বি, আর, মায়ার্স এর গ্রন্থ আলোচনাঃ (উত্তর কোরিয়া ) পবিত্র জাতিঃ এডভোকেট শিহাব


বি, আর, মায়ার্স এর গ্রন্থ আলোচনাঃ (উত্তর কোরিয়া ) পবিত্র জাতি

যারা উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদের কাছে ‘পবিত্র জাতি’ – (২০১০) গ্রন্থ টি খুবই সমাদৃত হয়েছে। এই বইটির লক্ষ্য ছিলো উত্তর কুরিয়া সম্পর্কে আমেরিকার নীতির উপর প্রভাব বিস্তার করা এবং তাদের আধিপত্যবাদের অবসান ঘটানো। এই অর্থে এই বইটির কথা হলো দুষমন দিয়ে দুষমন দমন কর। আরো উদ্দেশ্য হলো উত্তর কুরিয়ার মানুষ তৃনমূলে এই বিষয়ে কি ভাবছে তা প্রকাশ করা। এই বইটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চর সি আই এর এবং উদারতাবাদি সাম্রাজ্যবাদী চক্রের চিন্তা ভাবনাকে ও প্রকাশ করেছে। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লিডিং লাইট কর্মীদের জন্য এই বইটি অবশ্য পাঠ্য। কেননা ইহা পাঠে তারা তাদের দুষমন ও বন্দ্বুদেরকে চিন্তে পারবেন। দুষমন সকল সময় এক রূপে থাকে না । এই গ্রন্থে তাদের পরিবর্তিত অবস্থা, তাদের সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি ও সাম্রাজ্যবাদের নীতি নির্ধারনে তাদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদিও গ্রন্থটি মৌলিক ভাবে সাম্রাজ্যবাদের সহায়ক, কিন্তু সেখানে সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ক এমন কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে, যা প্রচলিত “ মার্ক্সবাদি-লেনিনবাদি” যারা উত্তর কুরিয়ার পক্ষে কথা বলেন তাদের মত করে নয়। তা এক ভিন্ন বক্তব্য হাজির করেছে। এই গ্রন্থে উত্তর কুরিয়া বিষয়ক লিডিং লাইটের অবস্থানকে সমর্থন করেছেঃ যদিও এতে কুরিয়ায় সাম্রাজ্যবাদের আক্রমনকে সমর্থন করা হয়েছে, এবং উত্তর কুরিয়া কোন সমাজতান্ত্রিক বা সাম্যবাদি সমাজ নয়। উত্তর কুরিয়ায় আসলে জাতীয় বুর্জোয়াদের একটি অংশের রাজতন্ত্র চালু আছে। সেখানে ক্ষমতা স্থানান্তরিত হয় পিতা(বা পুত্র- থেকে নাতি) থেকে পুত্রের হাতে। পবিত্র জাতি নামক গ্রন্থ টি দেখিয়েছে, যদি ও উত্তর কুরিয়ায় রাজতন্ত্র চলছে, তাতে অবাক হবার কিছু নেই, ইহার কিছু ভিন্ন মাত্রার বৈশিষ্ট বিদ্যমান আছে, যা প্রচলিত জাতি সম্পর্কিত ধারনার সাথে সহজে মিল হবে না । উত্তর কুরিয়ার সমাজ ব্যবস্থার সাথে “ সর্ব শেষ স্ট্যালিনিস্ট রাষ্ট্র” বা কনফুসিয়ান একনায়কত্ববাদের মধ্যে ও গড়মিল খোঁজার প্রায়স দেখার মত। লিখক নিজেই বলেছেন, পূর্ব ইউরূপের সোভিয়েত প্রশাসনের মত ও উত্তর কুরিয়া নয়। বরং উত্তর কুরিয়া হলো দ্বিতীয় বিশ্ব মহারনের পর ফ্যাসিবাদি রাষ্ট্র হিসাবে যারা দুনিয়ার মানচিত্রে আভির্ভুত হয়েছে। উত্তর কুরিয়া তাদের মধ্যে একটি। বইটিতে লিখক কোন কোন জায়গায় অতি কথনের আশ্রয় নিয়েছেন, কিন্তু বইটি মানুষকে ভ্রমে নিক্ষেপ করার জন্য একটি মাস্টার পিস। তবে ইহা আমাদেরকে উত্তর কুরিয়া সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে। এই বই পড়ে আমরা বুঝতে পারব উত্তর কুরিয়া বাকী দুনিয়াকে কিভাবে দেখে, তাদের মধ্যে যারা আলোকিত ও উদারতাবাদি তাদের সম্পর্কে ও জ্ঞান অর্জন করতে পারব। সাম্রাজ্যবাদিরা বুঝেনি, গোড়া “মার্কসবাদি- লেনিনবাদিরা” ও বুঝতে পারেনি… উদারতাবাদি সাম্রাজ্যবাদীদের ঐতিহ্য অনুসারে, উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে লিখক নির্মম মিথ্যাচার করেছেন। লিখক বলেছেন পশ্চিমাদের অপপ্রচার সত্যেও প্রচলিত শাসন ব্যবস্থা অত্যন্ত জন প্রিয়। লিখক দক্ষিন কোরিয়ার প্রাচরনা, পশ্চিমাদের প্রপাগান্ডা এবং সকল প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের প্রাচয়ারনাকে নাকচ করে দিয়েছেন। তবে লিখক সাধারন ভাবে স্বীকার করেছেন যে, উত্তর কোরিয়ার প্রশাসনের প্রতি আওয়াম জনগনের ব্যাপক সহানুভূতি বিদ্যমান, তা চরম দুর্ভিক্ষের সময়ে ও ভাটা পড়েনি। এমন কি বহির্বিশ্বের চাপের মূখে যখন সরকারে আইন গত সংকট তৈরী তখনও জনতার সমর্থন কমে যায়নিঃ “ উত্তর কোরিয়ার লোকেরা ভালো বা মন্দ উভয় সময়ই তাদের আদর্শের প্রতি প্রচন্ড ভালোবাসা দেখিয়েছেন। এমন কি আজ ও তাদের দোরগোড়ায় অবস্থিত শ্ত্রু দেশের প্ররোচনা সত্ত্বেও কোন প্রকার দৃশ্যমান পুলিশি উপস্থিতি ছাড়া নিজ দেশের মানুষের মাঝে শান্তি বিরাজ করাতে পারছে। সিমান্ত ও সুরক্ষিত আছে। অতি উতসাহী মার্কিনীরা মনে করেন ‘মাটির তলদেশ দিয়ে চালু রেলগাড়ি’ উত্তর কোরিয়ার বিপুল কর্মীরা চীন সহ মুক্ত দুনিয়ায় যাতায়াত করে নিজেদের পরিচ্ছন্ন অবস্থান ধরে রেখেছে-তারা নিজেদের মত করেই দেশে ও বাহিরে কাজ করতে পারেন। অন্য দিকে কিম ইল সাং এর ভয় ও তাদেরকে শান্ত রেখেছে। আবার এটা ও অবজ্ঞা করার উপায় নেই যে, ইয়াদুক জেল খানায় অগনিত নারী, পুরুষ ও শিশুরা বন্দ্বি জীবন যাপন করছেন। আর জনগনের কিছু সমর্থন না থাকলে স্বৈরাচার এত দিন ক্ষমতায় থাকতে পারতনা । আর সেই কারনেই শাসক চক্র ক্ষমতা ক্ষুকিগত করে রেখেছে। আমার মনে এই কথা ও আসে এই ভাবে আর কতকাল চলবে- মানুষ কি ভাবছে- বিশেষ করে যারা দক্ষিন কোরিয়ার বাস্তবতা জানেন তাদের চিন্তা বা পরিকল্পনাই বা কি। এটা এমন একটি শাসন ব্যবস্থার যার কোন আইনগত ভিত্তি নেই, যারা আন্তর্জাতিক আক্রমন নিয়ে ও ভাবে না – বরং উলটা ধমক দেয়”। লিখক উত্তর কোরিয়ার অভিবাসীদের সম্পর্কে বলেনঃ “ যে সকল উত্তর কোরিয়ান নিজের দেশ ত্যাগ করেছেন এবং এখনো অন্য দেশে বসবাস করেন, তারা তাদের মহান নেতা ও দেশের কথা ভূলতে পারে নাই। অনেকের সাথে কথা বলে দেখেছি এরা চোখের পানি না ফেলে কথা বলতে পারেন না”। পবিত্র জাতি নামক পুস্তকে, সাম্রাজ্যবাদি নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে তারা যেন বাস্তবতা বুঝে কাজ করেন। লিখকের মতে, পশ্চিমা দুনিয়ার কোন আদর্শ নেই তারা এর প্রতি আগ্রহী ও নন। সত্য কথা। ৯/১১ এর আগে মার্কিনীরা ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না । এমন কি ৯/১১ এর পর ও নীতি নির্ধারকগন মনে করতেন ইতিহাসের মোড় পাল্টে যাবে। আদর্শের মরন হয়ে গেলো। যে যাই বলুক না কেন, পশ্চিমা উদারতাবাদই হলো সামাজিক বিকাশের সর্ব উচু স্তর। আদর্শ, ব্যাক্তিগত ইমেজ এর কিছুই কাজে আসবে না, মানুষের আনুগত্য আদায়ের জন্য মানসিক অস্ত্র ব্যবহার করছে উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ার নেতা নিজে ও এসকল বিষয়ে বিশ্বাস করেন না । আদর্শের ধারনা কোন ব্যাপার নয়, উত্তর কোরিয়া যে আদর্শের কথা বলেন তা হাস্যকর, সেই ভাবে চিন্তা করলে উত্তর কোরিয়ার শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারনা অর্জন করা বেশ কঠিন। উদারতাবাদি চক্র মনে করে আদর্শ কোন বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক সিদ্বান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে উত্তর করিয়ায় আদর্শ কোন ভূমিকাই পালন করে না । একই কথা প্রযোজ্য “বামদের” জন্য ও যারা উত্তর কোরিয়ার পক্ষে উকালতী করেন। পিয়ং ইয়ং পর্যবেক্ষকগন যখন আদর্শের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেন না, তখন কোরিয়ার আন্তর্জাতিক মৈত্রী মহল, নেট ভিত্তিক জুসাবাদি চক্র, এবং অন্যান্য বুদ্বিজীবীগন তাদের অফিসিয়াল কিছু কথা উচচারন করেন। আর তা হলো সেই তথা কথিত “জুসা আইডিয়া র কিছু বানী”।সাম্রজ্যবাদের ভুল গুলো উত্তর কোরিয়ায় তাদের আদর্শের প্রতিফলন হিসাবে দেখা দেয়। যে কোন উসিলায় তারা কিম ইল সাং এর মহৎ কর্ম প্রচারনায় লিপ্ত হয়। তারা অন্য সকল আদর্শকে উপেক্ষা করে যুক্তিহীন ভাবে “জুসা” কে তাদের মহা আদর্শ হিসাবে সামনে নিয়ে আসে । লিখকের মতে, “জুসা” হলো আসলে ক্ষতে উপর এক ধরনের প্রলেপ। তবে এই জাতি বুঝতে হলে আমাদেরকে আরো গভীরে প্রবেশ করতে হবেঃ “দুর্ভাগ্যবশত উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অনুপস্থিতির কারনে আজো উত্তর কোরিয়া তাদের সাধারন মানুষের সামনে চমতকার ভাবে তাদের আদর্শকে তুলে ধরতে পারেনি। তারা নিজেরা বলে থাকেন তারা নাকি ‘কট্টর কমিউনিস্ট’ বা ‘স্ট্যালিনিস্ট’, যদি ও তারা আবার দাবী করেন যে, বিশ্বে কোরিয়ানরাই হলো ‘পবিত্র’ বা বিশুদ্ব জাতি। তারা নিজেদের অবস্থার বর্ননা করতে গিয়ে বলেন যে, এরা কনফুসিয়ান একনাকত্ব, ও বস্তুগত কর্তৃত্বের মাধ্যমে নিজেদেরকে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসাবে গড়ে তুলেছে কিন্তু আসল অবস্থা হলো ষাটের দশক থেকেই এরা অন্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে আছেন। এদের বড় ভুল হলো, পাশ্চাত্য দেশ সমূহ বা দক্ষিন কোরিয়া সম্পর্কেই পরিস্কার ধারন তাদের নেই। ১৯৫০ সালে আমেরিকা বোমা মেরে ব্যাপক ধংস সাধন করেছে। তখন স্বাভাবিক ভাবেই তারা ভীতিতে দিন কাটিয়েছেন। উচিত ছিলো আমেরিকা সহ অন্যদের সাথে অন্যন্যদের মত পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় করা … এই বইয়ে, তাই বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার আদর্শ বা বিশ্ব দৃস্টিভঙ্গী হলো – আভ্যন্তরিন পরিবর্তনশীলতা – এবং দেখা জুসা চিন্তা ধারার আলোকে কমিউনিজম বা কনফুসিয়ানিজম থেকে কি কি বিষয় পরিবর্তন করা যায়। কোরিয়ানদের মনোভাবকে একটি বাক্যে বললে তা দাড়ায়, তারা হলেন পবিত্র ও বিশুদ্ব রক্তের ধারক, তাই তারা ন্যায়বান, এই শয়তানী দুনিয়া তারা তাদের মহান নেতা ছাড়াই বেচে আচেন। একজন মার্কিন পাঠকের কাছে আমি যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চাই তা হলো এরা না ডান না বাম, এরা হলো আসলে জাতি ভিত্তিক একটি দেশ। জাপান ফ্যাসিবাদি আক্রমন কারী হলে ও আমি কোরিয়ানদেরকে ফ্যাসিবাদি বলতে চাই না । একটি কথাই এদের জন্য অধিকতর উপযোগী যে এরা ইউরূপের মত নয় আবার কোন কমিউনিস্ট রাস্ট্রের মত ও নয়। আসল সত্যি টা বুঝতে পারলে পশ্চিমা দেশ সমূহ সাবেক ঠান্ডা যুদ্বের মত করে পদক্ষেপ গ্রহন করবে না”। সত্যিকার অর্থে “মার্কসবাদ-লেনিনবাদ” এবং কনফুসিয়াবাদ এর কোনটি ই উত্তর কোরিয়ার আদর্শ নয়, এমন কি জুসা বা “আত্মনির্ভরশীল” নয়। তবে তা তাদের রাস্ট্রীয় ঘোষনায় আছে। প্রচারনায় আছে। কিন্তু বাস্তবে আদর্শ হিসাবে জুসা নেই । লিখকের বর্ননা অনুসারে ‘জুসা’ এক ধরনের লজ্জা । কিম ইল সাং এর লিখায় জুসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে জগাকিছুরী মার্কা কথা বলা হয়েছে। যদি ও অফিসিয়ালী নানা ভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে জুসার কথা বলা হয়, কিন্তু তা একেই কথার পুনরাবৃত্তি হয়ে থাকে । শ্রমিক শ্রেনী আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেইঃ “নেতার লিখিত বক্তব্যে বিশ্ব দৃস্টিভঙ্গীর প্রতিফলন ঘটেনি। তারা তা না পড়েই প্রসংশায় পঞ্চমূখ। তথাকথিত জুসার চিন্তা ধারা খুব আনাড়ী পনায় পরিপূর্ন হলে ও সেখানে ব্যাক্তির মহৎ ব্যাপক ভাবে উঠে এসেছে। ( কেউ কিছু বললেই তাকে নানা ভাবে হেনস্তা করার ব্যবস্থা আছে) তা অনেকটা স্ট্যালিনের আমলে সোভিয়েত যুগের মত অবস্থা। মাওয়ের আমলে চীনের অবস্থার মত। তবে উত্তর কোরিয়া তাদের পরিবর্তে নিজেদের নেতার প্রতি বেশী অনুগত”। সেই প্রশাসনের প্রচারনাকারীদের প্রসংশা করতে হয় যে তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করছে। জুসা বিষয়ক কাগজ পত্র গুলো জনগন ঠিকমত পড়ে ও দেখেন না । তারা ভাবে তাদের নেতা কিম ইল সাং যা লিখেছেন তা অতি উত্তম। তাদের নেতা ও চীনের মাওসেতুং এর ই মত একজন জ্ঞানী ও চিন্তাবিদ । অবাক হবার বিষয় হলো উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সংবাদ সংস্থা তাদের ইংরেজী মাধ্যমেও নিজেদের বিশ্ব দৃস্টি ভঙ্গী তুলে ধরেনি। লিখকের মতে, উত্তর কোরিয়ার আভ্যন্তরিন প্রচারনায় ও তাদের বিশ্ব দৃস্টিভঙ্গীর প্রতিফলন ঘটে নাইঃ “ অনেক পর্যবেক্ষক ভুলবশত মনে করেন যে, উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ইংলিশ সংবাদ সংস্থা তাদের প্রচারনায় নিজেদের প্রকৃত সংবাদ প্রকাশ করবেন। কিন্তু আসল সত্য হলো বাস্তবতা সম্পূর্ন ভিন্ন প্রকৃতির । উদাহরন হিসাবে বলা যায় যে, ডিপি আর কে প্রচার করে তাদের দেশ হলো এমন একটি দেশ যার সম্পর্কে বাহিরের লোকেরা সর্বদাই ভুল বঝে থাকে। তাদের জনগনকে বলে থাকেন দেশের বাহিরে ওদের অনেক শত্রু আছে। যাদের কাজ হলো তাদের ক্ষতি করা । এমন কি জাতি সংঘের কর্মকর্তাদেরকে এরা শত্রু কাতারে ফেলে । আর বলে দেখ আমরা যখন পারমানবিক ব্যালাস্টিক অস্ত্র বানাই ওরা তার বিরুধিতা করে । তারা কিছু হলে বাহিরের দিকে আংগুল তুলে নিজেদেরকে হেফাজত করে থাকে । আসলে জাতিগত অন্দ্বত্বই উত্তর কোরিয়াকে এই ধরনের কর্মে নিয়োজিত রাখছে”। লিখকের মতে, সেই দেশে প্রচুর আশান্তি আছে কিন্তু আদর্শ ও বাস্তবতার কোন মিল খোজে পাওয়া যায় না । কিম ইল সাং এর কার্যক্রমে কোন প্রকার আদর্শিক প্রভাব নেই । আছে কেবল নিজেকে প্রকাশ করার প্রবনতা । আর দুনিয়ার অন্যান্য দেশকে দুষারূপ করার বিশাল আয়োজন। এই সবই উত্তর কোরিয়াকে এই অবস্থায় ঠিকিয়ে রেখেছে। তবে উত্তর কোরিয়ার ইতিহাসের দিকে গভীর দৃস্টি দেয়া দরকার। তা আমাদেরকে তাদের বাস্তব অবস্থা বুঝতে সাহায্য করবে বলে লিখক মনে করেন।

প্রকৃত পক্ষে উত্তর কোরিয়ার আদর্শ হলো জাপানের সাম্রাজ্যবাদ- লিখকের মতে, কোরিয়ানদের ঐতিহাসিক ভাবেই বিদেশীদের প্রতি জেনপবিয়া বা ভয় কাজ করে এসেছে। কোরিয়ানদের জাতিয়াতার বিকাশ ঘটেছে বেশী দিন হয় নি। কোরিয়ানরা নিজেদেরকে বৃহত্তর চীনা সংস্কৃতির অংশ মনে করে থাকে । তবে কয়েক শতাব্দি ধরে তাদের রাস্ট্র ঠিকে আছে। ১৯০৫ সালের পর থেকেই যখন জাপান দ্বীপ সমূহের নিয়ন্ত্রন করতে শুরু করে তখন থেকেই সেই অঞ্চলের পরিবর্তন আরম্ভ হয়। ১৯১০ সাল থেকে পারস্পরিক সংযুক্তি ও বিযুক্তির কাল শুরু। দেশ প্রেমিক বিরুধী শক্তি জাপানী আগ্রাসনের বিপরিতে বিকশিত হয় এবং ১লা মার্চ, ১৯১৯ সালে জাতিয়তাবাদি কোরিয়ানগন সিউলে স্বাধীনতা ঘোষনা করে। জাপানী আক্রমনের পর জাতীয় ভাবে কোরিয়ায় গনজাগরনের সূত্রপাত ঘটে। জনগন জাপানী কার্যক্রমের বিরুদ্বে রুখে দাঁড়ায়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাপানীরা নিজেদের কর্ম কৌশল পরিবর্তন করে নেয়। কোরিয়ান জাতীয়তাবাদের বিরুদ্বে লড়াই না করে তারা তাদের জাতিয়তাকে আরো উস্কে দেয়। তারা জাপান-কোরিয়ান ঐক্য জোরদার করতে করিয়ান জাতিয়তাবাদের বিকাশ ঘটাতে কাজ করে । তারা নয়া বার্তা দিলোঃ কোরিয়ানদের উচিত অধিকতর কোরিয়ান হওয়া, বৃহত্তর জাপানের অংশ হিসাবে নিজেদেরকে তৈরী করা । জাপানের প্রচার মাধ্যম কোরিয়ান ভাষা সম্প্রচার করতে থাকে । তারা তাদের মিডিয়ায় জাপান কোরিয়ান ঐক্যের বিষয়ে সম্প্রচার করতে থাকে। কোরিয়ান বুদ্বিজীবীরা জাপানী বার্তার পক্ষে কাজ করতে থাকে। তারা প্রচার করেন, “ জাপান ও কোরিয়া একেই শরীরের দুটি অংশ মাত্র”। জাপানীরা প্রচার করতে থাকের উত্তরাধীকার সূত্রে জাপান ও কোরিয়া একেই সূত্রে বাধা। তারা এটা বলতে থাকেন যে জাপান ও কোরিয়ান লোকেরা একেই রক্তধারা বহন করছেন। ১৯২০ সালের প্রথম দিকে কোরিয়ার উচু ও মধ্যম শ্রেনীর লোকেরা অবিকল ও অনর্গল ভাবে জাপানী ভাষায় কথা বলতে থাকেন। জাপানী ও কোরিয়ান ছেলে মেয়েদের মধ্যে বিবাহ অনুস্টান জনপ্রীয় হয়ে উঠে। সেই সময়ে তাদের দুই দেশের মধ্যে বিবাহকে “একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা হয়”। “ যখন লিখক ও বুদ্বিজীবীগন সম্রাটের গৌরব গাথা করছিলেন, তারা তখন তাদের দেশের জনগনকে আহবান করছিলেন তারা যেন তাদের কোরিয়ান চরিত্র ধরে রাখেন। প্রেম ভালোবাসার গল্প উপন্যাসে দেখানো হতে লাগল যে, জাপানী মেয়েরা শক্তিশালী কোরিয়ান পুরুষদের প্রেমে পড়েছে। তাদের নাটক ও সিনেমায় তা দেখাতে লাগল। সংবাদ পত্র, ম্যাগাজিন, নানা ফ্যাশন পত্রিকায় দেখানো হলো মেয়েরা জাপানী জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কনফুসিয়ান ছেলেরা নায়কের মত হেট মাথায় গর্বিতভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সম্রাজ্যবাদিদের একটি বড় লক্ষ্য ছিলো কোরিয়ানদেরকে তাদের দ্বিপ সমূহ নিয়ে সজাগ করে তুলা এবং তাদের নিয়ন্ত্রন কায়েমের জন্য মানচুরিয়া মিমাংশিত অধিকার কায়েম করার প্রেরনা দেয়া । এখন লিখক শিলা সাম্রাজ্যের সৈনিকদের মধ্যে যুদ্বের চেতনা সৃজনের প্রায়স নিলেন। আরেক জন তরুনদেরকে আহবান করলেন তারা যেন কোরিয়ার সন্তান এবং জাপানের নাগরীক হিসাবে নিজেদেরকে প্রস্তুত করেন এবং ইয়াংকিদের বিরুদ্বে পবিত্র যুদ্ব অংশ গ্রহন করেন। ঐতিহাসিক চো কিউয়ান জ্যা মন্তব্য করেন যে, আমাদের সহযোগীরা নিজেদেরকে ‘জাপান পন্থী [কোরিয়ান] জাতিয়তাবাদি হিসাবে বিবেচনা করেন। লেখকের দেয়া তথ্যানুসারে, প্রথম দিকে কোরিয়ান জাতিয়তাবাদের উপর জাপানীদের নিয়ন্ত্রন নিয়ে প্রতিরোধের একটা প্রয়াস ছিলো। কোরিয়ান জাতিয়তাবাদি লিখকগন প্রায় ভুলে যাওয়া এক মহান পুরুষের যিনি তাংগুয়ান নামে পরিচিত ছিলেন, যিনি ১২৮৪ সালের দিকে কোরিয়ান জাতিয়তা নিয়ে কাজ করে গেছেন তার আদর্শ ও চিন্তাধারা বিকাশে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাংগুয়ান কোরিয়ান রক্তধারার উপর ভিত্তিকরে একটি জাতিইয়তাবাদের বিকাশ করতে চেয়েছিলেন। একজন লিখক বলেছেন পিকতু পাহাড়ের কথা, এটা হলো একটি অগ্নিগিড়ির চীনা সিমান্তের পাহাড়, আর এটাই হলো তাংগুয়ানের জন্ম স্থান। যদি ও জাতিয়তাবাদিরা জাপানীদের বিরুধিতা করেন, কিন্তু কোরিয়ানরা আসলে জাপানের হুবহু প্রতিরূপী জাতি। তাংগুয়ানকে জাপানের প্রাচীন সম্রাটদের পূর্বপুরুষ হিসাবে দেখানো হয়েছে। পিক্তু পাহাড়কে ফুজি পাহাড়ের স্থানে প্রতিস্থাপন করে দেখানো হয়েছে। তবে ১৯৩০ সালের দিকে জাতিয়তাবাদিদের প্রতিরোধ জাপানীদের আদর্শকে আটকে দিয়েছিলো। ১৯৩০ সালে বিরুধীরা যখন নানা প্রশ্ন তুলে, তখন তারা তাদের পারস্পরিক চেহেরার সাদৃশ্যের কথা বলেন। সেই ক্ষেত্রে হোক সাম্যবাদি, জাতিয়তাবাদি বা উদারতাবাদি এরা সকলেই জাপানী রীতিনীতি অনুস্মরন করে থাকেন। এমন কি মধ্যবিত্ত বা উচু বিত্ত শ্রেনী, বুদ্বিজীবী, ও তারকা শ্রেনী লোকেরা সেই কারনেই জাপানী যুদ্বকে সমর্থন করে, তা এক সময় শিক্ষিত ও দরিদ্র মানুষের মাঝে ও সম্প্রসারিত হয়ে থাকে । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের দামামা যখন এগিয়ে চলে, জাপানের সৈনিক, শ্রমিক, কৃষক সহ সকলেই চরম দরিদ্রতায় নিমজ্জিত হয়। এবং তা দিনে দিনে বাড়তেই থাকে। কোরিয়ান পত্রিকা লিখে, “ আমরা যদি এই যুদ্বে হেরে যাই… তবে এটা হবে মানবতার জন্য বিপর্যয়… আমাদেরকে বিজয়ী হতেই হবে”। ১৯৪৫ সালে সামারে আমেরিকানরা দুটি পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করে। হাজার হাজার জাপানী সাধারন মানুষ সেই যুদ্বাপরাধে মৃত্যুবরন করেছে। জাপানের সম্রাট সেই যুদ্বে পরাজিত হন। সোভিয়েত ইউনিয়ন কোরিয়ার উত্তর অংশ দখল করে নেয়। তারা চাইলো সোভিয়েত ধরনের একটি জনগনতান্ত্রিক সমাজ চালু করতে। লাল ফৌজ যেভাবে পূর্ব ইউরূপে জনগনের মুক্তির জন্য কাজ করেছে-সেই রূপ। তবে লিখক অনেক ক্ষেত্রেই অতিকথনের আশ্রয় নিয়েছেনঃ “ দক্ষিন কোরিয়ায় বাম চিন্তার লোকদের মাঝে এমন ধারনা চালু আছে যে, জাপানীদের পক্ষে পিয়ং ইয়ং অধিকতর ক্ষতিকর কাজ করেছে, ফলে অনেক বুদ্বিজীবী নিজ দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছেন। বহু সমাজ কর্মী, লিখক শিউলে চলে এসেছেন। উত্তর কোরিয়া সেই সকল মানুষের জন্য বসবাস যোগ্য নয়। ১৯৮১ সালে ডিপি আর কে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে তাদের মহান নেতার বানী প্রাচার করে বলেছেন…তারা কেবল জাপানের জন্য কাজ করেছেন, ‘কিমের ভাই নিজে চীনে জাপানীদের যুদ্বে সাহায্য করেছে”। যুদ্বের পর বিরুধী শক্তিকে ও দেশে ফিরে আসার জন্য আহবান করা হয়। লিখক মনে করে যুদ্বের পর দেশ চালনায় তাদের সহযোগীতা ও দরকার ছিলো। সোভিয়েতদের সকল প্রচেস্টার লক্ষ্যই ছিলো জনগনতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা । তাই সকল বুদ্বিজীবি ও বাম ধারার লোকদেরকে সাথে রাখা। সোভিয়েত দখলের আগেই সেই ভূমি চিলো রক্ষনশীল ও গোড়া খৃস্টান সম্প্রদায়ের প্রভাবে। সোভিয়েত চাইলো যত দ্রুত সম্ভব দেশে শ্রমিক শ্রেনীর দলের বিকাশ ঘটাতে। গনমাধ্যমের মালিকানায় পরিবর্তন করতে । সোভিয়েত চাইলো সকল দ্বিপমালায় তাদের আইন গত ভিত্তি মজবুত করতে । তাই তারা ১৪ই অক্টোবর,১৯৪৫ সালে একটি বিশাল র‌্যালীর আয়োজন করেঃ “ কোরিয়ানদের মধ্যে অনেকেই সেই সময় কিম ইল সাং এর দলে আসেন, তিনি পিয়ং ইয়ং এ জন্ম গ্রহন কারী ব্যাক্তি তেত্রিশ বছর বয়সে লাল ফৌজের ক্যাপ্টেন হয়েছিলেন। তিনিই রাশিয়াকে সাথে নিয়ে এই অঞ্চলে যুদ্বের সূচনা করেন। তিনি মাওয়ের নেতৃত্বে থেকে জাপানের বিরুদ্বে ও লড়াই করেন, ১৯৩৭ সালে ইয়েলো নদীর দক্ষিন পার্শ্বের সাম্রাজ্যবাদের অপসারন করতে চাইতেন। কোরিয়ানদের জন্য কিম ভালো মন্দ সকল কাজই করে গেছেন। তিনি প্রায়স বলতেন তিনি সৈনিকদের একটি দল গড়তে চান। কিন্তু সোভিয়েত নেতৃত্ব তা চাইতেন না । কিম নিজে কোন দিনই সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তেমন শিক্ষা গ্রহন করতে পারেন নাই । তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সেই আনুস্টানিক শিক্ষা শেষ করেন। তবে তিনি দির্ঘ সময় রাশিয়ার সামরিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহন করেন। আর সেই সময়েই তিনি তত্ত্বগত ভাবে অনেক কিছু শেখেন । তার মার্ক্সবাদি তেমন কোন লিখা ও প্রকাশিত হয়নি। তিনি কমিউনিস্ট আদর্শ বা গেড়িলা যুদ্ব সম্পর্কে ও তেমন জানতেন বলে মনে হয় না । কোরিয়ার উপর গবেষনা কর্মে করেছেন এমন একজন লিখক হলেন এন্ড্রো ল্যাঙ্কভ, তিনি লিখেছেন, কোরিয়ার কন উচু মাপের নেতা মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের উপর কোন প্রশিক্ষন গ্রহন করেন নাই । তবে সেটা অস্বাভাবিক নয় যে , যেকোন দেশ তার নিজস্ব সংস্কৃতির আলোকে দেশীয় পার্টিকে গড়ে তুলতেই পারেন”। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ওয়ার্কাস পার্টি সত্যিকার ভাবে মার্কসবাদ – লেনিনবাদের উপর কোন গুরুত্বপূর্ন প্রশিক্ষন পায়নি। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যেই দেশের বুদ্বিজীবী, জ্ঞানী, লিখক, শিল্পী সাহিত্যিক সকলেই তাদের সেই শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমত গড়ে তুলেন। সাংস্কৃতিক ভাবে ধনিক শ্রেনীর মানুষেরা নতুন ব্যবস্থার প্রতি অনুগত্য প্রকাশ করেন। যদি ও কিছু পার্থক্য আছে এর পর ও জাতিগত ভাবে সকলেই জাপানী ও কোরিয়ান সংস্কৃতিকে নিজেদের করে চর্চায় এগিয়ে আসেনঃ “ যদি ও জাপানীরা প্রচার করতে থাকে যে, তাদের জাতীগত অবস্থান অত্যন্ত খাটি জিনিস, কিন্তু ১৯৪৫ সালে কোরিয়া তাদেরকে তাদের ভূমি থেকে লাথি মেরে বেড় করে দেয় । জাতিয় ভাবা কোরিয়ানদের নায়ক হলেন তাংগুয়ান, তার পথ ধরেই এরা নিজেদের জাত সত্বাকে এগিয়ে নেয়, ১৯২০ সাল পর্যন্ত তিনি তেমন জন প্রিয় চিলেন না, তবে তিনি ঐতিহাসিক সত্য হিসাবে আভির্ভূত হতে থাকেন। ক্রমে জাপানীদের নানা নিদর্শন অপসারন করে কোরিয়ানদের বিষয় গুলো প্রদর্শন করেতে থাকেন। জাতিয় ভাবে পিক্তু পাহাড়কে দেশে সর্ব উচু পাহাড় হিসাবে ঘোষনা করে। যেখানে এক সময় ফুজি কে তা বলা হত। তাংগুয়ানের জন্ম ভূমিকে পবিত্র স্থান হিসাবে প্রাচার করা হলো। যেখানে কোরিয়ানদের ইতিহাস জাপানীদের চিন্তাধারার আলোকে লিখা হয়েছিলো তা ক্রমে পরিবর্তন করে লিখা শুরু হলো। ইয়াংকীদের সৃস্ট নানা দুখঃ কস্টের কথা ও বাদ দেয়া হলো না”। অন্যান্য জাতিগত আদর্শের চেয়ে উত্তর কোরিয়ার আদর্শ অধিকতর উন্নত ও বিশুদ্ব দাবী করতে শুরু হলো, তারা তা অন্যদের সাথে শেয়ার করতে ও উতসাহি ননঃ “ যদিও তারা স্বীকার করেন যে, শারিরীক ভাবে অন্যান্য জাতির চেয়ে অধিক শক্তিশালী নয় । প্রচারনায় বলতে লাগলো যে আমেরিকানরা তাদের তুলনায় লম্বা। তবে বুদ্বিমত্তায় কোন ভাবেই কম নয়। কিম বললেন তাদের জাতির লোকেরা দয়ালু ও সহানুভূতিশীল । তারা দাবী করতে লাগলেন, তারা অধিকতর ধর্মিক, শয়তানী দুনিয়ায় এরা সতর্কতার সাথে জীবন যাপন করে থাকেন। অন্যান্য জাতির মত এরা নির্দয় নয়। তাদের শিশুরা মহৎ ও মহান মানুষ হওয়ার শিক্ষা পেয়ে থাকে”। জাতিগত ও নৈতিক বিশুদ্বতার বিষয় গুলো বস্তুগত ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না । সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিন কোরিয়ার মাঝে যে দেয়াল তা দুর্বল হতে শুরু করেছে। কোরিয়ার সাধারন মানুষ জানে দক্ষিন কোরিয়ার মানুষ এখন উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক বেশী সম্পদের মালিক। এরা ধনী। উত্তর কোরিয়ার প্রশাসন ও জানেন যে তাদের পক্ষে জনগনের প্রকৃত চাহদা তাদের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। লিখক এই ক্ষেত্রে মন্তব্য করেছেন, ১৯৯০ সালে মারাত্মক বস্তুগত চাহিদার অভাবেই সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে। কিন্তু পিয়ং ইয়ং কে তেমন নাড়া দিতে পারে নাই। দক্ষিন কোরিয়ার জনগন প্রচুর পরিমানে ভোগ্যপন্য ব্যবহার করতে পারছে । সেই তুলনায় উত্তর কোরিয়ার মানুষ তেমন কিছুই পাচ্ছেন না । কিন্তু সরকার তাদেরকে জাতি প্রেম ও সেনা শক্তির বহর দেখিয়ে শান্ত রাখতে পারছেন। নানা দেশ থেকে সাহায্য নিয়ে বাহাদুরী দেখাছে তারা । কিন্তু নিজ দেশের বাহিরে তাদের কোন আইনগত ভিত্তি নেই।
উত্তর কোরিয়ার জাতিগত আদর্শ জাপানী দখলদারদের সময়ের জাতিগত অবস্থা থেকে ভিন্ন প্রকৃতির। অন্যের পরাধীনতা থেকে মুক্তি যে কোন জাতিকে নয়া এক পরিস্থিতি উপহার দেয়। যদি ও এখন উত্তর কোরিয়া মার্কিনীদের সাথে এক ধরনে মিসাইল প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছেঃ “জাতিগত মতবাদ মার্ক্সবাদ ও লেনিনবাদের সাথে একেবারেই সামঞ্জস্যশীল নয়; সম্পূর্ন অর্থহীন ভাবে উত্তর কোরিয়া পশ্চিম বা পূর্ব কোন দেশের সাথেই সম্পর্ক বজায় না রেখে এক বিচ্ছিন্ন জীবন বেচে নিয়েছে। কিন্তু আমরা যখন উত্তর কোরিয়ার আদর্শ হিসাবে সাম্যবাদকে সামনে আনি, তখন আমাদের সামনে এসে হাজির হয় জাপানী ও জার্মানীর ফ্যাসিবাদি চরিত্র। কোন দলিলই আমাদেরকে বলে না যে, উত্তর কোরিয়া দুনিয়ার কোন এলাকা এমন এক ইঞ্চি জায়গা ও দখল তার জন্য করেনি, কেবল একা একা থাকার জীবন যাত্রা ওরা বেচে নিয়েছে। ওরা আমেরিকাকে ও আক্রমন করতে চায় না যদি ও বলে অতীতের অপরাধের শাস্তি তারা একদিন আমেরিকাকে দেবেই। আবার এর মানে এও নয় যে তারা বিশ্ব ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন চায়। নাজিরা যেমন চাইত তারা দুনিয়ার শ্রেস্ট জাতি তাদের মত তারা বিশ্ব শাসন করবেন । উত্তর কোরিয়া আবার সেই রকম ও নয়। অন্য দেশকে এরা শাসন ও করতে চায় না । নিজেদেরকে সাম্রজ্যবাদি প্রকৃতির করে তুলতে ও চায় না”। লিখকের বর্ননা এবং উওর করিয়ার আদর্শ অনুসারে, এরা জাপানীদের মত সাম্রাজ্যবাদি হিসাবে নিজেদেরকে ভাবতেই পারে না । ঐতিহাসিক ভাবে তাদের উচু রক্তের দাবীদার হলে ও তারা বারা বার ই পরিস্থিতির শিকারে পরিনত হয়েছে। তাদের নেতারা তাদেরকে অস্বাভাবিক ও বিভ্রতকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। তাদের দেশীয় প্রচার মধ্যমে ও প্রচুর বালক শুলভ আচারন দেখা যায়। তাদের বিশুদ্বতা ও তাদের মধ্যে দূর্বলতা তৈরী করে । তাদের বর্নবাদ বা জাতিবাদ তাদেরকে বিশ্বের কাছে আলাদা করে তুলেঃ “ ১৯৪০ সালের শেষের দিকে সোভিয়েত কোরিয়ান বন্দ্বুত্বপূর্ন একটি সম্পর্কের মাধ্যমে তারা একটি ভিন্ন ধরনের জাতি সত্ত্বা সম্পর্কে দৃস্টি ভঙ্গী গড়ে তুলে। লিখক বলেন বিদেশী বিশেষ করে রাশিয়ান নার্স ও মহিলা চিকিতসক দিয়ে কোরিয়ান হাসপাতাল গুলো পূর্ন করে দেয়া হয়। কোরিয়ার জনগন তাদের সেবা পেয়ে তাদের মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য উন্নয়নের অবস্থা দেখে নিজেদের দৃস্টিভঙ্গীর আমূল পরিবর্তন করেন। তখন ও তাদের নেতারা বলতে থাকেন, সোভিয়েতরা ভালো তাদের উপর ভরসা করা যায়। তারা বলেন নৈতিক ভাবে রাশিয়ানগন উন্নত। আমাদের মা ও শিশুদের বিকাশের জন্য তাদের ভালো কাজের সহায়তা নিতে বাধা নেই”। লিখক আরো বলেনঃ “রক্ত ভিত্তিক বা বংশ ভিত্তিক জাতিয়তাবাদি ধারার জন্ম দিয়েছিলো জাপানী সাম্রাজ্যবাদ, কিন্তু কোরিয়ান চিন্তাধারায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। তারা ঐতিহ্য ও সুসম্পর্কের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। কিম নিজেই ঘোষনা করেন, সোভিয়েত সংস্কৃতি “উন্নততর”। সেই কথা নিয়ে নানা বিতর্কের সূত্রপাত হলে ও তা হালে পানি পায়নি। বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র/ ছাত্রীরা রাশিয়ান ভাষা ও সংস্কৃতি শেখায় এগিয়ে আসেন। তা অনেকে তাদের সামাজিক মর্যাদার সোপান হিসাবে বিবেচনা করেন। সোভিয়েতের প্রতি তাদের আগ্রহ মূলত “মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের” প্রতি আগ্রই প্রকাশ করে। তবে পরে সোভিয়েত পতনের পর তারা সকল ক্ষেত্রে “মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ” কথা গুলো বলতে চাইছেন না । বিশেষ অনুমতি ছাড়া মার্ক্স ও লেনিনের লিখা পড়া নিষিদ্ব করা হয়। পক্ষান্তরে, জুসা কে একটি আদর্শ হিসাবে হাজির করার প্রায়স চালায়। স্থানীয় পর্যায়ের প্রাচার মাধ্যম বলতে শুরু করে দেয় তারা সত্যিকার মার্ক্সবাদ চর্চা করছেন। লিখকের মতে উত্তর কোরিয়া তার নিজস্ব ধরন অনুসারে মার্ক্সবাদের চর্চা করছেন। যদি আমরা লিখকের কথা সত্য ধরে নেই । তবে বলতেই হবে, অবাক কান্ড হলো কোরিয়া একাই সকল কিছু বুঝে নিয়ে ইন্টারনেট ভিত্তিক ফ্যাসিবাদ, জাতিয়তাবাদ ইত্যাদি বিষয়ে গেইম সহ নানা পন্থা অবলম্বন করে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল লোক তৈরীর চেস্টা করছে। কিন্তু আসল সত্যি হলো উত্তর কোরিয়া কোন ফ্যাসিবাদি দেশ নয়, এরা আসলে জাতিয়তাবাদি বুর্জোয়া রাস্ট্র, তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসাবে এরা সাম্রজ্যবাদের বিপক্ষে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছেন। মার্কিনীদের দ্বারা এরা নানা ভাবে নিগৃহিত হয়েছেন। লিখক বলতে চেয়েছেন, জাপানিদের সাম্যাজ্যবাদি চিন্তাধারা কোরিয়ানদের মাঝে বিস্তৃতি ঘটেছে। ফলে এরা তাদের দাবার গুটি হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। সোভিয়েত ফ্যাসিবাদের প্রভাব ও তাদের উপর বিদ্যমন আছে। তাই সর্বদাই উত্তর কোরিয়া পশ্চিমা দেশ সমূহ ও আমেরিকার বিরুধিতায় লিপ্ত আছেন। অথচ জাপান দ্বিমূখী নিতি গ্রহন করে নানা ধরনের খেলা খেলেছে । যেমন- বিশুদ্বতা বনাম অবিশুদ্বতা, পরিচ্ছন্নতা বনাম অপরিচ্ছন্নতা, সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদের বিনাশের কথা ও এরা বলেছে। উত্তর কোরিয়া সাম্রাজ্যবাদের চরম শত্রু হিসাবেই নিজেদের নীতি মালা প্রনয়ন ও অনুসরন করে এসেছে। দুই মহান নায়কের গল্প… কিম ইল সাং জাপান সাম্রাজ্যের মতই কার্যকরী ভূমিকা রাখতে গিয়ে নানা ধরনের চরিত্র ধারন করেছেন। সম্রাট হিরোহিতুর মত সাদা কাপড় পরিধান করেছেন, এর লক্ষ্য নিজেকে বিশুদ্ব রক্তের ধারক প্রমান করা । হিরোহিতুকে এক সময় সাদা পাহাড় ও সাদা বরফের সাথে তুলনা করা হত, তাই কিম ইল সাং কে ও তাই করা হয়। যখন হিরুহিতুকে বলা হল সাদা ঘোড়া কিম ইল সাঙ্গকে ও তাই বলা হলো। এমন কি পিয়ং ইয়ং সাদা বাজার, রাস্তা ঘাট ও মার্বেল পাথরের শহর গড়ে তুলতে লাগলো। কিম ইল সাং কে “মহান নেতা হিসাবে” নানা জায়গায় লিখে ও মুর্তি হিসাবে জনতার সামনে হাজির করা হলো। কিম ইল সাং এর জীবনী নতুন ভাবে লিখা হলো। তিনি যে সোভিয়েত ইউনিয়নে বসবাস করেচিলেন, চীনের যুদ্ব ক্ষেত্রে লড়াই করেচিলেন তার পরিবর্তে দেখানো হলো তার জন্ম স্থান হলো পিক্তু পাহাড়ের এলাকা । তাংগুয়ানের জন্ম স্থানের নিকট যা পরে দক্ষিন কোরিয়ার অন্তর্ভূক্ত হয়। কিম জং ইলের জীবনী ও আবার পুনঃ লিখনের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি জন্মে ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে কিন্তু এখানে দেখানো হলো পিক্তু পাহাড়ের পবিত্র ভূমিতে । তিনি সেই পবিত্র ভূমিতে চীনের জন্য লড়াই করেছিলেন। তার জীবনীতে দেখানো হলো যে, তিনি বিশুদ্ব জাতির লোক হিসাবে কাজ করেছেন। তাকে প্রাচীন জাতির লোক হিসাবে “ ব্যাপক প্রচার করা হয় যে, কিম ইল সাং ‘ হলেন মাতৃভূমির প্রতিক’”। লিখক আমাদেরকে জানান যে, উত্তর কোরিয়ার ব্যাক্তিবাদ মার্ক্সবাদি ব্যাক্তিবাদের প্রকৃতি থেকে কিছুটা ভিন্ন । ইহা ফ্যাসিবাদি ব্যাক্তিবাদের চেয়ে ভিন্ন ধরনের । স্ট্যালিন ও মাওসেতুং কে মহান শিক্ষকের মর্যাদা দেয়া হয়, মার্ক্সীয়ান কতৃপক্ষ তাদেরকে বিপ্লবী বিজ্ঞানের মহান গুরু হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। আপর দিকে কিমের গুরুবাদকে আরো আলাদা করে দেখা হয় তাতে অনেকটা আদিবাসী প্রভাব ও বিদ্যমান আছেঃ কিম “ তিনি মহান, জিবন্ত, সুপ্রিয়, এবং পবিত্র কোরিয়ান- তিনি কেবল কোরিয়ান এবং কোরিয়ান হিসাবেই চীর দিন বেচে থাকবেন”। লিখকের মতে, প্রচারনাকারী চক্র তাদের প্রচারনায় বলতে লাগলেন যে, নেতাদের যোগ্যতা জন্মগত ভাবেই বিদ্যমান থাকে। তা কেহ চেস্টা করে অর্জন করতে পারেন না । তারা পারিবারিক ধারাবাহিকতাকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিতে থাকেন। ১৮৬৬ সালে মার্কিনীদের উপর দাদা কিম ইল সাং এর আক্রমনকে ফলাও করে প্রচার করতে থাকেন। তার পিতা কিম ইলজং কে সকল প্রতিরোধের জন্য প্রেরনার উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাদেরকে তাদের মহা নায়ক তাংগুয়ান, ও তার জন্ম স্থান পিক্তু পাহাড়ের সাথে তাকে সম্পৃক্ত করার একটা প্রয়াস আমরা লক্ষ্য করি। আর পিয়ং ইয়ং কে সকল প্রতিরোধের জন্য অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তরুন রাস্ট্র নায়ক তার সকল প্রকার প্রচারনায় চুড়ান্ত ভাবে জাতিগত বর্ণবাদ কে তুলে ধারার প্রয়াস চালিয়েছে। এই ধরনের পারিবারিক প্রভাব প্রতি পত্ততির প্রচারনা ধরে রেখেছে কিম ইল জং আর এখন ও সেই কাজ করে চলেছেন কিম জং উন। “ একটি দেয়াল পোষ্টার ২০০৯ সালে গানের ছন্দে জনগণকে , কিম উন জং কে শুভেচ্ছা জানিয়ে সারা উত্তর কোরিয়ায় সাটানো হয়। কিছু কথা এমন ভাবে যুক্ত করা হয় যেখানে তার পিতাকে বলা ছিলো জেনারেল (তিজিয়ান) সেখানে বলা হলো (চেংগুয়ান), বর্ননা করা হলো ‘তিনি হলেন মাঙ্গওয়ান, যার মানে দাঁড়ায় কিম ইল সাং এর জন্ম স্থান ও পিক্তু পাহাড়ের কথা । সেখানে কিম জং এর জন্ম হয়েছে বলে ও বলা হয়। এমন ভাবে কিম পরিবারকে দেখানো হলো যাদের উৎপত্তি হয়েছে কোন মহান কর্ম সম্পাদনের জন্য যারা দির্ঘকাল অন্তরালে ছিলো । সামগ্রীক ভাবে তাদের প্রচারনা ও প্রপাগান্ডা দেখলে পাগলামী ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না”। নেতৃত্বের সূচনা হয়েছে কিম ইল সাং থেকে, লিখকের মতে শিশু সূলভ বর্ণবাদের উন্মেষ হয়েছে তার সময় কাল থেকেইঃ “ বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করা যায় যে, একজন নেতা যখন চরম অজ্ঞতায় নিমিজ্জিত তিনি কেমন করে বিজ্ঞতার সাথে বিপ্লবী কর্ম সম্পাদন করতে পারেন। ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত লিখক দেখেন- কিম রাজকার্য চালাতে গিয়ে প্রচার করেছেন, তার না কি উন্নয়নের ভালো ভালো ধারনা গুলো এসেছে ঘুমের মধ্যে। তার প্রাচারনা কারীরা জনগণের মতামতকে প্রভাবিত করার জন্য নানা কৌশলের আশ্রয় গ্রহন করে। যুদ্বের ময়দানে যেমন একজন যুদ্বাকে নানা ভাবে উৎসাহিত করা হয় – তার তেজ, রনকৌশল, সমর জ্ঞান, চরিত্রের দৃঢ়তা ইত্যাদির উল্লেখ করা হয় তেমনি তাকে ও সেই ভাবে প্রাচারকগন সাধারন মানুষের সামনে হাজির করেন”। তবে লিখক বলেছেন তাদের শাসন কালকে কোন ভাবেই কনফুসিয়ান হিসাবে বর্ননার অবকাশ নেই। যদি ও কোরিয়ানদেরকে শিশু সুলভ জাতি হিসাবে বলা হয়েছে কিন্তু তারা তাদের নেতাকে পিতা হিসাবে প্রচার করেন নাই। কিন্তু মাতৃত্বের বিষয় নানা ভাবে প্রচারনায় স্থান পেয়েছে। লিখকের মতে, উত্তর কোরিয়ার আদর্শে পিতৃতান্ত্রিক গুনাবলীর চেয়ে মাতৃতান্ত্রিক গুনাবলীর বিজয় দেখানো হয়েছে। তারা মনে করেন, জয়ী হতে হলে বা নেতা হতে হলে মাতৃতান্ত্রিক গুনাবলী অর্জন করা দরকার ।
মাতৃভূমি, মাতৃপার্টি, মা জননী ও শিশু জাতি

‘পবিত্র জাতি’ পুস্তকটির লিখকের ভাষ্য হলো এখানে উত্তর কোরিয়ায় যে ভক্তিবাদের সৃজন হয়েছে এর মূল মন্ত্র পিতার চেয়ে মাতার প্রভাব বেশী। দেশীয় চিন্তা ভাবনায় “পিতৃভূমির” চেয়ে “মাতৃভূমির” প্রাধান্য অধিকতর। কিম জং ইল বলেনঃ “আমাদের বাড়ী ঘরের মালিক হলেন মায়েরা ….[তারাই] সত্যিকার জীবন দায়ী আর এরাই আমাদের জীবনের সকল স্তরে শান্তির বসন্ত আনতে পারেন”। মাইথলজিক্যালি ও কোরিয়ার আদর্শকে মাতৃতান্ত্রিকতা প্রভাবিত করে রেখেছে। এই দ্বীপে হাজার বছর আগে যে কোরিয়ান জাতির উতপত্তি হয়েছিলো। সেই জাতিকে আরো এগিয়ে নেবার জন্য তাংগুয়ান এগিয়ে আসেন। তিনি পিয়ং ইয়ং কে রাজধানী বানিয়ে একটি জাতি রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেন। কিন্তু কোরিয়া বার বারই আক্রমনের শিকার হয়েছে। চীন, জাপান এবং আমেরিকা কোরিয়াকে বার নিপিড়নের শিকারে পরিনত করেছে। এমন কি কোরিয়ার বিশুদ্বতাকে এরা কুলষিত করেছে। কিন্তু যখন পবিত্র পুরুষ নেতা হিসাবে আভির্ভুত হলেন তিনি তার অসীম ক্ষমতা বলে জাতিকে ঐক্যবদ্ব করে এগিয়ে নেবার প্রায়স পেলেন। কিম রাজকীয়তার বিকাশ ঘটার পরই কোরিয়া মুক্ত হয়েছে। কোরিয়া শিশুর মত শান্তি ময় পথে এগিয়ে চলেছে। একেই ভাবে, কোরিয়ার ওয়ার্কাস পার্টি তাদের বাস্তবতা তুলেধরার জন্য চেষ্টা চালায়। ২০০৩ সালে রোডং সিন ম্যান পত্রিকা লিখেঃ “ মহান নেতা কমরেড কিম জং ইল ঘোষনা করেন, ‘ আমাদের পার্টিকে একজন মায়ের মত গড়ে তুলতে হবে, যা দেশের জনগনকে সন্তানের মত উষ্ণ ভালবাসার মাধ্যম্যে লালন পালন করবেন। জনগনের ছোট বড় সকল দায় দায়িত্ব নিবে পার্টি। দেশের মানুষকে দেখে শুনে রাখা ও তাদের সুরক্ষা দেবার দায়িত্ব পার্টির’”। কোরিয়ায় “মা” সম্পর্কিত একটি বিখ্যাত কবিতা আছে। তা নিম্নে দেয়া হলোঃ “ ওহ! কোরিয়ান ওয়ার্কাস পার্টি তোমার ভেতরেই আমাদের জীবনের সূচনা এবং শেষ; আমি তোমার ভূমিতে শেষ শয্যা নিতে চাই, তোমার বাতাসেই আমি নিঃশ্বাস নেই আমি তোমারই সন্তান হয়ে থাকব, আমি তোমার বুকেই ফিরে আসব! তোমার ভালোবাসার ছায়ায় আমার শরীর হোক শীতল তোমার ভালোবাসার হাত থাকুক আমার মাথায়, আমি সকল সময়েই শিশুর মত কাঁদতে চাই, মা গো ! আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতেই পারব না !” মাতৃভুমি, মাতৃপার্টি এবং মাতাই হলেন নেতা। যুদ্বের সময়ে ও তরুন কিম ইল সাং কে যুদ্বের নায়ক হিসাবে দেখানো হয়নি। বরং তার মাতৃ মনের দয়ালু গুনাবলী প্রকাশে জোর দেয়া হয়েছে। কিম ইল সাং কে দেখানো হয়েছে কাঙ্ক্ষিত নেতা হিসাবে। তাকে দেখানো হয়েছে, “সৈনিকদের মাঝে হাস্য উজ্জল ভাবে তাদেরকে খাদ্য ও পানীয় নিয়ে হাজির হয়েছেন আর তাদের খোজ খবর নিয়েছেন”। তার স্ত্রী কিম চুং সাককে ও দেখানো হয়েছে সেবার প্রতিক হিসাবে। তাকে লেনিন, স্ট্যালিন বা মাওয়ের মত করে কখনো দেখানো হয়নি। কিম ইল সাং কে তারা কোথাও বুদ্বিজীবী বা সাধক হিসাবে জনতার সামনে হাজির করেনি। বরং সকল ক্ষেত্রে কিম ইল সাং কে মমতাময়ী মায়ের গুনাবলী সহ মানুষের সামনে দেখানো হয়েছে। নেতাকে দেখানো হয়েছে একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মত করে। তিনি পিতা মাতার সমন্বিত এক বিশেষ চরিত্রধারী এক মহান নেতা । লেখকের মতে, তার মধ্য দিয়ে মায়ের চরিত্রকে বিশেষ ভাবে প্রচার করা হয়েছে। মায়ের চরিত্র ধারনের জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। কিম ইল সাং নিজে বলেছেন, তার পিতার জীবনে সকল উন্নতির মূলে আছে তার মায়ের ভূমিকা। তিনি তার “ কিশোর বয়সের নানা উদাহরন দিয়ে তিনি মাতৃগুনাবলীর প্রসংশা করেছেন”। মায়ের মতই স্নেহের সূরে কিম ইল সাং তার বক্তব্য জনগণের সামনে পেশ করেনঃ “ সত্যিকার নেতার মত করেই তিনি তার কথা গুলো বলেন এইরূপ শিরোনামঃ ‘ গুলাকৃতির কচ্ছপ গুলো ভালো মাছ তা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর’। বিদেশীরা প্রায়সই কিমের উপদেশাবলী বুঝতেই পারেন না। (তিনি তো এমন মানুষ যে অন্যের কথা শুনেন আর মিস্টি হাসেন) সামগ্রীক ভাবে তিনি শিশু জাতি গঠনের জন্য তাদের বিশুদ্বতা বজায় রাখতে সকল কিছুই করেন, তিনি তার অন্যতা করেন না । তিনি নিজেকে কখনই শিক্ষক বা দীক্ষা গুরু মনে করেন না তিনি কেবল নিজে কে এখকজন কোরিয়ান হিসাবেই দেখতে চান। সংক্ষেপে বলতে হয়, তিনি সকল সমস্যার সমাধান করেন অত্যন্ত শান্ত ভাবে, রাগান্বিত হলে ও তা প্রকাশ করেন না । তিনি দুনিয়ার সকল কিছুকেই ভালোবাসার নজরে দেখেন। তিনি মানুষের দুঃখ দেখলে কাঁদেন, দুঃখের ঘটনা পড়ে ও কাঁদেন । এমন কি কিম যখন পিতৃ নেতার কথা বলেন তখন ও তিনি বলেন আমরা কনফুসিয়ান পিতৃতান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী নই। সংক্ষেপে বললে, বলতে হয় “পিতা” কোন বিশাল জ্ঞানী বা কর্তৃপক্ষ ও নয়, কোন শিশু ব্যাথা পেয়ে হাসপাতালে গেলে তিনি দ্রুত সেখানে চলে যান। অফিসিয়াল ভাষ্যে বলা হয়েছে, “ মহান জেনারেল একজন মহান পিতা-মাতা তিনি করিয়ান সকল শিশুকে ভালোবেসে বুকে তুলে নেন”। তাঁর ভালোবাসার বুকে কোরিয়ান শিল্প সাহিত্যের উন্মেষ ঘটেছে। তাঁর বুক থেকেই বিকশিত হচ্ছে বিশাল সাহিত্য ও শিল্পের তা অনেক নারী প্রতিভা ও বিকাশ ঘটিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার শিশু ও সৈনিকদেরকে কবর দেয়া হয়েছে তাঁর বুকের উপর। তাঁর মূখ অনেক নরম, সুন্দর এবং নারীদের মতই। “ মুল কথা হলো তিনি কোরিয়ার সন্তানদেরকে আদর করে বিছানায় রাখেন। লিখকের শিরোনাম হলো, “ পেরেন্ট লিডার জেনারেল কিম ইল সাং সন্তানদেরকে তাঁর বুকে রাখেন” তাদের জন্য ই কেবল কথা বলেন,” । উত্তর কোরিয়ার একটি বিখ্যাত গান নিম্নে দেয়া হলোঃ “ আমাদের নেতা আমাদের নিরাপত্তার জন্য সর্বদা প্রস্তুত তিনি আমাদেরকে মায়া করে কোলে নেন তাঁর ভালবাসায় আমরা খুব সুখী আমরা তাঁর বুকে মুখ রেখে চিরনিদ্রায় যাই আহ ! তিনি আমাদের নেতা ! আহ ! সন্তানরা তাঁর আলিঙ্গনে যেখানেই থাকেন, সর্বদা সুখেই থাকেন”! বলা হয় জনগন সকল সময়েই থাকবেন শিশুর মত আর অন্যদিকে নেতারা থাকবেন সহজ সরল ও যত্নশীল। রাষ্ট্র তা প্রচার করবে এবং সাম্যবাদের জয়গান গাইবেন। যদি ও মার্ক্সবাদের জনগণের প্রতি যত্নশীল হতে বলা হয়েছে কিন্ত সকলকে শিশু হয়ে থাকার শিক্ষা দেয়া হয়নি। বরং সকলকে সত্যিকার নায়ক হয়ে উঠার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো উত্তর কোরিয়ার আদর্শ জুসায় ভিন্ন কথা বলা হয়েছে। এই গুলো খুবই নিচু মানের চিন্তার প্রকাশ। জুসা আসলেই একটি লজ্জাজনক চিন্তার ফল।

লিখকের ধারনায় কোরিয়ার রক্ষা কবচ

“ ইতিপূর্বে বর্নিত বিষয় গুলো জাতিয়তাবাদের উন্মেষের জন্য মানসিক শক্তি যোগাতে অধিক আবেদনময়ী, কিন্তু কিম ইল সাং অভাবনীয় ভাবে আদিবাসী ও নায়কচিত চরিত্রের ন্যায় আবেগ প্রবন অবস্থার ভেতর দিয়ে নিজেকে পূর্ব ইউরূপীয় নেতাদের মত জনতার সামনে হাজির করবার প্রায়স পান। যাকে ব্যাখ্যা করার জন্য বৌদ্ব ও জেসাসের মত করে বলতে হয় যে, এদের মধ্যে নারী সূলভ একটি প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। এদের ধর্মীয় কিতাবাদিতে ও নারী বা মাতৃতান্ত্রিক একটা ভাবাবেগ ও আচরনিক দিক লক্ষ্য করা যায়। উত্তর কোরিয়ার জাতিগত তত্ত্বের ব্যাখ্যা বলা হয়েছে তাদের নেতা হবেন মাতৃসূলভ , শিশুসূলভ ও পিতৃসূলভ মানসিকতার লোক। যিনি তাদের জাতিকে সকল প্রকার শয়তানী চক্রান্ত থেকে সুরক্ষা দিবেন। আসলে মজার বিষয় হলো, যদি পিতৃতান্ত্রিক অবস্থার বিকাশ না ঘটে তবে সমাজে স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে এবং নিপিড়িত মানুষ বিদ্রোহ করার চেষ্টা করবে না । সি, ফ্রিড অ্যালফ্রেড লিখেছেন, ‘পিতাবিহীন সমাজের অবস্থা’ … সকল কিছুই প্রকৃতির মত, প্রকৃতি স্বভাবিক ভাবে অনেক কিছু দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে কেহ কিছু না করার উদ্যোগ নিলে কিছুই ঘটবে না, কেহ বিরুধিতা না করলে সামাজিক আঁধার ও ঘুচে যাবে না। সম্ভবত প্রচারনাকারীরা সিদ্বান্ত নিয়েই প্রচারে নেমেছেন যে, দেশের মাতৃনেতা হলেন কিম ইল সাং। তিনি একজন মায়ের চেয়ে ও বেশী ভালোবাসেন কোরিয়ান সন্তানদেরকে”। পিতৃতান্ত্রিক বিশ্বে, সাধারন জনগণের কাছে তৃতীয় লিঙ্গের লোকেদের গ্রহন যোগ্যতা নিশ্চিত করা সহজ নয় এমন কি মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য জায়গা দিতে ও পিতৃতান্ত্রিকতা রাজি নয়। এই রকম একটি বিশ্ব ব্যবস্থায় মাতৃতান্ত্রিক বিরুধীতা ও গ্রহন যোগ্য নয়, যা যতই প্রয়োজনীয় হোকনা কেন। তাদের প্রবনতাই হলো মাতৃতান্ত্রিক সমস্যাকে উপেক্ষা করা , মায়ের নিয়ন্ত্রনকে মেনে নেবার চিন্তাই করতে অভ্যস্থ নয়। শেষ কথা দাঁড়ায় মা আরো বিরুদ্বে অভিযোগ করেন না । কিম জং ইল মায়েদের মনোভাবকে তুলে ধরতে কি বলেন, “কুই চেরা চেরা” মানে “বল আমার আর কি করার আছে”। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব দুনিয়ার সকল জায়গায়র লোকেরাই চীনের উন্নয়ন দেখে প্রেরনা নিচ্ছেন। বিশ্বের প্রায় চার ভাগের একভাগ লোক সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সকল নিপিড়ন নির্যাতন থেকে বেড়িয়ে আসার প্রয়াস চালাচ্ছেন, সাম্যবাদ কায়েম করে তারা শোষন ও শ্রেনীর অবসান ঘটাতে চায়। সাংস্কৃতিক বিপ্লব ছিলো এর মধ্যে একটি প্রচন্ড ঝড়। চীনের ছাত্র/ছাত্রীরা তাদের সীমান্তে দাঁড়িয়ে কিম জং ইলের সমালোচনা করে বলেছেন তিনি সংশোধনবাদি হয়ে গেছেন। উত্তর কোরিয়ার প্রশাসন সেই কথায় কোন পাত্তা দেয় নাই । উত্তর কোরিয়ার প্রচার বিভাগ বলেছে চীনারা মাওয়ের শান্তির শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। উত্তর কোরিয়া চীনের প্রভাব থেকে দূরে থাকার নীতি গ্রহন করে বলেন যে তারা চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সমর্থন করেন না । তবে এটা সত্যি যে কিম জং ইলের চেয়ে মাওয়ের প্রভাব এই এলাকায় অনেক শক্তিশালী। “ ব্যাক্তিগত গুরুবাদ রাজত্ব ঠিকিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে। কিম জং ইল তাঁর কাজের অংশ হিসাবে তাঁর প্রচার বিভাগকে বলেছেন তারা যেন চীনের বিরুধী কর্মের শান্তি পূর্ন জবাব দেয় আর গুরুবাদের মহাত্ব তোলে ধরেন। মাওয়ের সমর্থক একজন বিখ্যাত কবি ডিপি আর কে এর প্রশংসা করে ‘ঠিকে থাক বিপ্লবের পথে’ কবিতা লিখে কিম জং ইলকে উৎসাহিত করেন। ১৯৩০ সালের কথা আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, মাও তাঁর লং মার্চের সময় অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করেছেন। সেই সময়ে যদি তিনি জাপানীদেরকে বিদেশীদের সাহায্যে বিতারিত করতে না পারতেন, তবে কিমের সাফল্য আসত না । সেই কথা গলো নানা ভাবে সোভিয়েত সহ তাদের দেশের বই পুস্তকে স্থান পেয়েছে। বিদ্যালয়ের পাঠ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে”। ভূয়া চিন্তাভাবনার উপর ভিত্তিক করে জুসার জন্ম হয়েছে। কিম জং ইলের একজন অন্যতম উপদেশক যিনি ভিন্নধরনের দার্শনিক যার নাম হলো কুয়াং চেং ইয়াপ, তিনি নেতাকে বুঝালেন তার উপর যেন নির্ভর করা হয় দর্শন সৃজনের জন্য । সেপ্টে- ১৯৭২ সালে জাপানী সংবাদ মাধ্যমে জুসার সংবাদ প্রচারিত হতে থাকেঃ “ জুসা/উন্নয়নের সূত্রকে ব্যাখ্যা করার জন্য বলা হয় ইহা হল বিপ্লবের চেতনা বা দেশ গঠনের মূল মন্ত্র। কেননা সত্যিকার অর্থে সাধারন মানুষই হলেন দেশ গঠনের চালিকা শক্তি। তাদেরকে তাই বিপ্লবের চেতনা ও নিজ দেশের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ভালো ভাবে বুঝতে হবে। তাদেরকে তা স্বাধীন ভাবেই বুঝতে হবে। তা না হলে সৃজনশীলতা জন্ম হবে না । বিপ্লব ও দেশ গঠনের আন্দোলন সাধারন জনগণকে নাড়া দিয়ে যায়। সেই সময়ে সকলকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়। সেই সামাজিক পুনর্গঠন করার কালে স্বাধীন অবস্থা ও সৃজনশীল অবস্থার পরিবেশ বজায় রাখতে হবে”। লিখকের মন্তব্যঃ “যখন জুসা চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করা হয় তখন তাদের অদ্ভুত শাসন ব্যবস্থা কথা উল্লেখ করা হয় নি, তখন ও তাদের চিন্তার ধৈন্যতা ধরা পড়ে। ব্যাপারটা এই রকম যে যেম্ন একজন কলেজ ছাত্রের থিসিস পেপারের মত যে কিনা তাড়াহুড়া করে শিক্ষকের নিকট থেকে পাশ করিয়ে নিতে চায়। সে চায় না শিক্ষক খুব ভালো করে পেপারটির আদি অন্তু পড়ুন। সেই সময়ে আবেগময়ী ভাষা ও কিছু কঠিন শব্দমালা ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদের বদনাম থেকে নিজেদেরকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করে। জুসা কার্যক্রমকে তারা তাদের সংবিধানের মৌলিক নির্দেশক হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। তবে প্রশাসন থেকে কিছু কিছু বিষয়ে বারন ও করা হয় যেন সেই সকল দিক কোন ভাবে লঙ্গন করা না হয়ঃ ‘মানুষ সকল কিছুর প্রভূ’, ‘ জন্মগত ভাবে মানুষ স্বাধীন ও সৃজনশীল’, ইত্যাদি। আমি একথা বলতে চাইনি যে তাদের আদর্শ সচল নয়, কার্যত তাতে ভ্রান্তি বা ভুল থাকলে ও তাকে একেবারে বাতিল ও করা যাবে না ।( তাদের বিচারিক মান ও ফেলনা নয়, কোন আদর্শের সকল কিছুই খারাপ বলা সমিচীন নয়।) কিন্তু জুসা আবার নিজেকে খুবই নরম প্রকৃতির বা ঔলোকিক আদর্শ হিসাবে ও ঘোষনা করে নাই; ইহা মানুষের আশা আকাংখার প্রতিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইহা জাতীয় জীবনের উন্নয়নের ও বিপদাপন্ন মানুষের সেবা করার একটি চমৎকার মাধ্যম হিসাবে হাজির করা হয়েছে । তা নেতাদের একটি সুরক্ষার ও ব্যবস্থা করেছে। কোরিয়ার জনগনের উচিত তাদের নেতাকে ধিন্যবাদ দেয়া, এমনকি তারা যা নিজের হাতে পরিশ্রম করে ও অর্জন করেন তার জন্য ও”। লিখকের আরো কথা হলোঃ “ জুসা ভূয়া-কাযর্ক্রম কোন ভাবে জনগনের জন্য কল্যান বয়ে আনেনি। ইহা কিম ইল সাং কে সিংহ বানিয়ে দিয়েছে তাকে পরিনত করেছে একজন মহান চিন্তাবিদ হিসাবে। তাঁর চিন্তাধারাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা অত্যন্ত ফলদায়ক, উপকারী ও জাতীয় সুরক্ষার এক মহা পরিকল্পনা । যা সরকারের নতুন করে ভাবার কোন অবকাশ নেই। আরো একটি বিষয় হলো এখানে বাহিরের লোকদেরকে কথা বলা কোন সুযোগ দেয়া হয়নি। এবং এমন একটি ধারনা কোরিয়ানদের সামনে পেশ করা হলো যেখানে বলা হলো যে অন্যন্য জাতি গুষ্ঠির লোকেরা প্রায়সই ফ্যাসিস্ট প্রকৃতির। তারা রাস্ট্রীয় জাতিয়তাবাদের ধারনাকে প্রচারে যুক্ত করে নিজেদেরকে স্বনির্ভর পন্থার প্রতি আহবান জানালেন। নানা সময়ে সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা আক্রান্ত জাতির লোকেরা তা সহজেই গ্রহন করে নিলেন”। মাওসেতুং সত্যিকার ভাবেই জনগণের নেতা ছিলেন। মাও একজন সত্যিকার জ্ঞানিও ছিলেন। তিনি বলতেন, কেউ যখন সাধারন ভাবে চিন্তা করেন, তখন সেটাই হয় গভীর চিন্তা । এখন দুনিয়ার মানুষ একটি বিপ্লবী চিন্তার কথা ভাবছেন, নয়া দুনিয়ার পথ খোজছেন, মাও কে অধ্যয়ন করছেন আর আনা বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন। পক্ষান্তরে, জুসা এমন একটি বিষয় যা অধ্যয়নের সুযোগ নেই, তা কেবল মানুষ মানবে জানবে না – কোন পুস্তিকা ও সাধারন মানুষের নাগালে নেই – শিশুর মত এই কোরিয়ান জাতি (যাদের মূখে কথা বলার শক্তি নেই, চেয়ে চেয়ে দেখেই যেতে হয়) তারা তাদের নেতাকে মহান মাওয়ের মতই বিবেচনা করে থাকেন । সত্যিকার অর্থে এটা ও জুসার একটি বড় লজ্জা বা অজ্ঞতা।


ওরিয়েন্টালদের মত, বন্দ্বু ও শত্রুকে একাকার করে দেখেছে জুসেঃ

“ যখন বিদেশীরা জুসেকে ইংরেজী ভাষায় পড়েন তখন তাঁর এর মাঝে কোন সারবত্ত্বা খোঁজে পান ? পহেলা কথা হলো ১৯৭০ সাল থেকে ইহার রচনা প্রকাশিত হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার রহস্যময় রিতিনীতির প্রতি মানুষের আনুগত্য বিশ্বের দরবারে স্বভাবিক ভাবেই গ্রহন করা হয়েছে। দ্বিতীয় কথা হলো আধুনিকতা উত্তর পাঠকদের নিকট তাদের নিরবতা, আচরনের অস্পস্টতা, এবং নির্লিপ্ততা সত্যি দুর্বোধ্যতা হিসাবে দেখা দেয়। উত্তর কোরিয়ার আদর্শ এখন তাদের বিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ে, ফিল্মে, এবং চিত্রকর্মে যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা ও কিন্তু স্পষ্ট নয় । বলা হয় তারা জাতি ভিত্তিক জাতিয়তাবাদের কথা বলে না কিন্তু তাদের আদর্শ হলো জাতি ভিত্তিক। বুদ্বিজীবী সম্প্রদায়ের লোকেরা জুসের ধীর গতি নিয়ে নানা সময়ে আলোচনা করেছেন। বাস্তবে অনেক সময়েই তাঁর গড়মিল দেখা গেছে। ঐতিহাসিক ব্রুস কামিংস, ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গীতে বললেন, ‘ দুনিয়ার নন কোরিয়ানদের কাছে সত্যি কোরিয়া সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই’ । তারা সকলকেই এক ধরনের বোকা বানিয়ে রেখেছে ! জুসে সম্পর্কে প্রশাসনের সকল তথ্য কখনই সকলের সামনে প্রচার করা হয় না । কিম ইল সাং সত্যি একজন মেধাবী মানুষ। যখনই তাঁর কোন কিছু কেহ পাঠ করেন তখন অবশই কিছু না কিছু নতুনত্ব পেয়ে থাকেন”। বস্ত্রহীন সাম্রজ্যবাদ চীনের মাওবাদি দৃস্টিভঙ্গী ও উত্তর কোরিয়ার প্রশাসনের দৃস্টিভঙ্গীর মধ্যে বেজায় ফারাক বিদ্যমান। উভয়ই দেখাতে চায় তাদের ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা আছে। উভয়ই গুরুবাদের সমর্থক। তাদের উভয়ই যৌথ ব্যবস্থার কথা বলেন তবে তাদের মধ্যে এই বিষয়ে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। যেসময় কালে চীনে গুরুবাদের চর্চা হয়, তখন যৌথ ব্যবস্থা সংকুচিত হয়ে পড়ে, উত্তর কোরিয়ায় তখন জাতি ভিত্তিক জাতিয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। চীনের নেতৃত্ব দেখাতে চেষ্টা করেন যে সেখানে নানা ক্ষুদ্রজাতি সত্ত্বা ভালো ভাবে জীবন যাপন করছেন। মাও নিজে ও চীনের প্রসাশন বিদেশী মেহমানদের প্রতি ব্যাপক সম্মান প্রদর্শন করেন। মাও দুনিয়ার ছোট ছোট কমিউনিস্ট পার্টি গুলোর প্রতি তাঁর সমর্থন জানান। এমন কি একজন মার্কিন বিপ্লবী কালো মানুষের নেতা রবার্ট এফ উইলিয়ামকে তিয়েনানমান স্কয়ারে লিন পিয়াং এবং মাওয়ের সাথে বিশাল সভায় সম্মান দেখানো হয়। চীনের সকল পত্র পত্রিকা দুনিয়ার সকল জায়গায় যে সকল কমিউনিস্ট আন্দোলন চলছিলো তাঁর প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন ও তাদের সংবাদ পরিবেশন করে। পক্ষান্তরে, উত্তর কোরিয়ায় যারা আসেন তারা কেবল নেতাকে সম্মান জানাতেই আসেন। মাওবাদি গুরুবাদের ধরন আসলে মার্কসীয় গুরুবাদেরই নামান্তর মাত্র। মাও নিজেই একবার বললেন তিনি মানুষের মাঝে একজন শিক্ষক হিসাবেই বেচে থাকতে চান। কমিউনিস্টদের লক্ষ্য হলো জনগনের উত্থান, মানুষের ক্ষমতায়ন, মানুষকে নেতায় পরিনত করা। শ্রম বিভাজনে নেতা ও কর্মীর ব্যবধান দূর করে শ্রেনী ব্যবধান বিলুপ সাধন করা। পক্ষান্তরে, উত্তর কোরিয়ার সকল চেষ্টা হলো তাদের বিশুদ্বতা, ও নিরপরাধ শিশু জাতি সত্ত্বার হেফাজত করা। মার্ক্সীয় চেষ্টা হলো মানুষের ক্ষমতায়ন করে তাদের নিজের ভাগ্য নিজে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমাতা অর্জনে সক্ষম করে তুলা । আর উত্তর কোরিয়ার সকল উদ্যোগ হলো তাদের জাতীয় স্বকীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করা । লিখকের ভাষ্যঃ “ তাদের বিশ্বাস হলো ‘মানুষ আসলে এক এক জন শিশু’ , এই কথা বলেছিলেন ফ্রান্সের বিখ্যাত সাধক সেইন্ট জাস্ট। লেনিন ও কমিউনিস্ট পার্টিকে শিশু নিকেতন হিসাবে বর্ননা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সোভিয়েত পার্টি একজন প্রশিক্ষকের মতই পিতার ভূমিকা পালন করবে। মানুষের মন ও মনন কে “নতুন রূপে” গড়ে তুলবে। একজন মার্কিন বুদ্বিজীবী স্ত্যালিনীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতায় এক জন মানুষ নিজে কে গড়ে তুলবেন। নিকুলাই অস্ট্রভস্কি’র ‘কিভাবে ইস্পাত গরম হয়’ (১৯৩৬) উদারন হিসাবে উল্লেখ করা যায়, তিনি বলেছিলেন, লেনিন স্ত্যালিনের শিক্ষার মাধ্যমে অস্ত্রসহ প্রশিক্ষন দিয়ে বুদ্বিমান তরুন ‘ইতিবাচক নায়ক’ তৈরি করা যেতে পারে। পক্ষান্তরে, উত্তর কোরিয়া বুদ্বিজীবীদেরকে শৃঙ্খলিত রাখার পথ বেচে নিয়েছে। কেননা কোরিয়ানগন মনে করেন তারা জন্ম গত ভাবে বিশুদ্ব এবং নিস্বার্থ, তারা নিজেরাই সকল মন্দ্ব বিষয় দূর করতে সক্ষম। তবে তারা কোন কোন সময়ে বুদ্বিজীবীদেরকে ও সমরে যুক্ত হতে বলে যদি তারা বাইরের কোন শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হন। তাদের ক্যাডারগন হবেন খুবই স্বাভাবিক ধরনের, জটিল হবেন না, আর বইয়ের পোকা ধরনের লোকেরা কিছু জটিল হয়ে থাকেন। সংক্ষেপেঃ যেখানে স্ত্যালিনবাদ শিক্ষিত মানুষকে সকলের উপর রাখেন, সেখানে উত্তর কোরিয়া করে এর বিপরীত কাজ। যখন ব্রিটিশ কিছু বন্দ্বু ডিপিআরকে র জন্য তাদের জীবন ভিত্তিক ফিল্ম তৈরী করে নাম দিলেন রাষ্ট্রের মন (২০০৪) এবং দেখালেন পিয়ং ইয়ং এ, তখন কর্তৃপক্ষ এর নাম বদল করে রাখলেন ‘দেশের হ্রদয়’ ”। শ্রম বিভাজনের মাধ্যমে সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসনের পরিবর্তে উত্তর কোরিয়া নেতা ও কর্মীদের ব্যবধানকে বাড়িয়ে দিতে চায়, তারা নেতা দেরকে সাধারন জনগণের থেকে পৃথক করে হাজির করে থাকেন। তারা মাওবাদের তত্ত্বকে ও গুরুত্ব দিতে চায় না । যেখানে মাও চেয়েছিলেন পরিস্থিতির হাল নাগাদ করতে এই ভাবে যে, বুদ্বিভিত্তিক কর্মী ও সাধারন অদক্ষ কর্মী, দলীয় ক্যাডার ও সাধারন জনগণ, এবং নেতা ও কার্মীর মধ্যে ব্যবধান ক্রমে দূর করতে চেয়েছিলেন। চীনারা মাওবাদের চর্চা চালু রাখতে জনগণের সাথে যুক্ত থাকতে “বড় বিতর্ক” এবং “গন লাইন” এই পথ ধরে ছিলেন। “ নিম্নের ভাষ্যে, জাপানের সাথে যুদ্ব কালিন সময়ে প্রচারিত বিষয় ‘সেনারাই প্রথম’ এই তত্ত্ব হাজির করা হয়েছে। নেতা ও যুদ্বাদের মধ্যে আমরা একটি সুন্দর সম্পর্ক দেখতে চাই, যারা একেই রক্ত ও শ্বাস প্রশ্বাস বহন করছেন, যাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক বিদ্যমান, যারা হলে মা ও শিশুর মত, কোরিয়ে সর্বদা এই ভাবেই এগিয়ে যাবে। সাম্রাজ্যবাদীদেরকে তাদের পারমানবিক অস্ত্র নিয়ে আসতে দাও, দুনিয়ার বুকে এমন কোন শক্তি নেই, যারা আমাদেরকে পরজিত করতে পারে। আমাদের ভালোবাসা, বিশ্বাস ও রক্তের সম্পর্ক মা ও শিশুর বন্দ্বন নির্মান করেছে। আমাদের মন – প্রান সকল কিছুই এক। আমাদের মহান মা হলেন জেনারেল জং ইল”। তাঁর আরো ভাষ্যঃ “প্রচুর ঘটনা ও প্যারেড এমন আছে, যা টেলিভিশন সহ নানা গন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা গেছে ২০০৯ সালে ও কিম জং ইল গান গাইলেন ‘ আমরা বাঁচব না তাঁর বুক থেকে সরে গেলে’। এই গুলো কেবল রাজনৈতিক কথার কথা নয়; সেই দেশের জনগন ও ভাবতে লাগলেন তাদেরকে ঠিকে থাকতে হলে মন ও শরীর নিয়ে গঠিত যে সত্ত্বা বা নেতা তাকে অবশ্যই সমর্থন করতে হবে। যুক্তিতে না মানতে পারলে ও জাপানী ফ্যাসিবাদকে প্রতিরোধ করতে যে জানবাজি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো তা স্মরন করতে হবে, “ বাঁচতে হলে মরতে হবে” এবং “মানব বোমা সাজতে হবে” – জাপান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে লড়াই করতে গিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্বের সময় কোরিয়ান প্রচার মাধ্যম তা ব্যাপক ভাবে সম্প্রচার করেছিলো। ২০০৯ সালের গ্রীস্মকালে বৈকালিক সংবাদের সময় প্রচারিত হয় একটি গান যার শিরোনাম ছিলো “ আমরা আমাদের বিপ্লবের প্রধানের জন্য জীবন দিব”। সংবাদের শিরোনাম ছিলো, “ ১০ মিলিয়ন মানুষ অস্ত্র ও বোমায় পরিনত হয়েছে… জেনারেলের জন্য যে সৈনিক প্রান দিবে তাঁর উচ্চ সাম্মান প্রাপ্য”। জনগন তো নেতার জন্যই, এদের আর কিসের জন্য প্রয়োজন। এই ধরনের গুরুবাদি মানসিকতা হিরোহিতো, মাও, লেনিন ও স্ট্যালিনের চেয়ে ও বেশী। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্য ছিলো তাদের সমাজকে সত্যিকার সাম্যবাদের দিকে নিয়ে যাওয়া । মাওয়ের মতে, তাদের সমাজতান্ত্রিক সমাজে ও কিছু ইতিবাচক দ্বন্দ্ব বিদ্যমান আছে। তাই, আমাদেরকে বিপ্লবী কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেই হবে । নইলে আমাদের সমাজ পুন পুঁজিবাদে ফেরত যেতে পারে। সাম্যবাদি শিল্প কলায় জীবন-এবং –মৃত্যুকে অতি মাত্রায় দেখানো হয়েছে। তবে শিল্প কলায় উত্তর কোরিয়ার দৃস্টিভিঙ্গী সাম্যবাদ থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন ধরনের। ইহার দ্বন্দ্ব দেখানো হয়েছে বাহিরের সাথে বিশেষ করে আমেরিকার সাথে। তাদের ভেতরের দ্বন্দ্বকে তেমন গুরুত্বই দেয়া হয়নি। কিছু কিছু দ্বন্দ্বের কথা বললে ও তা নেতিবাচক নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে”। “ তাদের পার্টি দেশের ভেতরের দ্বন্দ্বকে গুরুত্ব দেয়নি, তবে কিছু ‘ব্যাতিক্রম’ দ্বন্দ্বের কথা বলা হয়েছে। তারা বলছেন গ্রাম ও শহরের দ্বন্দ্ব আছে, প্রবীন ও তরুনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে এবং পুরাতন চিন্তার স্বামীদের সাথে প্রগতিশীল স্ত্রীদের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান আছে। এই ধরনের কথা বার্তা সোভিয়েত প্রচারনায় ও স্থান পেয়েছিলো”। একজন সাম্যবাদির লক্ষ্যই হলো সাম্যবাদি সমাজ কায়েম করা । উত্তর কোরিয়ার সেই রকমের কোন ইচ্ছাই নেই। উত্তর কোরিয়া মনে করে তাদের দেশে কোন শ্রেনী দ্বন্দ্ব নেই । তা জাতিগত ঐক্যের ভেতর দিয়ে সমাধান হয়ে গেছে।

কোরিয়ানদের চোখে বিদেশীরা


জাতিগত আদর্শ ভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বিদেশীদেরকে ভালো চোখে দেখা হয় না। কোরিয়ান প্রচার বিভাগ আন্তর্জাতিক প্রলেতারিয়েত সম্পর্কে খুবই অল্প কথা বলেছে। কোরিয়ার যুদ্বের সময়ে তারা কেবল আমেরিকাকে গাল মন্দ করেছে। মার্কিন জনগণ, সোভিয়েত ও চীনের সাধারন মানুষের সমর্থন আদায়ের তেমন কোন চেষ্টাই করা হয়নি। নাজিদের সাথে যুদ্বের সময় সোভিয়েতরা জার্মানীর সাধারন মানুষের সমর্থন আদায়ের জন্য যে চেষ্টা করেছিলো ভুল হোক সঠিক হোক কোরিয়া তাঁর কিছুই করেনি। মার্কিন রাস্ট্র এবং নারী ও শিশুদের মধ্যে কোন পার্থক্য রেখাই টানেনি তারা। এমনকি শত্রু মিত্র প্রশ্নে ও তারা আমেরিকায় কোন ব্যবধান করেনই, প্রথম বিশ্ব কিছু সত্যি থাকলেও প্রথম বিশ্ববাদিদের দৃস্টিতে যে বিশাল সমর্থন পাবার সম্ভাবনার কথা বলা হয়, আসলে তারা বুর্জোয়া প্রথম বিশ্বের চরিত্রই ধরতে অক্ষম। তবে উত্তর কোরিয়া তা করে নাই সম্পূর্ন এক ভিন্ন ভুল ধারনার শিকার হয়ে। তাদের এই ধারনাকে ইসলাম পন্থীদের মানসিকতাঁর সাথে তুলনা করা যায়, তারা সকল পশ্চিমা দেশকে তাদের শত্রু ভেবে বসে আছেন। কোরিয়ার যুদ্বের সময়, কি হনছু লিখক যুদ্ববন্দ্বিদের সাথে খারাপ ব্যবহারকে প্রশংসা করে এবং উল্লসিত হন। ককেশিয় অঞ্চলের জাতিগত চরিত্র প্রকাশ পায়, এবং তা উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যম ব্যাপক ভাবে প্রচার করে। একজন লিখক এই বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, তাতে নাকি তাদের ভেতরের জমে থাকা “ক্ষোভের” বহি প্রকাশ ঘটেছে। তারা লজ্জাজনক ভাবে বন্দ্বিদের সাথে আচরন করাকে উপেক্ষা করেছেন। মার্কিনিরা যেমন ককেশিয়ানদেরকে এবং আফ্রিকানদেরকে নিন্দা করে বলেন এরা নাকি মার্কিনীদের রক্তধারাকে দূষিত করে দিচ্ছে। “ তাদের বই পুস্তকে প্রায়সই বিদেশীদেরকে ছোট ও হেয় প্রতিপন্ন করে বর্ননা করে থাকে, কোন কোন সময় ইহুদীদেরকে ও নিন্দা করে, আবার বেশীর সময়েই এরা জাপান ও আমেরিকান্দেরকে গাল মন্দ করে থাকেন। তা হয়তবা উপনিবেশবাদকালিন সময়ে ‘জাপ’ বিরুধী মনোভাবেরই প্রকাশ। পক্ষান্তরে, সোভিয়েত দ্বিতিয় বিশ্ব যুদ্বের পর জার্মানীকে সেই ভাবে চিত্রিত করে নাই। তাদের পুস্তিকাদিতে ও শ্রেনীগত ভাবে এদের মূল্যায়ন করে নাই; আসলে ঐতিহাসিক ভাবে এরা সকলেই প্রচন্ড লোভী । তাদের মানসিকতা দেখলে এদেরকে মানুষ ভাবতে ও কষ্ট হয়। তাই ১৯৫০ সালে কিম ইল সাং এর প্রকাশিত গেরিলা বইয়ে প্রতিশোধ গ্রহন ও বন্দ্বীদেরকে নিরস্ত্র করা সংক্রান্ত বক্তব্য হাজির করা হয়েছে”। এবং “ জাপদের মতই ইয়াংকীদেরকে ও নিন্দ্বা করে বলা হয়েছে এরাও উত্তরাধীকার সূত্রে হারামীর জাত তাদের মধ্যে কোন দিনই পরিবর্তন আসবে না, এই জাতিকে এরা সর্বদাই তাদের বিরুধী বা শত্রু হিসাবে ঘোষনা করা হয়েছে। পাঠকগন যেম মার্কসবাদের নামে বিভ্রান্ত না হন। তারা এই সকল কথা বার্তা নিজেদের দেশে অহরহ বলে বেড়চ্ছেন। তারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে বলেন (মিজি) এবং আমেরিকাকে বলেন (মিগুক) অন্যদিকে আমেরিকা তাদেরকে বলে জাড়জ সন্তান বা (নোম)। সম্প্রতি একটি মাসিক ম্যগাজিন পত্রিকায় একটি ছবি ছাপা হয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে একটি শিশু বন্দুক নিয়ে আহত একজন বরফ মানবের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এই ছবির ক্যাপশন ছিলো, ‘ জাড়জ সন্তান আমেরিকাকে আমি হত্যা করব’। ডিপি আর কে তাঁর স্কুল বই ও অন্যান্য পুস্তকের মাধ্যমে তাঁর নাগরিকদেরকে শিখিয়ে থাকে কেমন করে আমেরিকাকে গালি দিতে হবে। যেমন- ‘মুজ্জালস’, ‘স্নোয়াটস’, এবং ‘পাঊস’; ‘ডাইং’, এর বদলে বলে ‘ক্রোকিং’, ইত্যাদি। জাতিগত পশুত্বের ইতিহাস অনেক সুদির্ঘ। ঐতিহাসিক ভাবে সাম্রাজ্যবাদের এই বিষয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। কেহ কেহ বলতেই পারেন নানা সময়ে কোরিয়ানগন সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা আক্রান্ত হবার কারনেই এইরূপ আচরন করতেই পারে। আপাত এই কথা সত্যি ও সঠিক ধরে নিয়ে বলতে হয়, ক্ষোভ চেপে রাখার চেয়ে শত্রুকে ঘৃনা করা ভালো। তবে, এই ধরনের কৌশল দির্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সাম্যবাদে পৌঁছানোর জন্য উপযোগী নয়। মুক্তির সংগ্রামে যদি সূচনাতেই ঘৃনা জন্মে তবে তা যৌক্তিক পরিনতিতে পৌঁছায় না। ক্ষুদ্র মানসিকতার জাতিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের আন্দোলনে সফলতা পাওয়া কঠিন কাজ। এই ধরনের মানসিকতা কেবল সাম্রাজ্যবাদ নয় অন্যান্য জাতির লোকদেরকে ও শত্রুতে পরিনত করে দেয়। অনেক নিপিড়িত বন্দ্বু ও আপনাদের বিপক্ষে চলে যেতে পারে। এমন কি কোরিয়ান যুদ্বের সময় চীনের অনেক বন্দ্বু ও তাদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। বন্দ্বুদের প্রতি অবজ্ঞা সূচক সামগ্রীক পরিস্থিতি কারো পক্ষে থাকে না, লেখকের মতেঃ “ এক অদ্ভুত ভাবে ১৯৮৯ সালের বিশ্ব ইয়থ গেইমে পিয়ং ইয়ং বিদেশী বন্দ্বুদের প্রতি চমৎকার মনোভাব প্রদর্শন করেছে। তাদেদেরকে খোলা মনে আচরন করতে দেখলে মনে হয়েছে তাদের চেহেরায় এক ধরনের সন্দ্বেহের ছায়া। যখন একজন মোটা ককেশিয়ান মহিলা একটি সর্টকাট ব্লাউজ পড়েন, আর একজন আফ্রিকান নারী সময় উপযোগী টপস পড়েন তখন ডিপি আর কে সেই সকল পোশাককে ভালো ভাবে দেখেনি। তাদের দেশের পুরুষেরা ঢোলা ডালা পোশাক পড়ে চলা ফিরা করতে থাকেন আর তাদের দেশের মেয়েরা তাদের ঐতিয্যগত পোষাক পড়ে বিদেশীদেরকে গাইড হিসাবে সহায়তা করেছেন। রেলীতে কোন কোরিয়ানই ভালো ভাবে অংশগ্রহন করতে পারেন নাই; স্থানীয় অধিবাসী ও বিদেশীদের মিলনের তেমন কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন ও করা হয়নি। তাদের মনোভাব এমন যে বিশুদ্ব আর অশুদ্বদের মিলন হতে পারে না ; তাদের ফ্রেন্ডশিপ মিউজিয়ামে কেবল বিদেশীদের উপহার গুলো রাখা আছে এইভাবে । তাতে লিখা আছে ‘ এই উপহার নেতার জন্য’” । এই ধরনের প্রতিবেদন অনেক কুটনৈতিক ও করেছেনঃ “ পূর্ব ইউরূপিয়ান কুটনৈতিকগন নিজ নিজ দেশের নিকট প্রতিবেদন দিচ্ছেন এবং সতর্ক বার্তা পাঠাচ্ছেন। তাদের অনেককেই আক্রমন ও করা হয়েছে, শিশুদের দিয়ে তাদের প্রতি ঢিল ও পাথর ছুড়া হয়েছে। যে সকল কোরিয়ান নারী ইউরূপীয়ান পুরুষ বিয়ে করেছেন তাদেরকে তালাক দেবার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে বা রাজধানী ত্যাগ করতে বলছে। ( বিশেষ করে জার্মানীর নাজিদের ব্যাপারে কড়া কড়ি বেশী)। একজন সোভিয়েত নাগরিকের কোরিয়ান স্ত্রী যখন পিয়ং ইয়ং ভ্রমন করতে আসেন তখন তাকে বেদম প্রহার করে কোরিয়ান পুলিশ। ১৯৬৫ সালে উত্তর কোরিয়ায় কিউবান একজন কালো চামরার রাস্ট্র দূত ছিলেন তিনি তাঁর স্ত্রী ও কিছু বন্দ্বু ডাক্তার নিয়ে বেড়াতে রাজধানীতে আসেন পুলিশ তাদের গাড়ী গুলো ঘিরে ধরে এবং যা তা ব্যবহার করে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়। একেই বলে জাতিগত নস্টামির ক্ষুধার জ্বালা। কোরিয়ান জনগনের মাঝে ও তেমন কোন ‘সচেতনতা নেই’। অনেক উচু মাপের কুটনৈতিকগন বলেছে, ‘এরা এমন যে বন্দ্বু ও চেনেন না আবার শত্রু ও চেনেন না’। তারা কেবল বুঝেন এদের দেশ ই সকলের সেরা” । ২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়ার জেনারেল একজন অ্যামেরিকান ফুটবল তারকাকে সম্ভর্ধনা দেয়ার কারনে দক্ষিন কোরিয়ার প্রচন্ড সমালোচনা করেন, অথচ সেই ফুটবলারের মাতা পিতা হলেন কোরিয়ান। দক্ষিন কোরিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন অন্যান্য দেশের ছেলে মেয়েদের সাথে বিয়ে শাদিতে আবদ্ব হচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে উত্তর কোরিয়ার জেনারেলের ভাষ্য হলোঃ “আমাদের জাতির বিবেচ্য বিষয় হলো আমাদের বিশুদ্বতা সুরক্ষা করা, এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয় …. আমি চিন্তিত যে তা দিনে দিনে বিলুপ্ত হতে চলেছে”। যখন বলা হয় যে এই ধরনের কাজ “ হান নদীতে এক ফুটা খালি ফেলার মত ঘটনা” উত্তর কোরিয়ার জেনারেল উত্তরে বলেন, “ সুপ্রাচীন কাল থেকে আমাদের মাতৃভূমি প্রকৃতিক সুন্দর্যে অতুলনীয়। এখানে এক ফুটা কালি ও ছিলো না”। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ও উত্তর কোরিয়ার গনমাধ্যমে এই ধরনের বার্তা প্রচার করা হয়েছেঃ “ আমাদের একক জাতি সত্বা [টেনিলসং] এটা অন্য কোন দেশের সাথে তুলনা করা যায় না, আমাদের মত কেহই গর্ব করতে পারবে না … আমাদের জাতির লজ্জার কিছু নেই ‘আমাদের বহু জাতি গুষ্টি গত কোন সমস্যা বা নিপিড়ন নেই’… আমাদের জনগণের রক্তের পরিশোদ্বতার জন্য কিছু করার দরকার নেই” তাদের উপরোক্ত বক্তব্যের পাশা পাশি, তারা সমাকামিতার বিরুদ্বে ও আক্রমন করে বা পশ্চিমাদের যৌন বিকৃতির বিরুদ্বে কথা বলেন। ১৯৬৮ সালের বহুল প্রচারিত এক জন মার্কিন সেনা পাবলো র ঘটনা উল্লেখ করে কোরিয়ানগন মার্কিনীদের বিরুদ্বে প্রচারনা চালায়। গল্পটি আবার শোনা যাকঃ “ বলা হয়ে থাকে একজন মার্কিন নাবিক প্রচন্ড মানসিক অশান্তিতে ভোগছিলেন, ‘ গভীর ঘুমে নিমজ্জিত অবস্থায় একজন নারীকে দেখতে পায়। সেই নারী (আসলে ছিলো পুরুষ) সুসজ্জিত হয়ে তাঁর নিকট আসলে সে সমকামীতে পরিনত হয় যায়’। তাদের বই পুস্তকে সমকামীতাকে মার্কিন চরিত্রের বিকৃতি রূপে বর্ননা করা হয়েছে। এখানে পাব্লো র চরিত্রকেই এই বিকৃতির প্রধান কারন হিসাবে বলা হয়েছে। ‘ স্যার ক্যাপ্টেন, সমকামীতা একজন মানুষের ব্যাক্তিগত চাহিদা পুরন করে। এটা আপনার সরকার বা সনাম ধন্য জাতির কোন ক্ষতি করবে না । তবে তা ধর্মীয় ও আমার ব্যাক্তিগত কোন ক্ষতি হলে হতে ও পারে। ইহা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত বিষয়’। [ উত্তর কোরিয়ার একজন সেনা সদস্য উত্তর দেন ] ‘ আমাদের দেশে, লোকেরা মানুষের মত মানুষ হিসাবে জীবনযাপন করেন, আমাদের ভূমিতে এই রূপ আচরন একেবারেই মেনে নেয়া হবে না’ । দমন করা হবে”। লিখকের মতে, এটা হলো এমন একটি দেশ যেখানে আমেরিকাকে মানুষ একেবারেই দেখতে পারেন না, তাদের একটি বই নাম , দি জ্যাকল (১৯৫১) বার প্রকাশিত হয়েছে। ইহার প্রধান বক্তব্যই হলো কি ভাবে মার্কিন পাদ্রীরা উত্তর কোরিয়ার শিশুদেরকে বিষাক্ত বানী গিলানোর চেষ্টা করেছে। এই ধরনের প্রচারনা ছিলো মার্ক্সীয় সমাজে ভাংগন ধরানোর জন্য। সেমেটিক বিরুধীদের মাঝে ও এই রকমের প্রচারনা আছে”।


এই পুস্তকটি পাঠকদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটি বড় অস্ত্র


সুদির্ঘ কাল থেকেই উত্তর কোরিয়া উদার নৈতিক পন্থায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রায়াস অব্যাহত রেখেছে। তারা তাদের দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলার ব্যাপক চেষ্টা করেছে। উত্তর কোরিয়ার প্রচার মাধ্যম প্রকাশ করেছে যে তাদের দেশে সকলের চেয়ে কম মূল্যে শ্রম কিনতে পাওয়া যায়। তাই চীন তাদের পুজির এক বিরাট অংশ সেখানে বিনিয়োগ করেছে।


” তারা তাদের উদোগতাদেরকে কোন সহযোগীতা দেয়নি এমনকি তাদের অফিসিয়াল যে আদর্শ লিখা আছে তার প্রতি ও কোন সম্মান দেখায়নি। ‘ অর্থ উপার্জনই দেশ প্রেমের’ নীতি গ্রহন করে তারা। সংক্ষেপে বলতে হলে বলতে হবে সেই প্রশাসনের চেষ্টা সত্ত্বেও পুজিবাদের বিকাশ হয়নি।”
লিখকের মতামত হলো, সাম্রাজ্যবাদ যতই চেষ্টা করুক আর পশ্চিমা সংস্কৃতি রপ্তানি করার চেষ্টা করুন না কেন বর্তমান শাসক চক্রকে উৎখাত করা সহজ হবে না । তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের সময়ে ও পর্বতীতে ফ্যাসিস্ট সমাজে নানা প্রকার ভোগ্যপন্য উপকরন সরবরাহ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাতে ফলাফল ও পাওয়া গেছে। কিন্তু এই দেশে এই পদ্বতী কাজে আসবে বলে মনে হয় না । সেই দেশ তার আদর্শ থেকে কোন ভাবে সরে আসবে বলে মনে হয় না । এই দেশ ঠিকিয়ে রাখার জন্য তারা বেশ কিছু যোক্তি দাড়করিয়ে ফেলেছে।


আলোকিত সাম্যবাদিগন বহু আগে থেকেই বলে আসছেন যে, উত্তর কোরিয়া একেবারেই সমাজতান্ত্রিক দেশ নয়। ইহা কমিউনিস্ট দ্বারা পরিচালিত ও নয় বা এতা সাম্যবাদের দিকে ধাবিত ও নয়। এই পুস্তকে ও তাই বলা হয়েছে। বরং ইহা আইনগত ভিত্তি অর্জনের জন্য নানা রকমের বক্তব্য হাজির করেছে। ভাষা, সাংস্কৃতি ও কোরিয়ান ধারার জাপানী ফ্যাসিবাদি কথা বার্তা এরা প্রচার করেছে। তবে তাদের বক্তব্য কখনই খুব সরল ধারা ছিলো না । তারা ক্ষমতা ধর হিসাবে নিজেদেরকে প্রমানের জন্য প্রতিবেশী সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চায়নার সাথে সংশোধন বাদের সময়ে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে।


ফলত নর্থ কোরিয়া সমাজতান্ত্রিক রাজ হিসাবে বেশ কিছু নতুন মডেল, নয়া ভাষা, নয়া রীতিনীতি, এমন কি তা অবাস্তব হলে নিজেদের দেশে তা প্রয়োগ করতে চেষ্টা করেছে। নয়া শতাব্দিতে উত্তর কোরিয়া সমাজতন্ত্রের কথা বলা কমিয়ে দেয়। “সমাজতন্ত্র” শব্দের ব্যবহার কমিয়ে ভিন্নধারার কথা বলতে থাকে। স্বনির্ভরতার জিকির তুলে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে প্রতিযোগতা করতে গিয়ে চীনের সাথে অসম সম্পর্ক গড়ে তুলে। এরা সোভিয়েত ব্লকের পতনের আগ পর্যন্ত তাদের নিকট থেকে সাহায্য পেতে থাকে । উত্তর কোরিয়া এক সময় বিশ্বে দরিদ্রতম দেশের মধ্যে সকলের চেয়ে বেশী সাহায্য প্রাপ্ত দেশ হিসাবে গন্য হত। এরা সেই সাহায্যকে দেশের উন্নয়নের পরিবর্ততে মিলিটারী শক্তি বৃদ্বির কাজে লাগায় বিষেশ করে মিসাইল নির্মানের দিকে বেশী মনোযোগ দেয়। এই প্রশাসন স্থানীয় মানুষের চাহিদার প্রতি কোন গুরুত্ব প্রাদন না করে সাম্রাজ্যবাদের অনুসরন করতে থাকে। তারা মার্কিনীদের সাথে নানা ভাবে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। এই প্রশাসন নানা প্রচার প্রপাগান্ডায় ইরান ভেনিজুয়েলার মত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উত্তর কোরিয়া আলবার মত প্রথম বিশ্ববাদিদের মত নতুন বাজার তৈরীর কাজে জড়িত নয়। উত্তর কোরিয়া বলিবিয়ারান বা ইসলামিক আদোলনের মত সাম্রাজ্যবাদকে মোকাবেলার জন্য সুনির্দিস্ট কোন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও করছে না । এটা প্রধানত প্রতিবেশীর প্রতি বিরূপ আচরন করছে। উত্তর কোরিয়ার সাথে হিজবুল্লাজ বা হামাসের কোন সম্পর্ক ও নেই। যদি ও উত্তর কোরিয়া বলে থাকে তারা নিপিড়িত জাতি সমূহের নিকট পারমানবিক অস্ত্র বিক্রি করবে এবং এর মাধ্যমে এরা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটি প্রভাব সৃস্টির প্রায়াস চালাতে চায়। এই অর্থে উত্তর কোরিয়া সাম্রাজ্যবাদ বিরুধী একটি অগ্রগামী দেশের মর্যাদা পেতে পারে যদি ও তাদের পার্টনার সংখ্যা অতি নগন্য। উত্তর কোরিয়ার উচিৎ সাম্রাজ্যবাদের বিরুধী পক্ষকে সমর্থন করা, তবে তা খুব জনবান্দ্বব না হলে ও কম পক্ষে “স্ট্যালিনের ধারার সর্ব শেষ” হিসাবে ঠিকে থাকতে পারে। উত্তর কোরিয়া সত্যিকার ভাবে শ্রমিক বান্দ্বব নয় বরং এরা তাদেরকে নানা ভাবে অপ ব্যবহার করে চলেছে। কোরিয়ান সাধারন মানুষ, কৃষক, মজুর সকলেই নানা ধরনের নিপিড়নের শিকারে পরিনত হয়েছে।(১)


সত্যিকার সংহতি তো তখনই প্রকাশ পায় যখন কারো সমর্থনে সরাসরি কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করা হয়। ঐতিহাসিক ভাবে এটা সকলের নিকটই সত্য যে এশিয়ায় এবং কোরিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব মোকাবেলায় জনগনকে সচেতন না করে তা থেকে কোন ভাবেই মুক্তি সম্ভব নয়। এর অর্থ হলো সত্যিকার যুদ্বাপরাধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নানা কৌশল নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে । সত্যিকার মানবতাবাদি, উদার বুর্জোয়া শ্রেনী, ও সাধারন মানুষের মাঝে ও ঐক্য গড়তে হবে। তবে কোন ভাবে প্রলেতারিয়েতকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া যাবে না । যদি ও কতিপয় জুসেবাদি, ফ্যাসিবাদি, জাতিয়তাবাদি এবং “মার্ক্সবাদি-লেনিনবাদি” প্রচলিত প্রশাসনিক অবস্থায় উৎসাহ পেয়ে থাকেন এবং উত্তর কোরিয়াও অনেক সময়েই ভূল কারনে প্রেরনা গ্রহন করে থাকে তা কোন ভাবে কল্যানকর বলে লিখক মনে করেন না। কতিপয় প্রলেতারিয়েত ও এই পথে পা দিতে পারেন তবে সকলে এই পথে যাবেন না । এই পথ বিপ্লবের নয়, এই পথ কিম রাজত্ব কায়েমের প্রয়াস। প্রকৃত বিপ্লবের পথ হলো প্রলেতারিয়েতের সংগঠন, নেতৃত্ব, কম্যান্ড এবং সামাজিক শক্তির উত্থান। জনগণের লড়াই সংগ্রাম কে ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে সংশোধনবাদ বিকশিত হতে পারে। এই ধারার রাজনীতি মানুষের সত্যিকার মক্তির সংগ্রামকে বিপথে নিয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সত্যিকার আলোকিত সাম্যবাদিদেরকে এগিয়ে আসতেই হবে । একটি ইতিবাচক দিক হলো মানুষ বুঝতে পারছেন সত্যিকার বিপ্লবী বিজ্ঞান কোনটি, সত্যিকার দল, নেতা ও অগ্রবাহিনী কোনটি। সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে সম্মিলিত বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলতে হবে ! লাল পতাকা উর্ধে তুলে ধরুন আর বিপ্লবের পথে এগিয়ে চলুন।

Notes

1. http://www.youtube.com/watch?v=M-43MB5_QKQ

http://www.c-spanvideo.org/program/292562-1