চলতি বছরের ১৩ জুন মজুরি বোর্ড চা শ্রমিকদের মজুরি ১১৭ থেকে ১২০ টাকা নির্ধারণ করে; এরপর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন চা শ্রমিকরা।

চা চাষের ইতিহাস ১৬৭ বছর হলেও চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি এখন পর্যন্ত ১৬৭ টাকাও হয়নি। এরই মধ্যে দীর্ঘ ১১ বছর পর, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড চা শ্রমিকদের জন্য খসড়া মজুরির সুপারিশকে চূড়ান্ত করেছে। তবে চা শ্রমিকরা এবং তাদের সংগঠনগুলো এই খসড়ার প্রতিবাদ করে বলেছেন যে, চা বাগান শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ডের দ্বারা নির্ধারিত দৈনিক মজুরি গ্রহণযোগ্য নয়। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড চা শ্রমিকদের সুবিধাগুলো বাড়ানোর কথা বললেও এই গেজেটে তা হ্রাস করা হয়েছে।

চা-বাগান শিল্পের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি হারের খসড়া সুপারিশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বি এ এস এফ  এবং  বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। তাদের দাবি,  '২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে আমরা যেখানে ১১৭-১২০ টাকা মজুরি পাচ্ছি সেখানে সেই মজুরি পাওয়ার আড়াই বছর পর মজুরি বোর্ড আবার ১১৭-১২০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়ে যে খসড়া প্রকাশ করেছে সেটা হাস্যকর এবং অগ্রহণযোগ্য'।

চলতি বছরের ১৩ জুন মজুরি বোর্ড চা শ্রমিকদের মজুরি ১১৭ থেকে ১২০ টাকা নির্ধারণ করে; এরপর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন চা শ্রমিকরা।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন জানায়, ২০১৯ সালের অক্টোবরে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। ৬ মাসের ভেতর এই বোর্ডের রিপোর্ট করার কথা থাকলেও করোনা বা বিভিন্ন কারণে তা করেনি তারা। বর্তমানে প্রায় আড়াই বছর পর চলতি মাসের ১৩ তারিখ মজুরি বোর্ড তাদের খসড়া প্রকাশ করেছে যেখানে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১১৭ থেকে ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছে। অথচ এই খসড়া প্রকাশের আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে চা শ্রমিকরা ১১৭ থেকে ১২০ টাকা পাচ্ছে । তাদের দাবি ছিল ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি।

২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর চা-বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা-সংসদের (বিটিএ) সঙ্গে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের চুক্তি সম্পাদন হয় তার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১১৭ থেকে ১২০ টাকা দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। তবে এই চুক্তির মেয়াদও প্রায় ৬ মাস অতিক্রম করেছে। প্রতি দুই বছরের জন্য এই চুক্তি মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে হয়ে থাকে। সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর।  একে তো চুক্তি মেয়াদ অতিক্রম করে ৬ মাস চলে গেছে, তার ওপর যে মজুরি বোর্ডের প্রতি তাদের প্রত্যাশা ছিল ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি, বছরে ২ মাসের বেতন বোনাস হিসেবে দেবে, সেই মজুরি বোর্ডের খসড়ায় বর্তমান মজুরিকেই আবার সুপারিশ করায় তারা চরম হতাশায় পড়েছেন।

এর আগে ২০১০ সালে মজুরি বোর্ড দৈনিক মজুরি ৪৮ টাকা নির্ধারণ করে। এরপর থেকে মালিকপক্ষের সাথে প্রতি দুইবছর পর পর শ্রমিকদের যে চুক্তি হয়ে থাকে তার প্রেক্ষিতে বর্তমানে মজুরি ৪৮ টাকা থেকে ১১৭-১২০ টাকা হয়েছে। ২০১০ সালের দীর্ঘ  ১১ বছর পর, 'চা-বাগান' শিল্প খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ২০২১ সালের ১৩ জুন একটি গেজেট আকারে খসড়া মজুরির সুপারিশ প্রকাশ করে তাতে বাড়েনি চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা।