আমরা সমাজতন্ত্র কায়েমের সময় অতিক্রম করছি !

আমরা সমাজতন্ত্র কায়েমের সময় অতিক্রম করছি !

আমরা সমাজতন্ত্র কায়েমের সময় অতিক্রম করছি !

(বি এ এস এফ)

সামাজিক বিপ্লবে বিশ্বাসী লোক মাত্রই স্বীকার করবেন- চলমান বিশ্বরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আজ ঐতিহাসিক ভাবে সর্বহারা শ্রেণী মারাত্মক নেতৃত্ব শূন্যতায় ভোগছে। পুঁজিবাদের অধীনে  যতটুকু পৌঁছানো যায়, সর্বহারা বিপ্লবের জন্য অর্থনৈতিক পূর্বশর্ত ইতিমধ্যেই তা সাফল্যের সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছে গেছে। মানুষের হাতে যে পরিমান উৎপাদন সম্ভব তা এখন এক স্থিরস্তরে উপনিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বস্তুগত উন্নয়নের ধারা ব্যাপক ভাবে বাঁধা গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে স্বাস্থ্যগত, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট সাধারন মানুষের জীবন প্রনালীকে বাধাগ্রস্থ করছে। নানা ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারন মানুষ। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে দুর্বল করছে এবং রাস্ট্রের অর্থনৈতিক সামগ্রীক ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নের মূখে ফেলছে। ফলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফ্যাসিবাদি রূপে রূপান্তরিত হয়ে এক মারাত্মক দেউলিয়ত্বের উদ্ভব ঘটিয়েছে।

চলমান সঙ্কট থেকে ধনিক শ্রনী বা বুর্জোয়া চক্র নিজেরা শত চেষ্টা করেও তা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না । তাই তাঁরা নিজেদের স্ব স্ব দেশে শেষ চেষ্টা হিসাবে ফ্যাসিবাদি শাসন ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। নিজেদের সামনে এক মহা বিনাশী রাজনৈতিক-সামরিক- অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখেও নিজেরা চোখ বোজে আছে। ঐতিহাসিক ভাবে সুবিধা প্রাপ্ত যেমন- ব্রিটেন, ফ্রান্স, ও আমেরিকা ইত্যাদি দেশ সমূহ সাময়িক সময়ের জন্য নানা ভাবে বৈধ-অবৈধ উপায়ে অর্জিত সঞ্চিত সম্পদের উপর নির্ভর করে গনতান্ত্রিকতার বিলাসিতা প্রদর্শন করছে।  তবে,এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি স্থায়ী হবার কোন জো নেই। পরিবর্তন অনিবার্য।

নানা প্রকার নয়া চুক্তির নামে প্রহেলিকাময় ও বিভ্রান্তিকর ব্যবস্থা কেবল সেই সকল দেশে চলতে পারে যে দেশের সরকার ও বুর্জোয়া চক্র সমূহ নানা প্রক্রিয়ায় সম্পদের ব্যাপক সঞ্চয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। নয়া চুক্তি দ্বারা যে মুক্তি মিলে না তা ফ্রান্সের পপুলার ফ্রন্টের রাজনীতি দিবালোকের মত করে সকলের সমনে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে।

চলমান সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপন ও খুব ভালো ফলাফল উপহার দিতে সক্ষম নয়। পুঁজিবাদের পারস্পরিক বিচ্ছেদ, বৈরিতা, সাম্রাজ্যবাদিদের বিরোধ নয়া নয়া সংকটের জন্ম দিচ্ছে সারা দুনিয়ায়। ইথোপিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য ইউরূপ, দক্ষিন এশিয়া এর জ্বলন্ত উদাহরন। বুর্জোয়ারা ও সাম্যক অবহিত আছে যে, তাঁদের চাপিয়ে দেয়া দাদাগিরি জাতি সমূহের পারস্পারিক দ্বন্দ্ব নিরসন না করে বরং তা আরও বাড়িয়ে দেয়। জন্ম দেয় নতুন নতুন যুদ্বের। নানা প্রকার উন্মাদনার। এই বুর্জোয়া শক্তি গুলো সঙ্ঘাত, সংঘর্ষ থামাতে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযোদ্বের পর আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।

সাধারন ভাবে প্রায় সকলেই একটি কথা প্রায়স বলেন, ঐতিহাসিক ভাবে সমাজতন্ত্র কায়েম করার এখনো সময় হয়নি। সমজতন্ত্র বাস্তবায়নের বস্তুগত পরিস্থিতি এখনো সৃজন হয়নি। প্রকৃত সত্য হলো, সমাজতন্ত্র কায়েমের সময় অতিক্রম করছে। তা কায়েম না হওয়ার জন্য যে সকল আপদ-বিপদ মানব জাতির উপর আপতিত হবার কথা তাই হচ্ছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, অপমানিত হচ্ছে মানবজাতি। বলতে গেলে, আজ সমগ্র মানব জাতি বিলুপ্তির সম্মূখিন । পুঁজিবাদ আজ সর্বনাশা অজগরের মত দুনিয়াকে গিলে খাইতে চাইছে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ছাড়া ঐতিহাসিক বিপর্যয় থেকে মানবজাতি এবং আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়। এমনকি মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতি এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মোখিন হচ্ছে এবং  হতে থাকবে। মানুষের দায়িত্ব বিশেষ করে সমাজের আগ্রনী বাহিনী বা ভ্যানগার্ডের কর্তব্য হলো সেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসা। অর্থাৎ দুনিয়া জোড়ে সমাজতন্ত্র কায়েম করা এবং বিলয় ঘটানো পুঁজিবাদের। ইতিহাসের অনিবার্য বিপর্যয় থেকে মানব জাতিকে কেবল মাত্র একটি সফল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবই রক্ষা করতে পারে। আর সেই বিপ্লবের জন্য দরকার হলো – সর্বহারার বিপ্লবী নেতৃত্ব- সামগ্রীক ও বঞ্চিত মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগ।


Share Tweet Send
0 Comments
Loading...
You've successfully subscribed to Bangladesh ASF
Great! Next, complete checkout for full access to Bangladesh ASF
Welcome back! You've successfully signed in
Success! Your account is fully activated, you now have access to all content.