এ কে এম শিহাব অনূদিত গ্রেগরী পেট্রোভিচ ম্যাক্সিমফ প্রণীত প্রোগ্রাম অব এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম পুস্তকের ধারাবাহিক-১০

দ্বিতীয় বিভাগঃ রাজনৈতিক পরিমন্ডল

অধ্যায়ঃ ৫। সাধারন পর্যবেক্ষন

এনার্কিজমের দৃষ্টিতে আগামী দিনের সমাজ গড়ে উঠবে তিনটি উপাদানের উপর ভিত্তি করে। প্রথমটি হলো উৎপাদকদের জনসমিতি। দ্বিতীয়ত ভোক্তাদের জনসমিতি এবং তৃতীয়তটি হলো অঞ্চল ভিত্তিক জনসমিতি । সাম্য ও স্বাধীকার নিশ্চিত করার জন্য কনফেডারশন বা জাতীয় পর্যায়ের জনমহাসমিতি সমূহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।

আসল কথা হলো আগেই  এনার্কিস্টগন আগামীদিনের সমাজ ব্যবস্থাকে খুব সহজ সরল ভাবে উপস্থাপন করতে চায় না । তারা মনে করেন সমাজের গতিপ্রকৃতি সরল ভাবে সব সময় এগিয়ে যায় না । অনেক ক্ষেত্রেই তা একেবেকে সর্পিল গতিতে এগিয়ে  চলে । মানব সমাজের সমস্যা যেমন বৈচিত্রময় তেমন তার সমাধান করা ও সহজ পন্থায় সকল সময় সম্ভব হয় না। তাই তেমনি ব্যাক্তি বিশেষের চাহিদা ও সামাজিক পরিস্থিতিকে ও মৌলিক ভাবে বিবেচনায় নিতে হয়।

প্রতিদিনের সংগ্রামঃ

সংগঠন, কৌশল এবং প্রতিদিনের কাজ-

রাস্ট্রীয় পুঁজিবাদের বিরুদ্বে দ্রুত সাফল্য অর্জনের জন্য এনার্কিস্টগন ট্রেড ইউনিয়ন সমূহকে সু সংগঠিত করেন। তাঁরা এতে শিল্প শ্রমিক ও কৃষক সমাজকে সম্পৃক্ত করে থাকেন। বিপ্লবী ট্রেড ইউনিয়ন সমূহে কেবল সাময়িক পরিবর্তনের জন্য কাজ করবে না বরং তাঁরা একটি ভবিষ্যৎ সুন্দর সমাজ গড়ে  তুলার জন্য কাজ করে যাবে ।

বিভিন্ন শিল্প প্রতিস্টানের ট্রেড ইউনিয়নের অংশগ্রহনে ফেডারেশনের মাধ্যমে ফেডারেল কাউন্সিল গড়ে উঠবে। সমগ্র দেশের সকল ফেডারেশন মিলে কনফেডারেশন অব লেবার  গড়ে তোলা হবে। সকল পুঁজিবাদী প্রতিস্টানিক কাঠামোর বিপরিতে গড়ে তোলা হবে সাম্য ও স্বাধীকারের জন্য নয়া সংস্থা ।

যেহতু লেবার অব কনফেডারেশন হলো নতুন সমাজের জন্য একটি বিশেষ সংস্থা, যা আগামী দিনের জন্য সংস্থা ও ব্যাক্তির স্বাধীকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে- এবং সংস্থা সমূহের জন্য মহা সমিতি গড়ে তোলবে।

সামগ্রীক ভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লড়াই সংগ্রামকে নিজেদের কর্ম হিসাবে গ্রহন করবে। এনার্কিস্টগন নিজেদের সংস্থার বিশ্লেষণ করে আদর্শগত বাস্তবায়ন কৌশল ঠিক করবেন ।

এনার্কিস্টগন নিজেদের প্রচারনা মূলক কর্মকান্ডে স্থানীয় সংস্থা গুলোকে সম্পৃক্ত করবেন। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের জনগণকে আদর্শের আলোকে জীবন যাপনে অভ্যস্থ করে গড়ে তোলার জন্য সংস্থা ভিত্তিক প্রচারনার সবিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এমন কি রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থকদের চিন্তা চেতনার পরিবর্তনের জন্য ও প্রচারনা মূলক কাজ অতি গুরুত্বপূর্ন কাজ।

এই ভাবে নিরবিচ্ছিন প্রক্রিয়ায় শ্রেনী সংগ্রাম পরিচালিত হবে । শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ ও কৃষক শ্রেনী লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। ফলে মানুষের মাঝে শ্রমিক শ্রেনীর স্বার্থে সামাজিক বিপ্লবের ঐতিহাসিক অনিবার্যতা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। একেই সময়ে প্রতিটি ব্যাক্তি ও পরিবার নিত্য দিনের কাজ কর্মে সাম্যবাদি আদর্শের চর্চা দেখতে পাবেন। তবে, সেই ‘চর্চার নামে প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব নয়” বা রাস্ট্রবাদি সমাজবাদ ও নয়। মানুষ দেখতে পাবে যে, সামাজিক বিপ্লবের ভেতর দিয়ে মানব মুক্তির এক মহাদিশা।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক ঐক্যের ভেতর দিয়ে সামাজিক বিপ্লব তরান্বিত হবে- বুর্জোয়া ভাবধারার অবসান হবে মানুষ সংকির্ন জাতীয়তাবাদি চিন্তার বদলে বিশ্ব মানবতার ভাবাধারায় উদ্ভাসিত হবে ।

এনার্কিস্টগন তাদের বিপ্লবী কার্যক্রম কোন ভাবেই কেবল ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে সীমাবদ্ব  করে রাখবে না, তাঁরা সকল বিদ্যালয়, সমবায় সমিতি, গ্রামীন ও শহরের প্রাশাসন সমূহকে তাদের বিপ্লবী কর্মে সম্পৃক্ত করবে। এনার্কিস্টগন শোষিত শ্রেনীর লোকদের সাথে একাকার হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন। প্রতিদিনকার সকল সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবেন।

এনার্কিস্টগন সকল প্রকার পার্লাম্যান্টারী কার্যক্রম বর্জন করবেন। তাদের কর্মের কৌশল হলো, ডাইরেক্ট একশন, গন বিক্ষোভ, ধর্মঘট, অসহযোগীতা, বর্জন, সাবোট্যাজ, এবং সরাসরি প্রভাব ফেলে এমন সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।