এ কে এম শিহাব অনূদিত গ্রেগরী পেট্রোভিচ ম্যাক্সিমফ প্রণীত প্রোগ্রাম অব এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম পুস্তকের ধারাবাহিক-৯

দ্বিতীয় বিভাগঃ রাজনৈতিক পরিমন্ডল

অধ্যায়ঃ ৪ । বৈবাহিক এবং পারিবারিক আইন

ব্যাক্তিগত সম্পত্তির বিলুপ্তি এবং রাস্ট্র তার সকল প্রকার প্রতিস্টান সহ সব কিছু বিলিন করে দেয়া হবে। আধুনিক পারিবারিক পরিবশ গড়ে তোলার মাধ্যমে পরিবর্তনশীল সমাজে ক্ষমতা ও সম্পদের যুগ যুগ ধরে বংশ পরম পরায় স্থানান্তরিত হবার যে ঐতিয্য চলে আসছে তা তিরোহিত হবে। সকল প্রকার উত্তারাধিকার আইন বাতিল করে দেয়া হবে। এই কার্যক্রম বিপ্লবের সূচনাতেই গ্রহন করা হবে ।

প্রচলিত বৈবাহিক নিয়মে সরকারের অনুমোদন দরকার হয়, সমাজ ও পিতা মাতার সমর্থন লাগে – এই সকল বিষয় বাতিল করে মুক্ত বিবাহ বা নয়া পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটানো হবে। এনার্কিজমের প্রাথমিক ধারনাই হলো মানুষের জন্য সাম্য ও স্বাধীকার নিশ্চিত করা । তাই পারিবারিক জীবনে বাধ্যতামূলক পরিবশের অবসয়ান ঘটিয়ে মুক্ত স্বাধীন পারিবারি জীবন গড়ে তোলার জন্য পরিবেশ সৃজন করা হবে।

মাইকেল বাকুনিন বলেছিলন, “ ধর্মকেন্দ্রিক দেওয়ানী প্রকৃতির বিবাহ প্রথা বাতিল করুন”। “ সকলের ই জীবনের সত্যিকার বাস্তবতার আলোকে জীবন যাপনে অভ্যস্থ হওয়া দরকার। একজন নারী ও পুরুষ একে অন্যকে ভালোবাসবে, একসাথে থাকবে তার জন্য কারো অনুমতির দরকার নেই। আবার যখন চাইবেন তখন পৃথক হবার জন্য ও অনুমোদন প্রয়োজন নেই। আবার যদি তাঁরা পুনঃ একত্রিত হতে চায় তবে তার জন্য ও কোন প্রতিস্টান বা ব্যাক্তির অনুমতির দরকার নেই । স্বেচ্ছাকৃত ও স্বাধীন পারিবারিক জীবনেই সত্যিকার ভালোবাসা বিরাজ করে। পারস্পরিক সম্পর্ক ও হয় দৃঢ়”।

পারিবারিক জীবন ও বৈবাহিক সম্পর্কের সাথে আরো একটি প্রশ্ন গভীর ভাবে জড়িত, আর তা হলো শিশুর যত্ন, শিক্ষা ও তাদের গড়ে উঠার বিষয় সমূহ। সমাজ কোন শিশুকে তাদের মাতা-পিতার নিকট থকে দূরে সরিয়ে নিবেনা। তবে ১৮ বছর পর্যন্ত তাঁরা পরিবারের তত্বাবধানে থেকেই শিক্ষা ও সামাজিকি করনের আওতায় থাকবে। সকল শিশুকে সমান সুযোগ সুবিধা দিয়ে সমন্বিত প্রক্রিয়ায় শিক্ষা প্রদান করা হবে। সেই সমন্বিত শিক্ষায় শারিরিক ও মানসিক উভয় শিক্ষাই গ্রহন করবে। আসলে তরুন সমাজ ই হলো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, আর সেই জন্য দরকার হলো তাদেরকে সঠিক ভাবে গড়ে তোলা। শিশুদের মাঝে কোন প্রকার বৈষম্য থাকবে না । সাম্য, সমতা ও স্বাধীকারের শিক্ষা নিয়েই তাঁরা বেড়ে উঠবে।

শিশুদের প্রাকৃতিক অভিভাবক হলেন তাদের পিতা মাতা। তবে তা কোন ভাবেই  নৈতিকতা বিরোধী নয় । শিশুদের বিকাশের সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদের বুদ্বিবৃত্তিক ভাবে মুক্ত পরিবশে বেড়ে উঠার সুযোগ দিতে হবে। পিতা মাতার কোন বিরোধ বা  সমস্যায় সমাজ শিশুদের বিকাশে দায়িত্ব নিবে।

এনার্কিস্টগন বিপ্লবের প্রথম দিন থেকেই বিবাহ ও পারিবারিক বিষয় গুলো নিয়ে কাজ করবে। ধীরে ধীরে এবং যৌক্তিক ভাবে স্বাধীন ও মুক্ত পরিবার গড়ে তুলার জন্য সবিশেষ কর্মসূচি গ্রহন ও বাস্তবায়ন করা হবে ।

বর্তমানে তথাকথিত, স্বাধীন ও মুক্ত সমাজে অনেক নারী পুরুষ বিবাহ বন্দ্বনে আবদ্ব হয়। সেখানে ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি বিধানের কারনে তাঁরা কোন দিনই স্বাধীন মুক্ত জীবনের স্বাদ পায় না । আজীবন দাসত্ব আর পরাধীণতার শিকল পরেই ইহলোক ত্যাগ করে যায় । পরে থাকে তাদের দুঃখ আর কষ্টের দির্ঘ শ্বাস !

তাই, কেবল মাত্র স্বাধীন নর নারীর সমাজ গড়ে উঠতে পারে একটি এনার্কিস্ট সমাজে ।