানুষের চিন্তা ও ভূল জিনিষ উৎপাদন করে, কিন্তু সেখানে ও সত্যের সত্তার উপস্থিতি আছে বলেই; “ খোদাই সত্য”। তাই ভালো আর সুচিন্তার বিকাশ হচ্ছে- এমন অনেক কথাই ধর্মিকগন প্রচার করেছেন; এদের জগত মানেই হলো – সত্তার জগত, ভূত প্রেত আর অশরীরী আত্মার জগত।

মানুষ সকল সময়েই চেষ্টা  করেছে সকল রহস্যের উন্মোচন করতে, বুঝার চেষ্টা করেছে দুর্বোধ্য বিষয় গুলো স্পষ্ট করতে, এমন কি ভুত প্রেতের ও স্বরূপ জানতে প্রয়াস পেয়েছে, এবং বিদেহী আত্মাকে দেহ দান করার চেষ্টা ও কম করে নাই। শক্তিশালী ও প্রতিভাধর খৃষ্টান গুরুগণ নিজেদেরকে প্রচুর কষ্ট নিপীড়ন করেছেন তাঁদের সাধনার পথে যেন সত্যিকার ভূত প্রেতের সন্দ্বান পায় । তবে সকল সময়েই মানবিক বৈশিষ্ট্য ও স্বর্গীয় বিশ্বাসের সাথে দ্বন্দ্ব চলে  এসেছে। ভৌতিক এবং শারীরিক; ভৌতিক প্রেত প্রেত্নি – যা অবস্তুগত বলে পরিচিত তাকে বস্তু হিসাবে দেখার চেষ্টা ও ছিলো । আত্মাকে কষ্ট দিয়ে ভৌতিকতার আবিস্কার বা কোন শয়ম্যান, প্রেত প্রেত্নি কোন কিছুরই সন্দ্বান মিলেনি। সাধক গুষ্টির কষ্ট আর আত্মপিড়ন ছাড়া তাঁদের সাধনায় আর কিছুই মিলেনি।

তবে খ্রিস্টের মাধ্যমেই আত্মা, ভূত, প্রেত – মানুষ এই বিষয় গুলো সত্য হিসাবে আলোচনায় আসে। তিনি বললেন আত্মার শারীরিক রূপই হলো মানব। তিনি নিজেই একজন সেই প্রকৃতির ভূতুরে মানব হিসাবে  আভির্ভূত হয়েছেন।  তাঁর নাক মূখ সকল কিছু অস্থিত্ব পেয়েছে। তাই মানুষ আসলেই আর কিছু নয় সে বাহিরে যাই হোক ভেতরে সেই ভূতুরে ভাবেই আবিষ্ট। সে নিজেই নিজেকে দেখে অবাক হয়। তাঁর বুকের গভীরে বাস করে এক অচেনা পাখী – আদেখা পাপিস্ট আত্মা। এমনকি তাঁর সুন্দর চিন্তা ধারাও( এবং সে নিজেই জানে সে একটি আলাদা আত্মা)  শয়তানী ধারায় প্রবাহিত হতে পারে। তাঁর শরীরে রয়েছে ভূতুরে প্রভাব, মানুষ ও ঈশ্বরে পরিনত হতে পারে, তবে এখন সাধারন ভাবে মানুষ কাজ করে কথা বলে, কিন্তু আদতে সে হলো- রহস্যময় এক আত্মা। যখন শরীর নস্ট হয়ে যায় তখন কি ঘটে, আত্মাকি নিরাপদ থাকে ? আত্মাকি তখন বিশ্রামে যায়, আত্মার কল্যানের জন্য তখন সকলেরই কাজ করা প্রধান লক্ষ্য হয়ে যায়। মানুষ নিজেই তখন ভূতে পরিনত হয়ে যায়, প্রেত্নি বা প্রেতাত্মা হয়ে শরীরের সাথে বা তাঁর স্থলে ঘুরে বেড়ায়। তাই তো ( মাজার জিয়ারত সহ নানা কর্ম সম্পাদিত হয়)।

আপনি আমার নন, আমি ও আপনার নই, আমরা সেই উর্ধ জগতের অধীন । হতে পারে, সেই উর্ধ জগতের সেই আত্মা আবার আমাদের সকলের মাঝেই লুকিয়ে আছেন। ফলে আমরা একে অন্য কে সম্মান করি। সাধারন ভাবে দেখলে আমরা বুঝি যে, মানুষ হিসাবে আমরা সকলেই বসবাস করি। আমি যদি অন্যকে মানুষ হিসাবে বিবেচনা না করি, তা হলে আমি আপনাকে সত্যিকার ভাবে সম্মান করতে পারব কি ? আপনি নিশ্চিত থাকুন যে আপনি আদতে স্থায়ী বাসিন্দা - নন, তবে আপনি হলেন তাঁর এক প্রতিনিধি বা প্রতিরূপ, আপনি এখানে তাঁর দেয়া সময় পর্যন্ত বিচরন করছেন; যতক্ষন তিনি আপনাকে ডেকে না নিচ্ছেন ততক্ষন এখানেই আপনি আমাদের সামনেই বিচরন করে যাবেন। তাঁর হুকুম মাত্রই আপনে এখান থেকে চিরদিনের জন্য চলে যাবেন।

তাই, আমাদের কথা হলো, আসলে আমরা আপনাকে কোন উচ্চতর আত্মা হিসাবে বিবেচনা করে সম্মান করি না, উচ্চতর আত্মা আপনায় বিরাজ করে বলেই আপনাকে সম্মান জানাই। আমাদের পূর্ব পুরুষগন দাস দাসীদের মাঝে অনেক কিছুই দেখতে বা বুঝতে পারেন নাই। তাঁরা তাঁদের মাঝে “মানুষ” হিসাবে কোন উপাদান দেখেন নাই। সেই বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে তাঁরা নিজেদেরকে ভূত হিসাবেই বিবেচনায় নিয়েছেন। মানুষ এক জন ব্যাক্তির চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ন জিনিষ। এক জন মানুষ মানেই হলো একটি আত্মা, একটি আত্মা ব্যাক্তিকে প্রভাবিত করে – আত্মা মানুষে রূপান্ত্রিত হয়।

আর সেই জন্যই আত্মাকে মানুষ শ্রদ্বা জানায় ।  এবং এই পর্যন্ত মানুষ আত্মার সেবা করেও এসেছে। এই সুবাদে কিছু ব্যাক্তি নানা ভাবে সুবিধা ও আদায় করে নিয়েছে- সাধারন মানুষের নিকট থেকে; তাঁরা উর্ধোজগতের দোয়াই দেয়, নানা সংস্থা গঠন করে সদস্য পদ সৃজন করে মানুষ কে তা গ্রহন করানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার ফন্দি আঁটে।

আপনি যখন লোকেদের দ্বারা নমস্য হন, তখন আপনি মানুষকে সহজেই প্রভাবিত করতে পারেন। আত্মার নামে ব্যাক্তি, পরিবার ও সমাজকে আবিষ্ট করা যায়। একটি উচ্চতর আত্মা, ভূত, ও পবিত্র সত্তাকে আমাদের প্রাচীন লোকেরা ব্যাপক ভাবে সম্মান দিয়েছেন। আমি যখন কাউকে সম্মান করি তখন তাকে রক্ষার জন্য ও কাজ করি, কারন আপনি তখন আমার হ্রদয়ে প্রশান্তি হয়ে বিরাজ করেন, আমার হ্রদয়ে চাহিদা মেটান। আপনি পবিত্র আত্মা ধারন করে পবিত্র শরীর বহন করে চলেন, আপনি কিন্তু তখন ভূত ও নন বা কোন সত্ত্বা ও নন, আপনি তখন নিজের আমিত্বের সাধ মেটাতে বেশী তৎপর হয়ে উঠেন; আপনি নিজেই তখন সত্ত্বা হিসাবে পরিচিতি অর্জন করে সকলের নিকট অতি সম্মানিত ও আদরনীয় ব্যাক্তি হয়ে উঠেন। আসলে আপনি আপনিই থেকে যান আপনি তখন ও বিশেষ কিছু নন – কিন্তু মানুষের নিকট আপনি একজন ইউনিক ব্যাক্তি হয়ে উঠেন।

তবে সেই সময়ে ও কেবল মানুষ নয় সকল কিছুই প্রভাবিত হয়; উচ্চতর সত্ত্বা, আত্মা সর্বত্র বিচরন করে, এটা কোথাও আটকে থাকে না, এবং তা সর্ব স্তরে নিজেকে ভূতুরে বা অলৌকিক চরিত্র নিয়ে নিজেকে হাজির করে!

নিজের অহংবাদ বিলিয়মান হবার আগেই যদি আমাদের সামনে ধরা না দিত, তবে প্রভাব সৃষ্টিকারী আত্মা গুলো আমাদের সমালোচনায় পড়ত না । তাই, তাঁদের মধ্যে সুনির্দিস্টভাবে কয়েক জন মাত্র উদাহরন হিসাবে আমাদের সামনে উপস্থাপিত হতে পারেন। সেটা ও তাঁদের গুণাবলী ও আচরণিক ভিন্নতার কারনেই হয়ে থাকে।

“পবিত্র সত্তা” হলেন সকল কিছুর উর্ধে, পবিত্রতাই সত্য, পবিত্রতাই সঠিক, আইন-নিয়ম বিধি ও হল  একটি মহান  পবিত্র বিষয় বস্তু, সম্মান ও সম্মিলন সকলের জন্যই ভালো, আইন কানুন এবং মাতৃভূমি ইত্যাদি হলো পবিত্রতার চিহ্ন।