‘ঈগো এন্ড ইটস ওন’- ম্যাক্স স্টার্নার প্রনিত পুস্তকের বাংলায় অনূদিত ধারাবাহিক- ৬
Interested readers are requested to click here for its English Version: https://en.wikisource.org/wiki/The_Ego_and_Its_Own/The_Spirit
ভাষান্তরঃ এ কে এম শিহাব
-দি স্পিরিট বা আত্মা
আত্মার রাজত্ব হলো এক বিশাল দানবীয় রাজত্ব, আধ্যাত্মিকতার সাথে এর একটি সুনির্দিস্ট লেনদেন বিরাজমান আছে; আসুন দেখা যাক আসলেই আত্মা জিনিষটি কি, এবং আমার পূর্ব পুরুষেরা আমাদের কি জিনিষ দান করে গেছেন?
তার জন্মগত ভাবে ত্রুটি ছিলো, ফলে এটা কোন কালেই নিজেকে একটি জীবন্ত আত্মা হিসাবে হাজির করতে পারেনি; অথচ তারই উচিৎ ছিলো নিজেকে প্রমান করা, এটা তো নিজেই কথা বলতে পারার কথা। “ মানব পুত্র হয়ে ঈশ্বরের জন্ম গ্রহন করা”, তার ই প্রথম কথা ছিলো তিনি আত্মা, তিনি ঈশ্বর, তিনি পার্থিব কিছু করতে চান না, পার্থিব কোন সম্পর্ক ও তিনি রাখতে চান না। তিনি একা, তিনি কেবলই আধ্যাত্মিকতার জগতে যুক্ত থাকতে চান। প্রেম আর ভালবাসা নিয়ে হতে চান মাতোয়ারা।
আমার সাহস, সারা বিশ্বের জন্য একটি প্রবল ধংসাত্বক বোমা, আর আমার নমনীয়তা এবং আমার অবাধ্যতা সামগ্রীক ভাবে সকল কিছুকে স্পর্শ করে যায়, কেননা এটাকে কোন কিছু আটকাতে পারে কি ? কারন হলো এটা দুনিয়ার সাথে শত্রুতা করেনা, এবং এটার কোন কার্যক্রম কোন ভাবে এই দুনিয়া থেকে হারিয়ে যায় না । এটা কোন ভাবেই দির্ঘ সময় জন বিচ্ছিন্ন থাকেনা, নিজের বৃত্ত্বে আবর্তিত ও হয় না, নিজস্ব দুনিয়ায় ঘুরপাক খায় না । কিন্তু আত্মা একা এবং মুক্ত ও নয়, এটা হলো, “জগতের আত্মা মাত্র” – এটা সমগ্র বিশ্ব জগতের সাথে সম্পর্কি ও যুক্তসত্ত্বা । আত্মা মুক্ত আত্মা, যা সত্যি আত্মা হিসাবে সারা দুনিয়ার নিজস্ব চেতনা; পার্থিব দুনিয়ার মধ্যে আত্মা হলো একটি পথিক মাত্র। আধ্মাতিক জগতের মধ্যে আত্মা হলো একটি সত্যকারের চেতনা মাত্র। বলা হয়ে থাকে সাধারন মানুষ এটা জানেন না বা বুঝেন না, “ এটা যেন বহির্জগত থেকে এসেছে বা আর একটি সময়ান্তে তা আবার চলে যাবে ভিন্ন জগতে বা অন্য কোন খানে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো সেই আধ্যাত্মিক জগতের ঠিকানা কোথায় ? আর সেটা থাকেই বা কোথায় ? তার নিজেরই তা বলা উচিৎ; সে তার নিজের মত করেই বলুক; পর্দার আড়াল থেকে নিজেই বেড়িয়ে আসুক, এটা তো তার জগত । একটি স্বপ্নদর্শী জীবন তার দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নিজের জগতকে চিত্রিত করা উচিৎ । যেমন একজন পাগল নিজেই নিজের মত করে কথা বলে, আচরন করে, জীবন চালায় নিজের স্বপ্নানুসারে। তবে , যদি সে পাগল না হয়ে থাকে তবে তার আত্মাই তাকে পরিচালনা করা উচিৎ। আর তা যদি কোন ভূমিকাই না রাখে তবে তার অস্থিত্ব নিয়ে কথা উঠতেই পারে।
তাহলে আত্মার জন্ম হয় কেমন করে, এর জন্ম ও বিকাশের সূত্র ধরেই আমরা তাকে চিহ্নিত করতে পারি, তার শ্রস্টাকে ও চেনা যায়; এর বিকাশ এবং জগত।
আসলে আত্মা জিনিষটা কি ? এটার উৎপত্তি হয়েছে আধ্যাত্মিক জগত থেকে ! এমন কি আমি ও আপনি কেহ ই আত্মার পরিচয় জানিনা, কেননা আমরা তো আধ্যাত্মিকতার কিছুই জানিনা; চিন্তা ভাবনার ও রূপায়ন করা সম্ভব এমন কি তা আমাদের জীবন যাত্রায় ব্যবহার ও করতে পারি; আমরা যখন শিশু ছিলাম সেই সময়ে ও আমরা নানা প্রকার চিন্তার সাথে পরিচিত হয়েছি, যা আমাদের জীবন যাত্রায় প্রভাব ও রেখেছে, অনিচ্ছা সত্ত্বে ও আমরা অনেক কিছু করেছি, সেই চিন্তার সূত্র ধরে আমরা আরো নয়া চিন্তার জন্ম দিয়েছি। যতক্ষন আত্মা থাকে ততক্ষন আধ্যাত্মিকতার ও অস্থিত্ব থাকে; এটাই বাস্তবতা যে প্রানী জগতের সাথেই মিশে থাকে আধ্যাত্মিকতা।
আমরা যত কিছু জানি তা তো তার অস্থিত্ব ও কর্মের দ্বারাই জানতে পারি, প্রশ্ন হলো আত্মার কাজই বা কি ? তবে তা কাজ বা শিশুদের চেতনা ছাড়া আর কিছু নয় – আত্মা।
আমি যদি আগেই ইহুদি হতাম বা ইহুদির উপাদান আমার মাঝে থাকত, তবে আমি দুই হাজার বছর পিছনে রহস্যময় দুনিয়ায় পড়ে থাকতাম। তবে হয়ত অবিশ্বাসী ও জ্ঞানহীনই থেকে যেতাম। কিন্ত আমার সুপ্রিয় পাঠক, আপনি জেনে রাখুন আমি একেবারেইই পূর্ন ইহুদি নই- আমার মত এমন আর কেহ এই ভাবে পথ ভ্রান্ত হয় না- আমি এবং আপনি এক সাথে রাস্তা ধরে সামনে এগিয়ে যাব, আমি প্রতিক্ষায় থাকব যতক্ষন পর্যন্ত আপনি হাসি মুখে ফিরে না আসেন।
যদি কেহ বলেন যে আপনি নিজেই আত্মার সাথে মিশে আছেন, তা হলে আপনি তার সাথে আপনার কথা বলা বন্দ্ব করে দিন, তার কথায় বিশ্বাস করবেন না, তবে এই কথার উত্তর হলোঃ “ আমার মাঝে আত্মা আছে, আমি তা মানি, কিন্তু কেবল একটি আত্মা হিসাবে ঠিকে থাকতে পারি না, আবার একজন মানুষ হিসাবে ও আত্মা বিহীন বাঁচতে পারি না”। আপনি ও নিজের অস্থিত্ব জানান দিচ্ছন “নিজের আত্মার” উপর নির্ভর করে। “কিন্তু” সে আবার প্রতি উত্তরে বলে, “ এটা আপনার নিয়তি, আপনার শারিরীক বন্দ্বনে আপনি আর “ স্বর্গীয় আত্মা” একাকার হয়ে আছেন। আপনি আত্মাকে ধারন করে একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বিচরন করবেন এবং এর পর যখন মৃত্যু বরন করবেন তখন আপনার শরীর আত্মা থেকে পৃথক হয়ে যাবে, আর আত্মা চলে যাবে তার নিজস্ব আলয়ে বা আধ্যাত্মিক জগতে; তাই যথার্থ ভাবেই বলা যায় যে, আত্মা ও আধ্যাত্মিকতা ই হলো সত্যি। শরীর এখানেই ধরাতলে রয়ে যাবে, আর আপনি চলে যাবেন এই দরাধাম থেকে বা নিজেই অন্য দেহ ধারন করে বিচরন করবেন এই খানে।
আপনি হয়ত তাকে এখন বিশ্বাস করছেন ! হয়ত সেই বিশ্বাসটি সাময়িক বিষয় হিসাবে করছেন, তবে আপনি কিন্তু কেবল মাত্র আত্মা নন; কিন্তু যখন আপনি স্বার্গীয় শরীর থেকে স্থানান্তরিত হন, তখন একজন ব্যাক্তি হিসাবে শরীর বিহীন অবস্থায় কাউকে কোন প্রকার সহযোগীতা করতে পারেন না । তাই অতি দরকারের সময়ে ও কেহ আপনার নিকট থেকে কোন প্রকার উপকার করতে পারে না । “ সারা দুনিয়া ও যদি কাউকে দিয়ে দেয় তবু সেই দুনিয়া তার কোন উপকারে আসবে না। এমন কি সেই অবস্থার আত্মার বিরাট ক্ষতি হয়ে গেলে ও কোন সমস্যা আছে কি ?”
কিন্ত, যখন এই ক্ষেত্রে বিতর্কের অবতারনা করা হয়, তখনই তা খৃষ্টান বিধিমালার ও বিশ্বাসের বিপরীতে চলে যায়, অথচ দির্ঘ কাল ধরে আমরা পরিস্থিতিগত কারনেই মেনে নিয়ে এসেছি যে, আত্মা হলো অমর। আপনি হয়ত এই বিষয়ে বিশ্বাস হারাতে থাকবেন, কিন্তু নানা ভাবে আপনি আবিষ্ট হবেন এই ভেবে যে, আত্মাই হলো আপনার সামগ্রীক সত্ত্বায় সবচেয়ে ভালো ও উত্তম অংশ। যা আধ্যাত্মিকতাঁর জন্ম দিয়ে থাকে। যদি ও আপনার অবিশ্বাস তিব্রতর হয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ক্ষনে ক্ষনে, কিন্তু ঈগো এবং আত্মার অমরত্বের প্রশ্ন বার বার সামনে নিয়ে আসতে পারে। যাতে আপনি ও একমত পোষন করতে পারেন।
অহং বা আমিত্বের নামে আপনার চিন্তা ভাবনাটা কি ? মানুষ সেই, যে তার স্বীয় চিন্তার ভেতর দিয়ে বিচরন করে, যাকে একটি আধ্যাত্মিক জীব হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যে নিজের সুযোগ সুবিধাকে বলি দান করতে পারে- আগামীদিনের কোন ভালো লক্ষ্য অর্জনের জন্য । একজন খাঁটি দেশ প্রেমিক সে তার জন্ম ভূমির খাতিরে নিজের মূল্যবান প্রানটি স্বেচ্ছায় কোরবানী করে দিতে পারে। যদি ও এই পিতৃভূমির ধারনাটি ই একটি বিতর্কিত ও অসার বস্তু, তবে সাধারন ইতর প্রানীদের মাঝে এই বিষয়ে চিন্তা করার ই কোন ক্ষমতা নেই। একেই ভাবে একজন শিশুর মাঝে ও দেখা যায় তাঁরা পিতৃভূমি বা স্বদেশ প্রেমের জন্য একেবারে উথলা হয় না। এখন কেহই নিজেকে আর দেশপ্রেমিক বলে গর্ববোধ করেন না বা পিতৃভূমির জন্য অহং বা গোঁ ধরে থাকেন না । এই বিষয়ে এখন অগণিত উদাহরন পাওয়া যাবে; এখন মানব সমাজে মানবিক সাম্যবাদের চর্চা মানুষকে অধিকতর উপকার এনে দিতে পারে; মানুষ এখন বিশেষ কোন শ্রেনীর প্রাধান্যের বিরুদ্বে কাজ করে সাধারন মানুষের স্বাধীকার কায়েম করে আগামী দিনকে আরো আলোকিত করতে পারে।
যারা আধ্যাত্মিকতার দোহাই দিয়ে ব্যাক্তি মানুষকে নিচু করে দেখায় তাঁরা আপনাকে ও নানা ভাবে ছোট করতে পারে, তার নিজের দৃষ্টিতে সেই হলো উঁচু শ্রেনীর লোক। সে তার মধ্যে ও আপনার মাঝ খানে একটি সাংস্কৃতিক দেয়াল দাঁড় করিয়ে দিবে, কিন্তু আপনি নিজে আত্মার আধিকারী; অথচ আপনি নিজের আত্ম পরিচয়ে তার থেকে পিছিয়ে যাবেন, সে নিজেকে আধ্যাত্মিকতায় অগ্রসর ব্যাক্তি হিসাবে পরিচিত করে নিজেকে একটি সুবিধাভোগী স্তরে উন্নিত করবে। ক্রমে সে নিজেকে আধ্যাত্মিক জগতের শাসকে পরিনত করবে। তখন সে বস্তুগত ও অবস্তুগত সুবিধা অর্জনের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করে ফেলবে। আপনি যাই ভাবুন এবং নিশ্চিত হোন, যারাই আধ্যাত্মিকতার জগতে প্রবেশ করেছে, তাঁরা সেখানে আদতে কিছুই পাবে না, অথচ দখবেন এরা নিজেদেরকে আধ্যাত্মিক সত্যের অধিকারী বা উচ্চতর ক্ষমতার দাবীদার বলে পরিচয় দিতে থাকবে। আপনি যে মহান কর্মে নিয়োজিত আছেন সেই পথে অবিরাম কাজ করে গেলে দুনিয়ার সমৃদ্বি ও সুন্দর্য বাড়বে। আপনি আপনার পথ ছেড়ে দিবেন না। আপনার আত্মা মানেই হলো আপনার ধারনা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা।
আধ্যাত্মিক জগতের সৃষ্টি হলো আত্মা, এখন দেখা যাক এর প্রথম সৃষ্টি কি আছে। দেখা যাক এই ধারনা সৃস্টির সূচনাটি কেমন ছিলো। এই ধারনা সৃজনের পিছনে যে গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি কাজ করেছে তা হলো – প্রাকৃতির স্বাভাবিক বিকাশের নিয়ম ও ধারা সমূহ। পৌরানিক কাহিনী অনুসারে দেখা যায় প্রথমে সৃজন করা হয় মানুষকে, এবং এর পর ই অন্যান্য প্রজাতির বিকাশ ঘটে। প্রথম সৃষ্টি বিষয়ক জিজ্ঞাসা আসতেই পারে – তা এলো কেমন করে ? উত্তর দেয়া হয়- “শুন্য থেকে”- আত্মা নিজেই শূন্য থেকে এসছে, বা নিজেই নিজেকে সৃজন করেছে; অর্থাৎ আত্মা স্বয়ং সৃষ্ট। আমরা আমাদের দৈনিন্দিন অভিজ্ঞতায় দেখি এই ধরনের কথা রহস্যজনক । আপনি কি আপনার আগে কিছু চিন্তা করতে পেরেছিলেন ? আপনি কি আপনার ভাবনা অনুসার নিজেকে সৃজন করেছেন ? বা অন্য কিছু ভেবে ছিলেন যা হয় নাই ? এটা কি আপনার প্রথম গান যা আপনাকে গায়ক বানায়, এটা কি আপনার প্রথম কথা যা আপনাকে কথক বানিয়েছে? তাই বলা যায়, এটাই প্রথম আধ্যাত্মিকতা যা আপনার আত্মার জন্ম দিয়েছে।
ইতিমধ্যে আপনি নিজেকে একজন চিন্তক হিসাবে বিকশিত করেছেন। একজন চিন্তক, একজন বক্তা হিসাবে যেমন আপনার বিকাশ হয়েছে তেমনি আত্মা ও আপনাকে অন্যান্য বস্তু থেকে আলাদা করেছে। এই বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই স্পষ্ট হয়ে সকল ক্ষেত্রে ধরা দিয়েছে। আপনার অহং, আমিত্ব ও চিন্তার শক্তি আপনাকে নানা ক্ষেত্রে বিজড়িত করেছে। আপনার আত্মা, আপনার সামনে আদর্শ হিসাবেই হাজির হয়, এবং এক ভিন্ন জগতের ধারনা প্রদান করে থাকে; আত্মা হলো ঈশ্বরের অপর নাম। “ঈশ্বর ই হলো আত্মা”।
যে সকল কিছু আত্মা নয় সে সকল কিছুর বিপরীতেই আপনার অবস্থান, আপনি আপনার নিজের বিরুদ্বেই কাজ করেন বা অবস্থান নেন, যা আধ্যাত্মিক নয় সেই সকল কিছুর প্রভাব বলয় থেকে আসলে কেহই মুক্ত হতে পারে না বা ভূলে থাকতে পারেন না। তাঁরা এমন কথা ও বলেন যে, “আমি আত্মার চেয়ে ও বেশী কিছু; এবং আত্মা, খাঁটি আত্মা, বা আত্মা ছাড়া আমি আর কিছু নই, যেহেতু আমি অন্য কিছু নই- কেবলই আত্মা । তাই আমি এটাকেই “ঈশ্বর” বলে ডাকি।
সেই সকল ক্ষেত্রে তা প্রকৃতির মধ্যেই খাঁটি আত্মা হিসাবে বিরাজমান থাকে, যেহেতু সেইটি আমি নই, তা আমার অন্তরে নয় বাহিরে অবস্থান করে; যেহেতু, ধরে নেয়া হয় যে মানুষ পরিপূর্ন ভাবে আধ্যাত্মিক জীব নয়, তাই বলা হয়ে থাকে যে আত্মা সর্বত্র বিরাজমান একটি সত্বা হিসাবে সক্রিয় রয়েছে। এমন কি কেহ কেহ বলেন আত্মা কোন পার্থিব বিষয় নয়- এটা আধ্যপান্তই স্বর্গীয় বিষয় হিসাবে পরিগণিত।
পারস্পরিক বিরোধের কারনে বলা হয় আমি এবং আত্মা এক নই; একমাত্র কারন হলো “আমি” এবং “আত্মা” এক বস্তুর নাম নয়, এক জিনিষ ও নয়, এদের পরস্পরের নাম ও আলাদা বস্তু ও আলাদা । কেননা আমি আত্মা নই আবার আত্মা ও আমি নয়। আর সেই জন্য এই ক্ষেত্রে আমরা থিয়লজিক্যাল ব্যাখ্যার মাধ্যমে আত্মার অবস্থান জানতে পারি- যা ভিন্ন জগতে অবস্থান করে। যাকে আমরা “খোদা” বলে জানি।
আমাদের নিকট এটা ও স্পষ্ট হয় যে ফয়েরবাখ ধর্ম তত্ত্বের ভেতর দিয়ে আমাদেরক কতটুকু স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন যে, আমরা আমাদের স্বীয় ক্ষমতা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে পারিনি বলেই ভিন্ন জায়গায় বিচরন করেছি, যখন আমরা বুঝতে পারলাম যে খোদা আসলে মানুষের মাঝেই বিরাজমান তখন আমরা আবার নিজেদের মাঝে ফিরে এসেছি। “খোদা ই হলেন আত্মা”, ফয়েরবাখ এর সুন্দর নাম দিয়েছেন “ আমাদের চেতনা”। আমরা কি এই কথা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, “আমাদের চেতনাকে” আমাদের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে- আমরা কি অতিদরকারী ও কম দরকারী বস্তুতে বিভক্ত হয়ে যাব ? আমরা কি নিজেরাই নিজদেরকে বিনাশের পথে এগিয়ে নিচ্ছি না ?
আমরা কি অর্জন করলাম, আমরা যখন নিজদেরকে স্বর্গীয় অবস্থার বাহিরে নিজেদেরকে নিয়ে ভাবি তখন আমরা কি পাই ? আমরা কি সেই মানুষই যা নিজদেরকে ভাবি ? আমাদের বহির জগতে যা যা আছে তা থেকে আমরা কত ছোট বা বড়? আমরা যখন আমাদের কোন প্রিয় মানুষ নিয়ে ভাবি তখন তা ও একটি “ভিন্ন সত্ত্বা” হিসাবে পরিগণিত হয়, যা আমার বাহিরে অবস্থান করে। আসলে আমাদের ভেতর কোন আত্মাই বসবাস করে না, কোন আত্মা ও নেই, আর সেই জন্যই তা বাহির থেকে আমাদের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে; আসলে আমরা ঘটনাচক্রেই এর সাথে মিশে গেছি। আমরা ও ভিন্ন জগত ভিন্ন ভাবনায় আবিষ্ট হয়ে ভাবনার জাল বুনেই চলেছি ।
নিজের সকল শক্তি নিয়োজিত করে ফয়েরবাখ খ্রিস্ট ধর্মের রীতিনীতির সামগ্রীক বিষয়াদির একটি সার নির্যাস করেছেন, যা ছিলো হতাশাজনক। তবে তা তিনি ছুড়ে ফেলে দেননি, তা আবার কাছে ও টেনে নেননি। স্বর্গীয় প্রভাব বলয় থেকে তাদেরকে চিরতরে দূরে টেনে নেবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এই সকল চূড়ান্ত হতাশা জনক বিষয় দূরীভুত করনে তার প্রয়াস ছিলো নিরন্তর, জীবন ও মৃত্যুর বিষয়য়ে রহস্যের পর্দা উন্মোচন করতে চেষ্টা করেছেন তিনি, এবং খ্রিস্টানদের মাঝে অন্য জগত নিয়ে যে সীমাহীন আগ্রহ রয়েছে তা ও দূরীকরন করতে চেয়েছেন মহান চিন্তক ফয়েরবাখ। একজন মহানায়ক অন্য জগতের নিকট যেতে আগ্রহী নয় বরং অন্য জগতকে নিজের নিকট নিয়ে আসতে বেশী পছন্দ করেন। আর তিনি তার মত করেই সেই জগতকে সাজাতে চান। সারা বিশ্বের কোথাও সচেতন কিছুর সন্দ্বান যেহেতু এখনো মিলে নাই, তাই তার দাবী হলো “এই দুনিয়াকে” গুরুত্বপূর্ন হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে আরো সন্দর ও স্বার্গীয় করে গড়ে তোলাই বুদ্বিমানের কাজ। তার বিপরীত ভাবনা কি বোকামি নয় ?
আসুন এবার দেখা যাক চিন্তক ফয়েরবাখ ধর্ম তত্ত্বের দ্বান্দ্বিক বিষয় গুলো পর্যালোচনা করে যে ভাষ্য দিয়েছেন, তা এই রূপঃ “ মানুষের চেতনা হলো, মানুষই সর্ব প্রধান”। ধর্ম গুলো ঈশ্বরকে বলে সর্বপ্রধান । যখন কোন ব্যাক্তি অধিকতর গুনাবলী অর্জন করে তাকে ও কোন কোন ধর্ম ঈশ্বর বলে ঘোষনা দিয়েছে। আসল সত্য হলো এটাকে মানুষের সত্যিকার চেতনা বা উপাদান বলা হয়েছে। আসলে ইতিহসের মৌলিক সত্যটি হলো, মানুষই মানুষকে ঈশ্বরে পরিনত করেছে।
আমরা এই ভাবে উত্তর দিতে পারিঃ মানুষের মূল চেতনাই হলো সর্বত্র প্রাধান্য অর্জন করা বিস্তার করা তাঁর প্রভূত্ব। আদতে মাুত্বর মুল সত্বাই হলো নিজের প্রাধান্যকে দিনে দিনে আরো উঁচু স্তরে উন্নিত করা। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম সত্য হলো, মানুষের সেই মৌলিক উপাদান সমূহ , সেই মানুষেরই বোধগম্যতার বাহিরে রয়ে গেছে। সাধারন ভাবে মানুষের সেই চেতনাকে “ ঈশ্বর” বলে অবহিত করা হয়েছে। যা কেবলই মানুষ আর “মানুষ”। আর কিছুই নয়। আমি না মানুষ না কোন ঈশ্বর। আমি সর্ব শ্রেস্ট ও নই বা সর্ব নিকৃস্ট ও নই। বাহির থেকে আমাকে যাহাই বিবেচনা করা হোক না কেন। পার্থিব জগতে আমরা বরাবরই উন্নত চিন্তার অধিকারী, সেটা ভেতর বাহির সকল স্থানেই। খ্রিস্ট ধর্ম অনুসারে আত্মাই হলো ঈশ্বর আর সেই ঈশ্বর বাস করে আমাদের ভেতর। এটা বাস করে আমাদের হ্রদয়ে এবং বাস করে স্বর্গে। আমাদের মত নগন্য মানুষের মাঝে ঈশ্বরের “বাসস্থান”, চিন্তক ফয়রবাখ ঈশ্বরের স্বর্গীয় বাসস্থান ধবংস করে তার তল্পীতল্পা সহ বিদায় করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই পার্থিব জগতে এমনিতেই প্রচুর লোকের বসবাসে জনবহুল হয়ে উঠেছে তাই তাকে বিদায় দেয়াই উত্তম।
তবে এই বিচ্ছিনতার পর ( আমরা যে সকল কাজের প্রস্তাব করেছি, যে অবস্থায় বা যে পরিস্থিতিতে যা করা দরকার তা আমাদেরকে করতেই হবে, তাঁর যেন পুনারাবৃত্তি না হয় সেই দিকে সতর্ক রাখতে হবে) আমরা প্রথম আত্মা হিসাবে ফিরে আসব প্রথম সৃষ্টি হিসাবে, আত্ম- আত্মাই।
আত্মা আমার থেকে আলাদা একটি জিনিষ, তবে সেই আলাদা জিনিষটি কি ?