আপনার মাথায় ও লাগানো আছে এক অদৃশ্য চাকা! (১ ম অংশ)
(Bengali translation from: Wheels In Your Head/The Ego and Its Own/The Possessed)
মানুষের মাথায় ও এক ধরনের চাকা লাগানো আছে; আপনার মাথায় ও চাকা লাগানো আছে ! আপনি বিশাল বিশাল বিষয় নিয়ে চিন্তা করেন, এবং আপনার সামনে ভেসে উঠে ইশ্বরের অস্থিত্ব যিনি আপনার জন্য এই দুনিয়া তৈরী করেছেন। আপনি এক আত্মাময় জগতে বিচরন করছেন, যা একে অন্যের সাথে নানা ভাবে সম্পর্কিত। তাই আপনার চিন্তাভাবনা ও একটি জায়গায় এসে থেমে যায় ।
আমি মনে করিনা যে, আমি কোন উচ্চাভিলাষী মত ধারনা পোষন বা কথা বলছি, (কারন বেশীর ভাগ মাথাই এমন অবস্থায় নিপতিত) সারা দুনিয়ায় নানা কিসিমের বোকা মানুষ আছে, যারা নিজেদেরকে পগলা গারদে আটকে রেখেছেন। তা আসলে কি ? আর তাকেই আমরা বলতে পারি ফিক্সড আইডিয়া বা স্থির ধারনা। মানুষ নিজেই একটি স্থির ধারনায় আবিষ্ট হয়ে বসে আছে। যখনই আপনি বুঝবেন যে, আপনার ধারনার স্থির হয়ে আছে, তখনই মনে হবে আপনি এক ধরনের মূর্খতার শিকার, নিজেই এই চক্রে বন্দ্বিত্ব বরন করে আটকে আছেন। আমরা সত্যকে সত্য বলতে দ্বিধা করিনা; জনগণের যে কৃতিত্ত্ব আছে তা কোন ভাবেই খাট করতে চাই না (যদি ও কিছু লোক – নিজদের মহিমাকে খাট করে দেখে); যাদের সদ্গুনাবলী আছে তাঁদের জন্য অবশ্যই সম্মান প্রাপ্য, আসলে এটাই হওয়া উচিৎ আমাদের নৈতিকতার অন্যতম ভিত্তি; আথচ আমাদের সমাজে চলছে এর বিপরীত ধারার চিন্তা- সেই চিন্তা কি স্থির চিন্তা নয় ?
আমাদের চার পাশে কি কধরনের মূর্খতা ও অন্তসারশূন্যতা বিরাজ করছে না ? সংবাদ পত্র, ম্যাগাজিন, সাহিত্যের জগতে স্থির নৈতিকতা, বৈধতা ও ধর্মিকতার ইত্যাদির চর্চা চলে অবিরাম। তাঁরা প্রায় সকলেই এক বিশেষ বৃত্তের মধ্যেই অবর্তিত হচ্ছে। বৃহত্তর পরিসরে পা বাড়াতে ভয় তাদেরকে সর্বক্ষন তাড়া করে বেড়ায়।
একটি স্থির ধারনা তাদেরকে বোকা বানিয়ে রেখেছে, আপনাকে নিজেই সকল প্রকার পাগলামি ও নোংরা চিন্তা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। তথাকথিত সেই পাগলামীর ধারনা মানুষকে নয়া চিন্তা ভাবনা থেকে বহু দূরে ঠেলে দেয়- আর পশ্চাৎ পদতা তাদেরকে ঘিরে রাখে। এই অবস্থায় মানুষের মুক্ত চিন্তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষমতা থাকে না- পড়ে থাকে পুরাতন ধ্যান ধারনার আস্তাকুড়ে। প্রতিনিয়ত সেই ভক্তিবাদি লোকেরা কাপুরুষতা ও কদর্যতাকে লালন করে চলে, ফলে নানা প্রকার সমস্যায় জর্জরিত হয় নিত্যদিন। সকলকেই ফিলিসিনীদের বিষয়ে লিখা পত্র পত্রিকার লিখা গুলো পড়ে দেখতে হবে, যারা নিজেদেরকে বোকাদের মতই ঘরে আটকে রাখতে চায়। “ নিজের ভাইকে বোকা বলা উচিৎ নয়; যদি তুমি নিজেই বোকা হয়ে থাক”। আমি প্রচলিত প্রথাকে বিশ্বাস করিনা, আমি বোকা ভাইদেরকে বলবই বোকার হদ্দ। হতভাগা বোকা গুলো কাল্পনিক ঈশ্বর, পিতা ও আত্মার এবং রাজা বাদশাদের আশ্রয় নিয়ে থাকে। তাঁদের আশা থাকে তাতেই তাঁরা সুখী সমৃদ্ব হয়ে উঠবেন। অনুগত ভক্ত ও অনুগত প্রজা হবার প্রতিযোগীতায় মানুষ মত্ত হয়ে থাকে আর স্থির ধারনায় বিভোর হয়ে জীবন কাটায়। “ তিনি একজন ভালো ও বিশ্বস্থ খ্রিষ্টান, ভক্ত প্রটেস্টান খ্রিষ্টান এবং ধার্মিক হবার জন্য যে কোন কিছু করা থেকে বিরত হননা। ভয় পাননা কোন সাহসী পদক্ষেপ নিতে । ব্যাপারটা যেমন দাঁড়ায় তা হলো, স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীগন যেন গির্জার বিশ্বাসের বাহিরে অন্য কিছুই বিশ্বাস করতে পারেন না । পোপ বেন্ডিক্ট নিজেই কুসংস্কারের ভেতরে থেকে মোটা মোটা বই লিখেছেন, তিনি অসত্য ও কুসংস্কারের বিপরতে অস্থান নেন নাই; একজন লিখক হিসাবে রাষ্ট্রের সকল ভাবনা চিন্তা ধরন প্রকৃতির পক্ষে স্থির চিন্তা ব্যবহার করে কথা বলেছেন; আমাদের সংবাদ পত্র সমূহ রাজনৈতিক ভাবধারার ভেতরে থেকেই নিজেদের মতামত ও চিন্তাধারা প্রকাশ করে থাকে। তাঁদের লক্ষ্য থাকে রাজনৈতিক গন্ডির ভেতরে থেকেই রাজনৈতিক নেতা ও মানুষ গড়ে তোলা। এরা মানুষের সদ গুণাবলি, মানবিকতা, উদারতা ইত্যাদি দিক গুলো নিজেদের স্থির চিন্তার ভেতর দিয়ে প্রকাশ করতে চেষ্টা করছেন। উন্মাদ পাগলের মত প্রচলিত ভাবনা চিন্তাকে আক্রে থাকে- তাঁরা প্রচলিত “স্থিরচিন্তা ধারাকে” পবিত্র হিসাবে বিশ্বাস করে সকল কর্ম কান্ড পরিচালনা করে । এমন কি তাঁরা সৃজনশীলতার নামে পুরাতন ভাবনাই সমাজে প্রচার করেন ।
আমরা কি কেবল দুষ্ট শয়তান দ্বারা পরিচালিত হই, নাকি আইন, কানুন, সামাজিক রীতিনীতি, সদ গুণাবলি, নৈতিকতা বা বিধি বিধান দ্বারা পরিচালিত হই ? কেবল শয়তানের প্রভাবই আছে এমন ধারনার কোন অবকাশ নেই। ঈশ্বর যেমন আমাদের মাঝে বিরাজমান আবার সয়তান ও প্রভাব বিস্তার করে আছে। কিছু কাজ হয় কল্যান মূলক আর কিছু কাজ হয় অকল্যাণ মূলক- যা শয়তান প্রভাবিত করে । এই ধরন চিন্তাধারা কম বেশী আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে ।
যদি চেষ্টা করেন শয়তানের প্রভাব মুক্ত হতে তবে তা হয়ত আবার ফিরে আসে; হ্যাঁ আত্মার ক্ষেত্রে ও সেই রকম ঘটে থাকে- তা আবার আমাদের প্রেরণা ও দিয়ে থাকে। তা যেমন প্রেরণা দেয়, সেটা আবার প্রতিজ্ঞাবদ্ব ও করায় আমাদেরকে । নিজেই প্রতিজ্ঞা করলে ও প্রতিনিয়ত বাধার সম্মোখিন হতেই হয়। পশ্চাতপদতা বা মতান্দ্বতা আমাদের জন্য কোন কোন সময় কাল হয়ে দেখা দেয় ।
আমাদের চার পার্শ্বে যারা শিক্ষিত ও ভদ্র বলে পরিচিত তাঁদের মধ্যে ও মতান্দ্বতা বিরাজমান আছে; মানুষ রহশ্যময়তা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি এমনিতেই কিছুটা দূর্বল থাকে, এটা এদেরকে উজ্জীবিত ও করে, এতে কিছু উগ্রতা ও তাঁরা পছন্দ করে, মতান্দ্বতার প্রতি একশ্রেণীর লোক খুবই আগ্রহী হয়ে উঠে। আমাদের উদার পন্থীদেরকে ও দেখুন, শ্লসিসেনের ভ্যাটল্যান্ডল্যান্ড ব্লাটার, শ্লসসারের বক্তব্যটি ও শুনতে হবে, “ হোলব্যাকের সঙ্গী সাথীরা প্রচলিত বিশ্বাস ও প্রথার বিরুদ্বে কথা বলছেন, তাঁর সাথীরা প্রচণ্ড ধর্মান্দ্ব তাঁরা তাঁদের ধর্ম গুরুদের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন, জেসুইট ও প্রিস্টদের কথা মেন চলেন বিনা বাক্যে। তাঁরা তাদের মিশন, বাইবেল সমাজ, যান্ত্রিক ভাবে অন্দ্বের মত ভক্তিবাদ অনুসরন করেন”।
সতর্ক ভাবে দৃষ্টি দিয়ে দেখুন “নৈতিক বিশ্বাসী লোকেরা” কেমন আচরন করেন, যারা এখনো ঈশ্বর বিশ্বাস করে বলেন যে তাঁরা পুরাতন রীতিনীতির খৃষ্টান ধর্মের নিয়ম কানুন আর মানতে চান না। যদি আপনি তাকে জিজ্ঞেস করেন যে, ভাই বোনদের মাঝে কি দাম্পত্য সম্পর্ক হতে পারে, বা বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরী করা উচিৎ, যাদের মধ্যে এখন সন্তানতুল্য একটি পবিত্র সম্পর্ক বিদ্যমান আছে। তখনই তাঁদের মধ্যে একটি নৈতিক কম্পন সৃজন করবে। এমন কি স্ত্রীর দৃষ্টিতে বোনের দিকে থাকানো ও মহা পাপ হিসাবে কাপিয়ে দেবে। তিনি কেঁপে উঠেন এর কারন হলো তিনি এখন যে খ্রিস্টানদেরকে ঘৃনা করে তিনি নিজেই সেই খৃষ্টান বিশ্বাসের হাতে বন্দ্বিত্ব বরন করে আছেন। তাঁর বুকের গভীরে সেই নৈতিকতা বাসা বেঁধে আছে। তিনি এখনো নৈতিক খৃষ্টান। নৈতিকতার নামে তিনি ও খৃষ্টান ধর্মের নিকট একজন বন্দি। তিনি একজন বিশ্বাসের বন্দী। সমাজে একক বিবাহ এখন একটি পবিত্র বিশ্বাস হিসাবে পরিগণিত হয়ে আছে। বহু বিবাহ বা বহুগামিতা সমাজের চোখে একটি অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়। তিনি মুখে একজন আধুনিক লোক বলে পরিচয় দিলে ও এই ক্ষেত্রে একজন অপরাধী হিসাবে নিজেকে ভেবে থাকবেন। যারা বলেন ধর্ম এখন আর রাস্ট্রে ব্যবহার করার দরকার নেই। খৃষ্টান ও ইহুদিগন রাস্ট্রে সমান ভাবে বসবাস করবেন আর সকল ক্ষেত্রে সাম্য থাকবে। তখন তাঁদের সামনে যখন এই ধরনের বিশ্বাসের বিষয় গুলো হাজির করা হয় তখনই তৈরী হয় সমস্যার।
আমরা একটু খতিয়ে দেখলেই দেখতে পাব যে নৈতিকতার পরমাবর্দারগন স্ব স্ব বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কেমন করে নায়ক হয়ে আছেন, এরা ক্রুমাঞ্চার বা পিলিপের চেয়ে কোন ভাবে পিছিয়ে নেই। তাঁরা নিজেদের চার্চের জন্য লড়াই করে থাকেন, তাঁরা তাঁদের বিশ্বাসের আলোকে রাস্ট্র গড়তে চায়, বা রাষ্ট্রে তাঁদের বিশ্বাস মত নৈতিকতা কায়েম করতে লড়াই করেন; বিশ্বাস অনুসারে রাষ্ট্রে বিধি বিধান গড়ে তুলতে চান। তাঁদের বিশ্বাসের আলোকে অপরাধের সংজ্ঞা নির্ধারন করেন এবং সেই সকল কিছুকেই সংস্কার করতে চায়। এমন কি যারা তাঁদের বিশ্বাসের বিপরীতে অবস্থান নেয় তাদেরকে জেলে পুরতে চায় বিশ্বাসীগন। নৈতিক বিশ্বাস হল মতান্দ্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ! যখন কোন ভাই বোন তাঁদের বিশ্বাসের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যায় তখন তাঁরা তাঁদের এই মুক্ত বিশ্বাস ও ভাবনা কে “উদার পন্থা” বলেন। হ্যাঁ যদি “ তারা কোন শয়তানী মূলক উদাহরন তৈরী করেন”। বিশ্বাসীদের মতে রাষ্ট্রের তেমন কোন দরকারই নেই যদি তা তাঁদের নৈতিকতার পাহা্রা না দেয়, “বিশুদ্বতা আর নৈতিকতার” সুরক্ষার জন্য এরা রাস্ট্রকে ব্যবহার করতে চায় । ধর্মীয় নায়কেরা সকল সময়েই “ঈশ্বরের জন্য”, উতসর্গকৃত থাকেন- আর এটাকেই নায়কগন তাঁদের নৈতিকতা মনে করেন।
যারা পবিত্রতার নামে কোন প্রতিজ্ঞা করেন তাঁদের মধ্যে প্রায়স সম্পর্কের টানাপড়েন লেগেই থাকে। তাঁদের মধ্যে পুরাতনের দিকে যাওয়া বা এর আরো গভীরে যাবার এক ধনের প্রতিযোগিতা দেখা যায়। তবে কি ভাবে পার্থক্য নিরূপন করা সম্ভব যে, যারা প্রচন্ড ভাবে পুরাতন ধ্যান ধরনায় বিশ্বাস করে, আর যারা “সত্য, আলো ও ন্যায় বিচার” আবিস্কারের জন্য কাজ করে, বা যুক্তিবাদি ও সত্য অনুসন্দ্বানী দল ও গুষ্টি যারা আলোর পথের দিশারী। তবে তা জন সমক্ষে ঘোষনা দিয়ে পৃথকি করনের দরকার নেই। যদি একক কোন ঐতিয্যগত সত্য মেনে নেয়া হয় যেমন অলৌকিকতা, যুবরাজের সিমাহীন ক্ষমতা ইত্যদি, তবে যুক্তিবাদিদের জন্য ও কেই রকমের বিবেচনা থেকে যায়। এবং কেবলই পুরাতন বিশ্বাস ভাবনায় আবিষ্ট থাকবে সকলই।
নৈতিকতার দিক থেকে বিবেচনায় নিলে; কঠিন কঠোর ও স্থির বিশ্বাসীগন স্থবির হন, অন্যদিকে উদার চিন্তার লোকেরা হয় অধিকতর মুক্ত ভাবনার মানুষ। তবে এই ধারার লোকেরা তাঁদের বিপরীত ধারার লোকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। “সত্য, ন্যায় বিচার, নৈতিকতা ও আলো” ইত্যাদি পবিত্রতার দোহাই দিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি করা হয়ে থাকে।
খ্রিস্টানিটির কারনে কোন ভালো কাজের বাঁধা দেয়া হলে অনেকেই এটাকে “খৃষ্টান” সুলভ মনে করে নাকচ করে দিয়ে নিজেদেরকে যুক্তিপন্থী ও প্রগতিশীল বলে প্রচার করে থাকে । এটা সত্য যে এখন আসলেই কোন প্রকার খাঁটি বিশ্বাসীর সন্দ্বান পাওয়া ভার। এক কালে তাঁদের অস্থিত্ব থাকলে ও এখনার সেই কট্টর নৈতিকতার ধ্বজা দারীগনের অস্থিত্ব নেই।
বিগত এক শতাব্দিতে ধর্ম ও ধার্মিকতা নানা ভাবে আক্রান্ত হয়েছে, এবং “অতিমানবিকতার” বিষয় সমূহ প্রশ্নে সম্মোখিন হয়েছে, কেহ কেহ উত্তেজিত হলেও তলোয়ার নিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে নামে পড়েনি। প্রচলিত নৈতকতার নামে যে বাধ্য বাদকতার রীতি চালু করা ছিল তা ও অনেকাংশে তিরোহিত হয়েছে। নিজেদেরকে ধর্ম সমূহ যে ভাবে সর্ব শক্তিমান বলে প্রচার করতে এখন আর সেই দিন নেই । তাই প্রুধু বলেছেন, “ মানুষ ধর্ম ছাড়া ও বসবাস করতে পারেন, তবে কিছু স্থায়ী বিধান মেনে চলা দরকার। নৈতিক লোকেরা ধর্মের জন্য জান কোরবান থাকেন। তাঁরা খায়, পড়ে ও বাঁচে কেবলই ধর্মের জন্য। তাঁরা কথা বলার সময় গলা উঁচিয়ে কথা বলেন, ধর্মের নৈতিকতার বিপরীতে কিছু বললে তাঁরা খুব সহজেই অনুভূতিতে আঘতের অভিযোগ তোলেন। তাঁরা অতি মানবিক কথা বার্তায় বেশ আগ্রহী থাকেন। তাঁদের ধারনা উচ্চ জগতের ক্ষমতাধর শক্তি মানুষের মাঝে সঞ্চারিত হয়ে অতিমানবিকতার সৃজন করে থাকেন। তাঁদের ধারনা হলো পুরাতন ধর্মীয় বিধি বিধান বদল করলে ও অন্য একটি ধর্মীয় বিধানের আওতায় থাকা চাই। সর্প যেমন পুরাতন চামড়া বদল করে নয়া চামড়া ধারন করে।
তাই মহান চিন্তক ফয়েকবাখ আমাদেরকে বলেন, “ কেহ যদি সম্ভাবনার দর্শনের প্রচার করেন, আর ভবিষ্যৎ বার্তা প্রচার করেন, আর কিছু নীতি নৈতিকতার কথা বলন, তবে অনেক কিছুই অপ্রকাশিত সত্য হিসাবে থেকে যায়, তাই বিশুদ্বতা ও পরিচ্ছন্নতা থাকা দরকার”।
এখন অনেকেই ধর্মীয় অবেশ থকে বেড়িয়ে এসেছেন, ঈশ্বরের গোলক ধাঁধা থেকে মুক্ত হয়েছেন, যারা এখন কেবলই নিজের কর্মের উপর নির্ভর করে চলেন; কিন্তু অন্য দিকে ব্যাপক সংখ্যায় এখোনো প্রচুর লোক ধর্মীয় বিধির উপর সম্পূর্ন নির্ভরশীল, নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে দিনাতিপাত করেন- তাঁদের সাথে মত বিনিময় করা এখন সময়ের দাবী। এখন আমাদের অনেকেই আর বলেন না যে, “ঈশ্বরই ভালবাসা”, তবে “ভালোবাসাই স্বর্গ”। আমরা যদি আরো একটু অগ্রসর হয়ে বলি, স্বর্গ হলো পবিত্র – তবে প্রকারান্তরে আবার সেই পুরাতন ধারাই ফিরে আসবে। সে ভাবেই বলতে হয়, ভালবাসা মানুষের জন্য কল্যানই বয়ে আনে, সেটা তাঁর জন্য স্বর্গীয় হয়ে দেখা দেয়, তাঁর এটা সম্মানের ও বটে। এটাই তাকে সত্যিকার মানুষ বানায় ( এটাই তাকে প্রথম মানুষ হতে শেখায়, আবার মানবিকতা থেকে তাকে বেড় ও করে দেয়)। তাই যথার্থ ভাবে বলা হয়ঃ ভালোবাসায় দেখায় মানুষ আসলেই কি আর ভালোবাসাহীন মানুষই অমানুষের পরিনত হয়-ইগোইস্ট হয়ে উঠে। তবে বিশেষ করে ধর্ম কেন্দ্রীক খৃষ্টান সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ কেন্দ্রীক দর্শন, ব্যাক্তি গত মালিকানার ধরনে সকল সময়েই উৎসাহিত করেছে।
সেই সামাজিক পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ বার্তা প্রচারের ভেতর দিয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম তান্ত্রিক মহাজন গন নিজেদের আখের ঘুছিয়ে নিয়েছেন বরাবরই। ফলে তাঁদের স্বার্থ হাসিলের সুবাধে অনেক নিরিহ মানুষ হয়েছেন তাঁদের লালসার শিকার। স্বর্গ ও ঈশ্বর আদতে একেই ধারনার পবহি প্রকাশ। তাঁদের এক কে অন্য থেকে পৃথক করার কোন উপায় নেই। ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য খুশি করতে হয় তাঁর ততাকথিত ধর্ম প্রতিনিধিকে তাঁর সন্তুষ্টির মাধ্য সম্ভব স্বর্গ লাভ করা । তবে এখন অনেক মানুষের মাঝেই পরিবর্তন এসেছে । তাঁরা ও বলছেন, “স্বর্গ ও আসলে পার্থিব বিষয়ই”। অর্থাৎ মানুষের মাঝে নিহিত আছে স্বর্গের আবাস ।
খ্রিস্টানদের মধ্যে এখন এমন লোক ও আছেন যারা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ও মানতে চায় না । আর খ্রিস্টবাদের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র গড়ে উঠোক এখন এটা হাস্যকর বিষয়। অন্য দিকে নৈতিকতার নামে রাষ্ট্র গড়ে তোলার কোন বাস্তব ভিত্তিই নেই। “সামাজিক ও রাস্ট্রীয় জীবনের মৌলিক ভিত্তি হলো আইন” যা মানব সৃষ্ট। রাষ্ট্রীয় পদ সোপানের মত পবিত্র ধর্মীয় ব্যবস্থাপনায় ও তা এখন আর কেউ মানতে চায় না ।
তাই আমরা এখানে যুক্তিবাদি আন্দোলনের মাধ্যমে উল্লেখ করতে পারি যে, বিশ্বাস কবল কিছু ধর্মীয় বিষয়কে প্রকাশ করতে পারে, ঈশ্বরে বিশ্বাস, পরকাল, মানবিক অনুভূতি, ও কাল্পনিক কিছু স্বপ্ন সুখ এবং কতিপয় প্রাকৃতিক বিষয়দি ইত্যাদি। তাঁরা এই সকল কিছুই ঈশ্বরের উপর ভর করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকেন। তাঁদের এইশক্ল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ শুধু মাত্র কল্পনা নির্ভরই হয়-বাস্তব সম্মত ভাবে এর কোন যুক্তি বা ভিত্তি খোঁজে পাওয়া মুশকিল। এই গুলো অনেকটা গুজব বা রিউমারের মতই মানুষের মানস পটে বিচরন করে। ধর্মের নামে তা সকলে মেনে ও নেন; ধর্মীয় ভাব ধারায় মানুষের হ্রদয়, মায়া মমতা, পারস্পরিক অনুভূতি, জ্ঞান ও বুঝা পড়া সকল কিছুই তাড়িত হয় ভাবাবেগে – ধর্মীয় জগতে সব কিছু বাছ বিচার করা সুযোগ নেই। হেগেল দেখিয়েছেন, দর্শন ও এক প্রকারের ধর্ম। তিনি প্রশ্ন তোলেছেন, আমায় বলুন আজ কি ধর্ম নয় ? “ধর্মের ভালোবাসা”, “ধর্মের স্বাধীনতা” “ধর্মের রাজনীতি”- এমন কি প্রতিটি প্রেরণা ইত্যাদি। সকল কিছু ই কার্যতঃ একাকার হয়ে গেছে।
আজো আমরা ধর্ম শব্দটি রুম্যান্টিক অর্থেই ব্যবহার করে থাকি, তাঁর সকল প্রকাশ ভঙ্গী ও আলোচনার এর বাইরে নয়। আমরা নিশ্চিত থাকি, ধর্ম যেন আমাদেরকে ঘিরে থাকে, আমাদের দেহ ও চারি পাশ; আমাদের মনও কি আবদ্ব হয়ে আছে ? আদতে এটি হলো একটি মুক্ত স্বত্বা, একক রাজত্ব তাঁর, তবে আমাদের মন নিরঙ্কুশ ভাবে সেই স্বাধীকার পায় না। তবে ধর্মের ইতিবাচক যে ব্যাখ্যা হাজির করা হয় তাতে বলা হয় –ধর্মের অর্থ হলো আত্মার স্বাধীনতা! যেখানে মানুষের মন মুক্ত, স্বাধীন আর অনুভূতি প্রবন মানুষ বিচরন করেন তাঁর নিজস্ব এক স্বর্গীয় জগতে। মন অতীতে গ্রতিত থাকে আর সামনে আকাংখার ঘোড়ায় ছড়ে বিচরন করে। ধর্ম মুলত একটি শক্ত বন্দ্বন, একটি প্রতিজ্ঞা ও অংগীকারের বিষয়- আমি ধার্মিক মানেই হলো আমি অঙ্গীকারে আবদ্ব এক মানুষ। এখানে বলা হয় মনের উপর জোর খাটানো হয় না- মন এখানে মুক্ত, মন স্বাধীনতা ভোগ করে। কিন্তু যারা ভুক্তভোগী তাঁরা ভালো করেই জানেন ধর্মীয় পরিবেশে বিচরন কারীদের কত আকাঙ্ক্ষাকেই না কবর দিয়ে চলে হয়। অনেক উৎসাহ, উদ্দিপনা, বুদ্বিবৃত্তিক ভাষনা, ও আগ্রহের অকাল মৃত্যু হয় নৈতিকতার অন্দ্বকার কুপে পড়ে। ঈগোকে জবাই না করে সত্যকার ধর্মিক হতে পারেন কি ?
রিমারাস এবং অন্যান্য যারা আমাদেরকে মন হ্রদয় ও যুক্তির কথা বলেন তাঁরা ও আমাদেরকে ঈশ্বরের দিকেই পরিচালিত করতে বেশী আগ্রহী। তাঁরা ধর্ম তাত্ত্বিকদের কোন কোন ব্যাখ্যায় মন খারাপ করলে ও আসলে তাঁরা ও ধর্মীয় আবেশের বাহিরে কিছু ভাবতেই পারেন না । মুখে বলেন, মনের স্বাধীনতার কথা কিন্তু তাঁদের চিন্তার প্রসারন না হলে তারাও কুপের ব্যাঙ্গ ই থেকে যাবেন । মন মানসিকতা যতক্ষন অনুভূতি আর বিশ্বাস নির্ভর হয়ে থাকবে ততক্ষন এর সত্যিকার বিকাশের আশা করাই বৃথা। যুক্তি, প্রমান ও বুঝা পড়ার স্তরে উন্নিত না হলে তা স্বর্গীয় আবেশের আবরন ভেদ করে বেড়িয়ে আসতে পারবে না। তা ক্ষনে ক্ষনে আত্মা আর আধ্যাত্মিকতার বেড়া জালে জড়িয়ে পড়বেই। অন্যদিকে- দির্ঘ কাল ধরে মানব মন সামগ্রিক ভাবে আধ্যাত্মিক ভাবনায় আকন্ঠ নিমজ্জিত ছিল, সময়ের বিবর্তনে মানব মন নানা ঘটনা প্রবাহের কারনে ক্রমে তা থেকে মুক্ত হতে থাকে। আজ কাল কেবল আমরা ধর্মের ভেতর বাহির নিয়ে কথা বলতে পারি । অতীতে কেবল নতুন আর পুরাতন ধর্মের দ্বন্দ্ব হয়েছে। কেহই পুরাতন ছেড়ে নতুনে আসতে চাইত না বলেই রক্তারক্তি কান্ড ঘটে গেছে।
নৈতিকতা আসলেই ধর্মের বাহিরে যেতে পারে না, ধর্মীয় আদেশ নিষেধ অমান্য করা বা এর বিরুদ্বে বিদ্রোহ করা একেবারেই অন্যায় কর্ম। যা বিচার যোগ্য। কেননা তা পরম প্রভূর বিরুধিতা করা হয় বলে । যদি সত্যি স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় তবে উদারতাবাদের কোন বিকল্প নেই। মানব জাতির ইতিহাসে নাগরিকতা হলো এর প্রথম উদাহরন। ধর্মীয় ক্ষমতার বাইরে নিজেকে নাগরিক হিসাবে ঘোষনা করা । ফলে ধর্মে একক হম্বিতম্বি কিছুটা হলে ও খর্ব হয়। নৈতিকতার পাশাপাশি আইনের ক্ষেত্র তৈরী হয়। স্বর্গীয় বিধি বিধানের পাশাপাশি মানুষের তৈরী করা আইন কানুন স্বিকৃতি পেতে থাকে। মানুষের নিকট সেই পাদ্রি আর ফাদারদের আদেশ হুকুমের পরিবর্তে নিজেদের রচিত বিধি বিধান, কাজ কর্মের পরিকল্পনা দিনে দিনে জন প্রিয় হয়ে উঠে । ফলে ক্রমে মানুষের ভেতর যে যুক্তিবাদি একটি মন আছে তাঁর উন্মেষ ঘটতে শুরু করে । ধার্মিকতা ও নৈতিকতার জাগায় মানুষ আদেশ দাতা ও হুকুম দাতা হিসাবে গড়ে উঠে এবং স্বীকৃতি পায় সকল দেশে।
একটি বিশেষ জায়গা থকে নৈতিকতার বিষয় গুলো বিশ্লেষণ করা হয়, মানুষ সাধারনত কিছু বিশেষ দিক বিবেচনায় নিয়ে থাকেঃ মানুষ সাধারন তাঁর ইন্দ্রের দ্বারা পরিচালিত হয়, ভালো দিক গুলো অনুসরন করে খারাপ দিক গুলো বর্জন করে চলে, যখন এই মানসিকতায় মানুষ চালিত হয় তখন বলা যায় সে নৈতিক জীবন যাপন করছেন। সামাজিক মানুষ নৈতিকতাকে সম্মান করে। কিন্তু যখনই কোন লোক নৈতিকতার বিপরীতে কিছু করতে যায় তখনই মানুষ তাকে অপছন্দ করা শুরু করে। আত্মকেদ্রীকতাকে সাধারন ভাবে মানুষ পছন্দ করে না । একেই ভাবে সেন্ট ক্রিস্পিয়ান দরিদ্রদের জন্য চুরি ডাকাতি শুরু করলে ও মানুষ ভালোভাবে নেয় নাই । “ তাঁর উচিৎ নয় খুন করা, হত্যা করা উচিৎ নয় এমন কথা শাস্ত্রে লিখা আছে!”। ভালোর জন্য কাজ করা, মানুষের কল্যানে কাজ করা, কমপক্ষে ভালো কাজের চেষ্টা করা বা দরিদ্রদের কে খাদ্য পানীয় দেয়া নৈতিক কাজ, এই ধরনের কাজ করার উচিৎ হলো ক্রাস্পিয়নের জন্য; কিন্তু খুন করা বা ডাকাতি-চুরি করা অনৈতিক কাজ; নৈতিকতার লক্ষ্য হলো অনৈতিকতাকে বন্দ্ব করা । কিন্তু কেন ? “ কারন খুন, গুপ্ত-হত্যা, অবশ্যই মন্দ্ব কাজ”। কিন্তু গেরিলাগন যখন জঙ্গল থেকে দেশের শত্রুদেরকে গুলি করে হত্যা করে –তখন কি গুপ্ত হত্যা হয় না ? নৈতিকতার মৌলিক নীতিমালা হলো সকলেই ভালো কাজ করবেন, এমন কি হত্যা করা ও যদি ভালো কাজ বলে বিবেচনা করা, হয় তবে তা ও করা যেতে পারে।
আপনি স্যান্ডের সকল কাজকে নিন্দা করতে পারেন না; তাঁর কাজ গুলো ও ছিলো নৈতিক, কেননা সেই গুলো ছিলো ভালো কাজকে উৎসাহিত করার জন্য, আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য; সেই গুলো ছিলো শাস্তি প্রদানের জন্য বিশেষ কাজ; যা ব্যাক্তিগত ভাবে দুষি সাব্যস্ত হয়েছিলো, তা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী করার মত কাজ। তবে তাঁর কর্ম পরিকল্পনায় আর কি কি ছিলো, তাঁর পরিকল্পনায় কি ছিলো নির্মম শক্তি খাঁটিয়ে লিখার কাজ বন্দ্ব করে দেয়া ? আপনি কি সেই আইনী প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত নন ? এই সকল কর্ম কান্ডের সাথে নৈতিকতার মৌলিক নীতিমালার কি লেন-দেন আছে? - “ তবে সেই মৃত্যু দণ্ডটি ছিলো অবৈধ”। তাই অনৈতিক জিনিষটি হলো অবৈধতা – তা কি আইনের অবাধ্যতা ? তাই আপনাকে বলতেই হচ্ছে আইন সম্মত হলে খারাপ কিছুই নেই। আর নৈতিকতা মানেই হলো বাধ্যবাধকতা।
অনেক ক্ষেত্রেই আনুগত্যের বাতাবরনে নিজের নৈতিকতাকে ডুবিয়ে দিতে হয়, সঠিক ভাবে কাজ করার জন্য এবং আইনী কাঠামোতে ঠিকে থাকার জন্য অনেক স্বৈরাচারী আইন কানুন ও মেনে নিতে হয়। পুরাতন বিধি বিধানকে অস্বীকার করে এগিয়ে যেতে হয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের মৌলিক আইন গুলো বাস্তবায়নের জন্য নৈতিক দিক গুলোকে অস্বীকার না করলে আজ অনেক কিছুই আটকে যাবে। অন্য দিকে ক্যাথলিক রীতিনীতির সাথে প্রটেস্টাণ্ট বিধিমালার দ্বন্দ্ব তো লেগে আছেই । তবে সামাজিক বাস্তবতায় আইনের প্রাধান্য সেই দ্বন্দ্বকে কিছুটা হলে ও অবদমিত করেছে। “ না, আমি বেঁচে আছি, কেননা আইন আমার সাথে আছে”। এই ভাবেই আমরা এই পর্যন্ত চলে এসেছি। আর এটাই যে আমাদের গৌরবের পাত্র। একজন প্রুশিয়ান কর্ম কর্তা বলছেন, প্রতিটি প্রুশিয়ান নাগরিক তাঁদের বুকে গেন্ডার্ম বা নিজেকে রক্ষক হিসাবে বিশ্বাস বহন করে।
কেন বিরোধী দল গুলো নিজেদের বক্তব্যকে যথাযথ ভাবে উত্থাপন করতে পারছে না ? এর পিছনে কি কেবলই আইনগত ও নৈতিক কারন বিদ্যমান আছে- তাঁরা এই পথ কিছুতেই ছাড়তে চান না । ফলে ভন্ডামী ও ভালোবাসার বিচ্যুতির কোন অর্থ হয় না । ভক্তির ও কোন মূল্য নেই। দৈনিন্দিন জীবন যাত্রায় আইন বিরোধী এক ধরনের মনোভঙ্গী তাঁদের মধ্যে কাজ করতে থাকে। পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ও আনুগত্য এবং ভালবাসা তেমন কোন ভূমিকা পালন করে না । অনেক ভালো সম্পর্কের ক্ষেত্রে ও কারো বিরুধিতা সম্পর্কের তিক্ততার সৃজন করেছে। কিন্তু বাস্তব দৈনিন্দিন জীবনে অন্যায় অবিচার সামাজিক সম্পর্ককে ও বিনাশ করে দেয়। তবে সকল কিছু ছাপিয়ে তখন নৈতিক দিক গুলো সকলের সামনে উজ্জল হয়ে উঠে। তা হলে কি সকলেই বিরুধিতা করা ছেড়ে দিবে? সকলের ই নিজের ইচ্ছের স্বাধীনতা আছে তবে অনেকেই তাঁর কোন গুরুত্বই দেয় না । এমন কি তাঁর নুন্যতম ব্যবহার ও করতে চায় না । তাঁদের যে স্বাধিনতা আছে তাঁর ও কোন মূল্য তাঁরা বুঝেন না। তাঁদের মুখে প্রায়স প্লিজ, প্লিজ ! শব্দ শোনা যায়। তাঁদের মনে এমন মনোভাব কাজ করে, যাতে বিরুধিরা তাঁদের কাজ গুলো করে দিয়ে দিবে।
না, তা হবার নয়। ভালোবাসার জন্য, স্বাধীনতার জন্য- নৈতিকতার জন্য কেহই আপনার করনীয় কাজ গুলো করে দিয়ে যাবে না । এই গুলো অধিকার হিসাবে দাবী করা যায় না । এই গুলো কেবলই ভালোবাসা বা ভক্তির বিষয় হিসাবে স্বীকৃত হয়। অবিতর্কিত ও অনাপত্তি মূলক বিষয় সমূহ গ্রহন যোগ্য হয়ে থাকে। যৌক্তিক কি অযৌক্তিক উভয়ই নৈতিক অনৈনিকতার সাথে কোন দ্বন্দ্ব লিপ্ত হতে চায় না । মানুষ অনেক কাজ থেকে যৌক্তিক হলে ও বিরত থাকে। যদি তা অনৈনিক হয়। কোন ব্যাক্তির বিবেচনায় যদি কোন কিছু অনৈতিক হয় তবে তা বাস্তবে যৌক্তিক হলে ও সে তা গ্রহন করতে চায় না । তাঁর সাথে এই সকল বিষয়ে যৌক্তিক আলোচনা করে থাকে সেখান থেকে নাড়ানো প্রায় অসম্ভব । কিন্তু যদি তাঁর উল্টো হয় অর্থাৎ যদি নৈতিক হিসাবে তাঁর নিকট গ্রহন যোগ্য হয় তবে – তাকে অনেক উৎসাহ সহকারে সেই অযৌক্তিক কর্মে লিপ্ত হতে দেখা যায় ।
আজ দুনিয়ায় যে ভন্ডামীর জোয়ার চলছে তাতে দেখা যায় মানুষ নানা জায়গায় আটকে আছে। ভন্ডদের সৃষ্ট প্রহেলিকার বেড়া জালে জড়িয়ে বর্তমান সময়ের সাথে চলতে না পেরে অনেকেই পিছিয়ে পড়ছেন। নৈতিকতার প্রতি যে কিছু সংশয় সৃজন হয়েছিলো আজ তা অনেক ক্ষেত্রেই তিরোহিত হয়ে গেছে। মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই নিজে অহং কে বিসর্জন দিয়ে বসে আছে। তাঁরা ভন্ডদের তৈরী মাকরশার জালে যেমন মাছি আট পড়ে তেমনই অসহায় ভাবে আটকা পড়ে আছে । তাঁদের মধ্যে যদি কেহ গতির সঞ্চার করতে চায় বা তাদেরকে মুক্ত করতে চেষ্টা করে তবে – তাঁরাই নৈতিকতার দোয়াই দিয়ে নিজেরা তা প্রত্যাখান করে নিজেই নিজের লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে তা অনুমোদন করে চলছে । সংক্ষেপে বললে বলতে হয়, আসলে মানুষ একা থাকতে চায় তবে এটা বাস্তবে সম্ভব হয় না। সত্যিকার ভাবেই মানুষ স্বাধীন চিন্তা স্বাধীন ইচ্ছে পছন্দ করে। তবে নৈতিকতার লঙ্গনের ভয়ে সেই পথে যেতে চান না । অনেক স্বাধীন চেতা মানুষ ও কোন চ্যালেঞ্জের সম্মোখিন হলেই সে নিজেকে অনুগত প্রমানের জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। স্বাধীনতা একটি মিষ্টি ও আকর্শনীয় শব্দ তাঁর বিশ্বাস ও কম নেই, কিন্তু স্বাধীনতার নামে যখন প্রতারণা চলে তখন ও মানুষের মাঝে দেখা দেয় হতাশা । সেই সময়ে সত্যিকার ভালবাসা নিয়ে স্বধীকারের কথা বললে ও মানুষ ভাবে বুঝি আরেক শিয়ালের আগমন হলো ! সাধারন তখন আপনাকে শয়তান বা পুরাতন প্রভু হিসাবে বিবেচনা করে দূরে থাকতে চায় ।
একজন ভালো লোকের চোখে নীরু একটি মন্দ লোক; আমার নিকট সে কেবল মাত্র মানুষ রূপী একটি ভদ্র শয়তান। তাকে একটি খল নায়ক হিসাবে বিবেচনা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। যে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবার মত একটি লোক। তাকে স্বেচ্ছাচারী হবার জন্য কিছু কি বাঁধা প্রদান করে ? পুরাতন রোমে সে মানুষকে যখন তখন হত্যা করত, তাঁর কখনো কোন কৃতদাস ছিলো না। তবে রোমানগণ পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে নৈতিকতার প্রশ্নে তাঁর প্রবল বিরুধিতা করে। জনগণ মনে করতেন যে নৈতিক ভাবে তিনি সঠিক নন। তাঁর রাজ্যে নৈতিকতার চর্চায় ঘাটতি আছে । তবে কেহই তাঁর বাধ্যতামূলক অনুগত্য ত্যাগ করার সহাস পায় নাই। বিদ্রোহীদের অনৈতিক কার্যক্রমকে রোমের সুনাগরীকগন ভালো চোখে দেখে নাই। বিপ্লবের জন্য, সাহসের জন্য প্রসংশা করার লোক ছিলো না সেই সমাজে। কোন নৈতিক আর কোনটি অনৈতিক তা নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হবার মত সৎসাহস ও তখন কারো ছিলো না । নীরু সেই সময়ে নিজে কিন্তু রোমান সমাজে ভীতিজনক ব্যাক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন না । কিছু লোক থাকে যেমন ভালো বলত কিন্তু অন্য দিকে কিছু লোক তাকে খারাপ হিসাবে ও বিবেচনা করত। তৎকালীন বিচারিক প্রক্রিয়ায় তাকে একেবারে দুধ সাধা মানুষ বা একেবারেই নচ্ছার বলার উপায় ছিলো না। নৈতিকতা সম্পন্ন লোকেরা তাকে অস্বীকার করলে ও সাধারন উদার প্রকৃতির মানুষেরা তাকে খারাপ বলে অবিহিত করে নাই। তবে এই নৈতিকতা আর সাধারন মানুষদের দোলাচলে শান্তি পূর্নভাবে বসবাস করা বেশ জটিল ব্যাপার। নৈতিকতার কড়াকড়ি যারা আরোপ করেন তাঁদের যাতাকলে পিস্ট হয়ে বহু মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। এটা সত্য যে কোন ক্ষেত্রেই সৎ ভদ্র মানুষ আর কুলাঙ্গার প্রকৃতি লোকেরা সহাবস্থান করতে পারেন না । কোন মানুষ কি আসলে নৈতিকতার বিচার করার ক্ষমতা রাখেন? হ্যাঁ, মানুষই অপরাধ, সততা, সংবিধান, ও আইনের আলোকে ন্যায় অন্যায়ের বাছ বিচার করতে পারে। অনেক সমাজে নৈতিক আইনের তেমন কোন ভিত্তি না থাকলে ও তা ক্রমে রাস্ট্রীয় আইনের অংশ হয়ে উঠেছে। খ্রীস্টন ও ইহুদি অনেক নৈতিক আইন ক্রমে নানা দেশে রাস্ট্রীয় আইনে পরিনত হয়ে গেছে। যা ছিলো এক সময় নৈতিক পাপ, এখন তা রাট্রীয় আইনের লঙ্গন হিসাবে ও বিবেচিত হচ্ছে।