এ কে এম শিহাব

আমাদের এই অঞ্চলে এনার্কিজম শব্দটি নিয়ে মানুষের মাঝে নেতিবাচক মনোভাব খুবই প্রবল। ইউরূপ আমেরিকায় এনার্কিজম নিয়ে নানা সময়ে উত্থাল পাতাল আন্দোলন সংগ্রাম হলে ও এই বদ্বীপে কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই । তবে আন্দোলন, সংগ্রাম, লড়াই হয়েছে অগনিত। কোন কোন আন্দোলনে এনার্কিজমের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে নানা সময়ে। যেমন গান্দ্বিজির অহিংস আন্দোলন ও আমাদের সেই ঊনসত্তরের মহান গন অভুত্থান ইত্যাদিতে। এছাড়াও হাজি শরিয়ত উল্লাহ, তিতুমীর, ফকির মাজনু শাহ ও কানু সিধুদের লড়াই সংগ্রামকে এনার্কিস্ট আন্দোলন বলা যায় ।


প্রশ্ন হতেই পারে এনার্কিজম কি ? সাদামাটা ভাবে বলে এনার্কিজম হল স্বরাজনীতি, নিরাজনীতি, নৈরাস্ট্রীয়নীতি বা নৈরাজ্যবাদ ইত্যাদি। এই শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক শব্দ ‘এনা’ অর্থ কৃর্তৃত্বহীন, খবরদারীহীন, মুড়লীপনাহীন ইত্যাদি। আর ‘আর্কু’ শব্দের অর্থই হল পরিচালক, নেতা, গোসাই, হুজুর, মহাজন, মোড়ল ও প্রধান ইত্যাদি। এনা+আর্কু= এর্কি অর্থাৎ নিরাজ বা স্বরাজ খবরদারীহীন এক ব্যবস্থা বা এনার্কিজম অর্থাৎ নৈরাজ্যবাদ। পরিতাপের বিষয় হলো- যাকে আমাদের এখানকার বেশীর ভাগ মানুষই নেতিবাচক অর্থে নৈরাজ্যবাদ বলে থাকে । আবার অনেকে এনার্কিস্ট বলে গালি ও দেয়। সত্যিকার অর্থে নৈরাজ্যবাদ অর্থই হল নিরদ্রুপ, মুক্ত, স্বাধিন রাজার শাসন মুক্ত পরিবেশ। যেখানে রাজা মহারাজাদের প্রতাপ আর প্রতাপাদিত্যতার জায়গা নেই । যেখান থেকে নির্দয় ভাবে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয় মানুষের উপর থেকে মানুষে প্রভূত্বের। সকল প্রকার কৃর্তৃত্ববাদি শাসনের শোষণের কবর রচনা করা হয় বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে । পরিচালিত হয় মানুষের বানানো সামাজ মানুষের কায়দা-কানুন মেনে।


কোথা থেকে এলো এই এনার্কিজম বা স্বরাজনীতি? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমরা পাব রাশিয়ান বিপ্লবী পার্টি ম্যাকনোভিস্টের একটি বক্তব্য থেকে: “ শ্রেনী সংগ্রামের সূচনা হয়েছিলো নির্যাতিত, নিপীড়িত ও দাসদের নিজস্ব উদ্যোগে। এই ধারনার মূলে ছিলো এনার্কিজমঃ এর মূল কথাই ছিলো শ্রেনীহীন, রাস্ট্রহীন সমাজের স্বপ্ন। শোষন আর রাস্ট্রের জায়গায় আসবে স্বপরিচালিত শ্রমিক শ্রেনীর সমাজ”। “ এনার্কিজম দার্শনিক, সাহিত্যিক, চিন্তাবিদের কোন স্বপ্ন বিলাস থেকে সৃজিত নয়, এটা কর্মজীবী- শ্রমজীবী মানুষের প্রয়োজনে, তাঁদের মুক্তির প্রয়োজনে ও সাম্য নিশ্চিত করতেই উদ্ভাবিত হয়েছে”। “ এই চমৎকার জীবন প্রনালীটি এনার্কিস্ট চিন্তক বাকুনিন, ক্রপথকিন এবং অন্যান্য ব্যাক্তিগন আবিস্কার করেন নাই, তবে তারা তা সাধারন মানুষের মাঝ থেকে উদ্ভাবন করেছেন, তারা কেবল তাঁদের জ্ঞান ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে এনার্কিজমকে উন্নয়ন ও প্রসারিত করেছেন”। মানব সভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায় রাষ্ট্রের অপকর্মের কারনে মানুষকে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে । ধ্বংস হয়েছে অগনিত সম্পদ, অপচয় হয়েছে মানুষের অমূল্য মেধার, মানুষের রক্তের বন্যা বয়ে গেছে কত জনপদে। গুম, খুন, হত্যা, ধর্ষন, আর নরহত্যার হোলি খেলা হয়েছে প্রায় সর্বত্র। রাষ্ট্র সকল সময়ে শিক্ষা দিয়েছে ব্যাক্তির চেয়ে দল বড়, দলের ছেয়ে দেশ বড়। কি চমৎকার শিক্ষা ! তাই রাষ্ট্র চাইলে যে কোন মানুষের প্রান, সম্পদ, মান ইজ্জত কেড়ে নিতে পারে । কারো কিচ্ছু বলার নেই । তাই আজ দেখি রাষ্ট্র, সংবিধান, আইন, দল, নেতা ও ক্ষমতার – সুরক্ষার জন্য হেন কোন আইন নেই যা তৈরী করছেনা রাস্ট্রপন্থীরা । তা প্রথম বিশ্বই বলুন বা তৃতীয় বিশ্বই বলুন সব জায়গায় ভীতু রাষ্ট্র নিজের সুরক্ষার চিন্তায় কত কিছুই না করছে । সামরিক বাহিনি, পুলিশ বাহিনি, এলিট বাহিনি তৈরী করে হেন কোন কোন মরানাস্ত্র নেই যা তাঁদের নিকট দিচ্ছে না। এই সকল মরানাস্ত্রের লক্ষ্য কিন্তু মানুষ । আর কিছু নয়।


রাষ্ট্র পন্থীরাই তৈরী করেছে বর্ডার, নানা ভুখন্ডকে ভাগ করে এপার ওপার নাম দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অস্ত্র হাতে পাহারাদার বানিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। রিজার্ভে রেখেছে আরো কোটি কোটি সেনাবাহিনী। যাদের কোন উৎপাদন মূলক কাজ নেই । যাদের কাজই হল দেশ রক্ষার নামে জীবন ভর কেবল অস্ত্রের ঘষা মাঝা ও নিজেদেরকে প্রস্তুত করা । এমন কোটি কোটি মানুষ আছেন যারা মেধায় বুদ্বিতে অনেক অগ্রসর কিন্তু এই চক্করে পরে সারা জীবন যুদ্বের প্রতিক্ষায় জীবন কাটিয়ে দিয়েছে। অথচ এই সোটাম দেহের অধিকারী বুদ্বিমান মানুষ গুলো উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহন করতে পারলে দুনিয়ার ইতিহাস ই অন্যরকম হত ।

আমার একথা গুলো শোনে হয়ত অনেকেই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলবেন এ গুলো পাগলের প্রলাপ বা বোকাদের বক বকানী ছাড়া আর কিছু নয় ।

হ্যাঁ ! এনার্কিজম নিয়ে আমি নিজে ও যখন প্রথম পড়া শুরু করি আমার কাছে ও তাই মনে হয়েছিলো। ক্রমে আমার চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন এলো। যতই এই চিন্তাধারার ভেতরে প্রবেশ করলাম ততই বুঝতে পারলাম এই মতবাদ বাস্তবায়নের মাধম্যে মানুষ একটি নয়া দুনিয়া তৈরী করতে পারবে। শোষন, শাসন, হিংসা, বিদ্বেষ, মারামারী, খুনাখুনি বিহীন ও সাম্যের সুহার্দ্যপূর্ন একটি সুন্দর সমাজ গড়তে পারবে। এই মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের জায়গায় আসবে জনসমিতি সমূহের ফেডারেশন, সংবিধানের জায়গায় আসবে চুক্তি, আইন নয় মানুষের স্বেচ্ছাকৃত চুক্তির ভিত্তিতে চলবে সামাজের সকল কর্মকান্ড। পন্য যেমন বর্ডার মানেনা, দুনিয়ার সকল জায়গায় বিচরন করে – মানুষ ও তাঁর শ্রম শক্তিকে তাঁর ইচ্ছেমত দুনিয়ার যেকোন জায়গায় বিক্রির সুযোগ পাবে। জেফার্সন বলেছিলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কোন দেশ নেই’। আসলে সকলেই ব্যবসায়ের ই অংশ। কেহ ক্রেতা আর কেহ বিক্রেতা । তাঁদের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হোক এনার্কিস্ট বা স্বরাজনীতির অনুসারীরা কিছুতেই তা চান না । সকল মানুষের এই পৃথীবীতে মানুষের পূর্ন স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাইলে অবশ্যই ভিসা মুক্ত পৃথিবি ও সম্পদের সুসমবন্ঠন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আর যা যা বাঁধা আছে তা দূর করতে হবে । আরো বলব……


নৈরাজ্যবাদ বা নিরাজ সমাজ  হল একটি রাজনৈতিক মতবাদ যার লক্ষ্য হলো নিরাজসমাজ বিনির্মান করা, এখানে “ কোন প্রকার প্রভূত্ববাদের অস্থিত্ব থাকবে না”। প্রুদো সম্পত্তি কি এই প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, নৈরাজবাদ হলো এমন একটি মতবাদ যা সমাজের সকলেই স্বাধীন, সম্মিলিত ও সমানভাবে পরস্পরের সহযোগী হিসাবে বসবাস করতে পারবেন। নৈরাজবাদ এক কথায় সকল প্রকার সামাজিক উঁচু নিচু স্তর বিন্যাস অনুমোদন করে না – পুজিবাদি ব্যবস্থা বা রাস্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন অস্বীকার করে- এই ধরনের বিষয়কে মানুষের জন্য ক্ষতিকর এবং অপ্রয়োজনীয় মনে করে।


এল, সুজান ব্রাউনের ভাষ্য মতে,


“ সাধারন ভাবে জনগন মনে করে নৈরাজ্যবাদ মানেই হলো সন্ত্রাস, রাষ্ট্র বিরুধী কাজ, অথচ নৈরাজ্যবাদ হল সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন। নৈরাজ্যবাদ বিশ্বাস করে সমাজের উপর কোন কিছু ই চাপিয়ে দেয়া সমিচীন নয়, দরকার ও নেই। বরং সহযোগীতা ও সহ মর্মীতার মাধ্যমে সামাজিক উঁচু নিচু ব্যবস্থার এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিরুধীতা করা দরকার”। [ ব্যাক্তিগত রাজনীতি,পৃস্টা-১০৬]
তবে, “ নৈরাজ্যবাদ” এবং “নৈরাজ্য” নিসন্দ্বহে রাজনৈতিক তত্ত্বের প্রতিনিধিত্ব করে না । সাধারন লোকেরা বুঝে নৈরাজ্য মানেই হল “ঝগড়া” বা “আইন শৃংখলার অবনতি”, অনেকেই মনে করেন নৈরাজ্য হল সামাজিক ফ্যসাদ বা “জঙ্গলের আইনে” ফিরে যাওয়া।


নৈরাজ্যবাদ নিয়ে মানুষের ভুল ধারনা ইতিহাসে নতুন নয়। উদাহরন হিসাবে বলা যায়, কোন কোন দেশ সরকার বলতে বুঝে রাজা, কেহ বুঝেন প্রজাতন্ত্র আবার কেহ মনে করেন গণতন্ত্র । কিন্তু একেই ভাবে “নৈরাজ্যবাদ” ও একটি শব্দ । যা নিয়ে কোথাও কোথাও ভিন্ন রকম অর্থ আসতে পারে। যারা রাষ্ট্রের কায়েমী স্বার্থবাদি যারা নানা ভাবে রাষ্ট্র যন্ত্রের উপকার ভোগী তারা একে একটি ঝগড়া ফ্যাসাদ হিসাবে দেখে থাকেন। এই প্রসঙ্গে এরিক ম্যালাটিস্টার ভাষ্য হলোঃ


“মানুষের মাঝে যখনই এই চিন্তার উন্মেষ হয়েছে যে, সরকার একটি খুব দরকারী বিষয়, এছাড়া চলতে পারে না, এটাকে মানুষ একেবারেই প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক বিষয় হিসাবে ভেবে নিয়েছে, তারা স্থির বিশ্বাস করে বসে আছে সরকার নেই মানেই হলো, কোন আইন কানুন ও নেই”।[এনার্কি, পৃস্টা-১৬]

নৈরাজ্যবাদিরা সাধারন মানুষের “নৈরাজ্য” সম্পর্কে এই “সাধারন ধারনার” পরিবর্তন করতে চায়, মানুষ সহজেই বুঝতে পারবেন যে, সরকারী ও সামাজিক উঁচু নিচু স্তর বিন্যাস মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও অদরকারীঃ
“ মানুষের ধারনার পরিবর্তন হলেই সহজেই অনুমেয় হবে যে, সরকার কেবল অদরকারী নয় বরং মারাত্মক ক্ষতিকারক, আর নৈরাজ্যবাদের অর্থই হলো সরকারের বিনাসঃ প্রকৃতিক নিয়ম, সকলের স্বার্থে সকলের ঐক্য একান্ত আবশ্যক, পূর্ন সংহতির মধ্যেই পূর্ন স্বাধীনতা নিহিত”। [ পৃস্টা-১৬]


এনার্কিজম বা নিরাজ সমাজ নিয়ে অনেক মার্ক্সবাদিদের মাঝে ও নানা প্রশ্ন রয়েছে । এখানে ক্রমে এনার্কিজমের খুটিনাটি বিষয় তুলে ধারার প্রায়স অব্যাহত রাখা হবে । প্রচলিত ভুলধারনা সমূহের অপনোদন সহ সৃষ্ট সকল অপব্যাখ্যা ও অপবক্তব্যের খন্ডন করার জন্য কাজ করা হবে ।


মূলকথা কথা হল এনার্কিজম বা নিয়াজ সমাজ মানুষের উপর থেকে সকল প্রকার প্রভূত্ব ও গোসাই গিরিরির অবসান ঘটাতে চায়।

নৈরাজ্যবাদ একটি শক্তিশালী বিপ্লবী সামাজিক আন্দোলন যা পুঁজিবাদের বিরুদ্বে লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে উদ্ভোত হয়েছে- এর লক্ষ্য হলো সকল প্রকার শোষণ ও শাসন থেকে বিশ্ব মানব সমাজকে মুক্ত করা । এটা কোন কঠিন বিষয় নয় বরং খুবই সরল ও স্বাভাবিক একটি পথ ও পন্থাঃ জনগন জানেন কোন প্রকার বিষেশজ্ঞ ছাড়াই কিভাবে তাঁদের জীবন যাপন করতে পারবেন। অন্যান্য আত্মসমর্পিত লোকেরা বলে বেড়ায় যে মানুষ তাঁর নিজের প্রকৃত স্বার্থ বুজতে পারে না। তাঁদের সুরক্ষার জন্য একটি সরকার দরকার। একটি রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিই সমাজের সকল স্তরের মানুষের সকল স্বার্থ নিশ্চিত করতে পারে। নৈরাজ্যবাদিরা দৃঢ় ভাবে বলে কোন প্রকার এক কেন্দ্রীক সরকারের পক্ষে সকল মানুষের জন্য সিদ্বান্ত গ্রহন সঠিক হতেই পারে না, তা অবশ্যই বিকেন্দ্রিক করতে হবেঃ তাই বলা হয় প্রতিটি ব্যাক্তিই সমাজের কেন্দ্র হয়া উচিৎ, সকলেরই স্বাধীন ভাবে পরস্পরের সাথে মিশে সম্পর্কের বুনন তৈরী করার মাধ্যমে নিজেদের সকল সমস্যার সমাধান করার  পরিবেশ বজায় থাকা চাই।

রাষ্ট্র পরিচালিত স্কুল কলেজ বিশ্বব্দ্যালয়ে আমরা যে শিক্ষা গ্রহন করি তাতে এই শিক্ষাই দেয়া হয় যে আমরা আমাদেরকে রাষ্ট্র ছাড়া পরিচালনা করতে পারব না । তারা শেখায় নৈরাজ্য হল অবাস্তব বিষয় কল্পনা বিলাশ মাত্রঃ এটা কোন কাজের মতবাদ নয়। পক্ষান্তরে, আমাদের অভিজ্ঞতা বলে ইহা রাষ্ট্রের ছেয়ে আরো অনেক চমৎকার ভাবে স্মাজ পরিচালনায় সক্ষম । দুনিয়ার ইতিহাস বলে লক্ষ লক্ষ বছর পৃথিবীর নানা জায়গায় মানুষ রাষ্ট্র ছাড়াই সুন্দর, নিরাপদ ও শান্তির জীবনযাপন করেছে।

একটি নৈরাজ্যিক সমাজকে রাষ্ট্র ও পুঁজিবাদের সাথে তুলনা করা যায় কেমন করে?  একটি উঁচু নিচু স্তর বিশিষ্ট সমাজ কিছু বিষেশ বৈশিস্ট ধারন করে থাকে। এই ধরনের সমাজ তাঁদের প্রতিবেশীদেরকে গিলে খায়, তাঁদের প্রশাসক চক্র নানা সুবিধা আদায় করে থাকে । পক্ষান্তরে, এই সকল সমাজে জলবায়ুর পরিবর্তন, খাদ্য সঙ্কট, পানির সঙ্কট, বাজারের অস্বাভাবিক উঠা নামা, সামাজিক-আর্থিক বৈষম্য ও অস্থিরতা  নিত্য সংগী হয়ে থাকে । এই গ্রন্থে আমি দেখাতে চেষ্টা করব একটি নৈরাজ্যবাদি সমাজ কিভাবে ঠেকসই পদ্বতীতে তাঁর সকল লোকদের সকল চাহিদা পুরন করে থাকে ।

আমরা বর্তমান ও অতীত থেকে নানা তথ্য উপাত্য সংগ্রহ করে পাঠকের সামনে হাজির করে দেখাব কিভাবে নৈরাজ্যব্যবস্থাকে চাপা দেয়া হয়েছে নানা সময়ে এবং তা থেকে কিভাবে বিপ্লবী সিদ্বান্তে উপনিত হওয়া যায়। আমরা খুব সহজেই কোন প্রকার কতৃর্ত্ব, প্রভূ, রাজনীতিবিদ, বা আমলা ছাড়া সমাজে বসবাস করতে পারি; এটা হবে বিচারক, পুলিশ, এবং অপরাধী, ধনী ও গরীব বিহীন; এই নৈরাজ্যিক সমাজে লিংগগত বৈষম্য, দাসত্ব, গনহত্যা বা কোন প্রকার উপনিবেশবাদের অস্থিত্ব থাকবে না । আমাদের এই লক্ষ্যিত সমাজে কোন প্রকার কারাগার থাকবে না । থাকবে না কোন প্রকার বন্দ্বিত্ব।

অবশ্যই আমরা বাস্তব অবস্থায় নৈরাজ্যবাদি সমাজ বিনির্মানে কোন অভিজ্ঞতাকে খাট করে দেখবনা। আমরা যদি একবার স্বধীনতার ভিত্তিতে সমাজ পরিচালনার সুযোগ পেয়ে যাই তবে এতে অনেক সৃজনশীল পন্থার সংযোজন ঘটানো হবে। সমাজকে সত্যিকার অর্থেই স্বধীনভাবে স্থাপন করা হবে। তাই আসুন সেই নয়া যুগের সুচনা করি। সকল বাঁধা অতিক্রম করে সুন্দর সমাজ আজকের ও আগামী প্রজন্মের জন্য বিনির্মান করি।