এ কে এম শিহাব অনূদিত গ্রেগরী পেট্রোভিচ ম্যাক্সিমফ প্রণীত এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম পুস্তকের ধারাবাহিক- ৩

এ কে এম শিহাব অনূদিত গ্রেগরী পেট্রোভিচ ম্যাক্সিমফ প্রণীত এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম পুস্তকের ধারাবাহিক- ৩

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ মৌলিক শিল্পসমূহঃ

১। কৃষি

কৃষি হল মৌলিক শিল্পের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ন শাখা, এটা শুধুমাত্র এইজন্য নয় যে এই কর্মে বেশী সংখ্যক মানুষ জড়িত। এটার বড় কারন হলো এই শাখাটি জাতীয় জীবনে বিশাল অবদান রাখে ।

সাম্যবাদের ভাগ্য ও অনেকাংশেই কৃষির উপর নির্ভর করে । এই খাতটি সাম্যবাদি ধারায় রূপান্তর করতে সময় যেমন বেশী আগে তা আবার জটিল ও বটে। এই খাতে পুঁজিবাদের চেতনা প্রবল, এই খানে প্রযুক্তির ব্যবহার ও শ্রমিকদের সামাজিকিকরনের মধ্যে তা স্পস্টভেবে দৃশ্যমান । সেই কারনেই কৃষি উৎপাদন খাতটি সাংগঠনিক ও প্রকৌশলগত দিক থেকে পশ্চাৎ পদ হয়ে আছে । তাই প্রায় দশ মিলিয়ন কৃষকের সমাহার আজো সংগঠিত হতে পারেনি, ব্যাক্তি কেন্দ্রীক, ক্ষুদ্র মালিকানার স্থরে রয়ে গেছেন,  অন্যদিকে প্রকৌশলগত পশ্চাৎ পদতার কারনে সাম্যবাদের পথে এদেরকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ও বেশ কঠিন কাজ । তাই কঠিন বাস্তবতা হলো তাদের জমির মালিকানার বদল, প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার, উন্নত চাষাবাদ, প্রবর্তন করার জন্য অধিকতর সময় ব্যায় করতে হবে ।

পুঁজিবাদ, ব্যবসায়ীক ভাবে ব্যাক্তিদেরকে একত্রিত করে, তাদের শ্রমকে সামাজিকি করন করে যাচ্ছে, যা সাম্যবাদি সমাজ বিনির্মানের জন্য এক ধরনের প্রস্তুতীর কাজ ও সাম্যবাদি উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলার জন্য সহায়ক । এইটি যান্ত্রিকতায় পূর্ন সাম্যবাদি সংস্থা ও মালিকানার একটি ধরন – এই কারখানা গুলো আগামীদিনের জন্য মুক্ত উৎপাদন ব্যবস্থার প্রাথামিক পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা যায়। প্রথামিক পর্যায়ের শিল্প উৎপাদনকারী প্রতিস্টান সমূহ সাম্যবাদি প্রকৃতির এবং সিন্ডিক্যালিজমের জন্য পুঁজিবাদ ও রাস্ট্রের বিপরীতে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির পথে এগিয়ে যাবার পথ  তৈরী করছে। সামাজিক শ্রম মালিকানা সিন্ডিক্যালিস্ট সাম্যবাদের উদাহরন হিসাবে পরিগনিত হয়।

এই ধরনের পরিস্থিতি কৃষি ব্যবস্থা থেকে অনেক পৃথক। এই খাতে পুঁজিবাদের সামাজিকি করনের প্রক্রিয়াটি একেবারেই অনুজিবাদেরেই খাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষকের সংখ্যাই অধিক, ব্যাক্তিগত আলিকানা, ব্যাক্তিগত শ্রমের বিনিয়োগ ই বেশী চোখে পড়ে। এই গুরুত্বপূর্ন দিক গুলো পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে সাম্যবাদী সমাজে রূপান্তরিত  হওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হিসাবে কাজ করে ।

শিল্প কারখানায় শ্রমিক শ্রেনীর লোকদেরকে একত্রিত করে দেয়। যা যৌথ মালিকানা গড়ে তুলার জন্য উপযোগী। তবে কৃষি ফার্মের ক্ষেত্রে ও যৌথ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে যৌথ মালিকানা ও গড়ে তুলা সম্ভব ।

কৃষি খাতে যৌথমালিকানা নেই, তবে, তা শ্রমের যৌথতাকে স্পষ্ট করে তুলতে পারে, মিলিয়ন মিলিয়ন কৃষি ক্ষেত্রের ব্যবস্থাপনা প্রাচীন নিয়মেই চলছে। তা ও নানা ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । তা এখনো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্বি করা যায়নি। তবে যৌথ মালিকানা শ্রমের যৌথতা নিশ্চিত করতে পারবে । যা নিবিঢ়ভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে অনেক শক্তিশালী করতে পারবে, উৎপাদন বাড়িয়ে কমিউনের সকল মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। সাথে সাথে প্রাচীন উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে নয়া সামাজিক কাঠামোর উদ্ভব ঘটাবে। তবে এই কর্মকান্ড কোন ভাবেই ডিক্রী জারি করে সম্ভব নয় তা করতে হবে ক্রমান্বয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে। আর সেই প্রক্রিয়াটি সম্পাদন রাতারাতি করা সম্ভব নয় তার জন্য দরকার কিছু পদিক্ষেপ গ্রহন করা ।

কৃষিকে সামাজিকিকরন করা দুইটি উপাদানের উপর নির্ভরশীলঃ

১। উৎপাদনের প্রধান মাধ্যমকে সামাজিকি করন। যেমন- জমি ।

২। শ্রমের সামাজিকি করন ।

ভূমির সামাজিকিকরন হলো একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ এবং এই পদক্ষেপ সফল হয় বাধ্যতামূলক আইনের মাধ্যমে; শ্রম শক্তিকে সামজিকিকরন হলো একটি প্রক্রিয়া মাত্র, এই ধরনের কার্যক্রমের জন্য যে সামাজিক প্রস্তুতি দরকার এখনো সম্পন্ন হয় নাই। তবে অবশ্যই সামাজিক ভাবে যৌথতা বিষয়ে সচেতনতা সৃজনের মাধ্যমে মালিকানার ধারনা পাল্টাতে হবে এবং সমাজবাদের জন্য অনুকুল পরিবেশ তৈরী করতে হবে ।

কৃষির যৌথতা, একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয় তা কোন ঘটনা চক্রে হবার কথা নয় । তা হতে হবে পরিকল্পিত ও জন অংশ গ্রহনের ভেতর দিয়ে । আর সেই কারনেই এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম যে কার্যক্রম গ্রহন করেছে তাতে দুইটি বিষয় যুক্ত রাখতে হবে বলে জোর দিচ্ছেঃ জমির সামাজিকিকরন ও শ্রমের সামাজিকি করন ।

১। জমির সামাজিকি করন

১। জমির সকল প্রকার মালিকানার অবসান করতে হবে – ব্যাক্তিগত, দলীয়, সমবায়, সামরাদায়িক, পৌরসভা বা রাস্ট্রের যাই হোক না কেন তা জনগণের সম্পত্তি হিসাবে স্বীকৃত হবে ।

২। জমিকে সামাজিকি করনের ফলে জমি পন্য হিসাবে বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হবে; জমি কেহ ক্রয় করতে, বিক্রয় করতে, ভাড়া দিতে পারবে না । সকলেই জমিতে ব্যাক্তিগত ভাবে বা যৌথ ভাবে কাজে নিয়োজিত হবেন।

৩। প্রতিটি ব্যাক্তি জমিতে সমান অধিকার  লাভ করবেন, সমভাবে নিজের স্বাধীন শ্রম বিনিয়োগের জন্য অধিকার পাবেন।

৪। জমির প্রাপ্যতা সাপেক্ষে প্রত্যেক্যে  সমপরিমাণ জমি ব্যবহারের জন্য প্রদান করা হবে। এই বিষয়ে সিদ্বান্ত নিবে জাতীয়  কৃষক কংগ্রেস। যা গঠিত হবে সাধারন শ্রমিক কনফেডারেশনের অংশ হিসাবে ।

৫। প্রতিটি শিল্প কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়ন সমূহ তা পরিচালনার দায়িত্ব নিবে, অন্য দিকে জমির সামগ্রীক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিবে কৃষক সমতি।

২। শ্রমের সামাজিকি করনঃ

১। ভূমির সামাজিকি করন হলো কৃষি শ্রম সামাজিকিকরনের প্রাথমিক শর্ত । যে ক্ষেত্রে কেবল শ্রম ও মালিকানা সামাজিকিকরন করা হয়, সেই ক্ষেত্রে উৎপাদনের হার কমে যেতে পারে। তাই সত্যিকার সাম্যবাদের জন্য সামগ্রীক ভাবে সব কিছুই সামাজিকিকরনের জন্য কাজ করতে হবে ।

২। যে সমাজটি বিপ্লবের ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসে, তা ক্রমে উৎপাদন ব্যবস্থাকে সামাজিকি করন করা হয়, এই সমাজের  কৃষি ব্যবস্থাকে ও সমান গুরুত্ব দিয়ে সাম্যবাদের আদর্শে রূপায়ন করার কাজ চলতে থাকে। গ্রামীন ও শহরের জনসংখ্যার মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করে একটি ভারসাম্য পূর্ন পরিবেশ গড়ে হয়। ক্রমে পুরাতন ও প্রচলিত ব্যবস্থা ও প্রতিস্টানের বিলুপ সাধন করা হয় ।

৩। সামাজিকিকরন কৃত কৃষিব্যবস্থা সাম্যবাদি কৃষি ব্যবস্থার সাথে সম্পূর্ন ভাবে একাকার হয়ে যেতে পারে। বিপ্লবের সূচনা থেকেই কৃষি সংগঠন সমূহ সাম্যবাদি কার্যক্রমের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হিসাবে পরিগনিত হবে ।

কৃষিতে সাম্যবাদের প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজমের দৃষ্টি ভঙ্গী হলো ছোট কৃষকদেরকে বিলুপ্ত না করা বা কেবল বড় বড় কৃষি ফার্ম স্থাপন না করা । তারা মনে করে মানুষের উপর বাধ্যতা মূলক শ্রম চাপিয়ে দেয়া প্রতিক্রিয়াশীলতার নামান্তর। তাই, সকল শ্রম শক্তিকে এক একটি ক্ষদ্র ইউনিট হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে স্বেচ্ছাকৃত ও স্বাধীন বিষয় হিসাবে বিবেচনা করে সাম্যবাদি ধারায় প্রবাহিত করার প্রয়াস চালায়।

এভাবেই অর্থনৈতিক ইউনিট গুলো রূপান্তরিত হবেঃ ক) সমবায় ভিত্তিতে সচেতন ভাবে কৃষি সংশ্লিষ্ট জনগণকে ক্রমে ব্যাক্তিগত সম্পত্তির ধারনা থেকে বেড় করে যৌথ মালিকানার ধারনায় উন্নিত করা হবে । খ) কৃষি খামারের যৌথ করনের পাশাপাশি  উৎপাদনকারী কল কারখানা সমূহকে এবং অন্যান্য সামগ্রীক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সাম্যবাদি ধারায় নিয়ে আসতে হবে ।

৪) সুদক্ষ ভাবে কৃষি উৎপাদন পরিচালনার জন্য কৃষি খামার গুলোকে খুব বেশী বড় আকারে তৈরী করা হবে না । সাধারন ভাবে সেই সকল খামারকে  দশ জন কৃষক দিয়ে গড়ে তুলা হবে। যারা পাশা পাশি অবস্থানে আছেন তাদেরকেই প্রাধান্য দেয়া হবে । তবে স্থান বিশেষে এর সংখ্যা  কম বেশী হতে পারে । তবে সকলের পরিবার ও পারিবারিক কার্যক্রমকে একত্রিত করা হবে না । পরিবার গুলো পৃথকই থাকবে।

৫) কৃষি কার্যক্রমের আওতায় অন্তর্বত্তীকালিন সময়ে তিন ধরনের সংগঠন থাকবেঃ  ক) স্বতন্ত্র  খ) সমবায় এবং গ) সাম্যবাদি । স্বতন্ত্র ধারার সংগঠন সমূহ প্রথমিক ভাবে তেমন উল্লেখ যোগ্য ভাবে গড়ে তুলা হবে না ।

৬) ব্যাক্তিগত পর্যায়ের  অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে খুবই দ্রুত ও সফল ভাবে রূপান্তরের কাজ করা হবে । এছাড়া  অন্যান্য ভোগ্যপন্য-উৎপাদন কার খানা গুলোকে ও ব্যাক্তিগত অবস্থা থেকে যৌথ ব্যবস্থার দিকে যৌক্তিক সময় ও পদ্বতী অনুসরন করে অর্থনীতিকে সামাজিকি করনের মাধ্যে সাম্যবাদ কায়েম করা হবে । সেই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুই ধরনের পদ্বতী অনুসরন করা হবে। ক) আক্রমনাত্মক এবং খ) রক্ষণাত্মক ।

১। আক্রমনাত্মক ব্যবস্থায় কৃষি শ্রমিকদেরকে সরাসরি কাজে নিয়োগ দেয়া হবে এতে থাকবেঃ

১। যারা ইতিমধ্যেই কৃষি কাজে জড়িত আছেন তাদেরকে সেই কাজেই রাখা হবে, তবে তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্বির পদক্ষেপ নেয়া হবে। একেই ধারায় সামিজিকিকরনের কাজ হবে কল কারখানায় ।

২। যে সকল ব্যবসা বানিজ্য কৃষি পন্য নিয়ে কাজ করছে তাদেরকে সাম্যবাদি ধারায় রূপান্তরিত করা হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে ও একেই পদ্বতী অনুসরন করা হবে ।

৩। কৃষি ভিত্তিক শিল্প সমূহের সামাজিকি করন ও সমবায়ী করনের নিবিঢ় ভাবে সম্পাদন করার জন্য যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা হবে। যেমন- চিনি, টেক্সটাইল, সিগারেট, এবং নানা প্রকার ফলের জুস ইত্যাদিকে সাধারন ভাবে সাম্যবাদি ধারায় রূপান্তর করা হবে ।

৪। বড় আকারের আটা-ময়দার কল এবং সিরামিক্সের কারখানা ও সাধারন প্রক্রিয়ায় সামিজিকি করন করা হবে।

৫। চাষাবাদ যোগ্য জমির উন্নত চাষাবাদের জন্য সমিতি উদ্যোগ নিবে।

৬। পুর্নাংগ সাম্যবাদি সমাজ গড়ে তুলার জন্য কৃষিতে পুর্বিন্যাস সাধন করা হবে ।

৭। কৃষিকে শিল্প ভিত্তিক খাত হিসাবে রূপান্তর করা । কৃষি পন্যকে কারখানার সাথে সমন্বয় সাধন করা। উপযুক্ত কৃষির জন্য উপযুক্ত এলাকা নির্বাচন এবং উপযুক্ত কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন বৃদ্বি করা । যেমন- চিনি, ফলমূল, শাক সবজি, মদ, সিগারেট, বিয়ার ইত্যাদি। কৃষি ভিত্তিক কল কারখানা ও কামার গড়ে তোলে সাংগঠনিক পদ্বতী অনুসরন করে উৎপাদন ব্যবস্থায় নবযুগের সূচনা করবে । তাই বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করা হবেঃ

১। সাম্যবাদি শিল্পের উদ্যোগতাগন তাদের নিকটবর্তী ব্যাক্তিগত উদ্যোগ সমূহকে সহযোগিতা করার প্রায়স চালাবেন। কৃষি ভিত্তিক সমাবায় গুলোকে শক্তিশালী করে রাশিয়ার ক্রিমিয়ারী সমাবায় সমূহের মত করে গড়ে তুলা হবে ।

২। কম্পোজিট কৃষি-শিল্প গুলোকে পরস্পরের সাথে একটি সংযোগ সৃজন করতে হবে। যেন কার্মীগন মৌসুম ভিত্তিক কাজ করতে পারেন। যখন কৃষিতে কাজ কম থাকবে তখন তারা শিল্পে সময় দিবে এবং যখন কৃষি শিল্পে বেশী কাজ থাকবে তখন শিল্প শ্রমিকগন সেখানে গিয়ে প্রয়োজন অনুসারে সময় দিয়ে কাজ করবেন ।

৩। পারস্পরিক  সহযগিতা মূলক চেতনায় লালিত শ্রমিক কর্মীগন  নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন। সেই সহযোগিতা অনেক সময় কয়েক দিন, কয়েক ঘন্টার জন্য কর্ম বিনিময়ের ব্যবস্থা রাখা হবে । যাতে খামার ও শিল্পের মধ্যে একটি সংযোগ দৃড়ভাবে গড়ে উঠে ।

২। সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাগ্রহন করা । যেমন – মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যাক্তিগত ফার্মের সাম্যবাদি  অর্থ ব্যবস্থায় অব্যস্থ করে গড়ে তুলার লক্ষ্যে নিবিড় ভাবে কাজ করে সমবায় বিত্তিক ধারায় নিয়ে এসে ক্রমে সাম্যবাদি ব্যবস্থায় রূপান্তর করতে হবে ।

আত্মরক্ষামূলক পদ্বতী সমূহ সকল সময়েই পরিবর্তনকালিন কিছু সময়কে কাজে লাগায়, সেই সময়ে প্রতিটি প্রতিস্টানকে নতুন ভাবে ঢেলে সাজানোর জন্য বা কিছু প্রতিস্টানকে বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে থাকে। সেই গুলোকে সত্যিকার স্বাধীন ভোক্তা উৎপাদকে রূপান্তর করে দেয় । তবে তা কোন ভাবেই পুঁজিবাদের আওতায় পরিচালিত সমবায়ের মত নয়। সকল পরিবর্তনের লক্ষ্যই হলো সত্যিকার সাম্যবাদের দিকে চালিত করা । স্থানীয় উদ্যোগে যৌথতাকে উৎসাহিত করা ও ফেডারেটিভ সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করা ।

অন্তবর্তী কালিন সময়ে সমবায় ভিত্তিক কৃষকদের কাজ হবে তাদের চার পার্শের ব্যাক্তিগত খামারিদেরকে জাতীয় অর্থনীতির মূল ধারায় সম্পৃক্ত করা। তাদেরকে ক্রমে প্রকৃতিক জীবনের সাথে অভ্যস্থ করে যৌথ খামারের রীতিনীতির সাথে সম্পৃক্ত করে গড়ে তুলা । শোষণ মুক্ত পরিবেশে বিকশিত হবার পরিবেশ  তৈরী  করে দেয়া ।

যৌথ খামারের মৌলিক ও প্রাথমিক ভিত্তি হবে গ্রামীন কৃষি সমিতি, তারা উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় সহ সকল কর্ম সম্পাদন করবেন। প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি সহ সকল আধুনিক উপকরনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ও তাদের উপরই অর্পিত হবে। গ্রামীন সমিতির ফোরাম সমূহ সারাদেশের কউন্সিলের সাথে যুক্ত হবেন তাদের মাধ্যমেই সামগ্রীক ব্যবস্থাপনার জন্য পরিচালনা পরিষদ গড়ে উঠবে। এই পরিষদ সাম্যবাদি সমাজের বিনির্মানে নেতৃত্ব দিবেন। যাদের কাজ হবে  সকল মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধিনতা নিশ্চত করা ।

কৃষি ঋন ও পন্য সরবরাহের জন্য কৃষি ব্যাংক স্থাপন করবে সাম্যবাদি অর্থনীতি, তাদের কাজ হবে কৃষি সংস্থা সমূহকে সহায়তা করা। এই ব্যাংক সমূহ কৃষি ঋন প্রদানের পাশা পাশি পন্য আদান প্রদান করবেন স্থানীয়, আঞ্চলিক, দেশ ও বিদেশে। যাতে সামগ্রীক ভাবে কোথাও কিছু অভাব অনুভূত না হয় ।

যেহেতু গ্রামীন সমিতি গুলো মৌলিক ফোরামের ভেতর থেকেই বিকশিত হবে, সেহেতু, তারাই জমির বন্ঠন করার কাজ সহ পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রায়স চালাবেন । প্রত্যেকের কার্যক্রম নির্ধারন ও সীমা ঠিক করে দিবেন। স্ব স্ব ক্ষেত্রে সকলেই যেন মুক্ত ভাবে সৃজনশীলতার সাথে কাজ করতে পারেন ।

পশু পালনঃ

অন্যান্য চাষাবাদের মত গরু ছাগল পালন করা ও প্রতিটি দেশের জন্য  একটি গুরুত্বপূর্ন কাজ, সারা দুনিয়ায় এমনটি ব্যাপক ভাবেই হয়ে থাকে । কোন সমাজ বা দেশ যখন বিপ্লব সাধন করে তখন এই জাতীয় কাজের গুরুত্ব আরও অনেক বেড়ে যায়। কৃষি কাজের সাথে পশু পালন করার কাজটি কেবল যুক্ত করলেই হবে না । তার আরও বিকাশের জন্য অধুনিক পথ ও পন্থা খোজে দেখতে হবে । অধিক হারে উৎপাদন করে মানুষের চাহিদা মেটানো একটি গুরুত্বপূর্ন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।

পশু পালনের যে খামার গড়ে তুলা হবে তা যেহেতু কৃষি খামারের সাথেই যুক্ত থাকবে তাই এটাকে ও প্রথমিক স্তরে বানিজ্যিক ভাবে উন্নয়ন করা হবে। এই খামারের মধ্যে থাকবে মাংশ, দুধ, মুরগী ইত্যাদি। এইসকল খামার ও সামাজিকি করন করা হবে ।

সামগ্রীক কৃষি ব্যবস্থার সামাজিকি করনের আগে, পুশুপালন প্রকল্প সমূহকে একটি পদ্বতীর আওতায় নিয়ে  আসতে হবে, তাদের প্রজনন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সমবায় এবং শিল্প সমূহ পশু পালন ব্যবস্থাকে আরও শক্তি শালী করবে ।

গরুর প্রজনন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য তাকে কৃষি শিল্পের সাথে সমন্বয় করা হবে, শিল্প কারখানাকে যে প্রক্রিয়ায় সামাজিকিকরন করা হয়েছে তেমন পশু পালন পদ্বতীকে ও বিশেষ ভাবে গড়ে তুলা হবে । এখানে গরুর উৎপাদন, মোটাতাজাকরন, জবাইকরন ঘর নির্মান, মাংশ কাটা ও প্যাকেটিং করা, এবং চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করা ইত্যাদি কাজ খুবই দক্ষতার সাথে সম্পাদন করা হবে ।

তবে আদিবাসি যারা পূর্ব থেকে গরু ছাগল ভেড়া সহ নানা প্রকারের জীব জন্তু পালন করে এসেছে তাদেরকে চাপ দিয়ে এই আধুনিক পদ্বতীতে আনা হবে না । তাদেরকে তাদের মতই কাজ করতে দেয়া হবে । চিন্তা চেতনায় যখন তারা আধুনিক পদ্বতী গ্রহনের স্তরে উন্নিত হবে তখনই কেবল তাদেরকে সামাজিকিকরনের মূল ধারায় যুক্ত হবে । তবে তাদের মধ্যে সমবায় পদ্বতী ও সাম্যবাদি অর্থনীতির সুফল সমূহ তোলে ধরা হবে । কৃষি ব্যাংক সমূহ তাদেরকে অর্থ ও পন্য সহায়তা দিয়ে যাবে। তাদের এলাকা সমূহে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য রাস্তা ঘাট নির্মান করে দেয়া হবে।যাতে তারা সহজেই শহর নগরের সাথে যুক্ত হয়ে নিজেদের উৎপাদিত পন্য ক্রয়বিক্রয় করতে পারেন। এমন কি দূর দূরান্ত থেকে যারা আসবেন তাদের জন্য পথে থাকা-খাওয়ার সু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

গবাদি পশুপালন ও শাক-সব্জিবাগানঃ

যেহেতু,  শাক-সব্জির বাগান কৃষি কাজের থেকে বিচ্ছিন কোন খাত নয়, তাই যে সকল সবজি বাগান বানিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে সেই গুলিই সামাজিকি করন করা হবে । সামাজিকি কৃত খামার গুলিকে ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো হবে। সকল প্রকার বৈজ্ঞানিক কলা কৌশল ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্বি করা হবে । যাতে সকলের চাহিদা মেটানো যায়।

বনজ সম্পদঃ

বনজ সম্পদ ও একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ । যে সকল খালি জমি আছে তাতে ব্যাপক ভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্বতীতে বনায়ন করা হবে । এই বনে উৎপাদিত সকল সম্পদ সকলের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে ।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় কাস্ট অর্থনীতিতে বরাবরই লুট পাট চলে এসেছে, ফলে নানা দেশের বন বিভাগ বিনষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমাদের ভূমির মাটি ও আবহাওয়া বা জলবায়ুর সুরক্ষার জন্য বনজ সম্পদের বিকাশ ও রক্ষণ করা অতিব জরুরী বিষয়। বনজ সম্পদ কেবল নির্মান শিল্প বা জ্বালানীর উপকরন নয় বরং অনেক উৎপাদক কারখানার গুরুত্বপূর্ন উপাদান সরবরাহ কারী । এটা কেবল জীব জন্তু আর পাখীর আধার নয় বরং তা থেকে নদি নালার উৎপত্তি হয় এবং মাটির আদ্রতা রক্ষায় বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে । যা কৃষি কাজের জন্য অতিব জরুরী বিষয় । তাই সামগ্রীক কল্যানার্থে বনজ সম্পদের সুরক্ষা দরকার। বনজ সম্পদকে অবশ্যই সামাজিকি করনের আওতায় আনা হবে। সকল প্রকার ব্যাক্তি ও রাষ্ট্রীয় মালিকানার বসান ঘটাতে হবে। এটাকে করা হবে সামাজিকিকরনের মাধ্যমে একটি  অবানিজ্যিক উদ্যোগঃ এই সম্পদ কেহই বিক্রি বা ক্রয় করতে বা ভাড়া দিতে পারবে না ।

কৃষি ভিত্তিক জেলা গুলোতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বন ভূমি গড়ে তুলা হবে, তা কোন ভাবেই সামাজিক শিল্প গুলোর দ্বারা নষ্ট করার সুযোগ দেয়া হবে না, সেই বন ভূমি গুলো কৃষক সমতির নিয়ন্ত্রনে দিয়ে দেয়া হবে । দরকার হলে জ্বালানী না নির্মান কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে । অন্যান্য বন ভূমি গুলো সিন্ডিক্যালিস্ট পদ্বতীতে সাম্যবাদি অর্থনীতির আওতায় সামগ্রীক ব্যবস্থাপনার জন্য ফেডারেশনের নিকট ন্যস্ত হবে ।

যদি কোন অঞ্চলে কাঠের অভাব হয় তবে সামাজিক বনজ সম্পদ থেকে সমাবায় ও ব্যাংকের মাধ্যমে তা পুরনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।

বনজ সম্পদ সামাজিকি করনের ফলে বনায়ন ও কাঠ শিল্প ব্যাপক ভাবে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করে তুলা হবে। যে সকল কাঠ শিল্প গৃহ সজ্জার কাজে জড়িত তাদেরকে সমন্বিত করে সমাবায় ভুক্ত করা হবে। ক্রমে তাদেরকে সাম্যবাদি ধারায় যুক্ত করে নেয়া হবে । কাঠ শিল্পলের সাথে সম্পর্কিত বন ভূমি কৃষি খামার ও পশুখামার  ইত্যাদির মধ্যে একটি চমৎকার সমন্বয় সাধন করা হবে । যারাএই কাজে উৎসাহী ও দক্ষ তাদেরকে  বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়ে তাদের শ্রমের সত্যিকার মর্যাদা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে ।

মাছের চাষ ও শিকারঃ

ক) মাছের চাষ

সাম্যবাদি অর্থনীতিতে সকল জলাশয় ও জসলজ সম্পদ জাতীয় করন করা হবে । মাছের চাষ ও ক্রয় বিক্রয় এই প্রক্রিয়ায় সম্পাদন করা হবে । ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাষীদেরকে  প্রথমে সমবায়ের আওতায় আনা হবে । পোনা উৎপাদন ও মাছ ধরার জন্য বিশেষ দল কাজ করবেন। মাছের নানা প্রজাতির সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত স্থান সমূহে মাছের জন্য অভয়ারণ্য স্থাপন করা হবে।

খ) শিকার

সাম্যবাদি বনাঞ্চলে শিকারের ব্যবস্থা ও রাখা হবে। সমবায় সমিতি সমূহ সেই ব্যবস্থা করবে। সেই ব্যবস্থা করার জন্য ক্রয় ও বিক্রয় কমিটি এবং ব্যাংক সমূহ নগদ অর্থ ও পন্য বা উপকরন দিয়ে সহায়তা দান করবে । আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিশেষ ভাবে  শিকারের অংশ নিতে পারবে । নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় বনাঞ্চল ও শিকারের স্থান সমূহ সংরক্ষন করা হবে ।

খনিজ শিল্পঃ

উৎপাদন শিল্পের মতো খনিজ সম্পদ নিষ্কাশন সম্পর্কিত শিল্পের সেই শাখাগুলি পুঁজিবাদী বিকাশের আওতায় পড়েছে, যা সামাজিকীকরণের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং সাধারণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় তাদের গুরুত্ব সত্যিই বিশাল যে তাদের সামাজিকীকরণ অনুজ্ঞাসূচক. সেই কারণে সাম্যবাদি সমাজকে সামাজিক বিপ্লবের প্রথম থেকেই খনিজ সম্পদগুলিকে সম্পূর্ণ সামাজিকীকরণ থেকে ঘোষণা করতে হবে।

১।  দেশের সকল বৃহৎ শিল্প কারখানা গুলোকে সাম্যবাদি অর্থনীতির স্বার্থে সিন্ডিক্যালাইজেশন করে নিতে হবে।

২। সাম্যবাদি অর্থনীতির অনুকূলে সকল প্রকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুটির শিল্পকে সমবায়ের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

৩। খনির শিল্পের বিভিন্ন শাখার শিল্পায়ন, যেমন সমন্বিত শিল্পের ভিত্তিতে যৌথ ইউনিটগুলির  মাধ্যমে রাসায়নিক, ধাতব ও অন্যান্য প্রক্রিয়াকরণের শিল্পের শাখার সাথে তাদের একীকরণ করতে হবে।

৪। শিল্প সম্পর্কিত উৎপাদন শাখার শিল্পায়িত ও অ-শিল্পিত উদ্যোগের গ্রামীণীকরণ, যেমন যৌগিকভাবে কৃষির সাথে তাদের ঐক্যবদ্ধতা ক্রমশ একীকরণের নীতির ভিত্তিতে আশেপাশের কৃষির জনসংখ্যা ও শ্রম সংগঠিত করে তাদের অর্থনৈতিক কক্ষপথে আঁকড়ে ধরে রাখার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

৫। প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের কারখানার মতোই খনিজ সম্পদ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় বিশেষ বিবেচনায় রাখা হবে। সমিতির  উত্পাদন কমিটির দ্বারা শিল্প কারখানা পরিচালিত হবে।


Share Tweet Send
0 Comments
Loading...
You've successfully subscribed to Bangladesh ASF
Great! Next, complete checkout for full access to Bangladesh ASF
Welcome back! You've successfully signed in
Success! Your account is fully activated, you now have access to all content.