এ কে এম শিহাব অনূদিত গ্রেগরী পেট্রোভিচ ম্যাক্সিমফ প্রণীত প্রোগ্রাম অব এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম পুস্তকের ধারাবাহিক- ১১

পরিশিষ্টঃ ১ । কিভাবে অতীতে উত্পাদনের সমস্যাটি বিবেচনা করা হয়েছিল ।

ক) আন্তর্জাতিকঃ

আন্তর্জাতিক পরিষরে ভাঙ্গনের আগে, জুড়া ফেডারেশনের সদস্যগন ২০শে আগস্ট, ১৮৭০ সাল পর্যন্ত লিখেছেন আগামী দিনে ইউরূপের সংস্থা সমূহ কেমন হবেঃ

“ ভবিষ্যতে ইউরূপের ফেডারেশন সমূহ বিভিন্ন জাতি ভিত্তিক গড়ে উঠবে, তাঁরা রাজনৈতিক ভাবে গনপ্রজাতন্ত্রী হিসাবে বিকশিত হবে। তবে সাধারন শ্রমিক সংগঠন সমূহ জাতীয়তা নির্বিশেষে গঠন করা হবে”।

১৮৭২ সালে হেগ কংগ্রেসে বিভক্তির পরে, এনার্কিস্টগন তাদের কংগ্রেস সেন্ট লিমারে সম্মেলন আহবান করেন। তাঁরা আগামী দিনের সমাজ কেমন হবে তা নিরূপন করার জন্য বলেনঃ

“ প্রলেতারিয়েত সংঠনের সামনে একটি মুক্ত স্বাধীন অর্থনীতির ফেডারেশন ব্যবস্থা গড়ে  তোলার কোন বিকল্প নেই। যার মৌল ভিত্তি হবে আন্তর্জাতিক  সার্বজনীন শ্রম, সাম্য, স্বাধীনতা এবং সকল রাজনৈতিক সরকার থেকে মুক্ত; আর সেই সংগঠন সমূহ হবে প্রলেতারিয়েত শ্রেনীর সম্পূর্ন স্বনির্ভরশীল ভাব ধারার সংস্থা, তা হবে সর্ববৈ স্বশাসিত”।

খ) মাইক্যাল বাকুনিনঃ

আমাদের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, “ স্বেচ্ছা ও স্বপ্রনোদিত সংস্থা সমূহের সম্মিলনে, তা নিচের দিক থেকে উপরের দিকে সমন্বিত হয়ে গড়ে উঠবে, তা কৃষি এবং শিল্প কারখানায় সমভাবে এগিয়ে যাবে-বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শিল্পের ক্ষেত্রেও একেই পন্থা অনুসরন করা হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি সমূহের সমিতি গুলো মিলিত হয়ে প্রদেশ ও জাতীয় ফেডারশন গড়ে তুলবেন। যা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এক সুমধুর ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠবে”। (বার্তা-১৯৭-৯৮ পৃস্টা)

“ কৃষি কমিউনের গড়ে তোলার পর - যে সকল কৃষক নিজের হাতে যতটুকু জমি চাষ করতে পারবেন কেবল ততটুকুর ই মালিকানা ধারন করতে পারবেন- সকল পুঁজি ও উৎপাদন ক্ষেত্রের মালিকানা ধারন করবেন শ্রমিক শ্রেনীর লোকেরা- তাদের সমিতি সমূহ। কোন প্রকার রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড পরিচালনার অনুমোদন থাকবে না- তবে স্বাধীন শ্রমিক কৃষকদের জন্য সমিতি গঠন করার পূর্ন স্বাধীনতা থাকবে”। (উৎপাদক সমিতি- ৯৭ পৃস্টা।)

বাধ্যতামূলক ভাবে এনার্কিস্ট সমাজে সকলকেই শ্রম দিতে হবে । তা হবে যৌথ ও সমান ভাবে- সেখানে সকলেই কাজ করবেন। তবে সাবেক বুর্জোয়া শ্রেনীর লোকেরা কাজ করতে চাইবে না, তবে তাদেরকে ও কর্মে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা থাকবে। তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবেঃ  এই সমাজে  কাজ বিহীন খাবার মিলবে না। অর্থাৎ “যিনি কাজ করবেন না, তিনি খাবার পাবেন না”।

বিপ্লবের পর, গ্রাম ও শহরের মালিক হবেন প্রলেতারিয়েত শ্রেনীর মানুষেরা- আর তা হবে যৌথবে। প্রতিটি পরিস্থিতিতেই তাদের মালিকানার স্বাক্ষর থাকবে, তবে তা হবে স্থান বিশেষে। বিভিন্ন প্রদেশ, কমিউন ও সামগ্রীক ভাবে সভ্যাতার ধারক ও বাহক হবেন শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ। প্রচলিতি ব্যস্থায় যারা যে ভাবে মালিকানা দাবী করছেন, তা বিপ্লবের পর আমূল পাল্টে যাবে – তা হোক পুঁজি বা উৎপাদন যন্ত্র বা ভূমি – সকল কিছুর মালিকানা স্থানান্তরিত হবে শ্রমিক- কৃষকের হাতে।

আর সেই সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে তাড়াহুড়া করা হবে না। তার জন্য হয়ত এক শাতাব্দি ও লেগে যেতে পারে। তবে সেই প্রক্রিয়া বিপ্লবের সূচনাতেই শুরু হবে ।

গ) ক্রপতকিনঃ

এখন আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া বা পদ্বতী ভূল ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। পুঁজিবাদে শিল্প ভিত্তিক ব্যবসা বানিজ্য সত্যিকার ভাবে সমাজের চাহিদাকে বুঝার চস্টা করে না; তাদের সকল আগ্রহ হলো মধ্যসত্ব ভোগীদেরকে কি করে বেশী পরিমানে লাভবান করা যায় । সামাজিক বিপ্লবের কার্যক্রম সূচনা থেকেই উৎপাদন ব্যবস্থাকে জনগণের চাহিদার আলোকে পুনঃবিন্যাস করা হবে। সকল উৎপাদন পদ্বতী সমূহ সাধারন মানুষের হাতে চলে যাবে। সকলেই সব কিছুর মালিক হবেন। উৎপাদন সংস্থা সমূহ পর্যায়ক্রমে ব্যাক্তিগত মালিকানার বাজেয়াপ্তি শুরু করবে। সমাজকে অবশ্যই এনার্কিস্ট ভাবধারার আলোকে গড়ে তোলার কাজ চলবে। আমাদের প্রথম কাজই হলো সমাজে সাম্যবাদ কায়েম করা। নতুন সমাজ গড়ে তোলার জন্য প্রধান কাজ হবে নিজেদের মধ্যে ও সংস্থা সমূহের ভেতর “স্বেচ্ছা মূলক চুক্তি” সম্পাদন করা । কমিউন গুলোর মৌলিক ভিত্তিই হবে স্বেচ্ছা মূলক সমিতির সম্মিলন। কমিউন সমূহের মধ্যে ফেডারেশন গড়ে তোলা। “রুটি ও স্বাধীনতা”- এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন মহান চিন্তাক  পিটার ক্রপতকিন।

পিটার ক্রপতকিন তার জীবনে শেষের দিকে তার মতবাদকে আরো সুনির্দিস্ট করে প্রকাশ করেছিলেন। তার প্যালোস ডি রিভোল্ট (১৯১৯) এর ভূমিকায় তিনি তার “রুটি এবং স্বাধীনতা” বইটির বক্তব্যের চেয়ে ও বেশী স্পস্ট করে তোলে ধরেন।  তিনি বলেন, আমার ধারনা ছিলো আমাদের মনন কেবল আমাদের সমাজ দ্বারাই নির্মিত হয়, তা হয় গ্রামে, নগরে, শহরে, ট্রেড ইউনিয়নে, প্রদেশ ও পুরো জাতিতে- আসলে এই জটিল প্রক্রিয়াটি সমগ্রীক অবস্থার উপরই নির্ভর করে।

ঘ) পোগেট এবং পটাউডের  বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজম

ক্রপতকিন বলেন, এনার্কিজমের আরো একটি ভিন্নরূপ রয়েছ, আমাদের কমরেড পোগেট তার “ সিন্ডিক্যালিজম কি করে অর্জন করা যায়” – নামক গ্রন্থে তার ভাষ্য তোলে ধরেছেন। তার মতামত হলো, এনার্কিস্ট সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন এবং সিন্ডিক্যাট সম্মিলিত ভাবে গনজোয়ার সৃজন করে বিপ্লব সাধন করবে। তার কথা হলো ফ্রান্সে ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্বে একবার বিপ্লব হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে যারা ক্ষমতাশালী হতে চায়, তাঁরা কংগ্রেসের মাধ্যমে  পুজিপতিদেরকে সুরক্ষা করতে পারে। আবার চাইলে উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে বা বন্দ্ব করেও দিতে পারে। এটা স্পস্ট যে শ্রমিক শ্রেনীর মানুষের সংগঠনের মাধ্যমেই সামাজিক বিপ্লব সাধন হতে পারে।

আমি পোগেটের মতামতের সাথে ঐক্যমত পোষণ করতে পারছিনা, তবে আমি তার বইটি সকল বিপ্লবী পাঠকদেরকে পড়ার জন্য সুপারিশ করছি। যারা এখোনো বিপ্লবের স্বপ্নদেখেন বা সামাজিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে।