বিএসএফ কনফারেন্স প্রতিবেদনঃ ৮ই জুলাই, ২০১৮ ইং

কনফারেন্স প্রতিবেদন

জুলাই ৮,২০১৮

বাংলাদেশ এনার্কো-সিন্ডিক্যালিস্ট ফেডারেশন- বি এ এস এফ ৮ই জুলাই, ২০১৮ ইং  সিলেটে এক কনফারেন্সের আয়োজন করে। এতে বাছাইকৃত প্রায় অর্ধ শতাধিক শ্রমিক নারী-পুরুষ প্রতিনিধি অংশ গ্রহন করেন। ফেডারেশনের সেক্রেটারীর সঞ্চালনে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে শ্রমিক প্রতিনিধিগন বক্তব্য রাখেন  এবং আই ডব্লিউ এ এর সেক্রেটারী লুরে আকাই বিশেষ আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

সভায় শ্রমিক প্রতিনিধিগন বলেন, আমাদের দেশে এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজমের ধারনাটি একেবারেই নতুন। সুদির্ঘ কাল থেকে এখানে কর্তৃত্ববাদি ও পদসোপান সৃষ্টিকারী রাজনীতি সর্বস্ব শ্রমিক আন্দোলন চলে এসেছে। শ্রমিক আন্দোলনের নামে কিছু ইতিবাচক কাজ হলেও সামগ্রীক বিবেচনায় এক শ্রেনীর লোক নিজের স্বার্থে শ্রমিক আন্দোলনকে নিজেদের সম্মান ও সম্পদ বৃদ্বির কাজে ব্যবহার করেছে। এখনো কোন কোন ক্ষেত্রে  অশ্রমিক শ্রেনীর লোকেরা রাজনীতির ছত্র ছায়ায় মেহেনতি মানুষের প্রভু সেজে নিজেদের ফায়দা হাসিলে তৎপর রয়েছেন। এখন শ্রমিক রাজনীতি আর শ্রমিকদের স্বার্থে পরিচালিত হয়না বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। শ্রমিক শ্রেনীর লড়াই সংগ্রাম এখন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীদের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ্ব বলেন, সত্যিকার শ্রমিক আন্দোলন সংগ্রামকে জোরদার করতে হলে প্রচলিত রাজনৈতিক দলীয় প্রভাব মুক্ত শ্রমিক সংগঠন স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে গড়ে তুলতে হবে।

কনফারেন্সের বিশেষ আলোচক আই ডব্লিউ এ এর সেক্রেটারী লুরে আকাই তার বক্তব্যে তার নিজ দেশ পোল্যেন্ডের উদাহরন সহ বিশ্ব ব্যাপি শ্রমিক আন্দোলন ও সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শ্রমিক শ্রেনীর লোকেরাই বিশ্ব ব্যাপী মানব সভ্যতার নির্মাতা অথচ তারাই যুগে যুগে নানা ভাবে বঞ্চিত, নিপীড়িত, নিগৃহিত ও শোষনের শিকার হয়ে এসেছেন। কৃষক শ্রমিকগন খাদ্য উৎপাদন করেন অথচ এরাই খাদ্য পায় না, শ্রমিকগন বস্ত্র উৎপাদন করেন অথচ এদের জন্য প্রয়োজনীয় বস্ত্র জুঠেনা, এরাই বাড়ী, গাড়ী রাস্তা ঘাট ও সভ্যতার নির্মাতা কিন্তু প্রচলিত সমাজে এদের  সম্মান ও মর্যাদা নেই।

লুরে আকাই বলেন, ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের পর শ্রমিক শ্রেনী আশা করেছিলো  তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কিন্তু সেই বিপ্লব রাজনীতির চক্রে পড়ে পুরাতন ধারার সমাজ ব্যবস্থাই মানুষের চেপে বসে। রাজার পরিবর্তে সেখানে  কমিউনিস্ট পার্টির রাজত্ব কায়েম হয়। রাষ্ট্রবাদি চিন্তাচেতনার আলোকে রাষ্ট্রীয় পুজিবাদ কায়েম করে কৃষক শ্রমিক সহ সকল মানুষের উপর কট্টর নিয়ন্ত্রনবাদ, কর্তৃত্ববাদ চাপিয়ে দেয়া হয়। সারাদেশকে সমাজবাদের নামে কারাগারে পরিনত করে। ফলে একসময় জনগণ এর বিরুদ্বে প্রতিরোধ গড়ে তুলে । কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি  নির্মম ভাবে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদকারীদের দমন করে। হত্যা করে অসংখ্য মানুষ, রাশিয়া থেকে বিতারিত হয় অনেকেই, খুন গুম হয়ে উঠে নিত্য দিনের ঘটনা।

রাজনৈতিক ধারার কর্তৃত্ববাদি ও ক্যাডার ভিত্তিক সমাজবাদ নয়; দরকার হলো পন্য পয়দাকারী সাধারন মানুষের অংশগ্রহনে মুক্ত স্বাধীন,  সামাজিক অংশগ্রহন মূলক  সমিতির ফেডারেশন গড়ে তুলা। যেখানে পদসোপানের প্রভাব থাকবে না। প্রতিটি উৎপাদনকারী প্রতিস্টানে শ্রমিকগন সংগঠন গড়ে তুলবেন। কৃষি খামারে গড়ে উঠবে কৃষকের সমিতি এবং কারখানায় গড়ে উঠবে শ্রমিকের সমিতি। একেই ভাবে সংবাদ কর্মী, শপিং মলের কর্মী এবং অন্যান্য সেবাদানকারীদের ও সংগঠন গড়ে উঠবে। প্রতিটি সংগঠন স্ব স্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে  স্বেচ্ছায় পরস্পরের সাথে চুক্তিবদ্ব হয়ে ফেডারেশন গড়ে তুলবেন। সেই ফেডারেশনের মাধ্যমেই নয়া সমাজের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে বলে মন্তব্য করেন লুরে আকাই।

উল্লেখ্য যে, কনফারেন্সে চা উৎপাদক শ্রমিক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করন শ্রমিক, সিরিমিক উৎপাদক শ্রমিক, দেশীয় যানবাহন তৈরির কারখানা শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, কোম্পানীর গুদামে মালামাল উঠানো-নামানো শ্রমিক, হাসপাতালে কর্মরত শ্রমিক, বাড়ী ও গুদাম প্রহরী  ইত্যাদি শ্রমিকগন উপস্থিত ছিলেন। অংশ গ্রহণকারী শ্রমিকগন এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজমের আদর্শ প্রচারে ও বাস্তবায়নে অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেন।


Share Tweet Send
0 Comments
Loading...
You've successfully subscribed to Bangladesh ASF
Great! Next, complete checkout for full access to Bangladesh ASF
Welcome back! You've successfully signed in
Success! Your account is fully activated, you now have access to all content.