এ কে এম শিহাব অনূদিত গ্রেগরী পেট্রোভিচ ম্যাক্সিমফ প্রণীত প্রোগ্রাম অব এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম পুস্তকের ধারাবাহিক- ১২

পরিশিষ্টঃ ২ । আই, ডব্লিউ, এ (IWA) - বিপ্লবী সিন্ডিকালিজমের মূলনীতি ।  

বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজম গড়ে উঠেছে শ্রেনী সংগ্রামের উপর ভিত্তিকরে, এর লক্ষ্য হলো কায়িক ও বুদ্বিবৃত্তিক সকল প্রকার শ্রমিকদের সংস্থা গড়ে তোলা যারা নিজেদের সার্বিক মুক্তির জন্য মজুরী দাসত্বের অবসান ঘটাতে রাস্ট্রীয় নিপিড়নের অবসান ঘটাবেন। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হবে স্বাধীন সাম্যবাদী এক নয়া সমাজ গড়ে তোলা । তবে শ্রমিক শ্রেনীর লোকেরা নিজেদের বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে সার্বিক লক্ষ্য অর্জন করবে। সেই ক্ষেত্রে আর্থিক সংস্থা সমূহ নিজেদের যোগ্যতায়ই নিজেদের সকল লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।

বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজম এটা নিশ্চিত করতে চায় যে, বর্তমানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে ধনীক শ্রেনীর যে মালিকানার একচাটিয়াবাদ  চলছে তা বিতারিত করে কারখানা ও খামারে চলমান সকল প্রকার হাইরারকি বা পদসোপানের অবসান ঘটিয়ে একটি সুসম ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। সরকার ও রাজনৈতিক দল সমূহের ক্ষমতার অপব্যবহার দূরী করনের জন্য তার বিকল্প হিসাবে কারখানা ও খামারে শ্রমিক কাউন্সিল গড়ে তোলা হবে। রাজনৈতিক দল ও সরকারের বিপরিতে অর্থনৈতিক সংস্থা গড়ে তোলার চেস্টা করা হবে। সরকারের পরিবর্তে এই সংস্থাই সকল কিছুর ব্যবস্থাপনা করবে। এই উদ্যোগের উদ্দশ্য কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা নয় বরং তার উদ্দেশ্য হলো রাস্ট্রীয় সকল কর্মকান্ডের বিলুপ্তি ঘটানো। এই ক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয় হলো সম্পদের উপর একচাটিয়াবাদের অবসান হলে, একটি বিশেষ শ্রেনীর প্রাধান্যের ও অবসান হবে, রাস্ট্রীয় কাঠামোর বিলুপ্তি হবে,এমন কি “সর্বহারার একনাকত্বর” ও অস্থিত্ব মেনে নেয়া হবে না। কেননা প্রভাবক যেকোন কিছুই মানুষের স্বধীকারকে বাঁধা গ্রস্থ করে দেয়।

সামাজিক পরিবর্তনে বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজমের দুটি ভূমিকা থাকেঃ একদিকে মানুষের দৈনিন্দিন জীবনে অর্থনৈতিক, সামাজিক, ও ক্ষেত্রে  বুদ্বিবৃত্তিকভাব শ্রমিক শ্রেনীর উন্নয়ন ঘটনো। অন্যদিকে, মানুষের জন্য মানুষের দ্বারা সকল উৎপাদিত পন্য সামগ্রী স্বাধীনভাবে বিতরন করার জন্য কাজ করবে। প্রচলিত বিতরন ব্যাবস্থার জায়গায় নয়া বিতরন ব্যবস্থা চালু করা হবে। নয়া ব্যবস্থা কোন সরকারের আইন বা আদেশে নয় বরং উৎপাদন কারী সংস্থা সমূহের স্বাধীন চুক্তি মোতাবেক পন্য বন্ঠন করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় মেধা ভিত্তিক ও কায়িক শ্রমদানকারী প্রতিটি ব্যাক্তি অংশ গ্রহন করবেন। উৎপাদনের প্রতিটি  স্তরেই সাম্য ও স্বাধীকারের নীতি অনুসরন করবেন।

বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজম সর্বদাই  সাংগঠনিক কেন্দ্রীকতায় অনিহা প্রকাশ করে থাকে। মূলত  রাষ্ট্র ও চার্চ থেকেই সকল কিছুতে একটা কেন্দ্রীকতার প্রবনতার উৎপত্তি হয়েছে। এই প্রবনতার কারনে অনেক সৃজনশীল ও স্বাধীন চিন্তা চেতনার অপমৃত্যু ঘটে থাকে। কেন্দ্রীকতা লালনের কারনেই একটি বিশেষ গুষ্টি ও কতিপয় ব্যাক্তি ফায়দা হাসিলের সুযোগ পেয়ে যায় । এরা সমগ্র সমাজের উপর ছড়ি ঘুরানোর মওকা পেয়ে যায় । ব্যাক্তির গুরুত্ব হ্রাস পায়। উপর থেকে নিচের দিকে হুকুম জারি করতে থাকে। ঐক্যের নামে সংখ্যা গরিস্টের স্বার্থ সঙ্খ্যা লঘূর উপর ছাপিয়ে দেয়া হয়। শৃঙ্খলার নামে প্রানহীন এক পঙ্গু সমাজের জন্ম হয়। মানুষ সত্যিকার শিক্ষা গ্রহন করতে পারেন না । আর সেই জন্যই বিপ্লবী এনার্কিস্টগন একটি ফেডারেশন ভিত্তিক সমাজের জন্য লড়াই সংগ্রাম করছে । আর সেই ফেডারেশন গড়ে উঠবে তৃনমূল থেকে সমাজের সকল স্থরে।

বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজম সকল প্রকার সংসদীয় পদ্বতীর বিরোধিতা করে এবং সকল প্রকার আইন প্রনয়ন কারী সংস্থাকে অস্বীকার করে। স্বার্বজনীন ভোটাধীকারের মাধ্যমে যা হয় তা সত্যিকার ভাবে মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনা। আধুনিক সমাজে ও এটা এক প্রকার প্রহেলিকা। প্রতিটি সরকারের সময়েই দেখা যায় প্রতিটি সংসদ একটি বিশেষ ঝোঁক ও প্রবনতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। সাধারন মানুষের জন্য ন্যায় বিচার, সাম্য ও স্বাধীকারের জন্য কাজ না করে বিশেষ একটি চক্রের জন্য দাসত্বই চর্চা করে থাকে। মুক্ত ভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সাংসদ্গন হারিয়ে ফেলেন।

বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজম বিশেষ কিছু মহল বা ব্যাক্তির ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক নীতিমালা বা ভৌগলিক সিমান্তকে অস্বীকার করে, এটা কোন প্রকার জাতিয়তাবাদকে স্বীকার করে না কিন্তু তা আজ অনেক আধুনিক রাস্ট্রের ধর্মে পরিনত হয়েছে । এই পরিস্থিতির জন্য ধনিক শ্রেনীর স্বার্থ জড়িত আছে। তবে এটা আঞ্চলিক পার্থক্যকে বিশেষ ভাবে বিবেচনায় নিয়ে থাকে এবং প্রত্যেক পিছিয়ে পড়া অঞ্চল, জাতি ও গৌস্টির চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেবে।

এই সকল কারনেই বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজম সকল প্রকার সামরিক পথ ও পন্থার বিরোধিতা করে। সামরিক ব্যবস্থার বিরোদ্বে প্রচারনা চালানোর জন্য নিজেরা অংশ গ্রহন করে এবং অন্যান্যদেরকে উৎসাহিত করে থাকে।  এনার্কিস্টগন সামগ্রীকভাবে প্রচলিত ব্যবস্থার উচ্ছদ করতে চায়। প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে কোন প্রকার ব্যাক্তি ভিত্তিক সামরিক সেবাদানের ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটানো হবে। সমূলে সামরিক শিল্পের ও যুদ্বের উপকরন তৈরীর কারখানা উঠিয়ে দেয়া হবে।

বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজম সকল সময়েই ডাইরেক্ট একশনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সম ভাবধারার সকল প্রকার আন্দোলন সংগ্রামের সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে থাকে। অর্থনৈতিক একচাটিয়াবাদ ও রাস্ট্রের যেকোন ধরনের প্রভাব প্রতিপত্তির বিরোদ্বে কাজ করে থাকে। তাদের লড়াইয়ের পদ্বতি হলো- ধর্মঘট, অসহযোগ, স্যাবুটাজ ইত্যাদি। ডাইরেক্ট একশন কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারন ধর্মঘট পালনের মাধ্যমে বিপ্লবের পরিবেশ তৈরী হয় তার যথাযথ চর্চার ভেতর দিয়েই সামাজিক বিপ্লবের সূচনা করা যতে পারে।

আমরা সকলেই জানি ক্ষমতাসীন চক্রের ছত্রছায়ায়ই বেশীর ভাগ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটে থাকে, সিন্ডিক্যালিস্টগন ভালো করেই জানেন যে সরকার আশ্রিত পুজিবাদিদের বিরোদ্বে মুক্ত স্বাধীন সমাজবাদের লক্ষ্যে সফল হতে হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে লড়াই তো করতেই হবে। এনার্কিস্টগন সহিংসতা করতে তখনই বাধ্য হয় যখন নিজেদের অস্থিত্ব বিপন্ন হতে দেখে। অর্থাৎ কেবল আত্মরক্ষার্তেই সহিংস পথ বেচে নেয় । নইলে শান্তিপূর্ন পথ ই হলো এনার্কিস্টদের বিপ্লবের পথ । বিপ্লবী জনগণ যখনই পুঁজি, জমি, কারখানা সহ সকল উৎপাদন যন্ত্রকে সামাজিক মালিকানায় নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহন করবেন তখনই বর্তমান মালিক পক্ষ এই কাজে বাঁধা দিবে। তখন সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রচারনা সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।

১০

এই কর্মকান্ড কেবল মাত্র বিপ্লবী অর্থনৈতিক সংগঠন পরিচালনা করবে। শ্রমিক শ্রেনীর মানুষেরা সেই সংগঠন জন্ম দিবে ও পরিচালনা করবেন। কোন তথাকথিত রাজনৈতিক দল নয়। সৃজনশীল পন্থায় সংগঠিত হয়ে মুক্তসাম্যবাদি বিপ্লব সাধন করবে। যা সমাজের সকল মানুষকে রাষ্ট্র, পুঁজিবাদ, কর্তৃত্ববাদ, পদসোপান সহ সকল প্রকার শোষণ নিপিড়নের হাত থকে মুক্ত করবে।