‘ঈগো এন্ড ইটস ওন’- ম্যাক্স স্টার্নার প্রনিত পুস্তকের বাংলায় অনূদিত ধারাবাহিক- ৫

‘ঈগো এন্ড ইটস ওন’- ম্যাক্স স্টার্নার প্রনিত পুস্তকের বাংলায় অনূদিত ধারাবাহিক- ৫

Interested readers are requested to click here for its English Version:https://en.wikisource.org/wiki/The_Ego_and_Its_Own/The_Moderns

ভাষান্তরঃ এ কে এম শিহাব

-এ যুগের মানুষঃ

এখনো যারা খ্রিষ্টান ধর্মে আছেন, তাঁরা আধুনিকতার ধারক, প্রাচীনগণ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন, তাদেরকে আবার নতুনকে তুলে ধারা প্রায়স অব্যাহত আছে ।

আগে যেমন বলা হয়েছে, “প্রাচীন দুনিয়া সত্য ছিলো”, আমরা এখানে বলছি, “ আত্মা হলো সত্য”; তবে আমরা এই কথা বলার সাথে সাথে যুক্ত করতে চাই, “ একটি সত্য যখন  অসত্য হয়ে যায়, তখন সেটা আবার ফিরে আসতে চায়, তা কমপক্ষে ফিরে আসার চেষ্টা তো করেই”।

ঐতিহাসিক যুগে খ্রিস্টানদের জীবনাচার প্রদর্শন করা হয়েছিলো, এতে সহজেই বুঝা যায় যে, তাঁদের ধর্ম গ্রন্থের শাসন আমলে, সংস্কারের প্রস্তুতি চলা কালে অনেককেই বন্দিত্ব গ্রহন করতে হয়েছিলো, তবে সংস্কারের পূর্বে তাঁরা খুবই শক্ত ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ফলে তাঁরা খ্রিস্ট ধর্মীয় সকল দল উপদলের সাথে নিজেদের সখ্যতা ও গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। তাঁরা রোমান ইতালীয় পরিষদের সাথে আলাপ চারিতা ও চালিয়ে যাচ্ছিলেন চমৎকার ভাবেই। “যদি হ্রদয় হয় উন্মোক্ত, তবে পরস্পরকে বুঝতে পারা মোটেই কঠিন কাজ নয়। আলোচনায় ও প্রানবন্ততা বজায় থাকে”।

সংস্কারের অনেক দিন আগে, পোপদের “বিভ্রান্তি মূলক কথাবার্তা” এবং লোথারের কর্মকান্ড দেখে সাধারন মানুষেরা পক্ষে বিপক্ষে বিতর্কে লিপ্ত হয়। মানবতাবাদ আসলে সুফিজমের সাথে সম্পর্কিত ও সামঞ্জস্যপূর্ন, সুফিস্টদের সময়কালে গ্রীকদের জীবনযাত্রায় স্থবিরতা কাটিয়ে গতিশীলতার সঞ্চার হয় (এটাকে পেরিক্লিন যুগ হিসাবে ও দেখা হয়), আর সেই সময়ে মানবতাবাদের ক্ষেত্রে অনেক গরুত্বপূর্ন ঘটনার সূত্রপাত হয়, হয়ত কেহ বলতে পারেন-এটা ছিল ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম। সেই সময়-কালে মানব হ্রদয় খ্রিষ্টান প্রশান্তির নিগর থেকে মুক্তি চাই ছিলো।

তবে চূড়ান্ত বিচারে সংস্কারের ক্ষেত্রে যেমন সক্রেটিস, মানুষের মন ও মননকে বিশেষ ভাবে সামনে নিয়ে আসেন, ফলে তা আলোচনা ও জ্ঞান চর্চার জগতে দৃশ্যমান হয়ে উঠে-তা কোন ক্রমেই খ্রিস্টানীয় ভাবধারার মত ছিলো না । কিং লুথারের অনুসারীগন সকল কিছু কেই হ্রদয়ের সাথে যুক্ত করে কাজ করতে শুরু করে,  ফলে সংস্কারের সেই পর্যায়ে মানুষের চিন্তা ভাবনা ও কার্যক্রমকে নানা ভাবে আলোকিত করতে থাকে, এবং খ্রিস্টানীয় চিন্তা ভাবনা ও অন্দ্ব বিশ্বাসের বোঝা লোকদের মন থেকে বিদূরীত হতে  শুরু করে। মানব হ্রদয় দিনে দিনে খ্রিস্টানীয় প্রভাব বলয় থকে দূরে সরে আসতে থাকে,  ফলে অনুসন্দ্বিতসু মানুষ ক্রমে ব্যাস্ত হয়ে উঠে নানা বৈচিত্রময় বিষয়বস্তু নিয়ে। খ্রিস্টানীয় ভালোবাসার শূন্যতা মানুষকে কষ্ট দেয় নাই, বরং সাধারন মানুষের ভালবাসা, নারী-পুরুষের প্রেম, ভালবাসা, চিন্তার স্বাধীনতা এবং “আত্মসচেতনতায়” মানুষ নয়া জীবনের স্বাদ খোজে পায়।

খ্রিস্টানিক চর্চায় অধিক গুরুত্ব দেয়ার ফলে, তবে মানব জীবন শোকনো তৃন খণ্ডের ন্যায় বা পানি শূন্য নদীর মত রূপ নেয়। মানসিক প্রশান্তির জায়গা দখল করে মানসিক বিদ্রোহ, অবচেতন ভাবেই হোক বা “আত্মসচেতনতা মূলক ভাবেই” হোক – মানুষ নির্লিপ্ত  হয়ে পড়ে। সকল অন্যায় অবিচার ছেড়ে দেয় ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে। সেই অবস্থায় মানব হ্রদয় নিজের মৃত্যুকে পর্যন্ত  অপছন্দ করতে থাকে, এবং কঠিন ভাবে হ্রদয়হীনের মত সমালোচনা করে এবং এমন ভাবে তৈরী হতে বলে যেখানে থাকবে না কোন প্রেম, ভালবাসা, ও পার্থিব কোন কিছুর প্রতি টান। যুক্তি দেয়া হয়, মানুষের প্রতি ভালবাসা দিয়ে কি হবে ? কেননা সকলেই তো “আমিত্বের” ভারে আবিস্ট হয়ে আছে, তাঁরা এখন কেহই আর আত্মার সেবক নন। সুতরাং ভালবাসা অর্থহীন।  খ্রিস্টানীয় ভালোবাসায় আত্মা বিরাজমানঃ কিন্তু কোথা পাওয়া যায় সেই আত্মা ?

এ যেন এক ছদ্মবশী নকল চুল লাগানো একজন চমক লাগানো মানুষের মত – কেন হল এমন, তা কি আর “আধ্যাত্মিকতার”  উষ্ণহ্রদয় নয়, এটা হবে খাঁটি উষ্ণ হ্রদয়ের নামে প্রতারণা, মেকী বা “তাত্ত্বিক সম্মান” প্রদর্শন। সত্যিকার উষ্ণ হ্রদয়ের চর্চা বা মানব আচরন, বোঝাপড়া, পারস্পরিক দয়া-মায়া সকলের মাঝে এক গভীর বন্দ্বুত্বের সৃজন করে থাকে। আবার আমরা দেখি, সত্যিকার বন্দ্বুত্বপূর্ন পরিবেশ আসলে এমনি এমনি তৈরী হয় না, যদি এর পিছনে কোন কোন প্রকার পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিস্ট বিষয় জড়িত না থাকে। সাধারন ভাবে মানুষের মাঝে “আমিত্ব” থাকার কারনে সে কাউকেই গুরুত্ব দিতে চায় না। তবে জীবন প্রবাহের বাঁকে বাঁকে নানা চাহিদার জন্য অন্যের সহায়তার দরকার হয়। তাই সে নিজের চাহিদা মটাতে গিয়ে অন্যের চাহিদাকে উপেক্ষা করতে পারে না । আর সেই পারস্পরিক সহযোগীতা বা সহভাগীতার কারনেই গড়ে উঠে সামাজিক সম্পর্ক। পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভালবাসা।

নিরুৎসাহিত উষ্ণ হৃদয়গ্রাহীতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো, সবশেষে আমরা সচেতন হব যে আত্মা, যা কেবল খ্রিস্টান সম্প্রদায় একাই ভালবাসে, তা আসলে কিছুই না; অন্য কথায়, আত্মা হল – একটি ঢাহা মিথ্যা।

এখানে খসড়া ভাবে সংক্ষেপে যে সকল বিষয় নির্ধারন করা হয়েছে, তা অনেকাংশেই সন্দ্বেহাতীত বলা যায়। আশা করি আমাদের বক্তব্য সম্পূর্ন  বোঝতে পারলে  বিষয়টি সকলের নিকট আরো পরিস্কার হয়ে উঠবে।

আসুন আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের উত্তরাধিকারিত্ব গ্রহন করে একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে যতটুকু সম্ভব আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাই ! আস্ত দুনিয়াটাই আমাদের পায়ের নিচে, স্বর্গ আরো গভীরে অবস্থিত, স্বর্গ ও নরকের শ্বাস প্রশ্বাস আমাদের নিকট পৌঁছায় না। এই গুলো আমাদের থেকে অনেক দূরে নিরব নিথর হয়ে আছে, এই গুলো আমাদের কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারেনা, তবে আমাদের ভাবনাকে প্রভাবিত বা বিভ্রান্ত করছে। এই গুলো আত্মাকে ও নিয়ন্ত্রন করতে পারে না- আত্মা ও নিজে নিজে কিছু ই করতে সক্ষম নয়, প্রকৃত সত্য হলো আমরা যা যা করি তা ই হয়ে থাকে অন্য কিছু নয়। কোন কিছু করতে পারলে, এর উপর আমাদের আত্মার ও প্রভাব  পড়ে, যখন আমরা বস্তুময় জগত থেকে উদাসীন থাকি তখন আমাদের  আত্মাও মুক্ত হয়ে থাকে- যাকে আমরা বলে পারি “আধ্যাত্মিক মুক্তি”।

দির্ঘকাল কঠোর পরিশ্রম করে আত্মা মুক্তি পায়, পার্থিবতা থেকে মুক্তি পায়, আসলে এটা পার্থিবতাকে ছাড়া আর কিছু থকেই মুক্ত হতে পারে না – আত্মাই হোক বা আধ্যাত্মিকতাই হোক আদতে সবই এক।

যখন আত্মা দুনিয়ার পার্থিবতা থেকে মুক্ত হয়ে যায়, তখন কোন কিছুই থাকে আটকাতে পারে না। তার অস্থিত্বকে অস্বীকার করতে পারে না- প্রতিনিয়ত সে তার অস্থিত্বের জানান দিয়ে যায়। সে তার চারি পাশকে মুক্ত ও আধ্যাত্মিকতার প্রভাব বলয়ে আনয়নের প্রয়াস চালায়। সে তার তারুন্যকে ধরে রাখে দুনিয়াকে পাল্টে দেবার মহান মিশনে।

আমরা আমাদের প্রাচীন লোকদের মাঝে দেখতে পাই তাঁরা তাঁদের চিন্তায় ও কর্মে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিলেন, তাঁরা নিজদের জীবনকে প্রকৃতি নির্ভর করেই কাটিয়েছেন; তবে কোন কারনে প্রকৃতি যদি তাঁদের মৃত্যুর বা বিপদের কারন হয়েছে তখনই তাঁরা এর বিরুদ্বে ও বিদ্রোহ করেছন। গড়ে তোলেছেন প্রতিরোধ। তাঁরা খোদার নামে “বিশ্বকে জয় করেছেন”  নানা ক্ষেত্রে।

জগত সম্পর্কে কিছু জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া প্রাচীন কালের লোকেরা তেমন কিছুই করতে পারেন নাই, তাঁদের সকল প্রচেষ্টার মূলে ছিলো দুনিয়াকে বুঝা এবং তার উপরে আর কি আছে তার সন্দ্বান করা। সেই সময়ের শতাব্দীর পর শতাব্দি অতিক্রম করেছে মানব জাতি কিন্তু সত্যিকার জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতি কতটুকু হয়ে ছিলো ? আধুনিক বা এ যুগের লোকেরা কি কি বুঝার জন্য চেষ্টা করছেন ? দুনিয়াকে এখন আর বোঝার আর কিছু নেই, প্রাচীন লোকেরা ইতিমধ্যে অনেক কিছু সম্পাদন করে গেছেন; তাদেরকে ঈশ্বর অনেক কিছু দিয়েছেন, ঈশ্বর তাদেরকে “ আত্মা” দান করেছেন, সকল কিছুর মধ্যেই আত্মা বা আধ্যাত্মিকতা খোঁজে পেয়েছেন। তারা আরো দেখলেন, আত্মার কার্যকলাপ হলো- “ ঈশ্বর তত্ত্বের গভীরতার সন্দ্বান” বা ধর্মতত্ত্ব আবিস্কার করা। যদি ও প্রাচীন লোকেরা তেমন কিছুই দুনিয়াকে দেখাতে পারেন নাই তবে, বিশ্ব জ্ঞান তত্ত্ব প্রদর্শন করেছেন।  এ যুগের লোকেরা তাঁদের পথে আর এগোয়নি বা ধর্মতত্ত্ব নিয়ে মাথা ঘামায়নি। আমরা পরবর্তীতে ক্রমে দেখতে পাব ঈশ্বরের বিরোদ্বে  নতুন বিদ্রোহ, “ধর্মতাত্ত্বিকদের” ঠিকে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টা – আসলে তা ছিলো এবং চলছে ধর্মতাত্ত্বিকতার বিপরিতে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।


Share Tweet Send
0 Comments
Loading...
You've successfully subscribed to Bangladesh ASF
Great! Next, complete checkout for full access to Bangladesh ASF
Welcome back! You've successfully signed in
Success! Your account is fully activated, you now have access to all content.