চা–শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকার খসড়ায় আপত্তি

চা–শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকার খসড়ায় আপত্তি

চা–শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকার খসড়ায় আপত্তি

[ বাংলাদেশ এনার্কোসিন্ডিক্যালিস্ট ফেডারেশন- বিএ এস এফ সূদির্ঘ কাল থেকে চা প্রমিকদের ন্যায্য মজুরী আদায় ও অন্যান্য অধিকার নিয়ে কাজ করছে। বিএ এস এফ মনে করে চা প্রমিকদের দাবী দাওয়া মানবিক ভাবে সরকার ও চা বাগান মালিকদের বিবেচনা করা উচিৎ। দেশের অন্যান্য শ্রমিকগন যে হারে মজুরী পায় বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন চা শ্রমিকগন তা থেকে নানা ভাবে বঞ্চিত। তাঁদের সকল প্রকার বঞ্চনার অবসান হোক। সম্প্রতি চা শ্রমিকদের মজুরী পুনঃ নির্ধান করা হয়েছে। যা একেবারে সন্তোষজনক নয়। তাই চা শ্রমিক সংগঠন সমূহ তা প্রত্যাখ্যান করে চা শ্রমিকদের দাবী অনুসারে কমপক্ষে ৩০০ টাকা মজুরী পুনঃ নির্ধারনের জন্য দাবী উত্থাপন করেছে।]

বাগানভেদে স্থায়ী চা–শ্রমিকের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি হবে ১১৭-১২০ টাকা। তার বাইরে আবাসন, ভর্তুকি মূল্যে চাল বা আটা, বছরে দুটি উৎসব ভাতাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আর শিক্ষানবিশ শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১১০ টাকা।

নিম্নতম মজুরি বোর্ড চা–বাগানশিল্পের শ্রমিকদের জন্য খসড়া মজুরির এই সুপারিশ চলতি মাসে চূড়ান্ত করেছে। তবে এই বোর্ডে
চা–বাগানশিল্পের শ্রমিকপক্ষের অস্থায়ী প্রতিনিধি রাম ভজন কৈরী খসড়া সুপারিশে আপত্তি জানিয়ে তাতে স্বাক্ষর দানে বিরত থাকেন। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদসহ অন্য চার সদস্য খসড়ায় স্বাক্ষর করেছেন। বর্তমানে খসড়ার ওপর লিখিতভাবে আপত্তি বা সুপারিশ গ্রহণ করছে বোর্ড।

জানতে চাইলে রাম ভজন কৈরী গতকাল প্রথম আলোক বলেন, ‘দুই বছর অন্তর চা–বাগানমালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে মজুরি সমন্বয় করা হয়। সেই চুক্তির ভিত্তিতেই গত বছর বাগানভেদে ১১৭-১২০ টাকা দৈনিক মজুরি নির্ধারণ করা হয়। মজুরি বোর্ডে আমরা জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় মজুরি হিসাব করে দৈনিক ৩০০ টাকা করার দাবি করেছিলাম। অন্যদিকে বার্ষিক দুই উৎসবের প্রতিটিতে মূল মজুরির সমান ভাতা দাবি করেছিলাম। সেটিও মানা হয়নি।’

বিষয়টি নিয়ে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি তাহসীন আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

খসড়া সুপারিশ অনুযায়ী, এ শ্রেণি এবং ক্যাটাগরি-১ চা–বাগানের স্থায়ী ও সাময়িক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি হবে ১২০ টাকা। বি শ্রেণি এবং ক্যাটাগরি-২ চা–বাগানের শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১১৮ টাকা। আর সি শ্রেণি এবং ক্যাটাগরি-৩ চা–বাগানের শ্রমিকের দৈনিক মজুরি হবে ১১৭ টাকা। ওপরের গ্রেডের ইলেকট্রিশিয়ান, ড্রেসার, সরদার, মিস্ত্রি, লেদ অপারেটর, ধাই, পিয়নের মাসিক মজুরি ৬ হাজার ৬৫০ টাকা। অন্যদিকে কর্মচারীদের সর্বনিম্ন মজুরি ৭ হাজার ৫৪২ টাকা। তবে শিক্ষানবিশ কর্মচারীদের মজুরি ৭ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশকাল ছয় মাস হলেও শ্রমিকদের বেলায় তা তিন মাস।

খসড়ায় বলা হয়েছে, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের যেসব বাগানে বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার কেজি বা তার বেশি চা উৎপাদিত হয়, সেগুলো এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ১ লাখ ৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার কেজি পর্যন্ত চা উৎপাদনকারী বাগান বি শ্রেণির। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও অন্য জেলার যেসব বাগানে ১ লাখ ১৩ হাজার কেজি বা তার বেশি চা উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ক্যাটাগরি-১। আর যেসব বাগানে ৪৫ হাজার থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ক্যাটাগরি-২।

খসড়া সুপারিশ অনুযায়ী, তিন বছর পরপর মজুরি বিষয়টি চা–শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। বাগানের ভেতরে শ্রমিকদের পরিবারভিত্তিক আবাসন সুবিধা আগের মতোই বহাল রাখতে হবে। শ্রমিকেরা প্রধান দুই উৎসবে এক মাসের মূল মজুরি দুই ভাগে পাবেন। তা ছাড়া প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, শ্রমিকেরা ভর্তুকি মূল্যে চাল বা আটা পাবেন। চা-বাগানের বিক্রির দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ অর্থ শ্রমিকেরা অংশগ্রহণভিত্তিক মুনাফার অংশ হিসেবে বছরে একবার করে পাবেন।

প্রসঙ্গত, ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে প্রথম চা চাষ শুরু হয়। সিলেটে বাণিজ্যিক চা-বাগান চালু হয় ১৮৫৮ সালে। বর্তমানে দেশে চা-বাগানের সংখ্যা ১৬৭। এসব বাগানে কাজ করেন ১ লাখ ৪০ হাজার শ্রমিক। ২০১০ সালের মজুরি বোর্ড শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৪৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল।

সূত্রঃ প্রথম আলো


Share Tweet Send
0 Comments
Loading...
You've successfully subscribed to Bangladesh ASF
Great! Next, complete checkout for full access to Bangladesh ASF
Welcome back! You've successfully signed in
Success! Your account is fully activated, you now have access to all content.